ষষ্ঠ শ্রেণী প্রথম অধ্যায় ইতিহাস 5 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর|ভারতীয় উপমহাদেশে আদিম মানুষ যাযাবর জীবন থেকে স্থায়ী বসতি স্থাপন

0

ষষ্ঠ শ্রেণী প্রথম অধ্যায় ইতিহাস 5 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর|ভারতীয় উপমহাদেশে আদিম মানুষ যাযাবর জীবন থেকে স্থায়ী বসতি স্থাপন |ষষ্ঠ শ্রেণী প্রথম অধ্যায় ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর

ষষ্ঠ শ্রেণী প্রথম অধ্যায় ইতিহাস 5 নম্বর উত্তর

ষষ্ঠ শ্রেণী প্রথম অধ্যায় ইতিহাস 5 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর আজকে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করব, ষষ্ঠ শ্রেণী প্রথম অধ্যায় ইতিহাস 5 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর|ষষ্ঠ শ্রেণী প্রথম অধ্যায় ইতিহাস|ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর প্রথম অধ্যায়|ক্লাস 6 এর ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর 2022|ভারতীয় উপমহাদেশের আদিম মানুষ উত্তর|ক্লাস 6 এর ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর|ষষ্ঠ শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায়|ইতিহাস ৫ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর ভারতীয় উপমহাদেশে আদিম মানুষ যাযাবর জীবন থেকে স্থায়ী বসতি স্থাপন|ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা পেয়ে যাবে|যেগুলি আমাদের আশা তোমাদের আসন্ন পরীক্ষায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে।


ষষ্ঠ শ্রেণী প্রথম অধ্যায় ইতিহাস 5 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর|ভারতীয় উপমহাদেশে আদিম মানুষ যাযাবর জীবন থেকে স্থায়ী বসতি স্থাপন |


১. আদিম মানুষের জীবনযাত্রা কেমন ছিল ?

উত্তর :- আদিম মানুষের যখন উদ্ভব হয় তখন বনেজঙ্গলে ঘুরে বেড়াত বিশাল আকারের ভয়ানক সব প্রাণী। মানুষও ওইসব প্রাণীর মতোই জলে-জঙ্গলে, পাহাড়ের গুহায় বসবাস করত। তাদের খাদ্য ছিল বনের ফলমূল ও কাঁচা মাংস। তাদের জীবন ছিল খুবই কষ্টের ও বিপদের।


 আদিম মানুষের জীবনযাত্রা :-

(ক) জীবজন্তুর মততা :- আদিম মানুষ জীবজন্তুর মতোই জঙ্গলে জীবন কাটাত। তাদের ওপর নেমে আসত ভয়ানক প্রাণীর আক্রমণ। এইসব প্রাণীর মুখোমুখি পড়ে প্রাণ হারানো ছিল প্রতিদিনের ঘটনা।

(খ) বিপদে-ভরা জীবন :- আদিম মানুষের অনেকেই কুড়িবছর বয়স পার হওয়ার আগেই মারা যেত হিংস্র প্রাণীর আক্রমণে, না হয় অসুখে কিংবা না-খেতে পেয়ে।

গ) কষ্টকর জীবন :- আদিম মানুষের জীবন ছিল খুবই কষ্টের। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন—ঝড়বৃষ্টি, বজ্রপাত, তুষারপাত, ভূমিকম্প প্রভৃতির কাছে মানুষ ছিল শিশুর মতো অসহায়। বরফের যুগেও তারা কষ্ট করে টিকে থাকতে পেরেছিল।

(ঘ) বাসস্থান :- আদিম মানুষের প্রথম বাসস্থান ছিল অন্ধকার ও সঁতসেঁতে পাহাড়ের গুহায়। কখনো কখনো তারা গাছের ডালে-কোটরে কিংবা জলাশয়ের ধারে বসবাস করত।

(ঙ) খাবার :- আদিম মানুষের বেঁচে থাকার মতো খাবারের সুযোগ ছিল না। তারা বনের ফলমূল ও পশুপাখির কাঁচা মাংস খেয়ে দিন কাটাত।

(চ) কঠোর কাজকর্ম :- নিজেকে বাঁচাতে এবং খাবার পেতে মানুষ কঠোর কাজকর্মও শুরু করে। ধীরে ধীরে মানুষ জমিতে ফসল ফলানো, পশুপালন, পোশাক তৈরি, বসতবাড়ি গড়ে তোলা প্রভৃতি কাজ করতে শুরু করে। বিখ্যাত সমাজতান্ত্রিক ফ্রেডরিক এঙ্গেলস বলেছেন, কঠোর কাজকর্মই মানুষকে মানুষ করে তুলেছিল।

 

২. আদিম মানুষের বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল?

