অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস| তৃতীয় অধ্যায়|২ ও ৩ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|ঔপনিবেশিক অর্থনীতির চরিত্র

dream
0

অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস|তৃতীয় অধ্যায়|২ ও ৩ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|ঔপনিবেশিক অর্থনীতির চরিত্র

অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় ২ ও ৩ উত্তর

প্রিয় বন্ধুরা 

অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস| তৃতীয় অধ্যায়|২ ও ৩ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|ঔপনিবেশিক অর্থনীতির চরিত্র|আজকে আলোচনা করব|তোমরা West Bengal Class 8 History পেয়ে যাবে|অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর|অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|West Bengal Class 3rd Eight| অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় ৩ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|Class 8 History Question and Answer|Class 8 History 3rd chapter Suggestion WBBSE|Class 8 History 8th chapter Notes WBBSE|ইতহাস প্রশ্নোত্তর|ইতিহাস মক টেস্ট|itihas proshno o uttor| History Mock Test|


এছাড়াও তোমরা পাবে অষ্টম শ্রেণী তৃতীয় অধ্যায় ঔপনিবেশিক অর্থনীতির চরিত্র থেকে বহুবিকল্প ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর|MCQ, Very Short Question, Short Questions, Descriptive Question and Answer এগুলি তোমরা যারা পশ্চিমবঙ্গের VIII History Examination এর জন্য পরিক্ষা দিতে যাচ্ছ অথবা পশ্চিমবঙ্গ অষ্টম শ্রেণীতে পড়াশুনা করছো তাদের ইতিহাস পরীক্ষার জন্য এই ২ নম্বরের প্রশ্নগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ন এবং তোমরা যারা অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস (তৃতীয় অধ্যায় ঔপনিবেশিক অর্থনীতির চরিত্র) ৩ নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর চাইছো, তারা নীচের দেওয়া প্রশ্নউত্তর গুলি ভালো করে পড়ে নিতে পারবে।


অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস| তৃতীয় অধ্যায়|২ ও ৩ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|ঔপনিবেশিক অর্থনীতির চরিত্র

 1. আমিনি কমিশন কী ?

উ:- ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত পাঁচশালা বন্দোবস্তের ব্যর্থতার পর ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার ভূমি বন্দোবস্ত ও ভূমিরাজস্ব সম্পর্কে বিস্তারিত অনুসন্ধানের লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করেন। এই কমিশন আমিনি কমিশন নামে পরিচিত ছিল।

কৃষিজমির উর্বরতা পরিমাপ, উর্বরতা অনুযায়ী ভূমিরাজস্বের হার নির্ধারণ, রাজস্ব আদায়, কৃষকদের উন্নতি ও তাদের স্বার্থরক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি ছিল আমিনি কমিশনের কাজ। এই কমিশনের রিপাোর্টের ভিত্তিতেই ব্রিটিশ প্রশাসন কৃষকদের কাছ থেকে উৎপন্ন ফসলের ১/৫ অংশ খাজনা আদায় করতে শুরু করে।


2. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের ফলে কেন মনে করা হয়েছিল যে এর ফলে রাজস্ব সংক্রান্ত হিসাবে গরমিল হবে না?

উ:- ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২২ মার্চ লর্ড কর্নওয়ালিস বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন।

i. স্থির রাজস্ব : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে রাজস্ব চিরদিনের জন্য নির্দিষ্ট বা স্থির হওয়ায় কোনাো অবস্থাতেই রাজস্বের পরিবর্তন করা হত না।

ii. রাজস্ব হার : এই বন্দোবস্তে রাজস্ব হার থির ছিল। কৃষকদের


3. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হওয়ার আগে কোম্পানির অনেক আধিকারিক খাজনা আদায় ব্যবস্থাকে চিরস্থায়ী করার কথা বলেছিলেন কেন?

উ:- ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কর্নওয়ালিস রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেছিলেন। এর আগে কোম্পানির অনেক যেমন ফিলিপ ফ্রান্সিস প্রমুখ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তনের কর্মচারী কথা বলেছিলেন।

i. রাজস্ব আদায়ের পদ্ধতি স্থির না থাকায় কৃষক সমাজ ও দেশীয় অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল।

ii. কৃষিক্ষেত্রে বিপর্যয়ের ফলে ভারত থেকে ব্রিটিশ কোম্পানির রেশম ও কাপাস রপ্তানিতে ভাটা পড়েছিল।

iii. কৃষিক্ষেত্রে সংকটের ফলে দেশীয় হস্তশিল্পও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

iv. সরকারের আর্থিক আয়ের নিশ্চয়তা ছিল না। তাই অনিশ্চিত রাজস্ব ব্যবস্থার পরিবর্তনের প্রয়াোজন ছিল।


4. কর্নওয়ালিস যখন বাংলার শাসনভার নেন তখন । খাজনা আদায়ের প্রশাসনিক কাঠামো সমস্যার মুখে পড়েছিল কেন?

