মাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় || ৪ ও ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর || পঞ্চম অধ্যায়:-বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ
ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় ৪ ও ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর |
প্রিয় দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা,
আজকে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, মাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় || ৪ ও ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর II পঞ্চম অধ্যায়:-বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ ||Class 10 ইতিহাস 4 এবং 8 মাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়:- বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ ||তোমরা এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দশম শ্রেনী পঞ্চম অধ্যায় থেকে ইতিহাস ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর (Class 10 History 5th Chapter 4 Marks Question Answers)||তোমরা এই অধ্যায়ের অর্থাৎ 'বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ' থেকে 1 নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর'||Madhyamik ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর'পেয়ে যাবে||Madhymik 5th Chapter 4 Marks Question answer পাবে||মাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় ||তো বন্ধুরা তোমাদের এখানে ৪ ও ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর ||পঞ্চম অধ্যায়:-বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ থেকে আলোচনা করা হয়েছে।||এগুলি তোমাদের ফাইনাল পরিক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন হবে।
আজকে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, মাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় || ৪ ও ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর II পঞ্চম অধ্যায়:-বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ ||Class 10 ইতিহাস 4 এবং 8 মাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায়:- বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ ||তোমরা এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দশম শ্রেনী পঞ্চম অধ্যায় থেকে ইতিহাস ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর (Class 10 History 5th Chapter 4 Marks Question Answers)||তোমরা এই অধ্যায়ের অর্থাৎ 'বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ' থেকে 1 নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর'||Madhyamik ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর'পেয়ে যাবে||Madhymik 5th Chapter 4 Marks Question answer পাবে||মাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় ||তো বন্ধুরা তোমাদের এখানে ৪ ও ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর ||পঞ্চম অধ্যায়:-বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ থেকে আলোচনা করা হয়েছে।||এগুলি তোমাদের ফাইনাল পরিক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন হবে।
মাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় || ৪ ও ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর || পঞ্চম অধ্যায়:-বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ
1. জাতীয় শিক্ষা পরিষদ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা অথবা টীকা লেখ জাতীয় শিক্ষা পরিষদ
ভূমিকাঃ- বঙ্গভঙ্গবিরোধী স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনে বিদেশি শিক্ষাকেও বয়কট করার ডাক দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি স্বদেশি শিক্ষার প্রসার ঘটানো হয়। শিক্ষা বিষয়ে স্বদেশি আন্দোলনের ফলে জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠিত হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল জাতীয় আদর্শে শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা।
পটভূমি: স্বদেশি বয়কট আন্দোলনে ছাত্ররা দলে দলে যোগদান করে। আন্দোলন থেকে ছাত্রদের দূরে রাখার জন্য ব্রিটিশ সরকার তিনটি সার্কুলার জারি করে।এগুলি হল— কার্লাইল সার্কুলার(1905 খ্রিষ্টাব্দের অক্টবর 10), লিয়ন সার্কুলার (1905 খ্রিষ্টাব্দের অক্টবর 16),পেডলার সার্কুলার (1905 খ্রিষ্টাব্দের অক্টবর 21), অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি : এইসব সার্কুলারগুলির বিরুদ্ধে শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু 1905 খ্রিস্টাব্দের 4 নভেম্বর কলকাতায় অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই সোসাইটির উদ্দেশ্য ছিল— স্বদেশি পণ্য বিক্রি করা, বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত ছাত্রদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি।
জাতীয় শিক্ষা পরিষদ গঠন :
i) 1905 খ্রিস্টাব্দের 5 নভেম্বর ডন সোসাইটির উদ্যোগে জাতীয় শিক্ষা প্রবর্তনের জন্য একটি বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়।
ii) 1905 খ্রিস্টাব্দে 8 নভেম্বর রংপুরে সর্বপ্রথম জাতীয় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়
iii) 1906 খ্রিস্টাব্দের 11 মার্চ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় 92 জন সদস্য নিয়ে কলকাতায় জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (National Council of Education) গঠিত হয়।
এই পরিষদের অধীনে 1906 খ্রিস্টাব্দের 14 আগস্ট বেঙ্গল ন্যাশনাল স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং কারিগরি শিক্ষার জন্য 1906 খ্রিস্টাব্দের 25 জুলাই কলকাতায় বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়।
