মাধ্যমিক তৃতীয় অধ্যায় প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ ৪ ও ৮ নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর

5

মাধ্যমিক তৃতীয় অধ্যায় প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ ৪ ও ৮ নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর


তৃতীয় অধ্যায় প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ ৪ ও ৮ নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর


প্রিয় মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা,
আজকে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো মাধ্যমিক তৃতীয় অধ্যায় প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ ৪ ও ৮ নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর থেকে সম্পর্কে আলোচনা পাবে|দশম শ্রেনীর তৃতীয় অধ্যায় প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ থেকে ১ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|মাধ্যমিক তৃতীয় অধ্যায় ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর | তৃতীয় অধ্যায় ৪ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|মাধ্যমিক তৃতীয় অধ্যায় ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|তোমরা পেয়ে যাবে ইতিহাস অতি সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত, রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর যেগুলি তোমাদের যে ফাইনাল পরিক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন হবে। তো বন্ধুরা তোমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে মাধ্যমিক তৃতীয় অধ্যায় সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা থেকে ৪ ও ৮ নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা আছে। আমাদের আশা এই প্রশ্নটি তোমাদের পরিক্ষায় খুবই কাজে আসবে।


1.চুয়াড় বিদ্রোহ সম্পর্কে টীকা লেখ।

অথবা

চুয়াড় বিদ্রোহের কারন, বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব  আলোচনা কর।


ভূমিকাঃ- ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে মেদিনীপুরে উত্তর-পশ্চিম দিক ‘জঙ্গলমহল’ নামে পরিচিত ছিল। এখানে বসবাসকারী অধিবাসিদের চূয়াড় বলা হত। বাকুড়া, পুরুলিয়া ও ধলভূম ছিল জঙ্গলমহলে অন্তর্গত। 1768 -1769 এবং 1798 1799 সালে চুয়াড়রা যে বিদ্রোহ করেছিল তা চুয়াড় বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

চুয়াড় বিদ্রোহের কারনঃ-  চুয়াড় বিদ্রোহের কারণগুলি হল-


A.উচ্চহারে রাজস্ব আদায়ঃ-চুয়াড়রা কৃষিকাজ ও পশু পালন করলেও তারা পাইকদের অধীনে আধাসামরিক কাজ করত ও পাইকান জমি পেত। ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার মাধ্যমে কোম্পানি পাইকান জমির ওপর উচ্চহারে রাজস্ব ধার্য করে ফলে অত্যধিক রাজস্বের চাপ ও রাজস্ব আদায় কারীদের সীমাহিন অত্যাচার তাদের ক্ষিপ্ত ক্রে তোলে।


B.জীবিকা সমস্যাঃ-চুয়াড়দের প্রধান জীবিকা ছিল পাইক দের অধীনে থেকে পাইকান জমিতে কৃষি কাজ করা বেতনের পরিবর্তে তারা নিষ্কর জমি ভোগ করত। সরকারি পাইকান জমি কেড়ে নিলে তাদের জীবিকা দুর্বিষহ হয়ে পড়ে ও তারা বিদ্রোহের দিকে এগিয়ে যায়।

উপরোক্ত প্রেক্ষাপটে 1768 খ্রিস্টাব্দে ধলভূমের রাজা জগন্নাথ সিংহ প্রথম বিদ্রোহ ঘোষণা করে। পরে আবার 1798-1799 খ্রিস্টাব্দে দুর্জন সিংহের নেতৃত্বে চুয়াড় বিদ্রোহ ঘটে।


চুয়াড় বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্যঃ-

A.সশস্ত্র বিদ্রোহঃ- এই বিদ্রোহ ছিল একটি সশস্ত্র বিদ্রোহ এই বিদ্রোহ বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার হয় বলা হয় যে কর্নগড়ের রানী শিরোমণি ও নাড়াজালের রাজারা আড়াল থেকে গোলাবারুদ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেন।

B.ব্রিটিশবিরোধী বিদ্রোহঃ- চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল ব্রিটিশ বিরোধী অভ্যুত্থান। অন্যান্য বিদ্রোহে কৃষকরা জমিদারদের ওপর ক্ষিপ্ত হয় কিন্তু এই বিদ্রোহ ছিল কৃষক ও জমিদারদের মিলিত ব্রিটিশ অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ।