উ:- ১৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কর্নওয়ালিস বাংলার গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন। এইসময় খাজনা আদায়ের ব্যবস্থা বা প্রশাসনিক কাঠামাো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল।


i. স্থায়ী রাজস্ব ব্যবস্থার অভাব : ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানি বা রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করে। দ্বৈত শাসনকালে জবরদস্তিমূলক রাজস্ব আদায় এবং ওয়ারেন হেস্টিংস-এর আমলে পরীক্ষামূলক রাজস্ব

ii. রাজস্বকর্মীর অভাব : দ্বৈত শাসন ও ইজারাদারি ব্যবস্থায় স্থায়ী রাজস্বকর্মী ছিল না। রাজস্ব বাোর্ড (১৭৭৩ খ্রি.), আমিনি কমিশন (১৭৭৬ খ্রি.) গঠিত হলেও রাজস্ব সংক্রান্ত তথ্যের অভাব ছিল। এই সমস্ত কারণে লর্ড কর্নওয়ালিস বাংলার গভর্নর জেনারেল


5. চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের বৈশিষ্ট্য কী ছিল?

উ:- ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দের ২২ মার্চ বাংলায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তিত হয়।                  

i. জমিদাররা বংশানুক্রমিকভাবে জমির উত্তরাধিকারী স্বত্ব ভাোগ করতে পারতেন। বিনিময়ে জমিদারকে নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের পূর্বে সরকারি কোশাগারে ভূমিরাজস্ব জমা দিতে হত।

ii. ভূমিরাজস্বের হার নির্দিষ্ট এবং স্থির থাকত, খরা, বন্যা বা অন্য কোনাো প্রাকৃতিক বিপর্যয়েও রাজস্ব মকুব করা হত না।

iii. জমিদারগণ ইচ্ছা করলে জমি দান বা বিক্রি করতে পারতেন।


আরও পড়ুন......


6. বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা ছাড়া ভারতের অন্য স্থানে কেন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করা হয়নি?

উ:- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথমে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। এখানে চিরস্থায়ী ভূমি বন্দোবস্ত চালু করে। পরে অন্য স্থানে রাজ্য বিস্তৃত হলে অন্য ধরনের বন্দোবস্ত চালু করে। ভারতের অন্যস্থানে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট হয়ে যায়। পরে বাজার বৃদ্ধি পেলেও রাজস্ব হার বৃদ্ধির পথ বন্ধ হয়ে যায়।

i. প্রেক্ষিত : মাদ্রাজ ও মহারাষ্ট্র অণ্ডলে বড়াো জমিদার ছিল না। 


7. লর্ড কর্নওয়ালিস বাংলার জমিদারদের উন্নতি চেয়েছিলেন কেন?

উ:- গভর্নর জেনারেল হয়ে বাংলায় এসে লর্ড কর্নওয়ালিস চেয়েছিলেন বাংলার জমিদারদের উন্নতি হাোক। কারণ

i. কৃষির উন্নতির জন্য : তিনি বুঝেছিলেন জমির উপর জমিদারদের অধিকার স্থায়ী হলে তারা কৃষির উন্নতির জন্য অর্থ বিনিয়াোগ করবেন।

ii. খাজনা আদায়ে সুবিধার জন্য : লর্ড কর্নওয়ালিস জমিদারদের কাছ থেকে সহজে খাজনা আদায় করার পক্ষপাতী ছিলেন কারণ এর তুলনায় বাংলার অগণিত কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি খাজনা আদায় করা ছিল অনেক কঠিন কাজ।

iii. শ্রেণিস্বার্থ : লর্ড কর্নওয়ালিস নিজে ইংল্যান্ডের এক জমিদার পরিবারের সন্তান ছিলেন। তাই শ্রেণিস্বার্থের মানসিকতা এক্ষেত্রে অন্যতম উপাদান ছিল।


8. চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুফলগুলি ফলে বাংলার কৃষকদের কী দুরবস্থা হয়েছিল ?

উ:- উ:- ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কর্নওয়ালিস ‘ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেছিলেন। এর কুফলগুলি ছিল

i. সূর্যাস্ত আইনঅনুসারে জমিদারগণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খাজনা দিতে না পারলে জমিদারি হাতছাড়া হত।

ii. নিলামের মাধ্যমে জমির বন্দোবস্ত দেওয়ার ফলে অনেক ভূঁইফোড় জমিদারের উৎপত্তি হয়েছিল।

iii. কৃষক ও সরকারের মাঝে মধ্যস্বত্বভাোগী শ্রেণির উদ্ভব হয়েছিল, ফলে কৃষকদের উপর অত্যাচার বেড়েছিল।


9. সূর্যাস্ত আইন কাকে বলে?