উত্তর :- কয়েক লক্ষ বছর আগে প্রকৃতির ধীর পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে আদিম মানুষের উদ্ভব ঘটে। আফ্রিকা, ইউরোপ, এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে আদিম মানুষের মাথার খুলি, কঙ্কাল, হাড়গোড় প্রভৃতি থেকে গবেষক ও ঐতিহাসিকরা বেশ কিছু তথ্য খুঁজে পেয়েছেন।

 

আদিম মানুষের বৈশিষ্ট্য :-

(ক) পশুর মতো :- আদিম মানুষের শরীরের কাঠামো ছিল অনেকটাই পশুর মতো। এরা প্রথম দিকে কোনোক্রমে দাঁড়াতে পারত এবং জবুথবু হয়ে হাঁটত, তাদের হাত ছিল এতটাই লম্বা যে-হাঁটুর নীচে ঝুলে থাকত। তারা ইচ্ছামতো আঙুল নাড়াতে পারত না।

(খ) এপ থেকে মানুষ :- শিম্পাঞ্জি, গোরিলা জাতীয় নরাকার প্রাণী এপ-এর পরে বিবর্তনের মধ্যদিয়ে কোনোভাবে দাঁড়াতে পারা মানুষের আবির্ভাব ঘটে। ইংরেজ প্রকৃতিবিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন এই ধরনের মত প্রকাশ করেছেন।

(গ) ভাবের আদানপ্রদান :- আদিম মানুষ ভয় ও ক্রোধ প্রকাশ করত মুখ দিয়ে শব্দ করে। এইভাবে তারা একে-অপরের সঙ্গে ভাবের আদানপ্রদান চালাত।

(ঘ) আগুনের ব্যবহার :- আদিম মানুষ বনে-লাগা আগুন (দাবানল) দেখে আগুনের ব্যবহার শিখেছিল। চকমকি জাতীয় পাথরের ঠোকাঠুকিতে তারা আগুন জ্বালাতে শিখেছিল।

(ঙ) খাদ্যসংগ্রহ :- আদিম মানুষ ছিল খাদ্য সংগ্রাহক। তারা খাবারের খোঁজে বনেজঙ্গলে দলবদ্ধভাবে ঘুরে বেড়াত। শিকার ও ফলমূল জোগাড় করে তারা খেত।

(চ) বাসস্থান :- আদিম মানুষ প্রথম দিকে খোলা আকাশের নীচে, কখনও-বা গুহায় থাকত। পরে তারা ছোটো ছোটো বসতি গড়ে তোলে কৃষিজমির পাশে, জলাশয়ের ধারে।

 

৩. আদিম মানুষের জীবনযাত্রার মান ধীরে ধীরে কীভাবে উন্নত হয়েছিল ?

উত্তর :- আদিম মানুষের জীবন ছিল খুবই কষ্টের। বনজঙ্গল থেকে খাবার জোগাড় করে তাদের বেঁচে থাকতে হত। নানা পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে ধীরে ধীরে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছিল।

 

আদিম মানুষের জীবনযাত্রার ক্রমোন্নতি :-

(ক) খাদ্য সংগ্রাহক থেকে খাদ্য উৎপাদক :- পুরোনো পাথরের যুগে মানুষ শিকার করে, বনের ফলমূল জোগাড় করে খাদ্য সংস্থান করত। এককথায় তারা ছিল খাদ্য সংগ্রাহক। পরে নতুন পাথরের যুগে এরা ফসল উৎপাদনের উপায় আয়ত্ত করে। কৃষিকাজ, খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করে। এককথায় তারা পরিণত হয়। খাদ্য উৎপাদকে।

(খ) গুহাবাসী থেকে গৃহবাসী :- পুরোনো পাথরের যুগে মানুষ খোলা আকাশের নীচে, কখনও বা পাহাড়ের অন্ধকার স্যাতসেঁতে গুহায় বাস করত। পরে নতুন পাথরের যুগে তারা কৃষিকাজ করতে শুরু করলে যাযাবর জীবন ত্যাগ করে স্থায়ী বসতি গড়ে তোলে। সুতরাং, বলা যায় যে, আদিম মানুষ গুহাবাসী থেকে গৃহবাসীতে পরিণত হয়েছিল।

গ) একা থেকে দলবদ্ধ :- মানুষের আবির্ভাবকালে সে ছিল একা। বিশাল ভয়ানক প্রাণীর আক্রমণে প্রায়ই সে প্রাণ হারাত। তা ছাড়া খাবার জোগাড় করতে গিয়ে সে বিপদে পড়ত। এই অবস্থায় সে বুঝতে পারে দলবদ্ধভাবে বনে ফলমূল জোগাড় ও শিকার করার অনেক সুবিধা রয়েছে। এইজন্য আদিম মানুষ নিজেকে বাঁচাতে ও খাবার জোগাড় করতে দলবদ্ধ হয়েছিল।

আদিম শিকারি মানুষের সমাজ বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখিয়েছেন যে, তখন সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক, পারিবারিক জীবনে নারীদের কর্তৃত্বের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা থেকে জানা গেছে যে, আদিম মানুষের প্রথম উৎপত্তি হয়েছিল আফ্রিকায়। আফ্রিকা থেকে পরিযান করে তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। প্রথমদিকে পৃথিবীর স্থলভাগগুলি একসঙ্গে জুড়ে (প্যানজিয়া) থাকায় পরিযানে বিশেষ সুবিধা হয়েছিল। একে ‘আফ্রিকান তত্ত্ব’ বলা হয়।

 

৪. পুরোনো পাথরের যুগ ও নতুন পাথরের যুগের মানুষের জীবনযাত্রার পার্থক্যগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর :- মানুষের ইতিহাসের একটি বড়ো অংশ হল পাথরের যুগ। এই পাথরের যুগকে সাধারণভাবে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা— পুরোনো পাথরের যুগ, মাঝের পাথরের যুগ এবং নতুন পাথরের যুগ। ওই যুগগুলিতে আদিম মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক বদল ঘটেছিল।

 