জাতীয় শিক্ষার বিস্তার: বাংলা ও বাংলার বাইরে জাতীয় শিক্ষার ব্যাপক বিস্তার ঘটেছিল। 1908 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বাংলায় 25 টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও 300 টির বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে ওঠে। বাংলার বাইরে বোম্বাই, মাদ্রাজ, যুক্তপ্রদেশ, পাঞ্জাব, বেরার, মসুলিপত্তম, অন্ত্র প্রভৃতি জায়গায় জাতীয় শিক্ষার প্রসার ঘটে। জাতীয় শিক্ষার জনপ্রিয়তা বজায় থাকে 1910 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।
মূল্যায়ন : 1910 খ্রিস্টাব্দের পর বিভিন্ন কারনে জাতীয় শিক্ষা পরিষদের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে।তবে যাইহোক না কেন জাতীয় শিক্ষা পরিষদই প্রথম জাতীয় স্তরের শিক্ষা নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল।
2. ছাপাখানা স্থাপন ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে শ্রীরামপুর মিশনেরঅবদান লেখ।
ভূমিকা:- বাংলাদেশে শ্রীরামপুর মিশনারিদের বহু কৃতিত্বের নিদর্শন আছে। এসব কৃতিত্বের অন্যতম হল ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা ও প্রকাশনা। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা প্রকাশনার মাধ্যমে শ্রীরামপুর মিশন শিক্ষাবিস্তার ও সমাজ চেতনা সৃষ্টিতে বিশেষ অবদান রেখেছিল।
ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা:- জোসুয়া মার্শম্যান, উইলিয়ম ওয়ার্ড ও উইলিয়ম কেরি শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা করেন 1800 খ্রিস্টাব্দের 10 জানুয়ারি। এদের মধ্যে উইলিয়ম কেরি একটি কাঠের পুরাতন ছাপাখানা কিনে ওই একই বছরে প্রতিষ্ঠা করেন শ্রীরামপুর মিশন। পরে লোহার ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। 1820 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মিশনের ছাপাখানার সংখ্যা দাঁড়ায় 18টি।
মুদ্রণ:- শ্রীরামপুর মিশন ছাপাখানায় প্রথমে ইংরেজি ভাষায় কাঠের হরফের ব্লক তৈরি করে ছাপা হত। পরে ধাতুর ইংরেজি ও বাংলা হরফ তৈরি করা হয়। এ সময়ে হরফ তৈরিতে পঞ্চানন কর্মকার বিখ্যাত ছিলেন। কেরি তাঁকে মিশনে নিয়োগ করেন। মিশনের ছাপাখানার কম্পজিটার ছিলেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য।
প্রকাশনা: শ্রীরামপুর মিশন বহু গ্রন্থ ও পত্রপত্রিকা প্রকাশ করে। তারা প্রথমে বাইবেল প্রকাশ করে। ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত বাইবেল ছাড়াও 26টি আঞ্চলিক ভাষায় বাইবেল ছাপা হয়। 36টি বাংলা হরফে ও 1টি সংস্কৃত হরফে লেখা গ্রন্থ এবং এগুলির 12টি সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এসময় গড়ে ওঠা স্কুলকলেজের বিভিন্ন বিষয়ের পাঠ্যবই ছাপা ও প্রকাশের কাজও এখানে করা হত। দিগদর্শন’ (এপ্রিল, 1818 খ্রিস্টাব্দ), সমাচার দর্পণ’ (মে, 1818 খ্রিস্টাব্দ), ‘ফ্রেন্ড অফ ইন্ডিয়া পত্রিকা প্রকাশিত হয়। এইভাবে বিদেশি উদ্যোগে বাংলা ও ইংরেজি হরফে বই, পত্রপত্রিকা ছাপা ও প্রকাশিত হতে থাকে। এইভাবে শ্রীরামপুর মিশনারিরা ছাপাখানা স্থাপন ও প্রকাশনার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন।
3. প্রশ্নঃ- বাংলায় আধুনিক ছাপাখানা মুদ্রণ শিল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা বাংলায় ছাপাখানা বিস্তারের ইতিহাস আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ- উনিশ শতকের বাংলায় যে জাগরণ বা নবজাগরণ ঘটেছিল তার কেন্দ্র ছিল মুদ্রণ যন্ত্র বা ছাপাখানা। এই ছাপাখানায় ছিল সকল বিপ্লবের মূল সুর। এই ছাপাখানা থেকেই হাজার হাজার বই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ত আর এই ছাপা বই বাঙালির চিন্তা ও চেতনায় বিপ্লব সংঘটিত করত। যাইহোক জার্মানির জোহান্স গুটেনবার্গ 1454 খ্রিস্টাব্দে আধুনিক মুদ্রণ যন্ত্র তথা ছাপাখানা আবিষ্কার করলে এক শতাব্দীর মধ্যেই সমগ্র ইউরোপে মুদ্রণ শিল্পের অভাবনীয় প্রসার ঘটে। ভারতে 1556 খ্রিস্টাব্দে গোয়ায় পর্তুগীজদের হাত ধরে ছাপাখানার আবির্ভাব হয় এবং বাংলায় পৌছায় 1770 এর দশকে।
বাংলায় ছাপাখানার ইতিহাসঃ-
গ্রাহাম শ নামক একজন ব্যক্তির বিবরণ থেকে জানা যায় যে 1770-1800 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কলকাতা এবং তার আশেপাশের অঞ্চলে প্রায় 40টি ছাপাখানা ছিল। আর এই ছাপাখানা গুলির বেশিরভাগই ছিল সংবাদপত্র প্রকাশের সঙ্গে যুক্ত। গ্রাহামের বিবরণ থেকে এই সময় চারজন মুদ্রাকরের নাম পাওয়া যায়-
i)হিকিঃ- জেমস অগাস্টাস হিকি কলকাতায় প্রথম ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন 1777 খ্রিস্টাব্দে। প্রথমে তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সামরিক বিল ও বাট্টার কাগজ ছাপাতেন। এরপর হিকি 1780 খ্রীষ্টাব্দে সর্বপ্রথম ‘বেঙ্গল গেজেট’ নামে একটি সংবাদপত্র এখান থেকেই প্রকাশ করেন।
ii) জাকারিয়ার প্রেস:- জন জাকারিয়া নামক এক খ্রিস্টান মিশনারী 1789 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রেসে ধর্মগ্রন্থ, বর্ষপঞ্জি আদালতে ব্যবহৃত কাগজপত্র ইত্যাদি ছাপা হত।
iii) বার্নাড মেসেনিকঃ- বার্নাড মেসেনিক একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। 1780 খ্রীষ্টাব্দে তিনি পিটার রিড নামে আর এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কলকাতায় একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন আর এখান থেকেই ইংরেজি সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘ইন্ডিয়া গেজেট’ প্রকাশিত হতো।
iv) চার্লস উইলকিন্স:-চার্লস উইলকিনস ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন কেরানি ছিলেন।1778 খ্রীষ্টাব্দে গভর্নর জেনারেল লর্ড হেস্টিংস এর নির্দেশে তিনি ‘হ্যালহেডের ব্যাকরন (A grammar of the Bengali language) ছাপানোর জন্য চুঁচুড়ায় একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।পরে এই ছাপাখানাটি সরকার অধিগ্রহণ করেন।
