অসহযোগ আন্দোলনের সময় কৃষক আন্দোলন গুলি পরিচয় দাও
অসহযোগ আন্দোলনের সময় কৃষক আন্দোলন |
প্রিয় মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা,
আজকে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো অসহযোগ আন্দোলনের সময় কৃষক আন্দোলন ||মাধ্যমিক ষষ্ঠ অধ্যায় বিশ শতকের ভারতে কৃষক শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন অধ্যায় ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর||বিশ শতকের ভারতে কৃষক শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন|ইতিহাস প্রশ্নত্তোর|Madhyamik History Question and Answer|History chapter 6 question answer|10th History Examination|দশম শ্রেনীর ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর|দশম শ্রেণী ষষ্ঠ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর|এই ওয়েবসাইটে মাধ্যমিক ষষ্ঠ অধ্যায় ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|Ten History Examination- মাধ্যমিক পঞ্চম অধ্যায় ৪ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর |মাধ্যমিক পঞ্চম অধ্যায় ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর পেয়ে যাবে এগুলি তোমাদের ফাইনাল পরিক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন হবে। এছাড়াও তোমরা মাধ্যমিক ষষ্ঠ অধ্যায় ১ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর পেয়ে যাবে|
তো বন্ধুরা উত্তর-ঔপনিবেশিক ভারত: বিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব পঞ্চম অধ্যায় থেকে বহুবিকল্পভিত্তিক সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত এবং রোচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর MCQ Very Short Short Descriptive Question and Answer|তোমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে মাধ্যমিক ষষ্ঠ অধ্যায় বিশ শতকের ভারতে কৃষক শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন থেকে অসহযোগ আন্দোলনের সময় কৃষক আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করা আছে। আমাদের আশা এই প্রশ্নগুলি তোমাদের পরিক্ষায় খুবই কাজে আসবে।
অসহযোগ আন্দোলনের সময় কৃষক আন্দোলন গুলি পরিচয় দাও
ভুমিকাঃ- 1920-1922 খ্রিস্টাব্দে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কেবলমাত্র শহরের মধ্যবিত্ত ও বুদ্ধিজীবীরা নয়; শ্রমিক, কৃষক, মজুর, নারী-পুরুষ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে এই আন্দোলন যথার্থ গণআন্দোলনের রূপ পরিগ্রহ করে। এই আন্দোলনের পরিধি গ্রামাঞ্চলেও ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। যার মূল ভিত্তি ছিল কৃষক ও উপজাতি সম্প্রদায়। এই আন্দোলনের দ্বিমুখী চরিত্র লক্ষ্য করা যায়। কোথাও কোথাও জাতীয় কংগ্রেস এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল আবার অন্যত্র আন্দোলন গুলি ছিল স্বয়ংক্রিয়। ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন বাংলা, বিহার, রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ প্রভুতি স্থানে গ্রামীণ কৃষক আন্দোলনের প্রসার ঘটেছিল।
বাংলাঃ- অসহযোগ আন্দোলনের সময় বাংলার কৃষকরা অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ জনিতকরভার ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এবং জমিদারের শোষণ বাংলায় কৃষকদের সর্বনাশের শেষ সীমায় পৌঁছে দেয়। 1921 খ্রিস্টাব্দে বীরেন্দ্রনাথ শাসমল এর নেতৃত্বে মেদিনীপুরের কাঁথি ও তমলুক মহকুমা ইউনিয়নবোর্ড বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে ধনী দরিদ্র নারী পুরুষ নির্বিশেষে এই মহাকুমায় আপামর জনসাধারণ এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। আন্দোলনের চাপে সরকার নতি স্বীকারে বাধ্য হয়। এছাড়াও পাবনা,বাগুড়া বীরভূম-এ জমি জরিপ করে খাজনা নির্ধারনের কাজে স্থানীয়রা কৃষকেরা বাধা দেয় এবং কুমিল্লা, রাশাহী, রংপুর, দিনাজপুরের কৃষকরা অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেয়।