পুরোনো ও নতুন পাথরের যুগের মানুষের জীবনযাত্রার মধ্যে পার্থক্য :-


(ক) বাসস্থানজনিত পার্থক্য :- পুরোনো পাথরের যুগে মানুষের বাসস্থান ছিল খোলা আকাশের নীচে কখনও-বা পাহাড়ের গুহায়। কিন্তু নতুন পাথরের যুগে মানুষ স্থায়ী বসতি গড়ে তোলে কৃষিজমির পাশে কিংবা জলাশয়ের ধারে।

(খ) খাদ্যজনিত পার্থক্য :- পুরোনো পাথরের যুগে মানুষ ছিল খাদ্য সংগ্রাহক, অর্থাৎ তারা খাবারের চাহিদা মেটানোর জন্য বনের পশুশিকার ও ফলমূল জোগাড় করত। কিন্তু নতুন পাথরের যুগে মানুষ হয়ে উঠেছিল খাদ্য উৎপাদক। কৃষিকাজ জানার ফলে তারা নানা ধরনের ফসল উৎপাদন করতে শিখেছিল।

(গ) হাতিয়ারজনিত পার্থক্য :- পুরোনো পাথরের যুগে মানুষের হাতিয়ার ছিল বড়ো ও ভারী পাথরের এবড়ো খেবড়ো টুকরো। কিন্তু নতুন পাথরের যুগে মানুষের হাতিয়ার ছিল অনেক হালকা ও ধারালো।

(ঘ) জীবনযাত্রাজনিত পার্থক্য :- পুরোনো পাথরের যুগে মানুষের জীবন ছিল খুবই কষ্টের ও বিপদে ভরা। নিজেকে বাঁচাতে ও খাদ্য জোগাড় করতে তাদের যথেষ্ট বেগ পেতে হত। অন্যদিকে নতুন পাথরের যুগে মানুষের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন ঘটে যায়। তারা কৃষিকাজ জানার ফলে জীবনযাত্রা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল।

 

৫. পুরোনো পাথরের যুগ ও নতুন পাথরের যুগের মানুষের হাতিয়ারগুলির মধ্যে কী ধরনের পার্থক্য দেখা যায় ?

উত্তর :- লক্ষ লক্ষ বছর ধরে আদিম মানুষ পাথরের হাতিয়ার তৈরি করেছিল। পুরোনো ও নতুন পাথরের যুগে পাথরের হাতিয়ারগুলির আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে।

 

পুরোনো ও নতুন পাথরের যুগের হাতিয়ারের পার্থক্য :-

(ক) প্রকৃতি :- পুরোনো পাথরের যুগের হাতিয়ারগুলি ছিল বড়ো ও ভারী, এবড়ো খেবড়ো এবং ভোঁতা। অন্যদিকে, নতুন পাথরের যুগের হাতিয়ারগুলি ছিল অনেক হালকা ও ধারালো এবং মসৃণ।

(খ) হাতল :- পুরোনো পাথরের যুগে কোনো কোনো হাতিয়ারকে হাতের মুঠিতে ধরার জন্য পাথরের একদিকে ফুটো করে হাতল লাগানো হত। অন্যদিকে, নতুন পাথরের যুগের অনেক হাতিয়ারই ছিল হাতল লাগানো।

(গ) ব্যবহার :- পুরোনো পাথরের যুগের হাতিয়ারগুলি মূলত বাঁচার তাগিদে ব্যবহার করা হত। অন্যদিকে নতুন পাথরের যুগের হাতিয়ারগুলি নিজেকে বাঁচানো ছাড়াও পশু শিকার ও পশুর মাংস কাটার জন্য ব্যবহার করা হত।

(ঘ) হাতিয়ারের নাম :- পুরোনো পাথরের যুগের হাতিয়ারের মধ্যে ছিল পাথরের ছুরির ফলা, ছুঁচোলো বর্শা, পশুর ছাল ছাড়ানোর ব্ল্যাদা, পাথরের দা, হাতকুঠার, কাঠের তিরধনুক প্রভৃতি। অন্যদিকে নতুন পাথরের যুগের হাতিয়ারগুলির মধ্যে ছিল উন্নত ধরনের পাথরের হাতকুঠার, করাত, কপিকল, চাঁচুনি, কোদাল, কাস্তে, শস্যদানা গুঁড়ো করার জতা বা উদখল, বড়শি, বাটালি, উঁচ প্রভৃতি।

(ঙ) বৈচিত্র্য :- পুরোনো পাথরের যুগের হাতিয়ারগুলির অধিকাংশই ছিল প্রায় একই ধরনের। কিন্তু নতুন পাথরের যুগের হাতিয়ারগুলির মধ্যে বৈচিত্র্য ও বিভিন্নতা দেখা যায়।

 

৬. নতুন পাথরের যুগে মানুষ কৃষিজফসল কীভাবে রক্ষা করত ?

উত্তর :- নতুন পাথরের যুগে মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটে। শিকার ও পশুপালনের জন্য নানান জায়গায় তাদের ঘুরে বেড়াতে হত। কৃষিকাজ শুরু করার পর তাদের যাযাবর জীবন বন্ধ হয়। তারা কৃষিজফসল রক্ষা করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।


 কৃষিফসল রক্ষার উপায় :-

(ক) কৃষিফসল :- একসময় বন থেকে নিয়ে আসা বীজ থেকে চারাগাছ এবং চারাগাছ থেকে বড়ো গাছ কীভাবে হয় তার পদ্ধতি মানুষ আয়ত্ত করেছিল। এইভাবে তারা কৃষিকাজ শিখে গম, যব, ধান প্রভৃতি ফসল উৎপাদন করেছিল।

