বক্সারের যুদ্ধের কারণ গুলি আলোচনা করো | ইংরেজদের সঙ্গে মির কাশিমের যুদ্ধের কারণগুলি লেখো | বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পর্যালোচনা কর

2

বক্সারের যুদ্ধের কারণ গুলি আলোচনা করো | ইংরেজদের সঙ্গে মির কাশিমের যুদ্ধের কারণগুলি লেখো | বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পর্যালোচনা কর




প্রিয় অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র ছাত্রীরা আজকে এই পোস্টের মাধ্যমে আলোচনা করব বক্সারের যুদ্ধের কারণগুলি আলোচনা করো। অথবা ,ইংরেজদের সঙ্গে মির কাশিমের যুদ্ধের কারণগুলি লেখো|বক্সারের যুদ্ধের ফলাফল pdf |বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব ও তাৎপর্য|বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পর্যালোচনা কর|বক্সারের যুদ্ধের কারণ গুলি লেখ|বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো|বক্সারের যুদ্ধের পটভূমি আলোচনা কর|পলাশী ও বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল লেখ


বক্সারের যুদ্ধের কারণগুলি আলোচনা করো | ইংরেজদের সঙ্গে মির কাশিমের যুদ্ধের কারণগুলি লেখো | বক্সারের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল পর্যালোচনা কর


ভুমিকাঃ- বক্সারের যুদ্ধ হয়েছিল ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে। এই যুদ্ধ হয়েছিল বাংলার নবাব মির কাশিম, অযোধ্যার নবাব সুজা উদ-দৌলা ও মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের মিলিত বাহিনীর সঙ্গে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির। ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পূর্ববর্তী নবাব মির জাফরকে সরিয়ে মির কাশিমকে বাংলার সিংহাসনে বসায়। কিন্তু সিংহাসনে আরোহণের পর মির কাশিম স্বাধীনভাবে রাজত্ব চালনা করতে চাইলে ইংরেজদের সঙ্গে তার বিরোধ বাধে।


বক্সারের যুদ্ধের কারণঃ-

1. রাজনৈতিক কারণঃ-

i)মুঙ্গেরে রাজধানী স্থানান্তরঃ- সিংহাসনে আরোহণের পর মির কাশিম স্বাধীনভাবে রাজত্ব করার জন্য রাজধানী স্থানান্তরিত করেন মুঙ্গেরে। বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদ ছিল ইংরেজ প্রভাবিত। তাই তিনি রাজধানী স্থানান্তরের পরিকল্পনা করেছিলেন।


ii) বৈধ ফরমান লাভঃ- মির কাশিম ইংরেজদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে অবৈধভাবে বাংলার সিংহাসন লাভ করেন। তিনি নিজেকে বৈধ নবাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বার্ষিক ২৬ লক্ষ টাকা রাজস্ব প্রদানের অঙ্গীকার করে মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের ফরমান নিয়েছিলেন। এই ব্যবস্থা ইংরেজরা মেনে নিতে পারেনি।


2. সামরিক কারণঃ-

i) ইউরোপীয় রণকৌশল গ্রহণঃ- নবাব মির কাশিম চিরাচরিত রণকৌশলের পরিবর্তে উন্নত ইউরোপীয় ধাঁচে সেনাবাহিনীকে মজবুত করতে চেয়েছিলেন। এর জন্য তিনি আর্মেনীয় গ্রেগরিকে প্রধান সেনাপতি, ফরাসি সমরু এবং আর্মেনীয় মার্কারকে সহসেনাপতি পদে নিযুক্ত করেছিলেন।


ii)আগ্নেয়াস্ত্র নির্মাণের কারখানা প্রতিষ্ঠাঃ- মির কাশিম উপলব্ধি করেছিলেন তার সেনাবাহিনীর অন্যতম দুর্বলতার কারণ—উন্নত আগ্নেয়াস্ত্রের অভাব। এই অসুবিধা দূর করার জন্য তিনি মুঙ্গেরে কামান, বন্দুক, গোলাবারুদের কারখানা গড়ে তুলেছিলেন। বলাবাহুল্য মির কাশিমের এইসব কার্যকলাপ ইংরেজদের সহ্য হয়নি।