উ:- সূর্যাস্ত আইন ছিল ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে কর্নওয়ালিস প্রবর্তিত চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের একটি শর্ত।

i. সূর্যাস্ত আইন : চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমিদারকে বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে কোম্পানির প্রাপ্য রাজস্ব জমা দিতে হত। শেষ দিনের সূর্য অস্ত যাওয়ার আগেই প্রাপ্য রাজস্ব কোম্পানিকে জমা দিতে না পারলে জমিদারের জমিদারি হাতছাড়া হত। কোম্পানির রাজস্ব আদায়ের এই নিয়মকে সূর্যাস্ত আইন বলা হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমির অধিকার জমিদারের দখলে থাকলেও বাস্তবে সমস্ত জমির চূড়ান্ত মালিকানা ছিল কোম্পানির হাতে। কোম্পানি জমির মালিকানা নিজের হাতে রাখার জন্যই সয়া ছাইন চালু করে।


10. পত্তনি প্রথা কী ?

উ:- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করে। পত্তনি প্রথা তার অংশ হয়ে ওঠে।

i. পত্তনি প্রথা: সামন্তপ্রথায় যেমন ক্রম অধস্তন স্তর ছিল তেমনি চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমিদারদের অধঃস্তন স্তর ছিল। এই অধস্তন জমিদারদের পত্তনিদার বলা হত।

জমিদার তার জমিদারিকে কয়েকটি ছাোটো ছাোটো অঞলে ভাগ করে একত্রে কজনকে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট খাজনা জমা দেওয়ার শর্তে তার দায়িত্ব দিতেন। একে পত্তনি প্রথা বলে।

চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমির মালিকানা দেওয়া হয়েছিল জমিদারদের। জমিদাররা নিজেদের সুবিধার জন্য উপজমিদার বা পত্তনিদার সৃষ্টি করে। তারা কৃষকের উপর খাজনা ছাড়াও অতিরিক্ত কর আদায় করত।


আরও পড়ুন......


11.  রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত বলতে কী বাোঝাো?

উ:- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে ভারতে প্রবর্তিত ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থাগুলির তান্যতম ছিল রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত। না রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত: রায়ত বলতে কৃষককে বাোঝায়।

i. এই ব্যবস্থায় কৃষকের কাছ থেকে সরকার সরাসরি খাজনা আদায় করত।

ii. এখানে কোনাো মধ্যস্বত্বভাোগী বা জমিদার ছিল না। ২০-৩০ বছর পর বাজারমূল্যের সঙ্গে সংগতি রেখে রাজস্ব হার পরিবর্তিত হত।

iii. বন্দোবস্তের এলাকা ও সময়কাল : মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি ও বাোম্বাই প্রেসিডেন্সিতে এই ব্যবস্থা চালু হয়। থমাস মানরাো এবং আলেকজান্ডার রিড এই ব্যবস্থা ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে চালু করেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে রাজস্ব চিরদিনের জন্য স্থির ছিল। এই ত্রুটি দূর করার জন্য রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত চালু হয়। এতে কৃষকের কল্যাণ হয়নি।


12. রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের ত্রুটিগুলি লেখাো ?

উ:- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাদ্রাজের গভর্নর থমাস মানরাো ও আলেকজান্ডার রিড মাদ্রাজ ও বাোম্বাই প্রেসিডেন্সিতে রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত চালু করেন (১৮২০ খ্রি.)

i. জমির মেয়াদি স্বত্ব : এই বন্দোবস্তে কৃষকদের ২০/৩০ বছরের জন্য স্বত্ব দেওয়া হয় স্থায়ী স্বত্ব দেওয়া হয়নি।

ii. চড়া রাজস্ব : এই বন্দোবস্তে রাজস্ব হার চড়া ছিল। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে রাজস্ব হার বাড়ানাো হত। জমি থেকে বেশি রাজস্ব আদায় কোম্পানির লক্ষ্য ছিল। কৃষকের কল্যাণ নয় কোম্পানির লাভ বিবেচ্য বিষয় ছিল।


13. চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের মধ্যে কোন কোন বিষয়ে পার্থক্য লক্ষ করা যায়?

উ:- ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দের বাংলার ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ও মন্বন্তরের পরবর্তীকালে ব্রিটিশ প্রশাসন নতুন করে রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত বিষয়ে শুরু করে। এর ফলস্বরূপ ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত এবং ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের প্রবর্তন করা হয়।


14.  মহলওয়ারি বন্দোবস্ত বলতে কী বাোঝাো?