(খ) ঘরবাড়ি :- জমির পাশে ঘরবাড়ি তৈরি করেছিল। মাটি খুঁড়ে গর্ত করে তার চারপাশে আগাছা, লতাপাতা, ঘাস, ডালপালা প্রভৃতি দিয়ে ঘেরা ঘর তৈরি করেছিল। পাথরের ওপর পাথর সাজিয়ে ঘর তৈরি করেছিল।

জলাশয়ের ধারে কিংবা মাটির মধ্যে খুঁটি পুঁতে মাচা তৈরি করে ঘর তৈরি করেছিল। আর এইসব ঘরবাড়ি মানুষ তৈরি করেছিল যাতে কৃষিফসল উৎপাদন করা সহজ হয় এবং রক্ষা করা যায়।


৭. ভীমবেটকা কেন গুরুত্বপূর্ণ ভীমবেটকা কী জন্য বিখ্যাত?

টীকা লেখো :- ভীমবেটকা গুহাচিত্র। 

উত্তর:- মধ্যপ্রদেশের ভোপাল থেকে কিছুটা দূরে বিধ্য পর্বতের কাছেই নির্জন জঙ্গলে ভীমবেটকা গুহা তাবস্থিত। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে এই গুহার খোঁজ পাওয়া যায়। এখানে পুরোনো পাথরের যুগের মানুষের বসবাসের হদিস পাওয়া যায়।


 ভীমবেটকা গুহাচিত্র :-

(ক) পশুপালন :- ভীমবেটকা গুহার দেওয়ালে সেই সময়ের মানুষ বিভিন্ন পাখি, মাছ, কাঠবেড়ালির মতো প্রাণীর ছবি এঁকে রং দিয়ে তা ফুটিয়ে তুলেছিল।

(খ) পশুশিকার :- এই গুহার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল মানুষের পশুশিকারের ছবি। তারা একা অথবা দলবেঁধে শিকার করত। এই শিকারের সময় তারা বিভিন্ন প্রাণীর মুখোশ পরে নিজেকে পশুর আক্রমণ থেকে রক্ষার উপায় বের করেছিল। কোনো কোনো ছবিতে দেখা যায় শিকারি মানুষের সঙ্গী ছিল কুকুর।

(গ) রঙের ব্যবহার :- গুহার দেওয়ালে আঁকা ছবিগুলিতে সবুজ ও হলুদ রঙের ব্যবহার হলেও সাদা ও লাল রং বেশি দেখা যায়।

 

৮. নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তর:- প্রকৃতপক্ষে মধ্য প্রস্তর যুগের পরবর্তী পর্যায়ে নব্য প্রস্তর যুগের আবির্ভাব হয়েছিল। তবে পৃথিবীর সর্বত্র একইসঙ্গে নব্য প্রস্তর যুগের সূত্রপাত হয়েছিল এমন কথা ভাবা অনুচিত হবে। তা ছাড়া একই প্রত্নক্ষেত্রে আবার একই সঙ্গে মধ্য প্রস্তর ও নব্য প্রস্তর পর্বের নিদর্শন পাওয়া গেছে। ভারতবর্ষের মেহেরগড়ে নব্য প্রস্তর পর্বের সূচনা হয়েছিল আনুমানিক ৬০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বা তারও কিছু আগে। আবার কাশ্মীরে নব্য প্রস্তর পর্বের আবির্ভাব হয়েছিল ২৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। অন্যদিকে রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে তা প্রস্তর যুগের আবির্ভাব কিছু পূর্বে হয়েছিল।


নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্যগুলি হল :-

(ক) মসৃণ হাতিয়ার :- নব্য প্রস্তর যুগে তৈরি পাথরের হাতিয়ারগুলি ছিল বেশ মসৃণ। অর্থাৎ, হাতিয়ারের মসৃণতা এ যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

(খ) বয়ন শিল্পের বিকাশ :- প্রথম বয়নশিল্প বিকশিত হয়েছিল নব্য প্রস্তর যুগে।

(গ) বিভিন্ন প্রকার হাতিয়ার :- এই যুগের হাতিয়ারগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল হাড়ের তৈরি ছুঁচ, ছোরা, বর্শা ফলক, হারপুন, তির, প্রভৃতি।

(ঘ) মৃৎশিল্পের বিকাশ :- এই যুগে মানুষ মাটির তৈরি জিনিস তৈরি করে জীবিকানির্বাহ করত। তারা কুমোরের চাকার সাহায্যে মৃৎপাত্র তৈরি করতে শেখে। এ সময় মৃৎশিল্প বেশ উন্নতমানে পৌঁছেছিল।

(ঙ) যাযাবর জীবনযাত্রার অবসান ও কৃষিকাজের উদ্ভব :- নব্য প্রস্তর যুগে মানুষের যাযাবর জীবনযাত্রার অবসান ঘটে। তারা এইসময় থেকে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে এবং তারা প্রয়োজনের তাগিদে কৃষিকাজের উদ্ভাবন করে। এ যুগেই তারা কৃষিকাজের পাশাপাশি পশুপালনেও মনোযোগী হয়।

(চ) ধাতুর ব্যবহার :- নব্য প্রস্তর যুগের শেষের দিকে মানুষ তামা ও ব্রোঞ্জের জিনিস ব্যবহার করতে শুরু করে। মানুষের মধ্যে শিল্পী সত্ত্বার বহিঃপ্রকাশ এযুগেই হয়েছিল।