গুজরাট : গান্ধিজির আঞ্চলিক আন্দোলনে সত্যাগ্রহ আদর্শের পরীক্ষানিরীক্ষার ক্ষেত্র ছিল গুজরাটের খেদা জেলা। সত্যাগ্রহ আদর্শ তিনি। পুনরায় বারদোলিতে প্রয়োগ করেন। বারদোলিতে 1926-27 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ রাজস্বের পরিমান অত্যাধিক পরিমাণে বৃদ্ধি করা হয়েছিল।এছাড়াও ছিল উজালি পরাজ কর্তৃক কালি পরাজ দের উপর অত্যাচার। এখানকার পাতিদার এবং কালিপরাজ শ্রেণির কৃষকরা মিলিত হয় এবং তারা কংগ্রেস নেতা সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল কে সেখানে আসার জন্য অনুরোধ জানান এবং আন্দোলন শুরু করে সরকারকে কোনরকম কর না দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।সরকার আন্দোলনরত চাষীদের গরু-বাছুর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত এবং নানারকম নির্যাতন করলেও আন্দোলন থামেনি এবং শেষ পর্যন্ত 1929 খ্রিস্টাব্দে 16 জুলাই সরকার খাজনা বৃদ্ধি স্থগিত রাখার ঘোষণা করে।
উত্তরপ্রদেশ : উত্তরপ্রদেশের প্রতাপগড়, ফৈজাবাদ ও রায়বেরেলিতে বাবা রামচন্দ্রের নেতৃত্বে কিষান আন্দোলন এবং ‘ খাজনা বন্ধ’ আন্দোলন শুরু হয়। উত্তরপ্রদেশের কিষানদের বেদখলি, বেগারি প্রথা ও বেআইনি বাড়তি খাজনার বিরুদ্ধে অসন্তোষ ছিল। এ বিষয়ে কুৰ্মী সম্প্রদায়ের কিষানরাই ছিল বেশি নির্যাতিত। বাবা রামচন্দ্র তাই ‘কুমী কিষান সভা’ গড়ে তোলেন। পুলিশ বাবা রামচন্দ্রকে গ্রেফতার করলে, অহিংসভাবে থানা ঘেরাও করা হয় এবং বাবা রামচন্দ্র মুক্তি পান। উত্তরপ্রদেশ কিষান সভা নরমপন্থী নীতি গ্রহণ করলে নেহরু ও রামচন্দ্র সংঘবদ্ধভাবে ‘অযোধ্যা কিষান সভা’ (1920) তৈরি করেন।কিন্তু অচিরেই এ আন্দোলন হিংসাত্মক হয়ে উঠলে কংগ্রেসের নেতৃত্ববৃন্দ এ আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ান। এর ফলে সরকার নিষ্ঠুর দমননীতি অবলম্বন করে আন্দোলন ভেঙ্গে দেয়। যাইহোক 1921 খ্রিস্টাব্দ নাগাদ অযোধ্যা খাজনা আইন পাস করে সরকার কৃষকদের কিছুটা সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করে।
১৯২১ খ্রিস্টাব্দের শেষ এবং ১৯২২-এর সূচনায় সামন্ততান্ত্রিক অনাচারের বিরুদ্ধে যুক্তপ্রদেশের হরদৈ, বারাবাঁকি, সীতাপুর, বারাইচ প্রভৃতি অঞ্চলে এক কৃষক বিদ্রোহ ঘটে। এই বিদ্রোহ ‘একা’ বা ‘একতা’ বিদ্রোহ বা আন্দোলন নামে খ্যাত। আন্দোলন চলাকালে যেকোনো অবস্থায় কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ থাকার শপথ নেন—তাই এই আন্দোলনের নাম ‘একা’ বা ‘একতা’ আন্দোলন। আন্দোলনের সূচনা-পর্বে কংগ্রেসি নেতৃবৃন্দ এর সঙ্গে যুক্ত থাকলেও মাদারী পাশী নামে অনুন্নত সম্প্রদায়ের এক নেতাই ছিলেন এই আন্দোলনের মূল শক্তি। তার আহ্বানে অনুন্নত সম্প্রদায়ের কৃষকরা দলে দলে এই আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে। মন্ত্রপাঠ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কষকরা শপথ নিত যে, নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত খাজনা ছাড়া তারা বেশি কিছু দেবে না, জমি থেকে উচ্ছেদ করলেও তারা জমি ছাড়বে। না রসিদ ছাড়া খাজনা দেবে না, খাজনা দেবে নগদ টাকায়—শস্যের মাধ্যমে নয়, জমিদারের জমিতে বেগার খাটবে না, ইত্যাদি ক্রমে এই আন্দোলন কংগ্রেস নেতাদের হাত থেকে বেরিয়ে যায় এবং