চুয়াড় বিদ্রোহের গুরুত্বঃ- চুয়াড় বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও এই বিদ্রোহের বিভিন্ন গুরুত্ব ছিল-

A.নিরক্ষর চুয়াড় বিদ্রোহ ভারতের শিক্ষিত সমাজের চোখ খুলে দেয়।

B.এই বিদ্রোহ ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে জমিদারকে ঐক্যবদ্ধ হয়।

C.এই বিদ্রোহ ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে জমিদার ও কৃষকরা ঐক্যবদ্ধ হয়।

D.বিদ্রোহের পর সরকার দুর্গম বনাঞ্চল নিয়ে জঙ্গলমহল নামে একটি জেলা গঠন করে


উপসংহারঃ-চুয়াড় বিদ্রোহের কারণ ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে এর স্বতন্ত্র চরিত্র পাওয়া যায়। চুয়াড় বিদ্রোহ ছিল ঔপনিবেশিক আইনের বিরুদ্ধে তাদের অধিকার রক্ষার লড়াই। আদিবাসীরা এই বিদ্রোহে অংশ নিলেও নরহরি কবিরাজ এর মতে কৃষকরাই ছিল এর প্রধান স্তম্ভ। সেই কারণে ইতিহাসে এই বিদ্রোহটি গুরুত্বপূর্ণ


2.বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের পরিচয় দাও।

অথবা

বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের তিতুমীরের ভূমিকা আলোচনা কর।

অথবা

বারাসাত আন্দোলনের উপর একটি টীকা লেখ।


ভূমিকাঃ- ওয়াহাবি আন্দোলন: ভারতবর্ষে ওয়াহাবি আন্দোলন শুরু করেন দিল্লির বিখ্যাত মুসলিম সন্ত শাহ ওয়ালিউল্লাহ ও তার পুত্র আজিজ। তবে ভারতবর্ষে ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রায়বেরিলির অধিবাসী সৈয়দ আহমেদ।


ওয়াহাবি আন্দোলনের উদ্দেশ্য:- ‘ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রকৃত নাম হল ‘তারিকা-ই-মহম্মদীয়া’ অর্থাৎ ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা হজরত মহম্মদ প্রদর্শিত পথ। ওয়াহাবি আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল ইসলামধর্মের মধ্যে প্রচলিত কুসংস্কার দূর করে মহম্মদের নির্দেশ অনুসরণ করে ইসলামধর্মের সংস্কার করা। ওয়াহাবি আন্দোলনকারীরা বিধর্মী ইংরেজ-শাসিত ভারতকে ‘দার-উল-হারব’ (শত্রুর দেশ) বলে অভিহিত করত। তাই তারা ধর্মযুদ্ধের মাধ্যমে ভারতবর্ষ থেকে বিধর্মী ইংরেজদের বিতাড়িত করার জন্য আন্দোলন করেছিল।


তিতুমিরের নেতৃত্বে বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলন:- বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন মির নিশার আলি, যিনি তিতুমির নামে অধিক পরিচিত। তিতুমির 39 বছর বয়সে মক্কায় হজ করতে গিয়ে সৈয়দ আহমদের সংস্পর্শে এসেছিলেন এবং দেশে ফিরে ইসলামধর্মের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। পরবর্তীকালে এই আন্দোলন কৃষক আন্দোলন’ -এ পরিণত হয়েছিল। বারাসত অঞলে তিতুমিরের এই আন্দোলন বারাসত বিদ্রোহ’ নামেও পরিচিত।