(ছ) অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া:- মৃতদেহকে সমাধিস্থ করার প্রথা এযুগেই প্রথম চালু হয়। এসময় আংশিক ও পূর্ণ উভয় ধরনের সমাধির প্রচলন ছিল।

 

৯. পুরাতন প্রস্তর যুগের সঙ্গে নব্য প্রস্তর যুগের পার্থক্য লেখো।

উত্তর:- ইতিহাসের গতিচক্রে পুরাতন প্রস্তর যুগ ও নব্য প্রস্তর যুগ উভয়ই বিশেষ পর্বের অন্তর্গত। এই দুই যুগের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য দেখা যায়। যেমন__

(ক) সময়কাল সংক্রান্ত :- মানব সংস্কৃতির সর্বাপেক্ষা প্রাচীন পর্ব হল পুরাতন প্রস্তর যুগ। ঠিক কবে এই পর্বের সূচনা হয়েছিল তা বলা খুব কঠিন কিন্তু নব্য প্রস্তর যুগ আনুমানিক ৭০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে শুরু হয়েছিল।

 (খ) মানবগোষ্ঠী :- পুরাতন প্রস্তর যুগে হোমো হাবিলিস নামক প্রায় মানুষের মতো এক ধরনের প্রাণীর সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু নব্য প্রস্তর যুগে আধুনিক মানুষের উদ্ভব হয়েছিল।

(গ) হাতিয়ারের প্রকৃতি :- পুরাতন প্রস্তর যুগের ব্যবহৃত হাতিয়ারের সবটাই ছিল পাথরের তৈরি এবং তা ছিল অমসৃণ। কিন্তু নব্য প্রস্তর যুগের ব্যবহৃত পাথরের হাতিয়ারগুলির পাশাপাশি হাড়, এমনকি শেষ পর্বে ধাতুর দ্বারাও হাতিয়ার তৈরি হয়েছিল। সবথেকে বড়ো কথা হল যে, হাতিয়ারগুলির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর মসৃণতা।

(ঘ) প্রত্নক্ষেত্র :- পুরাতন প্রস্তর যুগের প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া গেছে ভারতে কাশ্মীরের পহেলগাঁও-এর নিকটবর্তী একটি স্থানে। নব্য প্রস্তর যুগের নিদর্শন ভারতের মেহেরগড় (বর্তমানে পাকিস্তান) নামক স্থানে পাওয়া গেছে।

(ঙ) হাতিয়ারের উপকরণ :- পুরাতন প্রস্তর যুগে উত্তর ভারতে হাতকোপানি ও দক্ষিণ ভারতে হাতকোদাল। জাতীয় হাতিয়ার সর্বাপেক্ষা বেশি সংখ্যায় আবিষ্কৃত হয়েছে। এই পর্বে পাথরের স্তর খসিয়েও হাতিয়ার তৈরি করা হত। কিন্তু নব্য প্রস্তর যুগে হাতিয়ারের বৈচিত্র্য ও মসৃণতা একে স্বাতন্ত্র্য দান করেছিল। হাতিয়ারগুলি চকমকি, অবাসিডিয়ান, কোয়ার্টজ, শ্লেট, গ্রানাইট প্রভৃতি পাথর দিয়ে তৈরি হত।

(চ) জীবনযাত্রা :- পুরাতন প্রস্তরযুগে মানুষ থায়ী বসতি গড়ে তুলতে পারেনি। কিন্তু নব্য প্রস্তর যুগে মানুষের যাযাবর জীবনের অবসান হয় এবং তারা স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে।

(ছ) কৃষিকাজ :- পুরাতন প্রস্তর যুগে মানুষেরা কৃষিকাজের সঙ্গে পরিচিত ছিল না এবং তারা ছিল খাদ্য সংগ্রাহকমাত্র। কিন্তু নব্য প্রস্তর যুগে মানুষেরা কৃষিকাজ করতে শুরু করে এবং খাদ্য উৎপাদকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।

 

১০.‘নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব’বলতে কী বোঝো? এই যুগের বিবরণ দাও। অথবা, নব্য প্রস্তর যুগের সংস্কৃতির বর্ণনা দাও।


উত্তর:- মানব সংস্কৃতির উন্নয়নের ইতিহাসে নব্য প্রস্তর যুগ একটি 'Milestone' স্বরূপ। প্রাগৈতিহাসিক যুগের এই শেষ পর্বে মানবজাতির উন্নয়নের পথে নানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। হাতিয়ারগুলির গঠনে, কৃষিকাজের উন্নয়নে এবং জীবনযাত্রার নানা দিকে এই সময়ে পরিবর্তন এসেছিল। গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষ থেকে সমাজবদ্ধ মানুষে রূপান্তর হয়েছিল এই পর্বে যা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।


 নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব :-

ঐতিহাসিক গর্ডন চাইল্ড নব্য প্রস্তর যুগে মানব সংস্কৃতিতে যে-বিরাট পরিবর্তন এসেছিল তাকে প্রত্যক্ষ করে, একে ‘নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব’ বা ‘Neolithic Revolution' বলে উল্লেখ করেছেন। বিপ্লব শব্দের অর্থ হল ‘বি’ অর্থাৎ ‘বিশেষ’ এবং ‘প্লব’ অর্থাৎ ‘লাফ’। নব্য প্রস্তর যুগে কৃষিকাজ শুরু হয়েছিল। হাতিয়ার ব্যবহারে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছিল। মানব জীবনযাত্রায় এক ব্যাপকতর পরিবর্তন ঘটেছিল। যার ফলস্বরূপ সেই যুগের মানুষের সংস্কৃতি এক ধাক্কায় অনেকখানি এগিয়ে গিয়েছিল। নব্য প্রস্তর যুগে মানব সভ্যতার এই ব্যাপক পরিবর্তনই নব্য প্রস্তরযুগের বিপ্লব নামে পরিচিত