তা হিংসাশ্রয়ী হয়ে ওঠে। জমিদার ও তালুকদারদের ঘর-বাড়ি ও খামার আক্রান্ত হয় এবং কুমায়ুন অঞ্চলের হাজার হাজার মাইল সংরক্ষিত অরণ্যে অগ্নিসংযোগ করা হয়। আসরফ সিদ্দিকির মতে, যুক্তপ্রদেশে সামাজিক দস্যুতা’ (Social bandity) শুরু হয়। প্রচণ্ড নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে এই আন্দোলন দমন করা হয়। মাদারী পাশীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিহার : বিহারের দ্বারভাঙা, মজফফরপুর, ভাগলপুর, পূর্ণিয়া প্রভৃতি অঞলে প্রবল কৃষক আন্দোলন গড়ে ওঠে। চড়া ভূমিরাজস্ব, অতিরিক্ত কর এবং মূল্যবৃদ্ধির জন্য কৃষকেরা অসন্তুষ্ট ছিল। এই পরিস্থিতিতে বিশুবরণ প্রসাদ কৃষকদের সংগঠিত করেন। তিনি স্বামী বিদ্যানন্দ নামগ্রহণ করেন। তার আন্দোলনের চাপে জমিদাররা নত হয়।
রাজস্থান : অসহযোগ আন্দোলনের সময় রাজস্থানের কৃষকরাও বিদ্রোহে যোগদান করে। বিজয় সিং পথিক এবং মানিকলাল ভার্মা রাজস্থানে সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সূচনা করেন। মোতিলাল তেজওয়াত উদয়পুরের ভিল উপজাতিদের সংগঠিত করেন। জয়নারায়ণ ব্যাস মাড়ওয়ার অঞলে খাজনা বন্ধের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।
দক্ষিণ ভারত : অসহযোগ আন্দোলনের সময়কালে দক্ষিণ ভারতের কৃষকরাও বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিলেন। এই আন্দোলনের সময় কেরালার মালাবার অঞলের মোপলা বিদ্রোহ (1921খ্রীঃ) এক ব্যাপক কৃষক বিদ্রোহরূপে দেখা দেয়। এই বিদ্রোহটি ছিল জমিদারদের অন্যায় শোষণের প্রতিবাদস্বরূপ। তবে এই বিদ্রোহটি হিংসার রূপ ধারণ করলে অসহযোগ আন্দোলনের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত এই বিদ্রোহটি ব্যর্থ হয়। অন্ধ্রপ্রদেশে আল্লুরি সীতারাম রাজুর নেতৃত্বে আদিবাসী (রম্পা উপজতি)কৃষকরা মহাজনি শোষণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ(1922-24 খ্রীঃ)করেছিলেন। প্রাথমিক পর্বে এই আন্দোলন গণবিদ্রোহের আকার নিয়েছিল তবে রাজুর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে এই বিদ্রোহও গতিহারায়।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায় যে বিক্ষিপ্ত হলেও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের কৃষক সম্প্রদায় এই আন্দোলনে যোগদান করে। এক্ষেত্রে যতটা ব্রিটিশবিরোধী তার চেয়েও বেশি স্থানীয় জমিদার বিরোধী মনোভাব কৃষকদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়।
FAQs
অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কীত কিছু গুরুত্বপুর্ন প্রশ্ন যেগুলি পরিক্ষায় আসে
1. অসহযোগ আন্দোলনের জনক কে ?
উঃ- মহাত্মা গান্ধী
2. অসহযোগ আন্দোলনের প্রধান নেতা কে?
উঃ- মহাত্মা গান্ধী
3. অসহযোগ আন্দোলন কবে শুরু হয়?
উঃ- হাজার ১৯২০ কুড়ি সালের ১ আগস্ট
4. কারা অসহযোগ আন্দোলনের ধারনার বিরোধিতা করেছিলেন?
উঃ- বিপিন চন্দ্র পাল, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, অ্যানি বেসান্ত, বাল গঙ্গাধর তিলক
5. অসহযোগ আন্দোলন কবে প্রত্যাহার করা হয়েছিল?
উঃ- ১৯২২ সালে
আরও পড়ুন......
- বন্ধুরা ২০২২ সালের অধ্যায় ভিত্তিক ইতিহাস সাজেশন এর জন্য Click Here
- নারী শিক্ষা বিস্তারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো Click Here
আরও পড়ুন......
- নারী শিক্ষা বিস্তারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো Click Here
File Details |
|
File Name/Book Name | অসহযোগ আন্দোলনের সময় কৃষক আন্দোলন গুলি পরিচয় দাও |
File Format | PDF |
File Language | Bengali |
File Size | 86 KB |
File Location | GOOGLE DRIVE |
Download Link |