ভারতীয় উপমহাদেশে পুরােনাে পাথরের যুগের মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে কী জানা যায়?
ভারতীয় উপমহাদেশে পুরােনাে পাথরের যুগের মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে কী জানা যায়?
ভূমিকা:- ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রাচীন প্রস্তর যুগের বা পুরােনাে পাথরের (Paleolithic Age)যুগের মানুষ ছড়িয়ে পড়েছিল তার প্রমাণ পাওয়া গেছে কাশ্মীরের সােয়ান উপত্যকা, পাকিস্তানের পটোয়ার মালভূমি, হিমাচল প্রদেশের শিলিক পর্বতণ্ডল, কর্ণাটরে তুগি উপত্যকা, রাজস্থানের দিওয়ানা, মহারাষ্ট্রের নেভাসা, মধ্যপ্রদেশের নর্মদা উপত্যকা প্রভৃতি অঞ্চলে।
হাতিয়ারের ব্যবহার:- পুরােনাে পাথরের যুগের মানুষের হাতিয়ারগুলির বেশির ভাগই ছিল হাতকুঠার ও চপার জাতীয় হাতিয়ার বেশিরভাগ হাতিয়ার ভারী নুড়ি পাথর দিয়ে তৈরি হত। পরবর্তীকালে পাথরের হাতিয়ার তৈরির পদ্ধতির বল হয়। হাতিয়ারগুলি ছেটো, হালকা ও ধারালাে হয়। ফলে এই সময় ভারী নুড়ি পাথরের হাতিয়ারের ব্যবহার কমতে থাকে। পুরােনাে পাথরের যুগের মাঝের পর্বে প্রধান হাতিয়ার ছিল ছুরি। এই দুরি জাতীয় হাতিয়ারের ব্যবহার পুরােনাে পাথরের যুগের শেষপর্যন্ত চলেছিল।
বাসস্থান:- পুরােনাে পাথরের যুগের মানুষ কোনাে একজায়গায় পাকাপাকি বসতি গড়ে তােলেনি। কোনাে কোনাে সময়ে তারা প্রকৃতিক গুহ্যত থাকত! আবার তা না পেলে খােলা আকাশের নীচে দিন কাটাত। ভারতীয় উপমহাদেশে নতুন পাথরের যুগের আদিম মানুষের জীবনযাত্রার বিভিন্ন দিকগুলি আলােচনা করাে। উত্তর আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব 8 হাজার থেকে খ্রিস্টপূর্ব 4 হাজার অব্দকে নব্য প্রস্তর যুগ বা নতুন পাথরের যুগ (Neolithic Age) বলে ধরা হয়। এই সময়কার মানুষের হাতিয়ার অনেক হালকা ও ধারালাে হয়। মানুষ পশুপালন ও কৃষিকাজ এবং মাটির পাত্র বানানাে শুরু করে। নতুন পাথরের যুগে মানুষ যাযাবর জীবন থেকে ছেড়ে একটি অঞলে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকে।
সমাজ:- নতুন পাথরের যুগে মানুষ গােষ্ঠীবদ্ধভাবে বসবাস করত। এই সময় সমাজে ভেদাভেদ তেমন ছিল না। সমাজের মেয়েরা বাচ্চাদের দেখাশােনা করত এবং ফলমূল জোগাড় করত।
খাবার জোগাড় করা:- পুরােনাে পাথরের যুগের মানুষ নিজেরা নিজেদের খাবার জোগাড়াতে পারত না। তারা বনের পশুশিকারক ও ফলমূল জোগাড় করে খেত। তারা দল বেধে পশুশিকাররত ও সবাই মিলেমিশে খাবার ভাগ করে খেত।
জীবিকা:- নতুন পাথরের যুগে মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষি ও পশুপালন।
i.কৃষি:- নতুন পাথরের যুগে মানুষ কৃষিকাজ শিখেছিল। তারা নিজেদের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করতে শিখেছিল। কৃষিকাজ শেখার ফলে তারা কৃষি অণ্ডলেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। ফলে মানুষ যাযাবর জীবনযাপন ছেড়ে দেয়। কৃষিতে বাড়তি ফসল ফলানাে যেত বলে সবাইকে চাষ করতে হত না। অনেকে কৃষির বদলে কারিগর বা অন্যান্য কাজ করতে পারত।
ii.পশুশিকার ও পশুপালন:- নতুন পাথরের যুগে মানুষ দল বেঁধে শিকার করতে ও পশু চরাতে যেত। শিকার ও পশুপালনের জন্য তাদের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হত। তারা শিকার ও পশুপালন করে যা পেত তা গােষ্ঠীর সবাই ভাগ করে নিত।
চাকার আবিষ্কার:- নতুন পাথরের যুগের অন্যতম উল্লেখযােগ্য আবিষ্কার ছিল চাকা। চাকাকে মানুষ পরিবহণের কাজে ও মাটির পাত্র তৈরির কাজে ব্যবহার করে। বলা হয়, সিন্ধু উপত্যকা অঞলে প্রথম চাকাযুক্ত গাড়ির প্রচলন ঘটে। চাকার আবিষ্কার মানবজীবনে বিরাট পরিবর্তন এনেছিল।
হাতিয়ার:- আদিম মানব ইতিহাসে নতুন পাথরের যুগে হাতিয়ার বানানাের কৌশল অনেক উন্নত হয়েছিল। নানান রকমের পাথরের হাতিয়ার তৈরি করা শুরু হয়। পাশাপাশি ছােটো পাথরের হাতিয়ারও এসময় ব্যবহার করা হত। অর্থাৎ বলা যায়, নতুন পাথরের যুগে মানুষের জীবনযাত্রার সর্বক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটতে থাকে।
আরও পড়ুন......
- ষষ্ঠ শ্রেণি ইতিহাস (প্রথম অধ্যায়) ১ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর
- ষষ্ঠ শ্রেণি ইতিহাস (দ্বিতীয় অধ্যায়) ১ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর
- ষষ্ঠ শ্রেণি ইতিহাস (তৃতীয় অধ্যায়) ১ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর
- ষষ্ঠ শ্রেণি ইতিহাস (চতুর্থ অধ্যায়) ১ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর
- ষষ্ঠ শ্রেণি ইতিহাস (পঞ্চম অধ্যায়) ১ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর
- ষষ্ঠ শ্রেণি ইতিহাস (ষষ্ঠ অধ্যায়) ১ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর
- ষষ্ঠ শ্রেণি ইতিহাস (সপ্তম অধ্যায়) ১ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর
- ষষ্ঠ শ্রেণি ইতিহাস (অষ্টম অধ্যায়) ১ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর
- ষষ্ঠ শ্রেণি ইতিহাস (নবম অধ্যায়) ১ নম্বরের প্রশ্ন উত্তর