তিতুমিরের আন্দোলনের মূল কথা ছিল—

I.  একমাত্র আল্লাহকে মান্য করতে হবে।

II.  মুসলমানদের ইসলামধর্মবহির্ভূত সংস্কার পরিত্যাগ করতে হবে।

III.  অনুগামীদের দাড়ি রাখতে হবে।

IV.  অত্যাচারী জমিদারদের রাজস্ব দাবির বিরোধিতা করতে হবে।


তিতুমিরের বিরুদ্ধে জমিদারদের প্রতিক্রিয়া:- তিতুমিরের প্রভাবে 24 পরগনা, নদিয়া, মালদহ, রাজশাহি, ঢাকা প্রভৃতি অঞ্চলের কৃষকরা ওয়াহাবি আন্দোলন শুরু করলে জমিদার, নীলকর সাহেব ও মুসলমান মোল্লারা তিতুমিরের বিরোধিতা শুরু করে। পুড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব  রায় তিতুমিরের অনুগামীদের দমন করার জন্য দাড়ির উপর 2.5 টাকা কর ধার্য করেছিলেন। তিতুমির বারাসতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নিজেকে ‘স্বাধীন বাদশাহ’ বলে ঘোষণা করেছিলেন ও মইনউদ্দিন নামে এক অনুগামীকে প্রধানমন্ত্রী এবং ভাগ্নে গোলাম মাসুমকে প্রধান  সেনাপতি নিযুক্ত করে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করার পরিকল্পনা করেন। তিনি নারকেলবেড়িয়ার সদর দপ্তরে বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করে ওই অঞ্চলের জমিদারদের কাছে রাজস্ব দাবি করেন।


বারাসত বিদ্রোহের অবসান:- তিতুমিরের বিরুদ্ধে স্থানীয় জমিদার ও নীলকর সাহেবরা গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্কের শরণাপন্ন হলে 1831 খ্রিস্টাব্দে লর্ড বেন্টিং তার বিরুদ্ধে  এক অভিযান প্রেরন করেন এবং কামানের আঘাতে বাঁশেরকেল্লা ধ্বংস হয়। তিতুমীর ও তার কয়েকজন অনুগামী বীরের মতো যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ দেন বন্দি সৈন্যদের ফাঁসি হয় এবং অনেকে দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড ভোগ করেন।


গুরুত্ব:- ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে ওয়াহাবি আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। তিতুমিরের নেতৃত্বে পরিচালিত ওয়াহাবি আন্দোলন ধর্মসংস্কার আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও এটি কৃষক বিদ্রোহের রূপ পরিগ্রহণ করেছিল। অত্যাচারী জমিদার ও নীলকর সাহেবদের হাতে নির্যাতিত মানুষদের সংগঠিত করে তিতুমির বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। তাই এই আন্দোলনের গুরুত্ব কে অস্বীকার করা যায় না।




আরও পড়ুন......




3.মুন্ডা বিদ্রোহের (1899-1900 খ্রিস্টাব্দ) কারণগুলি আলোচনা কর।

বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে মুন্ডা উপজাতির মানুষদের পুঞ্জীভূত বিক্ষোভ ও অসন্তোষের স্বাভাবিক অভিব্যক্তি হল মুন্ডা বিদ্রোহ (1899-1900 খ্রিস্টাব্দ)


মুন্ডা বিদ্রোহের কারণ:- সহজ, সরল কৃষিজীবী মুন্ডাদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বিদ্রোহের কারণগুলি হল-


1.জমির ওপর অধিকার হারানো:- ইংরেজ শাসন প্রবর্তিত হলে বাইরের থেকে লোভী মানুষেরা এসে নিরীহ কৃষিজীবী মুন্ডাদের জমি জায়গা কুক্ষিগত করে নিতে থাকে এবং মুন্ডাদের বিতাড়িত করে সেই জমিগুলি দখল করে নিলে মুন্ডারা ক্ষুব্ধ হয়।


2.খুঁৎকাঠি প্রথার অবসান :-  ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর মুন্ডাদের খুঁকাঠি প্রথা বা জমির যৌথ মালিকানার অবসান ঘটিয়ে জমিতে ব্যক্তিগত মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হলে মুন্ডারা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।


3.নতুন আইনবিধি:- অতি ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর মুন্ডাদের চিরাচরিত ঐতিহ্যবাহী মুন্ডারি, আইন, বিচার ও সামাজিক ব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে নতুন ধরনের আইন প্রবর্তন করলে মুন্ডারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।


4.বেগার শ্রমঃ- নিরীহ মুন্ডাদের দিয়ে সরকারি কর্মচারী, জমিদার, মহাজনরা দিনের পর দিন বিনা মজুরিতে বেট বেগারি প্রথায় কাজ করতে বাধ্য করলে অবশেষে মুন্ডারা বিদ্রোহের পথে পা বাড়ায়।