v) শ্রীরামপুর মিশন প্রেস:- শ্রীরামপুর ত্রয়ী এর অন্যতম উইলিয়াম কেরি( উইলিয়াম কেরি,জোসুয়া মার্শম্যান ও উইলিয়াম ওয়ার্ড) একটি কাঠের ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন 1800 খ্রিস্টাব্দে। এখান থেকে বহু বই, দিকদর্শন, সমাচার দর্পণ, ও ফ্রেন্ড অফ ইন্ডিয়ার মতো অনেক সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। একটা পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে, 1840 এর দশক পর্যন্ত শুধুমাত্র কলকাতা শহরেই কমপক্ষে 50টি ছাপাখানা ছিল এবং পুরো শতক জুড়ে তার সংখ্যা দাঁড়ায় হাজারেরো বেশি।
পরিশেষে বলা যায় যে, এই ভাবেই ইউরোয়ীয়দের উদ্যোগে বাংলায় একাধিক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ক্রমে ছাপাখানার শিল্পের শ্রীবৃদ্ধি ঘটতে থাকে। পরবর্তী সময়ে অন্যান্য অনেক ছাপাখানা গড়ে ওঠে পরে এ শিল্পের বিকাশে বাঙালিরাও এগিয়ে আছে।
4.বাংলায় ছাপাখানার বিকাশে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর ভূমিকা আলোচনা কর।
ভূমিকাঃ-উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী বাংলা তথা সমগ্র ভারতে প্রকাশনা জগতের ইতিহাসে একটি অবিস্মরণীয় নাম। তিনি বাংলায় ‘হাফটোন’ পদ্ধতি, ‘রঙিন ব্লক’-এর সূচনা করেছিলেন। তিনি 1895 খ্রিস্টাব্দে তার নিজস্ব মুদ্রণ ও প্রকাশনা সংস্থা ‘ইউ. এন রায় অ্যান্ড সন্স’ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীকালে তার পুত্র সুকুমার রায়ের প্রচেষ্টায় এই ; সংস্থার খ্যাতি বৃদ্ধি পায়।
ইউ. এন রায় অ্যান্ডি সন্স-এর প্রতিষ্ঠা : উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী বিদেশ থেকে আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র এনে 1895 খ্রিস্টাব্দে ’ইউ. এন রায় অ্যান্ড সন্স’ নামে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথমে এটি ছিল কলকাতার 38/1 শিবনারায়ণ দাস লেনে। পরবর্তীকালে এর ঠিকানার পরিবর্তন ঘটেছিল।
ইউ রায় অ্যান্ড সন্স-এর উদ্যোগে ছাপাখানার বিকাশ
হাফটোন ব্লকের ব্যবহার : উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছাপার বিষয় নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করেন। তিনি ছাপার কাজে হাফটোন ব্লক তৈরি ও প্রয়োগের উদ্ভাবক ছিলেন। এর ফলে মুদ্রণ শিল্পে অভূতপূর্ব উন্নতি পরিলক্ষিত হয়।তিনি তার ইউ রায় অ্যান্ড সন্স’ থেকে প্রকাশিত বইয়ের প্রচ্ছদ ও ভিতরের পাতায় কীভাবে উন্নত ছবির ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা চালান। এক্ষেত্রে তিনি স্ক্রিন অ্যাডজাস্টার যন্ত্র, ডায়াফর্ম সিস্টেম প্রভৃতি ব্যবহার করে সে যুগেও রংবেরঙের ছবি ছাপার ব্যবস্থা করেন।
সুকুমার রায়ের প্রচেষ্টা : ছাপার বিষয়ে আরও অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য তার সুযোগ্য পুত্র সুকুমার রায়কে লন্ডনে পাঠিয়েছিলেন। সুকুমার রায় পিতার উদ্ভাবনী দক্ষতার সঙ্গে তাঁর নিজস্বতা দিয়ে ইউ রায় অ্যান্ড সন্স’-কে একটি বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে সহায়তা করেছিলেন।
প্রকাশনা : ’ইউ. এন রায় অ্যান্ড সন্স’ থেকে প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— ‘টুনটুনির বই’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন‘ছেলেদের মহাভারত’ ইত্যাদি। এই সংস্থার অন্যতম উল্লেখযোগ্য অবদান হল সন্দেশ পত্রিকার প্রকাশ।
উপসংহার: উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এবং সুকুমার রায় কেবলমাত্র অর্থ উপার্জনের জন্য ’ইউ. এন রায় অ্যান্ড সন্স’-এর প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেননি। তারা এখান থেকে নিজেদের লেখা গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। ছাপার গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছেন। তাই ছাপাখানার জগতে তাদের এই অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন......
- মাধ্যমিক তৃতীয় অধ্যায় ১ নাম্বারের প্রশ্ন-উত্তর
- মাধ্যমিক তৃতীয় অধ্যায় ২ নাম্বারের প্রশ্ন-উত্তর
- মাধ্যমিক তৃতীয় অধ্যায় ৪ নাম্বারের প্রশ্ন-উত্তর
- মাধ্যমিক তৃতীয় অধ্যায় ৮ নাম্বারের প্রশ্ন-উত্তর
5. বাংলায় মুদ্রণের ব্যবসায়িক উদ্যোগ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।
ভূমিকাঃ- ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশে ব্যাবসায়িক উদ্যোগে বেশকিছু ছাপাখানা স্থাপিত হয়েছিল। এগুলিতে মূলত পাঠ্যপুস্তক ছাপানো এবং পাঠ্যবহির্ভূত অন্যান্য পুস্তক ছাপানোর কাজ চলত। ব্যাবসায়িক উদ্যোগ ও বাংলাদেশে উনবিংশ শতাব্দীতে যে সমস্ত ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা ছিল দুই ধরনের—ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং প্রতিষ্ঠানগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ছাপাখানা। হিকির উদ্যোগ ও কলকাতায় জেমস অগাস্টাস হিকি বসায়িক ভিত্তিতে ছাপাখানার কাজ শুরু করেন। এখানে মলিটারি বিল, সামরিক বাহিনীর বিধিবিধান, বিভিন্ন ভাতার ফর্মসহ ‘বেঙ্গল গেজেট’ ছাপা হত।
উইলকিনসের উদ্যোগঃ- 1781 খ্রিস্টাব্দে উইলকিনস কলকাতায় ব্যাবসায়িক উদ্যোগে ‘অনারেবল কোম্পানিজ প্রেস’ অতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল ব্যাবসায়িক উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত একটি উল্লেখযোগ্য ছাপাখানা। গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের উদ্যোগ ও প্রথম বাঙালি প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতা ছিলেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য। ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল' গ্রন্থটিকে তিনি চিত্রসহ প্রকাশ করেছিলেন।
বিদ্যাসাগরের অবদান ও বিদ্যাসাগর ব্যাবসায়িক উদ্যোগে সংস্কৃত প্রেস স্থাপন করেছিলেন। এখান থেকে 1856 খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে প্রায় 50 হাজার কপি ‘বর্ণপরিচয়’ ছাপা হয়। ছাপাখানার ব্যাবসায়িক উদ্যোগের জন্য তাকে ‘বিদ্যাবণিক’ বলা হয়।
উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরির উদ্যোগ ও বাংলাদেশে ছাপাখানার ব্যাবসায়িক উদ্যোগে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরির নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। তার প্রতিষ্ঠিত ইউ.এন রায় অ্যান্ড সনস’ নামক ছাপাখানাটি আধুনিক বাংলা ছাপাখানার পথপ্রদর্শক ছিল। অন্যান্য ও শরকুমার লাহিড়ি, গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এবং এস. কে. লাহিড়ি অ্যান্ড কোম্পানি, বেঙ্গল মেডিকেল লাইব্রেরি, ইন্ডিয়ান পাবলিশিং হাউস প্রভৃতি ছাপাখানার ব্যাবসায়িক উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