 নব্য প্রস্তর যুগের বিভিন্ন দিক :-

নব্য প্রস্তর যুগের মানব সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক নিয়ে নীচে আলোচনা করা হল

(ক) পশুপালন :- নব্য প্রস্তর যুগে মানুষেরা পশুশিকারের পাশাপাশি পশুপালন করতে শেখে। কুকুর ছিল মানুষের প্রথম গৃহপালিত পশু। এ ছাড়া গোরু, ভেড়া, উট, শূকর, মোষ, ছাগলকেও তারা এই সময় থেকে পালন করতে শুরু করেছিল। তারা এই সমস্ত পশুর দুধ এবং মাংস খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করত।

(খ) কৃষির সূচনা :- নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ প্রথম কৃষিকাজের কৌশল উদ্ভাবন করে। কৃষিকাজ শুরু করার ফলে মানুষ এ সময় খাদ্য সংগ্রহকারী থেকে খাদ্য উৎপাদনকারীতে পরিণত হয়।

(গ) স্থায়ী বসতির সুচনা :- নব্য প্রস্তর যুগে কৃষির আবিষ্কারের পাশাপাশি মানুষ খাদ্য ও বসবাসের উপযোগী জায়গা নির্বাচন করে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে। ফলে মানুষের যাযাবর জীবনের অবসান ঘটে এবং মানুষ সভ্যতার অগ্রগতির দিকে আরও এক ধাপ অগ্রসর হয়।

 

নব্য প্রস্তর যুগের গুরুত্ব :-

নব্য প্রস্তর যুগের বেশ কিছু গুরুত্ব চোখে পড়ে। যেমন—

(ক) হাতিয়ারের প্রকৃতি :- এই যুগে হাতিয়ারগুলি অনেক উন্নত ও মসৃণ এবং ছুঁচোলো হয়।

(খ) কৃষির সূত্রপাত ও বিকাশ :- এই সময়ে কৃষির সূত্রপাত ও বিকাশ ঘটে।

(গ) উন্নত পশুপালন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা :- পশুপালন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এ সময়ে প্রভূত উন্নতি লক্ষ করা যায়।

(ঘ) স্থায়ী বাসস্থান :- এ সময়ে সমাজবদ্ধ এবং পরিবারভুক্ত মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকে।

(ঙ) ভাষার বিকাশ :- এই সময়ে ভাষার বিকাশ ঘটে।

(চ) শিল্পকলার বিকাশ :- চিত্রের ব্যবহারের ফলে এ সময় শিল্পকলারও বিকাশ ঘটে।

উপসংহার :- সবশেষে বলা যায় নব্য প্রস্তর যুগের উপরোক্ত পরিবর্তন মানবসমাজকে সভ্যতার দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়। তাই এই যুগের গুরুত্বকে কোনোমতেই অস্বীকার করা যায় না।

 

১১. শিকারি ও খাদ্য সংগ্রাহক আদিম মানুষের সংস্কৃতি সম্বন্ধে যা জানো লেখো। 

অথবা 

প্রাচীন প্রস্তর যুগের সংস্কৃতি সম্বন্ধে আলোচনা করো।

অথবা,

পুরাতন প্রস্তর যুগের মানুষের জীবনযাপন প্রণালী সম্পর্কে আলোচনা করো।

উত্তর :- যে-যুগে মানুষ পাথরের তৈরি অস্ত্রশস্ত্র ও জিনিসপত্র দিয়ে নানা কাজ করত, তাকে পুরাতন প্রস্তর যুগ বলা হত। ধাতুর যুগের আগে অর্থ ৫০,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে প্রায় ৭০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত এই যুগ পায়ী হয়েছিল। এই যুগে মানুষ এবড়োখেবড়ো, ভোতা, 'অসণ পাথর খণ্ডকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করত। এই সময় মানুষ কৃষিকাজ জানত না, এই সময় তারা দলবদ্ধভাবে বলগা হরিণ, বাইসন, ম্যামথ প্রভৃতি জন্তু শিকার করে নিজেদের খাদ্যসমস্যা মেটাত।

 

প্রাচীন প্রস্তর যুগের সংস্কৃতি :-

(ক) হাতিয়ার :- প্রাচীন প্রস্তর যুগের প্রথম দিকে পাথরের হাতিয়ার ব্যবহারের সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। উত্তর ফ্রান্সের সিন নদীর উপত্যকায় অ্যাবোভিল নামক স্থানে এই যুগের পাথরের অস্ত্র প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছিল বলে, এটি অ্যাবোভিল সংস্কৃতি বা চিলিয়ান সংস্কৃতি নামে পরিচিত। চিলিয়ান সংস্কৃতি অন্তত ৪ লক্ষ বছরের পুরোনো বলে অনুমান করা হয়। এই সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য হল হাতকুঠার বা গাঁইতির মতো হাতিয়ার সৃষ্টি। পাথর ছাড়া কাঠের হাতিয়ার নির্মাণের যে-কৌশল ব্যবহৃত হত তাকে 'Flake tool industry' বলা হত। হাতকুঠার, নানা ধরনের কাটারি প্রভৃতি ছোটোখাটো ও মাঝারি ধরনের হাতিয়ার এই সময় ব্যবহৃত হয়। উচ্চ পুরাপ্ৰস্তর পর্বের ইউরোপে পাঁচটি সংস্কৃতির স্তর দেখা যায়। যথা-

