বাংলার নমঃশূদ্র আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো || মাধ্যমিক ইতিহাস সপ্তম অধ্যায় || বিশ শতকের ভারতে নারী ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন

0

বাংলার নমঃশূদ্র আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো||মাধ্যমিক ইতিহাস সপ্তম অধ্যায়||বিশ শতকের ভারতে নারী ছাত্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আন্দোলন


বাংলার নমঃশূদ্র আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা 

প্রিয় মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা,

আজকে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো বাংলার নমঃশূদ্র আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো  অথবা বিশ শতকে বাংলায় নমঃশূদ্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও  অথবা নমঃশূদ্র আন্দোলনের উপর একটি টীকা লেখ। অথবা উপনিবেশিক শাসনকালে বাংলার নমঃশূদ্র আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর অথবা নমঃশূদ্র আন্দোলনের উদ্ভব ও বিকাশ সম্পর্কে কি জানো। এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর একটিই। তো বন্ধুরা এগুলি তোমাদের ফাইনাল পরিক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন হবে।


ভূমিকা:- ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতের দলিত সম্প্রদায় তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য - যে সমস্ত আন্দোলনগুলি শুরু করে বাংলার 'নমঃশূদ্র' বা 'চণ্ডাল' বা ‘মতুয়া’ আন্দোলন (১৮৭২-১৯৪৭ খ্রি.) ছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

বসবাসঃ- নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল পূর্ববঙ্গের মূলত ঢাকা, খুলনা, ময়মনসিংহ, যশোহর, ফরিদপুর বাখরগঞ্জ প্রভৃতি জেলায়।

আন্দোলনের কারণ:-

i)নমঃশূদ্রদের অর্থনৈতিক অবস্থাঃ- নমঃশূদ্রদের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষিকাজ। পূর্ববঙ্গের হিন্দু কৃষকদের প্রায় ৯০ শতাংশ ছিল নমঃশূদ্র শ্রেণিভূক্ত অথচ নমঃশূদ্র অধ্যুষিত এলাকায় উচ্চবর্ণের হিন্দু ও সৈয়দ মুসলমানদের একচেটিয়া অধিকার ছিল। তাঁতবোনা, মাছধরা, নৌকা চালানো, অপরের জমি ও বাড়িতে দিন মজুরের কাজ করে তারা কোনোরকমে জীবনযাপন করত। দারিদ্র্য ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী।

ii) নমঃশূদ্রদের সামাজিক অবস্থা : উচ্চবর্ণের হিন্দুরা নমঃশূদ্রদের অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখত। তাদের বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন,বঞ্চনার শিকার হতে হত। সমাজের সকলের সঙ্গে শিক্ষালাভ, চিকিৎসা পরিষেবা লাভ ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ প্রভৃতি থেকে এরা ছিল বঞ্চিত।

iii)ধর্মপ্রচারকের নেতৃত্ব : নমঃশূদ্রদের ধর্মগুরু ছিলেন শ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর। তিনি ‘মতুয়া' নামে এক নতুন ধর্ম সম্প্রদায় তৈরি করেন । মতুয়া ধর্মকে কেন্দ্র করে নমঃশূদ্র আন্দোলন শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র শ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের সময় এই আন্দোলন আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে নমঃশূদ্র আন্দোলনে নেতৃত্বদান করেন রাজেন্দ্রনাথ মণ্ডল, মুকুন্দবিহারী মল্লিক, বিরাটচন্দ্র মণ্ডল, যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল, প্রমথরঞ্জন ঠাকুর প্রমুখ।

নমঃশূদ্র আন্দোলনের সূচনা:- ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে বাংলার ফরিদপুর ও বাখরগঞ্জ অঞ্চলে নমঃশূদ্র আন্দোলনের সূচনা হয়। ওই অঞ্চলের এক গ্রামের এক বিশিষ্ট নমঃশূদ্রের মায়ের শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে গ্রামের উচ্চ-সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষদের নিমন্ত্রণ করলে তারা সেখানে অংশগ্রহণে অস্বীকৃত হয়। নমঃশূদ্ররাও তাদের সঙ্গে সমস্ত রকম সম্পর্ক ছিন্ন করে। যদিও তাদের অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী হয়নি তবুও স্বল্পস্থায়ী এই আন্দোলন পরবর্তীকালে বৃহত্তর নমঃশূদ্র আন্দোলনের সূচনা করে।