3. অর্থনৈতিক কারণঃ-

i) আর্থিক সমস্যাঃ- চুক্তিমতো নবাব বর্ধমান, মেদিনীপুর ও চট্টগ্রাম জেলার রাজস্ব ইংরেজদের দিয়ে নিয়ন্ত্রণমুক্ত হন,এরপর তিনি ১৩% ভূমিরাজস্ব এবং সেস ও আবওয়াব বৃদ্ধি করেন, হিসাব পরীক্ষা করে অর্থ তছরূপকারী রাজস্বকর্মীদের জরিমানা করেন, আলিবর্দিও মির জাফরের পরিবারের সঞ্চিত অর্থ বাজেয়াপ্ত করেন,  জগৎ শেঠ পরিবারের কাছ থেকে প্রচুর অর্থ আদায় করেন। এর ফলে নবাবের আর্থিক সচ্ছলতা এলেও ইংরেজদের সঙ্গে তার সম্পর্ক খারাপ হয়।


ii)দেশীয় বণিকদের শুল্ক প্রত্যাহারঃ- ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সম্রাট ফাররুখশিয়রের কাছ থেকে বিনাশুল্কে বাণিজ্যের অধিকার লাভ করে। কিন্তু কোম্পানির কর্মচারীরা ব্যক্তিগত ব্যাবসাতে এই ফরমানের অপব্যবহার করতে থাকে। এতে নবাব ও দেশীয় বণিকগণ ক্ষতিগ্রস্ত হন। এমতাবস্থায় নবাব দেশীয় বণিকদের শুল্ক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। ফলে ইংরেজদের সঙ্গে তার বিরোধ চরম আকার ধারণ করে। এই সমস্ত ঘটনার মিলিত পরিণামেই ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধ হয়।


বক্সারের যুদ্ধের ফলাফল |বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব ও তাৎপর্য | বক্সারের যুদ্ধের ফলাফল pdf


বাংলা তথা ভারতের ইতিহাসে বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব অপরিসীম।পলাশির যুদ্ধের ফলে ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের যে ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল, বক্সারের যুদ্ধে তা সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য স্থাপনে পলাশির অপেক্ষা বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব অনেক বেশি। 


বক্সারের যুদ্ধ ছিল চূড়ান্ত যুদ্ধ 

পলাশিতে কূটনীতি ও বিশ্বাসঘাতকতা এক অনভিজ্ঞ নবাবের ওপর জয়যুক্ত হয়—এই জয় ছিল আকস্মিক ও অনায়াসলব্ধ। তাই এর স্থায়িত্ব সম্পর্কেও যথেষ্ট সন্দেহ ছিল, কিন্তু বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত হন দিল্লির বাদশা-সহ দু’জন ভারতীয় নৃপতি। তাই এই যুদ্ধ হল চূড়ান্ত ফলনির্ণয়কারী যুদ্ধ। ম্যালেসন (Malleson) বলেন যে, “ভারতে বিভিন্ন যুদ্ধবিগ্রহগুলির মধ্যে বক্সারের যুদ্ধ হল একটি চূড়ান্ত ফল-নির্ণয়কারী যুদ্ধ।” ঐতিহাসিক স্মিথ (Smith)-এর মতে, “পলাশি ছিল কয়েকটি কামানের লড়াই, বক্সার ছিল চূড়ান্ত বিজয়।” ঐতিহাসিক বিপান চন্দ্র-র মতে, “ভারতের ইতিহাসে বক্সারের এই যুদ্ধটি ছিল সর্বাধিক যুগান্তকারী ও তাৎপর্যময়।”