উ:- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারতে প্রবর্তিত ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থাগুলির অন্যতম ছিল মহলওয়ারি বন্দোবস্ত। এই ব্যবস্থা মালগুজারি বা মাোজাওয়ারি বন্দোবস্ত নামেও পরিচিত। মহলওয়ারি বন্দোবস্ত : মহল বলতে কয়েকটি গ্রামের সমষ্টিকে বাোঝায়।

i. এই ব্যবস্থায় সরাসরি কৃষকদের পরিবর্তে গ্রামসমাজের সঙ্গে সরকার রাজস্ব বন্দোবস্ত করে। গ্রামের মাোড়লকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়।

iii. এই ব্যবস্থায় কোনাো মধ্যস্বত্বভাোগী ছিল না। এই ব্যবস্থায় কৃষকদের ২৫-৩০ বছরের মেয়াদি স্বত্ব দেওয়া হয় রাজস্ব হার ছিল উৎপাদনের ২/৩ অংশ। রাজস্ব হার পরিবন্দি হত নির্দিষ্ট সময় অন্তর।

iv. বন্দোবস্তের এলাকা ও সময়কাল : উ:- ভারত, মধ্য ভ প্রভৃতি অঞ্চলে এই ব্যবস্থা চালু হয়। ১৮২১ খ্রিস্টাব্দে হাোল্ট ম্যাকে এই ব্যবস্থা চালু করেন।


15. রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত কত খ্রিস্টাব্দে এবং কোথায় প্রবর্তিত হয় ? রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের ও মহলওয়ারি বন্দোবস্তের জনক কাদের বলা হয়?

উ:- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের ভূমি বন্দোবস্ত চালু করে।


16. রায়তওয়ারি বন্দোবস্ত কোন কোন অঞ্চলে কত খ্রিস্টাব্দে তৈরি হয় ?

উ:- ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে প্রথমে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি ও পরে বাোম্বাই প্রেসিডেন্সি অএলে এই ব্যবস্থা চালু হয়।

i. রায়তওয়ারি ও মহলওয়ারি বন্দোবস্তের জনক : রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের জনক ছিলেন মাদ্রাজের গভর্নর থমাস মানরাো ও তার সহযাোগী আলেকজান্ডার রিড

17. রায়তওয়ারি ও মহলওয়ারি বন্দোবস্তের পার্থক্য কী ছিল ?

উ:- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দক্ষিণ ভারতে এবং উ:--পশ্চিম ভারতে যথাক্রমে রায়তওয়ারি ও মহলওয়ারি ব্যবস্থা চালু করে। এই রায়তওয়ারি বন্দোবস্তের সঙ্গে মহলওয়ারি বন্দোবস্তের পার্থক্যগুলি হল ?

i. রায়তওয়ারি বন্দোবস্তে সরকারের সঙ্গে চাষির সরাসরি সম্পর্ক স্থাপিত হত। কিন্তু মহলওয়ারি বন্দোবস্তে তা হত না।


18. ভাইয়াচারি বন্দোবস্ত প্রবর্তনের উদ্দেশ্য কী ছিল?

উ:- ১৮-২৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ কর্মচারী এলফিনস্টোন ও ম্যাকেরি উদ্যোগে পশ্চিম ভারতে বিশেষত পঞ্জাব অঞলে ভাইয়াচারি বন্দোবস্ত প্রবর্তিত হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কোশাগারে রাজস্বের পরিমাণ কীভাবে বৃদ্ধি করা যায়, সেই উদ্দেশ্যেই এই বন্দোবস্ত চালু করা হয়

নির্দিষ্ট সময়ে যাতে নির্ধারিত রাজস্বের অর্থ কোম্পানির খাতে বিপরীতদিকে রাজস্ব হার বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষককুল সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছিল। জমা পড়ে সেইজন্য কৃষক, গ্রামের জনপ্রতিনিধি এবং কালেক্টরদের সঙ্গে যৌথভাবে আলাোচনার মাধ্যমে প্রত্যেকের সঙ্গে পৃথকভাবে জমি বন্দোবস্ত করা হয়। গ্রামের জমিদার বা মাোড়ল স্থানীয় ব্যক্তির মাধ্যমে আদায়ীকৃত অর্থ কোণাগারে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় এবং কয়েক অন্তর রাজস্ব হার বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হয়। যদিও জমিদার গাোষ্ঠীর আয় এই ব্যবস্থার মাধ্যমে বৃদ্ধি পেলেও কোম্পানির তেমন লাভ হয়নি।


19. মহাজনি ব্যবস্থা বলতে কী বাোঝাো?