5.বিরসা মুন্ডার ভূমিকা:- ধর্মপ্রচারক হিসেবে জীবন শুরু করলেও বিরসা মুন্ডার সংস্কারমূলক বিবিধ ব্যবস্থা, হীনম্মন্যতাকে দূর করে মুন্ডাদের মাথা উঁচু করে বাঁচার শিক্ষা মুন্ডা বিদ্রোহের অন্যতম কারণ।


উপসংহার :- উপরোক্ত কারণগুলি ছাড়াও মহাজন, জমিদার, জায়গিরদার, ঠিকাদার, চা ব্যবসায়ীদের মিথ্যা প্রলোভন ও শোষন এবং খ্রীষ্টান মিশনারিদের ধর্মপ্রচার ছিল এই বিদ্রোহের অন্যতম কারন।






4.রংপুর বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা করঃ-

গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস দেবীসিংহকে রংপুরের ইজারাদার নিযুক্ত করলে দেবীসিংহের অত্যাচার ও শোষন গোটা রংপুর ও দিনাজপুরে ছড়িয়ে পড়ে।1783 সালে নুরুলউদ্দিনের নেতৃত্বে দেবীসিংহের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ হয়েছিল তা তা রংপুর বিদ্রোহ নামে পরিচিত।

কারনঃ- রংপুর বিদ্রহের প্রধানতম কারনগুলি হল—

i.ইজারাদার দেবীসিংহ কৃষোকদের উপর চড়া ভূমি রাজস্ব ধার্য করেছিলেন।

ii.কৃষকদের জমি বাজেয়াপ্ত করে নেওয়া হত।

iii.দেবী সিংহের সহকারী হরেরামের প্রচন্ড কর আদায়ের উৎপিড়ণ।

iv.উচ্চ করের জন্য মহাজনদের কাছে ঋণের জন্য মহাজনদের শোষণ।

v.অনাদায়ে ঘর বাড়ি লুঠ করে নেওয়া।


বিদ্রোহঃ- এইসব কারণে 1783 সালে নুরুলউদ্দিনের নেতৃত্বে মহাজন ও দেবী সিংহের বিরুদ্ধে কৃষকরা বিদ্রোহ করে। নুরুলউদ্দিনকে ‘নবাব’ ও দয়ারাম শীলকে ‘নবাবের দেওয়ান’ ঘোষণা করেণ। হিন্দু মুসলিম যৌথভাবে এই বিদ্রোহ করেন।


বিদ্রোহের প্রসারঃ- রংপুরে এই বিদ্রোহ শুরু হলেও ধীরে ধীরে তা কোচবিহার, দিনাজপুর প্রভৃতি স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।


দমনঃ- বিদ্রোহ দমনে ইংরেজ সেনাবাহিনী নিযুক্ত হন এবন নির্মম অত্যাচারে এই বিদ্রোহ দমন করে। নুরুলউদ্দিন আহত হয়ে বন্দী হন ও পরে তার মৃত্যু হয়। এরপর দয়ারাম শীলের ও মৃত্যু হলে 1783, মার্চ মাসে এই বিদ্রোহের দমন হয়। লক্ষ টাকার ঘুষের মাধ্যমে দেবী সিংহ মুক্তি পায়।


গুরুত্বঃ- বিদ্রোহটি ক্ষুদ্র সময়ের জন্য হলেও এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।এর ফলে ইজারাদারির কুফলের প্রকাশ ঘটে। এটি ছিল হিন্দু মুসলিমের মিলিত বিদ্রোহ। অধ্যাপক নরহরি কবিরাজ বলেন – ‘’1783 সালের বিদ্রোহ ছিল একটি সফল কৃষক অভিযান’’।





5.সাঁওতাল বিদ্রোহের চরিত্র বা প্রকৃতি কেমন ছিল?

বিভিন্ন ঐতিহাসিক লেখকদের দৃষ্টিকোণ থেকে সাঁওতাল বিদ্রোহের চরিত্র বা প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি পরিলক্ষিত হয়-

1.গণমুখী আন্দোলন :-  সাঁওতাল বিদ্রোহ কেবলমাত্র সাঁওতালদের বিদ্রোহ ছিল না, কুমোর, কামার, গোয়ালা, ডোম, তেলি, চামার প্রভৃতি নিম্নবর্গের মানুষ সক্রিয় অংশগ্রহণ করে এই আন্দোলনকে গণমুখী করে তুলেছিল।