বাংলায় কোম্পানির আধিপত্য প্রতিষ্ঠাঃ-

এই যুদ্ধের ফলে ভারতীয় রাজনীতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার চরম ব্যর্থতা ও ইংরেজদের সামরিক বলের শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। এই যুদ্ধের দ্বারা কোম্পানি নবারের সামরিক ও প্রশাসনিক সকল ক্ষমতা হস্তগত করে এবং তিনি কোম্পানির বৃত্তিভােগী পুতুলে পরিণত হন। 


উত্তর ভারতে কোম্পানির আধিপত্য প্রতিষ্ঠা 

বক্সারের যুদ্ধে কেবল মিরকাশিম-ই নয়—অযােধ্যার নবাব সুজাউদৌলা ও দিল্লি বাদশা শাহ আলম পরাজিত হন। এর ফলে এক রকম বাংলা থেকে দিল্লি পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা কোম্পানির হস্তগত হয়। অযােধ্যার নবাব কোম্পানির অনুগত মিত্রে পরিণত হন এবং নামসর্বস্ব’ মােগল বাদশা কোম্পানির বৃত্তিভােগী হন। এইভাবে সমগ্র উত্তর ভারতে কোম্পানির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রথম সােপান রচিত হয়। স্যার আলফ্রেড লায়াল(Alfred Lyall) বলেন যে, “এই যুদ্ধের ফলে ইংরেজ শক্তি উত্তর ভারতে অনুপ্রবেশ করে।”


বাংলার অর্থনীতিতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠাঃ-

বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের ফলে বাংলার বাণিজ্য ও অর্থনীতির ওপর কোম্পানির একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলার বুকে শুরু হয় কোম্পানির কর্মচারীদের অবাধ ও নির্লজ্জ শশাষণ ও লুণ্ঠন। অপরাপর ইওরােপীয় বণিকরা বাংলা থেকে বহিষ্কৃত হয় এবং দেশীয় বণিকদের দুর্দশা চরমে পৌঁছায়।



দেওয়ানি লাভ 

এই যুদ্ধের ফলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৬৫ খ্রীষ্টাব্দে মােগল সম্রাট শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার দেওয়ানি লাভ করে। এতদিন পর্যন্ত বাংলায় কোম্পানির আধিপত্য স্থাপন, সার্বভৌমত্ব বা রাজস্ব আদায়ের কোনও বৈধতা দেওয়ানি লাভ ছিল না। দেওয়ানি অর্জনের মাধ্যমে বাংলায় কোম্পানির আধিপত্য আইনগত বৈধতা লাভ করে।


পলাশীর যুদ্ধ অপেক্ষা বক্সারের যুদ্ধ অধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন? |পলাশির যুদ্ধ ও বক্সারের যুদ্ধের মধ্যে কোনটি ব্রিটিশ কোম্পানির ভারতে ক্ষমতা বিস্তারের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল? | ভারতে বণিকের মানদণ্ড রাজ হিসেবে কিভাবে দেখা দিয়ছিল?


সামগ্রিক ফলাফল ও গুরুত্বের বিচারে পলাশি যুদ্ধের তুলনায় বক্সারের যুদ্ধ ভারতে কোম্পানির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির ক্ষমতা বিস্তারের ক্ষেত্রে বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব অপরিসীম। ঐতিহাসিক স্মিথ বলেছেন যে, “পলাশির যুদ্ধ ছিল কয়েকটি কামানের লড়াই, কিন্তু বক্সারের যুদ্ধ ছিল চুড়ান্ত বিজয়।” 


বক্সারের যুদ্ধে কোম্পানির কাছে পরাজিত হয়েছিলেন বাংলার নবাব মির কাশিম, অযােধ্যার নবাব সুজা উদ-দৌলা এবং ভারতের মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম। ফলে ভারতের রাজনীতিতে কোম্পানির ক্ষমতা ও মর্যাদা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।


বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফল ছিল কোম্পানির দেওয়ানি লাভ। বক্সারের যুদ্ধের সুবিধা লাভ করার জন্য বাংলার গভর্নর লর্ড ক্লাইভ ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের ১২ আগস্ট মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের সঙ্গে এলাহাবাদের সন্ধি স্বাক্ষর করেন। এই সন্ধিতে বছরে ২৬ লক্ষ টাকা সম্রাটকে দেওয়ার বিনিময়ে কোম্পানি সুবা বাংলার দেওয়ানি অধিকার লাভ করে। 


বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের ফলে বাংলার নবাবের উপর কোম্পানি পূর্ণ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল, বাংলার নবাব নামমাত্র শাসকে পরিণত হয়েছিলেন। 


বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভ করার ফলে ভারতে ইংরেজ বাহিনীর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়েছিল। ফলে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছিল। এইভাবে ক্রমশ ভারতে বণিকের মানদণ্ড রাজ হিসেবে দেখা দিয়ছিল।


FAQ’s(বক্সার যুদ্ধ সম্পর্কীত বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর)


১) বক্সারের যুদ্ধের সময় মোগল সম্রাট কে ছিলেন?

উত্তরঃ- বক্সার যুদ্ধের সময় মুঘল সম্রাট ছিলেন দ্বিতীয় শাহ আলম

২) বক্সার যুদ্ধের সময় অযোধ্যার নবাব কে ছিলেন?

উত্তর- বক্সার যুদ্ধের সময় অযোধ্যার নবাব ছিলেন সুজা-উদ-দ্দৌলা।

৩)বক্সার যুদ্ধ কত সালে হয়েছিল?|বক্সারের যুদ্ধ কত সালে হয়?

উত্তর- বক্সার যুদ্ধ হয়েছিল ১৭৬৪ সালে 

৪) বক্সারের যুদ্ধের সময় বাংলার নবাব কে ছিলেন?

উত্তর-বক্সার যুদ্ধের সময় বাংলার নবাব ছিলেন মীর কাসিম।

৫) বক্সার যুদ্ধের পর বাংলার নবাব কে হয়েছিলেন?

উত্তর- বক্সার যুদ্ধের পর বাংলার নবাব হয়েছিলেন মীরজাফর 

৬)বক্সারের যুদ্ধ কাদের মধ্যে হয়েছিল?

বক্সার যুদ্ধ হয়েছিল বাংলার নবাব মীর কাসিম, অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা ও মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের মিলিত বাহিনীর সঙ্গে ইংরেজ ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির মধ্যে।

৭)বক্সার যুদ্ধের সময় বাংলার গভর্নর কে ছিলেন?

উত্তর- বক্সার যুদ্ধের সময় বাংলার গভর্নর ছিলেন ভ্যান্সিস্টাট

8) বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজ সেনাপতি কে ছিলেন?

উত্তর- বক্সারের যুদ্ধে ইংরেজ সেনাপতি ছিলেন মেজর হেক্টর  মনরো

৯) মুঙ্গের চুক্তি কি |মুঙ্গের চুক্তি কবে কাদের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল?

উত্তর-মুঙ্গের চুক্তি হয়েছিল নবাব মীর কাশিম ও গভর্নর ভ্যান্সিস্টাট এর মধ্যে ১৭৬২ খ্রীষ্টাব্দে 




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ
  1. PDF Name / Book Name : মাধ্যমিক পঞ্চম অধ্যায় 4 মার্কের প্রশ্ন ও উত্তরের PDF Download Link
    Language : Bengali
    Size : 929 kb

    Download Link : Click Here to DownloadFile Details -

    এটি ডউনলোড করলে ২ নন্বর ডউনলোড হয়ে যাচ্ছে।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. ডউনলোড link দেওয়া হল-

      https://drive.google.com/file/d/1BXICgfHkTxuoRwl-3gpceKCmAmsunyAF/view?usp=sharing

      মুছুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
To Top