উ:- মহাজন শব্দের অর্থ হল মহৎ যে জন। কিন্তু বাস্তবে মহাজন বলতে বাোঝায় সুদখাোর ব্যক্তিকে। এই মহাজন যখন সুদের বিনিময়ে টাকা ধার দেওয়ার ব্যাবসা শুরু করে, তখন তার ব্যাবসাকে বলা হয় মহাজনি কারবার। একে অনেকে তেজারতি ব্যাবসা নামেও অভিহিত করে থাকে।


ব্রিটিশ আমলে নগদে ভূমিরাজস্ব আদায় শুরু হলে কৃষকরা মহাজনদের থেকে টাকা ধার নিতে শুরু করে। এর ফলে মহাজন শ্রেণি তথা মহাজনি ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে।


20. কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ বলতে কী বাোঝাো?

উ:- কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ বলতে বাোঝায় বাণিজ্যের জন্য প্রয়াোজন এমন কৃষিজ ফসলের চাষ করা। ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতীয় অর্থনীতির একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ। ব্রিটিশ আমলে বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ মুনাফা লাভের জন্য যে যে ফসলের চাষ করা হত সেগুলি হল- চা, নীল, পাট, তুলাো প্রভৃতি। বস্তুত কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ ছিল ব্রিটিশ আমলে অর্থনীতির আধুনিকীকরণের অঙ্গ।


21. ভারতীয় কৃষকসমাজের উপর কৃষির বাণিজ্যিকীকরণের কী প্রভাব পড়েছিল?

উ:- ভারতে ইংরেজ ঔপনিবেশিক শাসনে ইংল্যান্ডের শিল্পের স্বার্থে বাণিজ্যিকীকরণ ঘটে। এর প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী।

i. বাগিচা ফসল : চা, কফি হল বাগিচা ফসল। কোম্পানি আমলে ভারতে এই ফসলের চাষ শুরু হয়। প্রচুর পুঁজি এবং উন্নত প্রযুক্তি ও পদ্ধতির জন্য সাধারণ কৃষকদের পক্ষে এই চাষ সম্ভব ছিল না। ফলে ইংরেজ খামার মালিকরা বা এই ফসল চাষ করত ও মুনাফা অর্জন করত।

ii. বাণিজ্য ফসল : তুলাো, তামাক, নীল, আফিম, পাট হল বাণিজ্য ফসল। ভারতীয় কৃষকরা এই ফসলগুলি চাষ করত কিন্তু ইংরেজ বণিকেরা তা কম দামে কিনে চড়া দামে রপ্তানি করত। কৃষির আংশিক বাণিজ্যিকীকরণ ঘটলেও ভারতীয় কৃষক তার থেকে বঞ্চিত হয়। সমস্ত সুযাোগসুবিধা লাভ করে ইংরেজ বণিক তাদের সহযাোগীরা।


22.‘দাদন প্রথা  কী?

উ:- ব্যাবসায়িক প্রয়াোজনে উৎপাদক ও ব্যবসায়ীর মধ্যে আর্থিক লেনদেন শুরু হয়।

i. দাদন : কোনাো জিনিস তৈরি (বাণিজ্য পণ্য) করতে ব্যবসায়ী যখন উৎপাদককে আগাম টাকা দিত তখন এই টাকা দেওয়াকে দাদন বলা হত।

ii. প্রকৃতি : তাঁতি দাদন নিয়ে নির্দিষ্ট দামে কোম্পানির এজেন্টদের বস্ত্র বিক্রি করতে বাধ্য হত। নীলচাষি দাদন নিয়ে নির্দিষ্ট দামে নীলকর সাহেবদের নীল বিক্রি করতে বাধ্য হত। দাদন প্রথা একটি শাোষণ ও অত্যাচারমূলক ব্যবস্থা ছিল। এর দ্বারা উৎপাদন-ব্যয়ের চেয়ে কম দামে উৎপাদককে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য করা হত।


23.  বাগিচা শিল্প বলতে কী বাোঝাো ?

উ:- বাগিচা শিল্প বলতে মূলত বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে উৎপাদিত ফসলের চাষভিত্তিক শিল্পকে বাোঝায়। ঔপনিবেশিক ভারতে নীল, চা, কফি প্রভৃতি বাগিচা ফসলের উৎপাদনে ইউরাোপীয়দের উৎসাহ ছিল প্রবল। যদিও এই বাগিচা শিল্পের বিকাশের ফলে ভারতের অর্থনীতির বিশেষ কোনাো উন্নতি দেখা যায়নি।


24. ঔপনিবেশিক ভারতে সেচব্যবস্থার উদ্দেশ্য ও ফলাফল কী ছিল ?