শ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুরের ভূমিকা : নমঃশূদ্রদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রে প্রথম সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন শ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, শিক্ষার প্রসার ছাড়া নমঃশূদ্রদের সচেতনতা বৃদ্ধি সম্ভব নয়। তাই শিক্ষার বিস্তার, যাত্রাগান, সাপ্তাহিক মুষ্ঠি সংগ্রহ ইত্যাদির মাধ্যমে তিনি নমঃশূদ্রদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করেন।

সংগঠন স্থাপন : নমঃশূদ্রদের অবস্থার উন্নয়নে ও তাদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য বিভিন্ন সংগঠন গড়ে ওঠে। এগুলির মধ্যে 'নিখিল বঙ্গ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন' (১৮৮১ খ্রি.), 'উন্নয়নী সভা' (১৯০২ খ্রি.), 'বেঙ্গল নমঃশূদ্র অ্যাসোসিয়েশন’ (১৯১২ খ্রি.), নিখিল বঙ্গ নমঃশূদ্র সমিতি' (১৯২৬ খ্রি.), ‘বেঙ্গল ডিপ্রেসড ক্লাসেস অ্যাসোসিয়েশন' (১৯২৬ খ্রি.), 'অল ইণ্ডিয়া ডিপ্রেসড্ ক্লাসেস অ্যাসোসিয়েশন' (১৯৩০ খ্রি.) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

দাবিদাওয়া আদায় : উপরিউক্ত বিভিন্ন সংগঠনগুলির মাধ্যমে নমঃশূদ্ররা নিজেদের দাবিদাওয়াগুলি আদায়ে উদ্যোগী হয়।

(i) তারা শিক্ষার সুযোগ ও সরকারি চাকরির দাবি করে ও অনেকক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা লাভ করে।

(ii) তারা পৃথক নির্বাচন ও স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিধি বৃদ্ধির দাবি জানায়। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইনে বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভায় তাদের একজন প্রতিনিধি মনোনয়নের দাবি স্বীকৃত হয়।

(iii) নিজেদের স্বার্থে তারা ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ‘বঙ্গভঙ্গ'কে সমর্থন করে, আম্বেদকরের ‘পৃথক নির্বাচন' ও ব্রিটিশ সরকারের সাম্প্রদায়িক বাঁটোযারা নীতিকে সমর্থন জানায়।

(iv) নমঃশূদ্ররা উচ্চবর্ণের সংস্কৃতি যেমন উপবীত ধারণ, এগারো দিন অশৌচ পালন ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে।

(v) তাদের দাবির ভিত্তিতে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারিতে চণ্ডাল নামের পরিবর্তে তাদের ‘নমঃশূদ্র' নামে স্বীকৃতি দান করা হয়।

উপসংহার : বাংলার দলিত আন্দোলনের ইতিহাসে নমঃশূদ্রদের আন্দোলন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আপাতদৃষ্টিতে বঙ্গভঙ্গ ও সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি সমর্থন, দলিতদের পৃথক নির্বাচনের দাবি জাতীয়তা-বিরোধী মনে হতে পারে। তবে তাদের দাবিগুলি ছিল যুক্তিসংগত। দেশভাগের সময় নমঃশূদ্র নেতা যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডল পূর্ব পাকিস্তানে থাকার সিদ্ধান্ত নিলেও প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের নেতৃত্বে নমঃশূদ্ররা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় উদ্বাস্তুরূপে বসতি স্থাপন করে। এরপর থেকে নমঃশূদ্র আন্দোলন তার গতি ও শক্তি হারায়। স্বাধীন ভারতে এখনও নমঃশূদ্ররা সামাজিক ও আর্থিক দিক থেকে অবহেলিত। শুধু আইনের দ্বারা নয়, এর প্রতিকারে প্রয়োজন শিক্ষার প্রসার ও উদার মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি।

  • বন্ধুরা ২০২২ সালের অধ্যায় ভিত্তিক ইতিহাস সাজেশন এর জন্য  Click Here
  • নারী শিক্ষা বিস্তারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো Click Here

File Details

 

File Name/Book Name

বাংলার নমঃশূদ্র আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

File Format

PDF

File Language

Bengali

File Size

100 KB

File Location

GOOGLE DRIVE

Download Link

Click Here to Download PDF File


Join Telegram... Members

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top