উপসংহারঃ- ব্যাবসায়িক উদ্যোগী হিসেবে এক সময় বাঙালিরা ছাপাখানার বিস্তারে এই সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল।
6.বাংলায় কারিগরি শিল্পের বিকাশে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট বা BTI এর ভূমিকা আলোচনা করো অথবা টীকা লেখ বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট বা BTI
ভূমিকাঃ- স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলনের পটভুমিকায় 1906 সালে দেশীয় উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয়শিক্ষা পরিষদ, যার উদ্দেশ্য ছিল বিদেশি নিয়ন্ত্রনমুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করা। এই সময় জাতীয় শিক্ষা পরিষদের নেতৃবৃন্দের মধ্যে কোন কোন শিক্ষাকে গুরুত্ব দেবে সে বিষয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। গুরুদাস ব্যানার্জি, সতীশ মুখার্জী, হীরেন দত্ত প্রমুখ যারা মনে করত জাতীয় শিক্ষা পরিষদ দেশের সব শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করবে অপরদিকে তারকনাথ পালিত নীলরতন সরকার মনিন্দ্র চন্দ্র নন্দী প্রমুখ যারা বিশ্বাস করতেন যে জাতীয় শিক্ষা পরিষদের মূল লক্ষ্য হবে কারিগরি শিক্ষার বিস্তার। প্রথম দলের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ ও স্কুল এবং দ্বিতীয় দল 1906 খ্রীষ্টাব্দের 25 শে জুলাই তারকনাথ পালিতের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট বা B.T.I ।
পঠন পাঠনঃ- বিটিআই-এ মূলত দুই ধরনের পাঠ্যক্রম চালু ছিল
i) তিন বছরের অন্তর্বর্তী পাঠ্যক্রম।
ii) চার বছরের মাধ্যমিক পাঠ্যক্রম।
অন্তর্বর্তী পাঠ্যক্রমের তিনটি বিষয় ছিল
ক) যন্ত্র বিজ্ঞান ও বৈদ্যুতিক যন্ত্র বিজ্ঞান
খ) ফলিত রসায়ন এবং
গ) ভুবিদ্যা।
এই পাঠ্যক্রমের প্রথমবর্ষে পদার্থবিদ্যা, গণিত, ইংরেজি ও চিত্রাঙ্কন বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হতো। বেশ কিছু নামকরা শিক্ষক এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন যেমন প্রমথনাথ বসু, শরৎ দত্ত, প্রফুল্ল মিত্র প্রমুখ ব্যক্তি।
অগ্রগতি ও প্রসারঃ-সে সময় কারিগরি শিক্ষার যে কর্মবর্ধমান চাহিদা তৈরি হয়েছিল তা পূরণ করতে পেরেছিল এই প্রতিষ্ঠানটি। বিটিআই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দুই বছর পরে অর্থাৎ 1908 সালে এর ছাত্র সংখ্যা হয় 128 জন এবং 1916 সালে 150 জন, 1920 সালে 240 জন এবং 1928 সালে তা আরও বেড়ে গিয়ে মোট ছাত্র সংখ্যা দাড়ায় 520 জন। যার ফলে এই প্রতিষ্ঠানের প্রসারের প্রয়োজনীয়তাও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
1925 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠান থেকে গড়ে প্রায় 100 জন সুযোগ্য ইঞ্জিনিয়ারিং তৈরি হয়।যারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কারিগরি শিক্ষার বিকাশে নিয়োজিত হয়। 1928 খ্রিস্টাব্দে বিটিআই এর নতুন নাম হয় কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি এবং ভারত স্বাধীন হওয়ার পর 1955 খ্রিস্টাব্দে এটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিতি লাভ করে।
মূল্যায়নঃ- এইভাবে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা ও বিজ্ঞান চেতনার প্রসার ঘটে, এক্ষেত্রে উদ্যোগ ছিল সম্পূর্ণরূপে দেশীয়।
7.বসু বিজ্ঞান মন্দির সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
ভমিকাঃ- 1917 খ্রিস্টাব্দে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বসুবিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রধানত, জীব এবং জড় বস্তুগুলির বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করা ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। এটি ‘বোস ইন্সটিটিউট’ নামেও পরিচিত ছিল।
প্রতিষ্ঠাঃ- 1915 খ্রিস্টাব্দে জগদীশচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে 1917 খ্রিস্টাব্দে বসুবিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। বিজ্ঞানের নির্দিষ্ট শাখায় মৌলিক গবেষণা করার জন্য তিনি এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
পাঠ্যবিষয়ঃ- এখানে পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা ছাড়াও মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োফিজিক্স, পরিবেশবিদ্যা, অ্যানিম্যাল ফিজিয়োলজি, বায়োইনফরমেটিক্স প্রভৃতি বিষয়গুলি। নিয়ে গবেষণার সুযোগ আছে। এমনকি এখানে মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করা এবং গবেষণা করা যায়। অবদান ও বসুবিজ্ঞান মন্দির বিভিন্ন বিষয়ে তার অবদান রেখেছে। যেমন—কলেরার টিকা আবিষ্কারে কিংবা উদ্ভিদের যে প্রাণ আছে তার প্রমাণে প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে।
তা ছাড়া আধুনিক মলিকিউলার বায়োলজির সূচনা হয় এখানে। ‘আয়োনোসিটাল ফসফেট’ চক্রের আবিষ্কার এখানেই ঘটেছিল। জগদীশচন্দ্র বসুর বহু পাণ্ডুলিপি ও মিউজিয়াম এখানে রয়েছে। এখানকার কৃতী গবেষকেরা এখান থেকে এস. এস. ভাটনগর পুরস্কার, হোমি জাহাঙ্গির ভারা ফেলোশিপ প্রভৃতি পেয়ে থাকেন। আর্থিক সাহায্য ও প্রাথমিক পর্বে জগদীশচন্দ্র বসু তার পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। নবম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এই প্রতিষ্ঠানকে 30 কোটি টাকার তহবিল দান করা হয়।
উপসংহার:- বিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণা ও একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বসুবিজ্ঞান মন্দির উল্লেখযোগ্য ছাপ রেখেছে। বিজ্ঞানের গবেষণা ও প্রসারে তাই এর অবদানকে আমাদের ভুললে চলবে না।
8. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তার শান্তিনিকেতন ভাবনা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