উ:- ভারত কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষির সঙ্গে সেচব্যবস্থা ওতপ্রাোতভাবে জড়িত। প্রাচীন ও মধ্যযুগের মতাো ঔপনিবেশিক ভারতেও সেচব্যবস্থা গড়ে ওঠে।


25. কীভাবে ভারতে ভাড়াটে চাষি বা বর্গাদার সৃষ্টি হয়?

উ:- ইংরেজ আমলে ভারতে বিভিন্ন রকমের (চিরস্থায়ী, ফলে রায়তওয়ারি, মহলওয়ারি) ভূমি বন্দোবস্ত চালু হয়। এই বন্দোবস্তের ভাড়াটে চাষি বা বর্গাদার চাষি সৃষ্টি হয়। ভাড়াটে চাষি বা বর্গাদার সৃষ্টি

i. জমির মালিকানা : কোনাো ভূমি বন্দোবস্তেই চাষিকে জমির মালিকানা দেওয়া হয়নি। যে-কোনাো কারণে চাষিকে জমি থেকে উচ্ছেদ করা যেত। তখন চাষিরা উৎপন্ন ফসলের ভাগ দেওয়ার শর্তে জমি চাষ করত।

ii. ঋণমুক্তি : চাষিরা মহাজনের কাছে জমি বন্ধক দিয়ে টাকা ঋণ নিত। শাোধ করতে না পারলে জমি বাজেয়াপ্ত করা হত। চাষি তখন সেই জমি ভাড়াটে চাষি হিসেবে চাষ করত। এভাবে ভাড়াটে চাষি বা বর্গাদার চাষির সৃষ্টি হয়। তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় ছিল চাষবাস করা। শাোষিত হয়ে, জমি হারিয়ে তারা সর্বহারা শ্রেণির অংশ হিসেবে সমাজে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখে।


26. দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা কেন হয়েছিল? 

দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামার কারণগুলি হল

উ:- ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দের মে থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত দাক্ষিণাত্যে মহারাষ্ট্রের পুনা ও আহমদনগর জেলায় যে কৃষক বিদ্রোহ হয়েছিল, তাকে সরকারি পরিভাষায় দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা বলা হয়।

i. অত্যধিক ভূমিরাজস্ব : দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল রায়তওয়ারি ব্যবস্থায় কৃষকদের উপর অত্যধিক করের বাোঝা। 2 তুলাোর মূল্য হ্রাস : ঐতিহাসিক এল নটরাজন বলেছেন যে, দাক্ষিণাত্যে কৃষক বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল তুলাোর মূল্য হ্রাস পাওয়া।

ii. মহাজনদের শাোষণ : দক্ষিণ ভারতের সাহুকার মহাজনরা দরিদ্র চাষিদের বিভিন্নভাবে শাোষণ করত।


27.  দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা থামানাোর লক্ষ্যে ব্রিটিশের  উদ্যোগ কী ছিল ?

উ:- সরকার দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামা ১৮৭৫ খ্রি.) স্তন্ধ করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ দুটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

i. কমিশন নিয়াোগ : দাক্ষিণাত্য হাঙ্গামার কারণ অনুসন্ধান এবং কৃষকদের উপর হওয়া অত্যাচারের প্রতিকারের লক্ষ্যে ব্রিটিশ প্রশাসন একটি কমিশন গঠন করে। ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে এই কমিশনের উদ্যোগে চাষিদের গ্রেফতার ও আটক করা নিষিদ্ধ হয়।

ii. কৃষকদের সুবিধার্থে আইন প্রণয়ন :ঔপনিবেশিক প্রশাসন ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে Agriculturists' Relief Act জারি করে, যার লক্ষ্য ছিল ঋণগ্রস্ত চাষিদের উপর থেকে অত্যাচারের বাোঝা কমানাো। এ ছাড়া কোনাো চাষি ধার শাোধ করতে না পারলে তাদের গ্রেফতার না করে গ্রামের মধ্যে বিচারসভা বসিয়ে সাহুকারদের সঙ্গে আলাপ-আলাোচনার মাধ্যমে ধার শাোধ করার ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলে ব্রিটিশ প্রশাসন।


28.  প্রজাস্বত্ব আইন কী ?

উ:- ইংরেজ ঔপনিবেশিক সরকার ভারতে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থা চালু করে। প্রত্যেকটি ব্যবস্থাতেই কৃষক স্বার্থ রক্ষিত হয়নি। তাই সরকার এই আইন পাস করে।

i. প্রজাৰুত্ব আইন : বিভিন্ন ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থায় কৃষকদের জমির মালিকানা দেওয়া হয়নি। রাজস্বের হার বেড়েই চলেছিল। জমি থেকে কৃষক উচ্ছেদ ঘটে।

ii. সরকার এই আইন দ্বারা স্থির করে, যে জমি কৃষক ১২ বছর চাষ করছে সেই জমি থেকে কৃষককে উচ্ছেদ করা যাবে না। নির্দিষ্ট কারণ ছাড়া জমির খাজনা বাড়ানাো যাবে না।

iii.ঔপনিবেশিক ভারতে কৃষকদের রক্ষার সরকারি চেষ্টা ছিল এই আইন। সীমিত হলেও কৃষকদের মঙ্গল হয় এই আইন দ্বারা।


আরও পড়ুন......