আদি পেরিগেডিয়, অরিগনেসীয়, অন্ত পেরিগোর্ডিয়, সলুটিয় ও ম্যাগলেনীয়। ম্যাগডালেনীয় সংস্কৃতির যুগে ত্রিভুজ ও বহুভুজাকার হাতিয়ারগুলি সৃষ্টি হয়েছিল।

(খ) ভাষার উদ্ভব :- প্রাচীন প্রস্তর যুগে মানুষের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদানের জন্য ভাষার উৎপত্তি হয়েছিল বলে মনে করা হয়। প্রথম দিকে বিভিন্ন সাংকেতিক শব্দের ব্যবহার থেকেই ভাষার উৎপত্তি হয়েছিল। একই গোষ্ঠীর মানুষেরা একসঙ্গে বসবাসের সময় নিজেদের মধ্যে ভাবের আদানপ্রদানের জন্য ভাষার উদ্ভব হয়েছিল।

গ) ধর্ম বিশ্বাস ও সামাজিক শ্রেণিবিভাগ :- প্রাচীন প্রস্তর যুগে মানুষেরা প্রাকৃতিক শক্তিগুলিকে দেবতারূপে মানতে শুরু করে। দেবতাকে তুষ্ট করার জন্য তারা নানাধরনের পদ্ধতি প্রয়োগ করত। প্রাচীন প্রস্তর যুগে পুরোহিত, চিকিৎসক, শিক্ষক, জ্যোতির্বিদ প্রভৃতি শ্রেণির উদ্ভব হয়েছিল বলে মনে করা হয়।

উপসংহার :- এসময় মানুষ খাদ্যের পানে। যাযাবর বৃত্তি অবলম্বন করে পথরের ভেতা ও অসমূণ হাতিয়ারের সাহায্যে পশুশিকার করত। ঠান্ডার প্রকোপ থেকে বাঁচতে পশুর চামড়া ব্যবহার এবং তাগুনের ব্যবহার করত। এভাবেই মানবজাতির পূর্ব পুরুষদের জীবনের প্রাথমিক পর্বের সুত্রপাত ঘটেছিল।


 ১২. টীকা লেখো :- পুরাতন প্রস্তর যুগ।

উত্তর :- মানব সভ্যতার উষালগকে পুরাতন প্রস্তর যুগ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই পর্বে আধুনিক মানুষের আবির্ভাব হয়নি। এই সময় ভারতবর্ষে হোমো হাবিলিস নামে এক মনুষ্য-প্রায় জীবের আবির্ভাব হয়েছিল এই পর্বের সূত্রপাত হয়েছিল আনুমানিক নিম্ন প্লেইস্টোসিন যুগে।

সময় পর্ব :-

পুরাতন প্রস্তর যুগের সময় পর্ব নিয়ে বিতর্ক আছে। বিশেষ করে এই পর্বের সূত্রপাত ঠিক কখন হয়েছিল তা বলা বেশ কষ্টকর। কারও মতে, এই পর্বের সূত্রপাত হয়েছিল কুড়ি লক্ষ বছর পূর্বে আর শেষ হয় আনুমানিক নয় হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে।

হাতিয়ার :-

এই যুগে হাতিয়ারের টাই তৈরি হত পাথর দিয়ে তবে সেগুলি মসৃণ ছিল। পাথরের অস্ত্রগুলির অধিকাংশই ছিল হাতকুঠার। হাতিয়ারগুলি সাধারণত বড়ো বড়ো পাথর থেকে তৈরি হত। পাথর ছাড়া কাঠের হাতিয়ারও এই সময় ব্যবহৃত হত, তবে কাঠের হাতিয়ারগুলি সবই প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে।

বিশেষত্ব :-

এই পর্বকে আবার ৩টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা

(ক) নিম্ন পুরাপ্রস্তর উপপর্ব

(খ) মধ্য পুরাপ্রস্তর উপপর্ব

(গ) উচ্চ পুরাপ্রস্তর উপপর্ব। এই পর্বে হোমো হাবিলিস থেকে হোমো ইরেকটাস এবং তা থেকে হোমো স্যাপিয়েন্স এবং আধুনিক মানুষের জন্ম হয়েছিল। এই পর্বেই হাতিয়ারের পরিবর্তন এবং গুহার দেওয়ালে চিত্র অঙ্কন শুরু হয়।

প্রত্নক্ষেত্র :-

ভারতে এই পর্বের প্রাচীনতম নিদর্শন পাওয়া গেছে। কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে। এ ছাড়া পশ্চিম পাঞ্জাবের সোয়ান অববাহিকা অঞ্চলে, পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুরের লালগড়, কাঁকড়াঝোড় প্রভৃতি জায়গায় এই পর্বের নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে।

 

