বাংলায় কারিগরি ও বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশ সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা
বাংলায় কারিগরি ও বিজ্ঞান শিক্ষার ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করো।
ভূমিকা :বাঙালির জীবনে শিক্ষা ও বিজ্ঞানচর্চার সূচনা যে ব্রিটিশ শাসনের সূত্রপাতের দ্বারাই ঘটেছিল সেটা বলা একেবারেই ঠিক নয়। যুক্তিবাদ ও বিজ্ঞানচর্চার নিদর্শন আমরা প্রাচীন ও মধ্যযুগেও পেয়ে থাকি। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃত বিজ্ঞানসম্মত জনশিক্ষার সূত্রপাত হয়েছিল।
বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশ
কোম্পানির শাসনের সূচনায় ভারতে সরকারি অফিস-কাছারিতে এবং প্রশাসন বিভাগে সামান্য ইংরেজি জানা কেরানি দিয়ে কাজ চালিয়ে নেওয়া হত। কিন্তু এদেশে সড়ক নির্মাণ, সেতু নির্মাণ, রেলপথ স্থাপন ও বন্দর নির্মাণের সময় যথেষ্ট সংখ্যক কারিগরের অভাব দেখা দেয়। সেই অভাব দূর করার জন্য সরকার এদেশে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটলে বাংলাতেও কারিগরি ও বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার করতে থাকে। এর ফলস্বরূপ একে একে গড়ে ওঠে উঠতে থাকে— [i] 'দ্য ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স',[ii] 'জাতীয় শিক্ষাপরিষদ',[iii] 'বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, [iv] 'বসু বিজ্ঞান মন্দির',[v] 'কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ, বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশে এইসব প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।
i)ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স ( IACS) : ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই ডাঃ মহেন্দ্রলাল সরকার প্রতিষ্ঠা করেন ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েসন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স' নামক একটি বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণা মূলক প্রতিষ্ঠান। রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে এখানে গবেষণা চলতো। এখানে গবেষণা করে বিশ্ববিখ্যাত হয়েছেন নোবেল বিজয়ী সি ভি রমণ (১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ), মেঘনাদ সাহা, জগদীশচন্দ্র বসু, আশুতোষ মুখার্জী প্রমুখ।
ii)জাতীয় শিক্ষা পরিষদ' : 1905 খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে শুরু হয় স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন। জাতীয় নেতারা এইসময় ব্যঙ্গ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে 'গোলদীঘির গোলামখানা' বলে উল্লেখ করেন এবং এই প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করার জন্য ছাত্রদের আহ্বান জানান। এইসময় ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থাকে বিদেশি সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার জন্য এবং ভারতীয়দের জাতীয় আদর্শে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে স্বদেশি আন্দোলনের সময় 1906 খ্রিস্টাব্দের 11ই মার্চ জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গড়ে ওঠে।
iii)বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট:-১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে তারকনাথ পালিতের প্রচেষ্টায় কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট' নামে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কলা বিভাগের পাশাপাশি রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, শিল্প প্রযুক্তি প্রভৃতি বিষয়ে এখানে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা হয়।
iv)বসু বিজ্ঞান মন্দির:ভারতে আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণার জন্য স্যার জগদীশচন্দ্র বসু ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় বসু বিজ্ঞান মন্দির' বা 'বোস ইনস্টিটিউট' প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন বিদ্যা, উদ্ভিদ বিদ্যা, পরিবেশ বিজ্ঞান, বায়ো ফিজিক্স, বায়ো কেমিস্ট্রি ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণার ব্যবস্থা হয়।
v)‘কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ' : 1905 খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী ও বয়কট আন্দোলনের প্রসার ঘটতে থাকে, এই সময় বাংলার জাতীয়তাবাদী নেতারা বিদেশি নিয়ন্ত্রণমুক্ত স্বদেশি বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞান শিক্ষার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরই ফলস্বরূপ 1914 খ্রিস্টাব্দে ১৪ই আগষ্ট গড়ে ওঠে 'কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ'। স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় কলকাতা বিজ্ঞান কলেজকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত করার চেষ্টা করেছিলেন।
উপসংহার : সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ এবং জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জোয়ারে বাংলাদেশে একাধিক কারিগরি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার বিকাশের ধারায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন এই প্রতিষ্ঠানগুলি পরবর্তীকালে গবেষণা ও বিজ্ঞান সাধনার এক একটি তীর্থক্ষেত্রে পরিণত হয়, বহু মনীষার জন্ম হয় এই প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে। এভাবে বাংলার বিজ্ঞান চর্চার সৌরভ সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন......
File Details |
|
File Name/Book Name | মানুষ প্রকৃতি ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীনাথের চিন্তার সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর। |
File Format | PDF |
File Language | Bengali |
File Size | 84 KB |
File Location | GOOGLE DRIVE |
Download Link |