29.  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যের উপর ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের চাটার অ্যাক্টের কী প্রভাব পড়েছিল ?

উ:- ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের চার্টার অ্যাক্টে বলা হয় যে, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চিনে একচেটিয়া বাণিজ্যিক অধিকার বজায় থাকলেও ভারতে এই অধিকার বজায় রাখা যাবে না। ভারতে ইংল্যান্ডের অন্যান্য বাণিজ্যিক কোম্পানিও বাণিজ্যের অধিকার পাবে। এর ফলশ্রুতিতে

i. ভারতীয় বাজারে কোম্পানির পণ্য বিপুল প্রতিযাোগিতার সম্মুখীন হয়

ii. অন্যান্য বিদেশি পণ্য আমদানি করা হলে ভারতীয় বাজারে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া অধিকার বিলুপ্ত হয় ও ভারতীয় অর্থনীতি ও রাজনীতিতে ব্রিটিশ সরকারের প্রত্যক্ষ শাসনের পথ প্রশস্ত হয়।


30. দেশীয় শিল্পের অবক্ষয়ের দুটি কারণ উল্লেখ করাো ?

উ:-  দেশীয় শিল্পের অবক্ষয়ের দুটি কারণ

i. কোম্পানির অসম শুল্কনীতি : ইংরেজ কোম্পানি দেশীয় শিল্প ধ্বংস করার জন্য ভারতে উৎপাদিত শিল্পসামগ্রীর উপর অধিক শুল্ক আরাোপ করেছিল।

ii. শিল্পবিপ্লব : ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের ফলে ইংল্যান্ডের উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রীতে ভারতের বাজার ছেয়ে গিয়েছিল।


31. দেশীয় শিল্পের অবক্ষয়ের ফল কী হয়েছিল?

উ:- দেশীয় শিল্পের অবক্ষয়ের অর্থনৈতিক ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। ভারতের রপ্তানিকারী দেশ থেকে আমদানিকারী দেশে

i. রূপান্তর : এর আগে ইউরাোপের বিভিন্ন দেশে ভারতীয় দ্রব্যসামগ্রী রপ্তানি হত। দেশীয় শিল্পের অবক্ষয়ের ফলে ভারতের তৈরি দ্রব্যসামগ্রীর রপ্তানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। অপরদিকে ভারতীয়দের প্রয়াোজনীয় দ্রব্যসামগ্রী বিদেশ থেকে আমদানি হতে থাকে। ভারত দ্রব্যাদি উৎপাদনের পরিবর্তে ইংল্যান্ডের কলকারখানার জন্য প্রয়াোজনীয় তুলল, রেশম, নীল প্রভৃতি সরবরাহ করতে থাকে।

ii. বেকারত্ব বৃদ্ধি : দেশীয় শিল্পের অবক্ষয়ের ফলে ভারতীয় শিল্পের সঙ্গে জড়িত শিল্পী ও কারিগররা বেকার হয়ে পড়ে। ফলে ভারতে প্রবলভাবে বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়। একদা শিল্পসমৃদ্ধ ভারত কৃষিভিত্তিক হয়ে পড়ে। বহু শিল্পী-কারিগর বেকার হয়ে পড়ে। শিল্পকেন্দ্র, শহর, বন্দরগুলি শ্রীহীন হয়ে পড়ে।


32.  ভারতীয় হস্তশিল্প ধ্বংসের ফলাফল কী হয়েছিল? 2

উ:- ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে একদিকে ব্রিটেনের বাজারে ভারতীয় বস্ত্রের রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়; অন্যদিকে দেশীয় বাজারে বিদেশি পণ্যের সঙ্গে প্রতিযাোগিতায় ধ্বংসের মুখে পড়ে ভারতীয় হস্তশিল্প। এর ফলে 1 শিল্পে নিযুক্ত বহু মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে।

i. বিপুল সংখ্যক কর্মচ্যুত শিল্পশ্রমিক ও কারিগর জীবিকার প্রয়াোজনে কৃষিকাজে নিযুক্ত হতে উৎসাহী হয়। ফলে কৃষি অর্থনীতির উপর বাড়তি চাপ পড়ে।

ii. উনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে তাঁত, কাঠ ও চর্মশিল্পে নিযুক্ত কারিগররা সহজ পথে লাভের আশায় রেলপথ ও রাস্তা নির্মাণের কাজে নিযুক্ত হয়।

iii.  মুর্শিদাবাদ, ঢাকা, সুরাটের মতাো বস্ত্রশিল্পে উন্নত শহরগুলি ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। সামগ্রিকভাবে শহরের জনসংখ্যাও হ্রাস পেয়েছিল। বহু মানুষ কৃষিতে নিযুক্ত হলে ভারতীয় কৃষি ও শিল্প অর্থনীতির সামঞ্জস্য নষ্ট হয়।


33. অবশিল্পায়ন বলতে কী বাোঝো ?