ভুমিকাঃ- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে নিজের শিক্ষাচিন্তার ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রায়পুরের জমিদার ভুবনমোহন সিংহের কাছ থেকে 20 বিঘা জমি নিয়ে 1863 খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতন আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে রবীন্দ্রনাথ 1901 খ্রিস্টাব্দের 22 ডিসেম্বর পাঁচজন ছাত্র নিয়ে ব্ৰত্মচর্যাশ্রম’নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ধাপে ধাপে এই শান্তিনিকেতনেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠা করেন।
রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন ভাবনা :-
i) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার নিজস্ব শিক্ষাচিন্তার ভিত্তিতে শান্তিনিকেতনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তিনি চেয়েছিলেন প্রকৃতির কাছাকাছি আদর্শ পরিবেশের মধ্যে শিশুদের বড়ো করে তুলতে হবে।
ii) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাচীন ভারতের আশ্রমিক শিক্ষার ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তাই তিনি শিক্ষার্থীদের শান্তিনিকেতনে রেখে শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।
iii) রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে গুরু ও শিষ্যের মধ্যে মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তিনি বলতেন, শিক্ষক শ্রদ্ধার সঙ্গে জ্ঞান বিতরণ করবেন আর শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধার সঙ্গে।তা আহরণ করবে।
iv)রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে শিক্ষার্থীদের সৃজনমূলক কাজের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। এখানে তিনি বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালন করারও ব্যবস্থা করেন। তিনি বলতেন, এসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটবে।
এই বিদ্যালয়ে গতানুগতিক সময়তালিকার বিশেষ গুরুত্ব ছিল না। শিক্ষার্থীর প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুসারে তা নির্ধারণ করা হত।
উপসংহার:-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই শান্তিনিকেতনে 1921 খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন ভাবনা শুধু বাংলা বা ভারতে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে একদিকচিহ্ন হয়ে আছে। দেশ-বিদেশের বহু ছাত্র ও শিক্ষক এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
9.রবীন্দ্রনাথের কিভাবে উপনিবেশিক শিক্ষা নীতির সমালোচনা করেছিলেন?
অথবা রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার স্বরূপ কি রকম ছিল?
ভূমিকাঃ- ঊনবিংশ শতাব্দীতে ঔপনিবেশিক আমলে এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়। এই শিক্ষা ব্যবস্থা ভারতের নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি একটি বৃহৎ অংশকে বিমুখ করে এবং এই শিক্ষা ভারতীয়দের সর্বাঙ্গীণ বিকাশেও ব্যর্থ হয়। বিশ শতকের প্রথমার্ধ থেকেই ভারতে ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার বিরুদ্ধে নানা সমালোচনা শুরু হয়। এর পরিণতিতে জাতীয় নেতৃত্ব ও ভারতীয় শিক্ষাবিদরা পাশ্চাত্য শিক্ষার বদলে জাতীয় শিক্ষার বিকাশ ও বিস্তারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। রবীন্দনাথ ঠাকুর ছিলেন এদের মধ্যে অন্যতম। তিনি 1893 খ্রিস্টাব্দে ‘শিক্ষার হেরফের’ প্রবন্ধের মধ্য দিয়ে ঔপনিনেশিক শিক্ষা ব্যাবস্থার সমালোচনা করে প্রকৃত শিক্ষা কেমন হওয়া উচিত তা তুলে ধরেছেন।
প্রাণের ছোঁয়ার অভাবঃ- ঔপনিবেশিক শিক্ষাপ্রণালীর মাধ্যমে পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চার সঙ্গে এদেশের ছাত্রছাত্রীদের পরিচয় ঘটলেও, সেই যোগাযোগে প্রাণের ছোঁয়া ছিল না। তা ছাড়া, ওই বিজ্ঞানশিক্ষার সঙ্গে ভারতীয় আধ্যাত্মিকতার এবং দর্শনের কোনো যোগাযোগ ছিল না।
নান্দনিকতার অভাবঃ- ভাষাশিক্ষার ক্ষেত্রে ইংরেজদের যতটা প্রশাসনিক কাজ করার উপযুক্ত কর্মচারী তৈরি করার আগ্রহ ছিল, সাহিত্য বা ভাষাশিক্ষার সাহায্যে একটা নান্দনিক মন গডে তোলার আগ্রহ এককণাও ছিল না ‘বিদেশি ভাষায় ব্যাকরণ’ এবং ‘মুখস্থবিদ্যার শিলাবৃষ্টি বর্ষণ’ ঔপনিবেশিক ভাষাশিক্ষাকে ব্যর্থ করে দেয়।
দেশীয় ভাচার প্রতি বনাঃ- শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজরা নিজেদের প্রয়োজনে ইংরেজিকেই বেছেছিলেন। শাসকের ভাষায়, শাসকের দৃষ্টিতে ভারতে ইতিহাস থেকে বিজ্ঞান সবকিছু শেখানো হত বলে দেশীয় ভাষা-সংস্কৃতির চর্চা কমে যাচ্ছিল। ফলে, শিক্ষা সর্বজনীন হয়ে মুষ্টিমেয় মানুষের জীবন-জীবিকার উপকরণ হয়ে উঠেছিল।
উপসংহারঃ-রবীন্দনাথ শুধু ঔপনিবেশিক শিক্ষার সমালোচনায় করেননি বিকল্প শিক্ষার পথও বলেদিয়েছেন। তার মতে, শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হবে শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক বুদ্ধি ও কল্পনার বিকাশের সুযোগ দান করা। তিনি প্রাচীন ভারতের আশ্রম ও গুরুকুল প্রথাকে আধুনিক জীবনে আনতে চেয়েছিলেন। তিনি মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন এবং কাজেও তা করে দেখিয়েছেন। তিনি মনে করতেন বিজ্ঞান শুধু পরীক্ষাগারের চার দেওয়ালের মধ্যে নেই, তার স্থান ক্লাস ঘরের বাইরে, হাটে-মাঠে-মাটিতে। রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন পল্লিচর্চা ও পল্লিসংগঠন ছাড়া ভারতের শিক্ষা অসম্পূর্ণ।
৮ নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর
1.বিজ্ঞান চর্চায় কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ ও বসু বিজ্ঞান মন্দিরের অবদান আলোচনা কর।
ভূমিকা:-কলকাতার অন্যতম প্রাচীন বিজ্ঞান বিষয়ক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হল কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় 1914 খ্রিস্টাব্দে ইউনিভারসিটি কলেজ অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ প্রতিষ্ঠা করেন। এটি কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ’ নামে পরিচিত হয়।
কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় 1914 খ্রিস্টাব্দের 27 মার্চ। কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়।
কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠায় অন্যান্যদের অবদান- কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ প্রতিষ্ঠায় যাদের নাম স্মরণীয় তারা হলেন ব্যারিস্টার স্যার তারকনাথ পালিত ও ব্যারিস্টার স্যার রাসবিহারী ঘোষ। তারা সাড়ে 37 লক্ষ টাকা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য জমি দান করেন।
মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দেন। তা ছাড়া রানি বাগেশ্বরী ও গুরুপ্রসাদ সিং এই কলেজের জন্য অর্থসাহায্য করেন।
পঠনপাঠন :- এই কলেজে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত, উদ্ভিদবিদ্যা ও প্রাণীবিদ্যা প্রভৃতি বিষয় পড়ানো হত।
a. এখানে 1915 খ্রিস্টাব্দে রসায়ন বিভাগ চালু হয়।
b. 1916 খ্রিস্টাব্দে বিশুদ্ধ পদার্থবিদ্যা বিভাগ ও ফলিত গণিত বিভাগ শুরু হয়।
c. 1918 খ্রিস্টাব্দে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ ও 1919 খ্রিস্টাব্দে প্রাণীবিদ্যা বিভাগ শুরু হয়।
এই কলেজের পঠনপাঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন বিখ্যাত বিজ্ঞানী। যেমন— রসায়ন বিভাগে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, পদার্থবিদ্যা বিভাগে চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন, ফলিত গণিত বিভাগে মেঘনাদ সাহা ও সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রমুখ বিজ্ঞানীরা। এই কলেজে মেধাবী ছাত্রদের বৃত্তিপ্রদানের ব্যবস্থা করা হয়।
উপসংহার:-ভারতে বিজ্ঞান শিক্ষার ইতিহাসে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজের অবদান স্মরণীয় হয়ে আছে। পরবর্তীকালে ভারতে যে বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশ ঘটেছে কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ ছিল তারই পথপ্রদর্শক।
বসু বিজ্ঞান মন্দির সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো
ভারতে বিজ্ঞান চর্চায় যে সমস্ত ব্যাক্তি উল্লেখযোগ্য ভুমিকা নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু। তিনি 1917 খ্রিস্টাব্দে বসুবিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রধানত, জীব এবং জড় বস্তুগুলির বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করা ছিল এর অন্যতম উদ্দেশ্য। এটি ‘বোস ইন্সটিটিউট’ নামেও পরিচিত ছিল।
প্রতিষ্ঠাঃ- 1915 খ্রিস্টাব্দে জগদীশচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে 1917 খ্রিস্টাব্দে বসুবিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। বিজ্ঞানের নির্দিষ্ট শাখায় মৌলিক গবেষণা করার জন্য তিনি এটি প্রতিষ্ঠা করেন।
পাঠ্যবিষয়ঃ- এখানে পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা ছাড়াও মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি, বায়োফিজিক্স, পরিবেশবিদ্যা, অ্যানিম্যাল ফিজিয়োলজি, বায়োইনফরমেটিক্স প্রভৃতি বিষয়গুলি। নিয়ে গবেষণার সুযোগ আছে। এমনকি এখানে মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করা এবং গবেষণা করা যায়। অবদান ও বসুবিজ্ঞান মন্দির বিভিন্ন বিষয়ে তার অবদান রেখেছে। যেমন—কলেরার টিকা আবিষ্কারে কিংবা উদ্ভিদের যে প্রাণ আছে তার প্রমাণে প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। তা ছাড়া আধুনিক মলিকিউলার বায়োলজির সূচনা হয় এখানে। ‘আয়োনোসিটাল ফসফেট’ চক্রের আবিষ্কার এখানেই ঘটেছিল। জগদীশচন্দ্র বসুর বহু পাণ্ডুলিপি ও মিউজিয়াম এখানে রয়েছে। এখানকার কৃতী গবেষকেরা এখান থেকে এস. এস. ভাটনগর পুরস্কার, হোমি জাহাঙ্গির ভারা ফেলোশিপ প্রভৃতি পেয়ে থাকেন। আর্থিক সাহায্য ও প্রাথমিক পর্বে জগদীশচন্দ্র বসু তার পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন। নবম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এই প্রতিষ্ঠানকে 30 কোটি টাকার তহবিল দান করা হয়।
উপসংহার:- বিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণা ও একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বসুবিজ্ঞান মন্দির উল্লেখযোগ্য ছাপ রেখেছে। বিজ্ঞানের গবেষণা ও প্রসারে তাই এর অবদানকে আমাদের ভুললে চলবে না।
2.মানুষ প্রকৃতি ও শিক্ষার সমন্বয় বিষয়ে রবীনাথের চিন্তার সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর।
অথবা রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাচিন্তা বিশ্লেষন কর।
ভুমিকাঃ-উনিশ শতকে মেকলে মিনিট-এর মাধ্যমে বাংলাদেশসহ ব্রিটিশ শাসিত অঞ্চলে উইলিয়াম বেন্টিং পাশ্চাত্য শিক্ষা ব্যবস্থা কার্যকরী করে। এই শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে বাস্তব জীবনের কোন মিল না থাকায় অনেক রাজনীতিবিদ ও শিক্ষাবিদরা এই শিক্ষা ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি এই শিক্ষার একজন তীব্র সমালোচক ছিলেন।
রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে উপনিবেশিক শিক্ষাঃ-
i)যান্ত্রিকতা- তার মতে তৎকালীন ভারতের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে কোন প্রানের যোগ ছিলনা। তার মতে এই ধরনের শিক্ষা শিক্ষার্থীদের নিষ্ক্রিয় যন্ত্রে পরিনত করে। লিখেছেন যে “ছেলেদের মানুষ করে তোলার জন্য যে যন্ত্র তৈরি হয়েছে তার নাম ইস্কুল এবং সেটার মধ্য দিয়ে মানবশিক্ষার সম্পূর্ণতা হতে পারে না। রবীন্দ্রনাথ এই যান্ত্রিক শিক্ষা থেকে মুক্তি চেয়েছিলান।
ii) একাধিপত্য প্রতিষ্ঠার শিক্ষা-
তার মধ্যে ভারতের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে দেশের নাড়ির যোগ নেই।তার মতে এটা ছিল একটা প্রকাণ্ড ছাঁচে ঢালা ব্যাপার। দেশের সব শিক্ষারীতিকে এক ছাচে শক্ত করে জমিয়ে দেওয়া হবে, যাতে দেশবাসীর বুদ্ধি-বৃত্তির ওপর সম্পূর্ণ একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা যায়।সুতরাং এই শিক্ষা ব্যবস্থা হলো কেরানিগিরি কল।
iii) জাতীয়তা বিরোধীঃ-
