মানুষ প্রকৃতি ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীনাথের চিন্তার সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর। অথবা রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাচিন্তা বিশ্লেষন কর

মানুষ প্রকৃতি ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীনাথের চিন্তার সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর। অথবা রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাচিন্তা বিশ্লেষন কর

মানুষ প্রকৃতি ও শিক্ষার বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তা 


প্রিয় মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা,
আজকে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো দশম শ্রেনী পঞ্চম অধ্যায় বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ: বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা থেকে মানুষ প্রকৃতি ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীনাথের চিন্তার সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর। এই প্রশ্নের উত্তরটি তোমাদের "রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাচিন্তা" বিশ্লেষন কর এটিরও উত্তর। এটি তোমাদের ফাইনাল পরিক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন হবে।


ভুমিকাঃ- উনিশ শতকে মেকলে মিনিট-এর মাধ্যমে বাংলাদেশসহ ব্রিটিশ শাসিত অঞ্চলে উইলিয়াম বেন্টিং পাশ্চাত্য শিক্ষা ব্যবস্থা কার্যকরী করে। এই শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে বাস্তব জীবনের কোন মিল না থাকায় অনেক রাজনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদরা এই শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি এই শিক্ষার একজন তীব্র সমালোচক ছিলেন।

রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে উপনিবেশিক শিক্ষাঃ-

i)যান্ত্রিকতা- তার মতে তৎকালীন ভারতের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে কোন প্রানের যোগ ছিলনা। তার মতে এই ধরনের শিক্ষা শিক্ষার্থীদের নিষ্ক্রিয় যন্ত্রে পরিনত করে। লিখেছেন যে “ছেলেদের মানুষ করে তোলার জন্য যে যন্ত্র তৈরি হয়েছে তার নাম ইস্কুল এবং সেটার মধ্য দিয়ে মানবশিক্ষার সম্পূর্ণতা হতে পারে না। রবীন্দ্রনাথ এই যান্ত্রিক শিক্ষা থেকে মুক্তি চেয়েছিলান।

ii) একাধিপত্য প্রতিষ্ঠার শক্ষা-তার মধ্যে ভারতের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে দেশের নাড়ির যোগ নেই। তার মতে এটা ছিল একটা প্রকাণ্ড ছাঁচে ঢালা ব্যাপার। দেশের সব শিক্ষারীতিকে এক ছাচে শক্ত করে জমিয়ে দেওয়া হবে, যাতে দেশবাসীর বুদ্ধি-বৃত্তির ওপর সম্পূর্ণ একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা যায়। সুতরাং এই শিক্ষা ব্যবস্থা হলো কেরানিগিরি কল।

iii) জাতীয়তা বিরোধীঃ- এই শিক্ষা জাতীয়তা বিরোধী কারণ এটি সম্পূর্ণ পাশ্চাত্য আদর্শের অনুসরণ, ধার করা বিদ্যার পুনরাবৃত্তি ঘটায়।  এখানে যা শিখানো হয় তার ফলে “পড়া পাখি বুলি পড়া পাখির গতানুগতিক দল” সৃষ্টি হয় এবং তারা হয় বিদেশের বুলি মুখস্থ করা খাঁচার পাখি।”

iv)রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তার শান্তিনিকেতনঃ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উপরে উল্লেখিতভাবে উপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার বিরোধিতা করে সম্পূর্ণ নিজস্ব একটি শিক্ষা দর্শনের পরিকল্পনা করেছেন এবং তার পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রায়পুরের জমিদার ভুবনমোহন সিংহের কাছ থেকে যে কুড়ি বিঘা জমি কিনেছিলেন সেখানে 1901 খ্রীষ্টব্দের 22শে ডিসেম্বর 5 জন ছাত্র নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শান্তিনিকেতন।  