2.শোষিত মানুষের বিদ্রোহ : সাঁওতাল বিদ্রোহের চরিত্র ব্রিটিশ-বিরোধী হলেও বিদ্রোহীরা জমিদার, মহাজনদের ওপর আঘাত হেনেছিল।


3.সকলের বিদ্রোহ :-  সাঁওতাল বিদ্রোহে নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতি, বয়স্ক পুরুষ-মহিলা অর্থাৎ বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষেরা অংশগ্রহণ করেছিল।


4.ব্রিটিশ বিরোধিতা:- বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর হ্যালিডে বলেন সাঁওতাল বিদ্রোহের মূল লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ শাসনের অবসান। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন যে, 1857 সালের বিদ্রোহকে যদি স্বাধীনতা সংগ্রামের মর্যাদা দেওয়া হয় তাহলে সাঁওতাল বিদ্রোহের একই মর্যাদা পাওয়া উচিত।


উপসংহার:- ঐতিহাসিক কালীকিঙ্কর দত্তের মতে, সাঁওতাল বিদ্রোহ ক্রমশ নিম্নশ্রেণির গণবিদ্রোহের রূপ ধারণ করেছিল। সুপ্রকাশ রায় সাঁওতাল বিদ্রোহকে মহাবিদ্রোহের অগ্রদূত স্বরূপ বলেছেন।


6.সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল আলোচনা

অথবা সাঁওতাল বিদ্রোহ সম্পর্কে যা জান লেখ

ভুমিকাঃ- সাঁওতালরা ছিল বীরভূম, মানভূম, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদের প্রাচীন অধীবাসি। এরা ছিল কঠোর পরিশ্রমী ও শান্তিপ্রিয়, বিনিময় প্রথা ভিত্তিক কৃষিজিবী জনগোষ্ঠী। ভাগলপুরে রাজমহল পাহাড়ের প্রান্তদেশে বনভূমি পরিষ্কার করে বসবাস করত। এটি ‘দামিন-ই-কোহ’ নামে পরিচিত যার অর্থ হল ‘পাহাড়ের প্রান্তদেশ’। ইংরেজদের চাপে তারা 1811-1881 এর মধ্যে সাতবার বিদ্রোহ করে, এর মধ্যে 1755-56 এর বিদ্রোহ ছিল সবথেকে ব্যাপক ,ভয়ঙ্কর ও গুরুতর।


বিদ্রোহের কারণঃ- এই অঞ্চলেও তারা জমিদার ও কর্মচারীদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি তাই তারা শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহ ঘোষন করেন। নিম্নে বিদ্রোহের কারনগুলি উল্লেখ করা হল—

1.খাজনা বৃদ্ধিঃ- বাংলা,বিহার, উড়িষ্যায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু হলে তাদের তৈরী করা পাথুরে জমি থেকে আবাদি জমিতএ নতুন ভুমিব্যাবস্থায় খাজনা ধার্য করা হয়। বিনা খাজনায় অভ্যস্ত সাঁওতালদের খাজন ক্রমে বৃদ্ধি পেলে তাদের মধ্যে তীব্র বিক্ষভের সৃষ্টি হয়।

2.মহাজনদের শোষণঃ- নতুন ভুমিরাজস্বে নগদ অর্থে খাজনা দিতে হত। সাঁওতালরা নগদ অর্থের জন্য মহাজনদের কাছে ঋণ নিতে বাধ্য হত যার সুদ প্রায় 50%-500% ছিল। একবার ঋণ নিলে তারা বেরিয়ে আসতে পারতনা তাই মহাজনরা তাদের উপর নির্মম অত্যাচার চালাত। সর্বস্ব হারানোর পরেও নিজেকে দাসে পরিনত হতে হত।

3.বহিরাগত ব্যাবসায়ীদের কারচুপিঃ- বিদেশি ব্যাবসায়ীরা দোকান খুললে ফসলের বিনিময়ে চড়া দামে দ্রব্য কিনতে গিয়ে সর্বশান্ত হত। ব্যাবসায়ীরা ভুয়া বাটখারায় (কেনারাম,বেচারাম) কেনা বেচা করে ঠকাতো। তাদের এই কারচুপি জানতে পারলে সাঁওতালরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।