এই শিক্ষা জাতীয়তা বিরোধী কারণ এটি সম্পূর্ণ পাশ্চাত্য আদর্শের অনুসরণ , ধার করা বিদ্যার পুনরাবৃত্তি ঘটায়। এখানে যা শিখানো হয় তার ফলে পড়া পাখি বুলি পড়া পাখির গতানুগতিক দল সৃষ্টি হয় এবং তারা হয় বিদেশের গুলি মুখস্থ করা খাঁচার পাখি।”
iv)রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তার শান্তিনিকেতনঃ-
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উপউক্তভাবে উপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার বিরোধিতা করে সম্পূর্ণ নিজস্ব একটি শিক্ষা দর্শনের পরিকল্পনা করেছেন এবং তার পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রায়পুরের জমিদার ভুবনমোহন সিংহের কাছ থেকে যে কুড়ি বিঘা জমি কিনেছিলেন সেখানে 1901 খ্রীষ্টব্দের 22শে ডিসেম্বর 5 জন ছাত্র নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শান্তিনিকেতন।
তার শান্তিনিকেতন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য হল নিম্নরূপ-
প্রকৃতির কাছাকাছি আদর্শ পরিবেশের মধ্যে শিশুদের বড় করে তুলতে হবে। রবীনাথ ঠাকুর প্রাচীন ভারতের আশ্রমিক শিক্ষার ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন এবং এবং শান্তিনিকেতনের সেটার প্রতিফলন ঘটিয়েছিলেন। তিনি বলতেন শিক্ষক শ্রদ্ধার সঙ্গে জ্ঞান বিতরন করবেন আর শিক্ষার্থী শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।এর মাধ্যমে তিনি গুরু ও শিষ্যের মধ্যে মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন।
i)তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের ওপর জোর দিয়েছিলেন। এবং সেখানে তিনি বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালন করার ব্যবস্থাও করেন। তিনি বলতেন এসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটবে।
ii)শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠাঃ-তপোবনের আদর্শে বিশ্বাসী হয়েও তিনি পাশ্চাত্যের জড় সভ্যতাকে অশ্রদ্ধার চোখে দেখেননি। তিনি বলেছেন যে পূর্ব ও পশ্চিম এর চিত্ত যদি বিচ্ছিন্ন হয় তাহলে উভয় ব্যর্থ হবে।বাস্তবে ঘটেছেও তাই। এই জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করে তাকে বিশ্বাজাতীর মিলন ভূমিতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। তিনি বিশ্বভারতী্তে বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটাতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি এখানে চীন-জাপান ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্ডিতদের নিয়ে এসেছিলেন।
প্রকৃতি মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয়-
রবীন্দ্রনাথের প্রকৃতি ও শিক্ষার সমন্বয়-
রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাচিন্তায় প্রকৃতি, মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয় ঘটেছিল। তিনি শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করে প্রকৃতি মানুষ ও শিক্ষা বিষয়ে হাতে কলমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। রবীন্দ্রনাথের মনে করতেন যে শিক্ষা হবে মুক্ত প্রকৃতির কোলে মুক্ত আকাশের নিচে। চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে তিনিও খোপওয়ালা বড় বাক্স বলে অভিহিত করেছেন। তার উদ্দেশ্য ছিল প্রকৃতির কাছে থেকে আদর্শ প্রাকৃতিক পরিবেশে শিশু ও কিশোরদের বড় হতে সাহায্য করা। রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন যে প্রকৃতির সংস্পর্শে শিশুর দেহ মন সুগঠিত হয়। শিশুদের পরম সত্তাকে নিবিড় ভাবে অনুধাবন করতে পারে।
রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা চিন্তায় মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয়-
রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন শিক্ষা এমন হওয়া উচিত যাতে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে ব্যবধান তৈরি হবে না। এজন্যই শান্তিনিকেতনের সঙ্গে আশেপাশে গ্রামগুলির যোগাযোগ ছিল। গ্রামের মানুষের প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি ও সকলের মিলন ক্ষেত্র হিসেবে পৌষ মেলার আয়োজন করা হয়। এই মেলায় আশেপাশের গ্রামের মানুষেরা তাদের ঘরোয়া সামগ্রী যেমন মাটির হাড়ি,বেতের তৈরি ধামা,কুল্ লোহার তৈরি করা কড়াই হাতা প্রভূতি বিক্রি করে। তাছাড়া জমিতে উৎপন্ন ফসলও তারা বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। আছে অর্থাৎ বিশ্বভারতীর শিক্ষা ছিল মানবতাবোধের শিক্ষা, মূল্যবোধের শিক্ষার যে শিক্ষা আজকের সমাজের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
উপসংহারঃ- রবীন্দ্রনাথ বুঝতে পেরেছিলেন ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থায় মানুষের চারিত্রিক বলিষ্ঠতা, মনের প্রসারতা ও বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। তাই তিনি ব্রিটিশ প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য তুলে ধরেছিলেন এবং শান্তিনিকেতন বিশ্বভারতী গড়ে তোলে মনুষ্যত্ববোধের শিক্ষার জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।আর এটাই হচ্ছে প্রকৃত শিক্ষা যা তার শিক্ষাচিন্তা ও দর্শনের মূল কথা।
3.রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তার শান্তিনিকেতন ভাবনা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা,
বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাচিন্তার পরিচয় দাও।
ভূমিকাঃ- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে নিজের শিক্ষাচিন্তার ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রায়পুরের জমিদার ভুবনমোহন সিংহের কাছ থেকে 20 বিঘা জমি নিয়ে 1863 খ্রিস্টাব্দে শান্তিনিকেতন আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এখানে রবীন্দ্রনাথ 1901 খ্রিস্টাব্দের 22 ডিসেম্বর পাঁচজন ছাত্র নিয়ে ব্ৰত্মচর্যাশ্রম’নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ধাপে ধাপে এই শান্তিনিকেতনেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠা করেন।
রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন ভাবনা :-
i) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার নিজস্ব শিক্ষাচিন্তার ভিত্তিতে শান্তিনিকেতনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তিনি চেয়েছিলেন প্রকৃতির কাছাকাছি আদর্শ পরিবেশের মধ্যে শিশুদের বড়ো করে তুলতে হবে।
ii) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাচীন ভারতের আশ্রমিক শিক্ষার ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। তাই তিনি শিক্ষার্থীদের শান্তিনিকেতনে রেখে শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।
iii) রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে গুরু ও শিষ্যের মধ্যে মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তিনি বলতেন, শিক্ষক শ্রদ্ধার সঙ্গে জ্ঞান বিতরণ করবেন আর শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধার সঙ্গে।তা আহরণ করবে।
iv) রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে শিক্ষার্থীদের সৃজনমূলক কাজের উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। এখানে তিনি বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালন করারও ব্যবস্থা করেন। তিনি বলতেন, এসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটবে।
এই বিদ্যালয়ে গতানুগতিক সময়তালিকার বিশেষ গুরুত্ব ছিল না। শিক্ষার্থীর প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুসারে তা নির্ধারণ করা হত।
শান্তিনিকেতনে বিশ্বভাৱতী প্রতিষ্ঠা :-রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠা করে তাকে বিশ্বজাতির মিলনভূমিতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। তিনি বিশ্বভারতীতে বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটাতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি এখানে চিন, জাপান, ইউরোপ, আমেরিকা-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্ডিতদের নিয়ে এসেছিলেন।
শান্তিনিকেতনে প্রকৃতি, মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয় ঘটানো:-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে প্রকৃতি, মানুষ ও শিক্ষার সমন্বয় ঘটাতে চেয়েছিলেন। এজন্য শান্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রীদের শ্রেণিকক্ষের বাইরে প্রকৃতির মধ্যে গাছের তলায় শিক্ষা দেওয়া হত। তা ছাড়া শান্তিনিকেতনের সঙ্গে পাশাপাশি গ্রাম ও তার মানুষদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। তাই শান্তিনিকেতনের শিক্ষা হয়ে উঠেছিল মানবতাবোধের শিক্ষা।
উপসংহার:-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই শান্তিনিকেতনে 1921 খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতন ভাবনা শুধু বাংলা বা ভারতে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে একদিকচিহ্ন হয়ে আছে। দেশ-বিদেশের বহু ছাত্র ও শিক্ষক এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
4. বাংলায় মুদ্রণের ব্যবসায়িক উদ্যোগ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।
ভূমিকাঃ- ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশে ব্যাবসায়িক উদ্যোগে বেশকিছু ছাপাখানা স্থাপিত হয়েছিল। এগুলিতে মূলত পাঠ্যপুস্তক ছাপানো এবং পাঠ্যবহির্ভূত অন্যান্য পুস্তক ছাপানোর কাজ চলত। ব্যাবসায়িক উদ্যোগ ও বাংলাদেশে উনবিংশ শতাব্দীতে যে সমস্ত ছাপাখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা ছিল দুই ধরনের—ব্যক্তিগত উদ্যোগ এবং প্রতিষ্ঠানগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ছাপাখানা। হিকির উদ্যোগ ও কলকাতায় জেমস অগাস্টাস হিকি বসায়িক ভিত্তিতে ছাপাখানার কাজ শুরু করেন। এখানে মলিটারি বিল, সামরিক বাহিনীর বিধিবিধান, বিভিন্ন ভাতার ফর্মসহ ‘বেঙ্গল গেজেট’ ছাপা হত।
উইলকিনসের উদ্যোগঃ- 1781 খ্রিস্টাব্দে উইলকিনস কলকাতায় ব্যাবসায়িক উদ্যোগে ‘অনারেবল কোম্পানিজ প্রেস’ অতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল ব্যাবসায়িক উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত একটি উল্লেখযোগ্য ছাপাখানা।গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের উদ্যোগ ও প্রথম বাঙালি প্রকাশক ও পুস্তক বিক্রেতা ছিলেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য। ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল' গ্রন্থটিকে তিনি চিত্রসহ প্রকাশ করেছিলেন। বিদ্যাসাগরের অবদান ও বিদ্যাসাগর ব্যাবসায়িক উদ্যোগে সংস্কৃত প্রেস স্থাপন করেছিলেন। এখান থেকে 1856 খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে প্রায় 50 হাজার কপি ‘বর্ণপরিচয়’ ছাপা হয়। ছাপাখানার ব্যাবসায়িক উদ্যোগের জন্য তাকে ‘বিদ্যাবণিক’ বলা হয়। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরির উদ্যোগ ও বাংলাদেশে ছাপাখানার ব্যাবসায়িক উদ্যোগে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরির নাম সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। তার প্রতিষ্ঠিত ইউ.এন রায় অ্যান্ড সনস’ নামক ছাপাখানাটি আধুনিক বাংলা ছাপাখানার পথপ্রদর্শক ছিল। অন্যান্য ও শরকুমার লাহিড়ি, গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এবং এস. কে. লাহিড়ি অ্যান্ড কোম্পানি, বেঙ্গল মেডিকেল লাইব্রেরি, ইন্ডিয়ান পাবলিশিং হাউস প্রভৃতি ছাপাখানার ব্যাবসায়িক উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।
উপসংহারঃ- ব্যাবসায়িক উদ্যোগী হিসেবে এক সময় বাঙালিরা ছাপাখানার বিস্তারে এই সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ
করেছিল।
- বন্ধুরা ২০২২ সালের অধ্যায় ভিত্তিক ইতিহাস সাজেশন এর জন্য Click Here
বাংলায় মুদ্রণের ব্যবসায়িক উদ্যোগ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো। Click Here
File Details |
|
File Name/Book Name | মাধ্যমিক ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ ৪ ও ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর |
File Format | PDF |
File Language | Bengali |
File Size | 241 KB |
File Location | GOOGLE DRIVE |
Download Link |