১৩. মানবজাতির বিবর্তনের ইতিহাস আলোচনা করো।

উত্তর :- মানবজাতির উদ্ভব ও বিবর্তন একটি আকর্ষণীয় বিষয়। মানব সদৃশ্য জীবের প্রথম আবির্ভাব হয়েছিল প্রায় ৫.৬ লক্ষ বছর আগে। আর আধুনিক মানবের জন্ম হয়েছিল প্রায় ৬০ হাজার বছর আগে। মাঝখানের এই দীর্ঘ পথ ধরে চলেছিল মানববিবর্তন। এই বিবর্তনের পথে জন্ম নিয়েছিল বিভিন্ন মানব প্রজাতি বা গোষ্ঠী। মানব জীবাশ্ম, ব্যবহৃত পাথরের অস্ত্র এবং গুহাচিত্রগুলি মানব বিবর্তনের ইতিহাস জানতে সাহায্য করে। এইসব পর্বে মানুষের খাদ্য সংগ্রহের পদ্ধতি, জীবনযাপন পদ্ধতি ভিন্ন ভিন্ন ছিল। মানুষের শারীরিক গঠনও ছিল ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির

 

মানব বিবর্তন :-

প্রথমদিকে যখন মানব বিবর্তনের ইতিহাস জানতে জীবাশ্ম বা ফসিলগুলিকে ব্যবহার করা শুরু হয়। তখন অনেকেই বিবর্তনের এই তথ্যটিকে জানতে চায়নি। কারণ বেশিরভাগ ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে মানুষ সৃষ্টি করেছে ঈশ্বর। বাইবেল অনুসারে আদম ও ঈভের সন্তান ছিল মানব প্রজাতি। অবশ্য ডারউইনের অরিজিন অব স্পিসিস গ্রন্থ উপরোক্ত ধারণার ওপর আঘাত হানে। যাইহোক, নীচে এই ব্যাপারে আলোকপাত করা হল

(ক) হোমিনয়েড :- হোমিনয়েড হল ‘গ্রুপ জাতীয় প্রাণী গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীর আবির্ভাব প্রায় ২৪ লক্ষ বছর আগে হয়েছিল। এদের বৈশিষ্ট্য হল মস্তিষ্ক ছোটো, চার পায়ে হাঁটা এবং সামনের অংশের (হাতের) নমনীয়তা ছিল।

(খ) হোমিনিড :- হোমিনয়েড বিবর্তিত হয়ে এসেছিল হোমিনিড নামক গোষ্ঠী। হোমিনিডেরা হোমিনিড নামক গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিল। এদের বৈশিষ্ট্য হল বড়ো মস্তিষ্ক, সোজা হয়ে দু-পায়ে হাঁটতে পারে এবং হাতের ব্যবহার করতে পারে। হোমিনিডদের আবার কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন এদের মধ্যে অস্ট্রালোপিথেকাস ও হোমো উল্লেখযোগ্য।

(গ) অস্ট্রালােপিথেকাস :- ‘অ’ শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ 'Austral এবং গ্রিক শব্দ 'Pithekas' থেকে।

Austral শব্দের অর্থ হল 'Southern' এবং ekas শব্দের অর্থ 'Ape' সম্ভবত ‘এপ’ জাতীয় প্রাণীর সঙ্গে মানুষের মিল থাকায় এই জাতীয় নামকরণ করা হয়েছে। অ’গোষ্ঠীর সদস্যরা বেশিরভাগ সময় গাছে থাকত। তাদের হাত দুটি ছিল লম্বা বাঁকা এবং এরা পুরোপুরি সোজা হয়ে চলতে পারত না। আনুমানিক ৪০ লক্ষ থেকে ৩০ লক্ষ বছর আগে পূর্ব আফ্রিকার ওলড়ভাই জর্জ নামক স্থানে প্রথম (১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুলাই) এই প্রজাতির জীবাশ্মের সন্ধান পাওয়া যায়।

(ঘ) হোমো হাবিলিস :- হোমো হাবিলিস গোষ্ঠীর জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছে আনুমানিক ২৬ লক্ষ থেকে ১৭ লক্ষ বছর আগে ইথিয়োপিয়ার ‘ওমো (Omo) এবং আফ্রিকার ওলডুভাই জর্জ নামক স্থানে। এই প্রজাতি হাতিয়ার তৈরিতে অধিক পারদর্শী ছিল।

(ঙ) হোমো ইরেকটাস :- প্রায় ২০লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার বছর আগে পৃথিবীতে হোমো ইরেকটাস গোষ্ঠীর আবির্ভাব হয়েছিল। হোমো হাবিলিস গোষ্ঠীর বিবর্তনের মাধ্যমে হোমো ইরেকটাস প্রজাতির আবির্ভাব হয়েছিল। এদের মস্তিষ্কের আকার ছিল বড়ো (১০০০ ঘন মি) এবং এদের পেশিশক্তি ছিল বেশি। জার্মানির নিয়ানডারে এই প্রকৃতির জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছে। এরা নিয়ানডারথাল মানবজাতি নামে পরিচিত। )

(চ) হোমো স্যাপিয়েন্স :- হোমো ইরেকটাস প্রজাতি প্রজাতিতে বিবর্তনের মাধ্যমে হোমো স্যাপিয়েন্স পরিণত হয়। এই প্রজাতি প্রায় ২ লক্ষ ৩০ হাজার বছর পূর্বে আবির্ভূত হয়। এরা অনেক বেশি বুদ্ধিমান ও হাতের ব্যবহারে তুলনামূলকভাবে পারদর্শী ছিল। এদের থেকেই আধুনিক মানুষের উৎপত্তি হয়েছে।



আরও পড়ুন......



File Details
File Name/Book Name ষষ্ঠ শ্রেনীর প্রথম অধ্যায় ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর
File Format PDF
File Language Bengali
File Size 215 KB
File Location GOOGLE DRIVE
Download Link Click Here to Download



Join Telegram... Members






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top