বিদ্রোহের সূচনাঃ- এইসব অত্যাচারের প্রতিবাদে তারা স্থানীয় কতৃপক্ষের কাছে আবেদনে সমস্যা মিটবেনা বুঝতে পারে তাই তারা 1855 সালে 30 জুন ভাগনাডিহির মাঠে সিধু ও কানু নামে দুই ভাই-এর নেতৃত্বে 10 হাজার সাঁওতাল ‘স্বাধীন সাঁওতার রাজ্য’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করে।


বিদ্রোহের দমনঃ- আধুনিক অস্ত্রশাস্ত্রে সজ্জিত ইংরেজ বাহিনীর বিরুদ্ধে লাঠি, ট্যাঙ্গি, বল্লম, তীরধনুক নিয়ে সাঁওতালরা তাদের কাছে পরাজিত হয়। 23 হাজার বিদ্রোহীকে হত্যা করে সিধু কানু সহ অন্যান্য নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল। এইভাবে 1856 সালে ইংরেজরা নির্মমভাবে এই বিদ্রোহ দমন করেছিল।

ফলাফলঃ- এই বিদ্রোহের ফলে –

i.   সাঁওতাল অধুষ্যিত এলাকা নিয়ে ‘সাঁওতাল পরগনা’ জেলা গঠন করা হয়।

ii.   সাঁওতালদের পৃথক উপজাতি বলে ঘোষণা করা হয় এবং বলা হয় ব্রিটিশ আইন এখানে কার্যকর হবেনা

iii.   খ্রীষ্টান মিশনারি ছাড়া সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা হয়


উপসংহারঃ- এই বিদ্রোহ ছিল একটি তীব্র ব্রিটিশ বিরুদ্ধ প্রতিবাদ নরহরি কবিরাজের মতে এই বিদ্রোহ ছিল সকল সম্প্রদায়ের দরদ্র মানুষদের মুক্তি যুদ্ধ। কালীকঙ্কর বলেন- ‘’বাংলা, বিহারের ইতিহাসে এই বিদ্রোহ নবযুগের সূচনা করে’’। সুপ্রকাশ রায় বলেন- ‘’সাঁওতাল বিদ্রোহ ছিল ভারতের প্রথম মুক্তি সংগ্রাম’’




আরও পড়ুন......



 


7.সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ সম্পর্কে টীকা লিখ।

ভূমিকাঃ- ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে বাংলায় সর্বপ্রথম সংঘটিত প্রতিরোধ আন্দোলন ছিল সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহ। কৃষিজীবী হিন্দু সন্ন্যাসী ও মুসলমান ফকিরদের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন(1763-1800 খ্রীঃ) ধরে এ বিদ্রোহ চলেছিল।


বিদ্রোহের কারনঃ- এই বিদ্রোহের কারণগুলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে,

1.রাজস্ব বৃদ্ধিঃ- ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অত্যাধিক রাজস্ব বৃদ্ধি কৃষিজীবী সন্ন্যাসী ও ফকিরদের ক্ষুব্ধ করে তোলে।


2.তীর্থকরঃ- বিভিন্ন তীর্থক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য সরকার থেকে সন্ন্যাসী ও ফকিরদের ওপর তীর্থ কর আদায় করা শুরু হলে সন্ন্যাসী ও ফকিররা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।


3.কোম্পানির কর্মচারীদের জুলুমঃ- ফকির সন্ন্যাসীদের মধ্যে অনেকে রেশম ব্যবস্থা সঙ্গে যুক্ত ছিল। কোম্পানীর কর্মচারীরা তাদের এই ব্যবস্থায় নানাভাবে জুলুম ও বাধা প্রদান করত।


4.মধ্যস্বত্বভোগীদের শোষণ অত্যাচারঃ- কোম্পানির কর্মচারিরা ছাড়াও ইজারাদার, পত্তনিদার প্রভূতি মধ্যস্বত্বভোগীদের শোষণ ও অত্যাচার সন্ন্যাসী ফকির বিদ্রোহের অন্যতম কারণ।


5.নিষেধাজ্ঞাঃ- ফকিরদের নিয়ন্ত্রনের উদ্দ্যেশে  কোম্পানী তাদের দরগায় যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে ফকিররা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।