উ:- অবশিল্পায়ন বলতে বাোঝায় দেশীয় শিল্পের অবক্ষয়কে। ভারতে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধীরে ধীরে দেশীয় শিল্পের অবক্ষয় ঘটতে থাকে।

i. ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের অবাধ বাণিজ্যনীতি : ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনে ভারতে কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের অবসান ঘটে ও অবাধ বাণিজ্যনীতি ঘাোষিত হয়। ফলে ইংল্যান্ডে উৎপাদিত জিনিসপত্রে ভারতের বাজার ভরে যায় এবং ভারতের শিল্পগুলি ধ্বংস হতে থাকে। কাোন অসম 

ii.শুল্কনীতি : ব্রিটিশ সরকার ১৮১৫ সালে এক আইন জারি করে ইংল্যান্ডের কারখানায় তৈরি কাপড়ের দামের উপর ২.৫% শুল্ক ধার্য করে। অপরদিকে ইংল্যান্ডে ভারতীয় বস্ত্রের প্রবেশ বন্ধ করার জন্য সেখানে ৬৭.৫% পর্যন্ত শুল্ক ধার্য করে।

iii. ইংল্যান্ডের শিল্পবিপ্লব : ইংল্যান্ডের প্রথম বিপ্লব ঘটেছিল বস্ত্রশিল্পে। কম সময়ে, কম পরিশ্রমে, কম খরচে প্রচুর বস্ত্র উৎপাদিত হয়। এর সঙ্গে প্রতিযাোগিতায় দেশীয় তাঁতবস্ত্র হেরে যায়। ধীরে ধীরে তাঁতশিল্পের অবক্ষয় ঘটে। এই সমস্ত কারণ ছাড়াও পৃষ্ঠপাোষকতার অভাব, দেশীয় রাজ্যের বিলুপ্তি অবশিল্পায়ন ঘটায়


34. ভারতীয় ও অন্যান্য বিদেশি কোম্পানিকে হঠিয়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কীভাবে ভারতীয় বাজারে নিজ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত করেছিল ?

উ:- ভারতীয় ও অন্যান্য বিদেশি কোম্পানিকে হঠিয়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের বাজারে নিজ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে বেশ কিছু কৌশলপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল

i. প্রথমত, ব্রিটেনের বস্ত্র উৎপাদকরা ব্রিটিশ সরকারকে ১৭২০ খ্রিস্টাব্দে একটি আইন পাস করতে বাধ্য করে যার দ্বারা ব্রিটেনে ভারতীয় সুতিবস্ত্র বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ii. দ্বিতীয়ত, আঠারাো শতকের মাঝামাঝি থেকে ইংল্যান্ডে বস্ত্রশিল্পে নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি ও দ্রব্যের মানাোন্নয়ন করা হতে থাকে এবং তা ভারতের বাজারকে গ্রাস করতে শুরু করে।

iii. তৃতীয়ত, ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধের পর থেকেই ভারতের ব্যাবসাবাণিজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করার জায়গায় চলে যেতে থাকে কোম্পানি। বাংলার রাজস্বের অর্থ ব্যয় করেই কোম্পানি ভারতীয় পণ্য ব্রিটেনে রপ্তানি শুরু করে।

iv. চতুর্থত, রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোম্পানি দেশীয় বাণিজ্যে চড়া হারে শুল্ক আরাোপ করে। বাংলার তাঁতিদের সামান্য মজুরিতে বস্ত্র উৎপাদন করতে এবং সস্তায় উৎপাদিত বস্ত্র বিক্রি করতে বাধ্য করে; এমনকি কাঁচা সুতাো বিক্রির ব্যাবসায় একাধিপত্য লাভ করে কোম্পানি।


আরও পড়ুন......



File Details

 

File Name/Book Name

অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস| তৃতীয় অধ্যায়|২ ও ৩ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর

File Format

PDF

File Language

Bengali

File Size

130 KB

File Location

GOOGLE DRIVE

Download Link

Click Here to Download PDF File



Join Telegram... Members


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top