তার শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হল নিম্নরূপ-

প্রকৃতির কাছাকাছি আদর্শ পরিবেশের মধ্যে শিশুদের বড় করে তুলতে হবে। রবীনাথ ঠাকুর প্রাচীন ভারতের আশ্রমিক শিক্ষার ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন এবং এবং শান্তিনিকেতনের সেটার প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন। তিনি বলতেন শিক্ষক শ্রদ্ধার সঙ্গে জ্ঞান বিতরন করবেন আর শিক্ষার্থী শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। এর মাধ্যমে তিনি গুরু ও শিষ্যের মধ্যে মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন।

i)তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের ওপর জোর দিয়েছিলেন। এবং সেখানে তিনি বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালন করার ব্যবস্থাও করেন। তিনি বলতেন এসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটবে।

ii)শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠাঃ-তপোবনের আদর্শে বিশ্বাসী হয়েও তিনি পাশ্চাত্যের জড় সভ্যতাকে অশ্রদ্ধার চোখে দেখেননি। তিনি বলেছেন যে পূর্ব ও পশ্চিম এর চিত্ত যদি বিচ্ছিন্ন হয় তাহলে উভয় ব্যর্থ হবে; বাস্তবে ঘটেছেও তাই। এই জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করে তাকে বিশ্বাজাতীর মিলন ভূমিতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। তিনি বিশ্বভারতী্তে বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটাতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি এখানে চীন-জাপান ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্ডিতদের নিয়ে এসেছিলেন।

প্রকৃতি মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয়- 

রবীন্দ্রনাথের প্রকৃতি ও শিক্ষার সমন্বয়-

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাচিন্তায় প্রকৃতি, মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয় ঘটেছিল। তিনি শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করে প্রকৃতি মানুষ ও শিক্ষা বিষয়ে হাতে কলমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন।  রবীন্দ্রনাথের মনে করতেন যে শিক্ষা হবে মুক্ত প্রকৃতির কোলে মুক্ত আকাশের নিচে। চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তিনিও খোপওয়ালা বড় বাক্স বলে অভিহিত করেছেন। তার উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃতির কাছে থেকে আদর্শ প্রাকৃতিক পরিবেশে শিশু ও কিশোরদের বড় হতে সাহায্য করা। রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন যে প্রকৃতির সংস্পর্শে শিশুর দেহ মন সুগঠিত হয়। শিশুদের পরম সত্তাকে নিবিড় ভাবে অনুধাবন করতে পারে।

রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা চিন্তায় মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয়-

রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন শিক্ষা এমন হওয়া উচিত যাতে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে ব্যবধান তৈরি হবে না। এজন্যই শান্তিনিকেতনের সঙ্গে আশেপাশে গ্রামগুলির যোগাযোগ ছিল। গ্রামের মানুষের প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি ও সকলের মিলন ক্ষেত্র হিসেবে পৌষ মেলার আয়োজন করা হয়। এই মেলায় আশেপাশের গ্রামের মানুষেরা তাদের ঘরোয়া সামগ্রী যেমন মাটির হাড়ি,বেতের তৈরি ধামা,কুল্‌ লোহার তৈরি করা কড়াই হাতা প্রভূতি বিক্রি করে। তাছাড়া জমিতে উৎপন্ন ফসলও তারা বিক্রির জন্য নিয়ে আসে অর্থাৎ বিশ্বভারতীর শিক্ষা ছিল মানবতাবোধের শিক্ষা, মূল্যবোধের শিক্ষার যে শিক্ষা আজকের সমাজের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

উপসংহারঃ- রবীন্দ্রনাথ বুঝতে পেরেছিলেন ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থায় মানুষের চারিত্রিক বলিষ্ঠতা, মনের প্রসারতা ও বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। তাই তিনি ব্রিটিশ প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন এবং শান্তিনিকেতন বিশ্বভারতী গড়ে তোলে মনুষ্যত্ববোধের শিক্ষার জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।আর এটাই হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষা যা তার শিক্ষাচিন্তা ও দর্শনের মূল কথা।


আরও পড়ুন......

File Details

 

File Name/Book Name

মানুষ প্রকৃতি ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীনাথের চিন্তার সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর। 

File Format

PDF

File Language

Bengali

File Size

84 KB

File Location

GOOGLE DRIVE

Download Link

Click Here to Download PDF File



Join Telegram... Members
Next Post Previous Post
2 Comments
  • Unknown
    Unknown ২৩ অক্টোবর, ২০১৯ এ ৪:১০ PM

    Ratangain20@gmail.com

  • Unknown
    Unknown ২৯ জুলাই, ২০২০ এ ১০:২০ AM

    Awesome and prompt answer💯💯💯

Add Comment
comment url