6.মন্বন্তরঃ- ছিয়াত্তরের মন্বন্তরের সময় (1770 খ্রিস্টাব্দে) বহু মানুষের মৃত্যু হলেও সরকার দুর্ভিক্ষ পীড়িত মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে কৃষকদের উপর রাজস্বের চাপ সৃষ্টি করলে সন্ন্যাসীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।


মূল্যায়নঃ- ওয়ারেন হেস্টিংস এই বিদ্রোহকে ‘পেশাদারী ডাকাতদের উপদ্রব’ বলে অভিহিত করলেও উইলিয়াম হান্টার সর্বপ্রথম সন্ন্যাসী বিদ্রোহকে ‘কৃষক বিদ্রোহ’ বলে অভিহিত করেছেন।




8.সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণগুলি কী কী ?

ভূমিকা:- 1763 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1800 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সন্ন্যাসী-ফকিররা গেরিলাযুদ্ধের মাধ্যমে ইংরেজ সেনাদের বারংবার বিপর্যস্ত করে তুললেও শেষ পর্যন্ত তারা লক্ষ্যে পৌছাতে ব্যর্থ হয়।


ব্যর্থতার কারণ:- সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের ব্যর্থতা কারণগুলি হল-

1.নেতৃত্বের দুর্বলতা:- সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের উল্লেখযোগ্য কিছু নেতৃত্ব থাকলেও ভবানী পাঠক ও মজনু শাহের মৃত্যুর পর যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে এই বিদ্রোহ দুর্বল হয়ে পড়ে।


2.সঠিক পরিকল্পনার অভাব:- সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহে উত্তরবঙ্গ ও অন্যান্য জায়গায় সঠিক পরিকল্পনা গৃহীত হয়নি।


3.সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের অভাব:- বিদ্রোহের উদ্দেশ্য কী ছিল সে বিষয়ে বিদ্রোহীদেরই অনেকের কোনো ধারণা না থাকা এই বিদ্রোহের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ।


4.উপযুক্ত সংগঠনের অভাব:- সন্ন্যাসী ও ফকির বিদ্রোহের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ ছিল উপযুক্ত সংগঠনের অভাব।


5.উন্নততর অস্ত্র ও রণকৌশলের অভাব :- উপযুক্ত ও উন্নততর অস্ত্রশস্ত্রের অভাব, ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়ার মতো উন্নত রণকৌশলের অভাবে এই বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে যায়।


6.অন্যান্য কারণ:- আদর্শহীনতা, আত্মকলহ, ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর বারংবার আক্রমণও এই বিদ্রোহের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ।


উপসংহার :- সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলেও বিদ্রোহীরা হিন্দু ও মুসলমানদের এক ছাতার তলায় এনে যে নতুন সশস্ত্র বিপ্লবের পথ নির্দেশ করেছিল তা ছিল পরবর্তী বিদ্রোহ বিপ্লবের কাছে আলোর প্রতীক স্বরূপ।






File Details

 

File Name/Book Name

 মাধ্যমিক তৃতীয় অধ্যায় প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ ৪ ও ৮ নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর

File Format

PDF

File Language

Bengali

File Size

153 KB

File Location

GOOGLE DRIVE

Download Link

Click Here to Download PDF File


 

Join Telegram... Members

 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

5 মন্তব্যসমূহ
  1. ইতিহাসের কেবল প্রথম ও দ্বিতীয় অধ্যায়ের pdf পেয়েছি, বাকি অধ্যায় গুলির পেলে খুব উপকৃত হব (দশম শ্রেনী)

    উত্তরমুছুন
  2. ইতিহাসের(Class-x)সমস্ত অধ‍্যায়ের pdf দিলে খুব উপকৃত হবো।please

    উত্তরমুছুন
  3. সকল আদিবাসী বিদ্রোহের মূল কারণ ও মূল ফলাফল প্রকাশ করলে ভালো হয়।

    উত্তরমুছুন
  4. খুব শীঘ্রই ভারতে কোম্পানীর শাসনে আধিবাসী বিদ্রোহের কারন গুলি আলোচনা করা হবে। আমাদের ওয়েবসাইটি ভিজিট করার জন্য ধন্যবাদ

    উত্তরমুছুন
  5. আদিবাসী বিদ্রোহের মূল কারণ গুলি আলোচনা কর
    লিংক কর
    https://history4u3.blogspot.com/2022/03/blog-post_16.html

    উত্তরমুছুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
To Top