Advertisement

মাধ্যমিক প্রথম অধ্যায় ইতিহাসের ধারনা থেকে 4 নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর

মাধ্যমিক প্রথম অধ্যায় ইতিহাসের ধারনা থেকে 4 নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর


ইতিহাসের ধারনা থেকে 4 নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর


প্রিয় দশম শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা,

আজকে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো, মাধ্যমিক প্রথম অধ্যায় ইতিহাসের ধারনা থেকে 4 নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর | Madhyamik 4 Mars History Question and answers With PDF Download from "The Concept Of History" ( ইতিহাসের ধারনা )| তোমরা এই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দশম শ্রেনী প্রথম অধ্যায় ইতিহাসের ধারনা থেকে ইতিহাস 4 নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর (Class 10 History 1st Chapter 4 Mark Question Answers) মাধ্যমিক প্রথম অধ্যায় ইতিহাসের ধারনা থেকে 4 নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হয়েছে।|তোমরা এই অধ্যায়ের অর্থাৎ 'প্রথম অধ্যায় ইতিহাসের ধারনা থেকে 4 নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর' |(Madhyamik History 1st Chapter Suggestion,' প্রথম অধ্যায় ইতিহাসের ধারনা থেকে 4 নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর'|'প্রথম অধ্যায় ইতিহাসের ধারনা থেকে 1 নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর' পেয়ে যাবে।|এগুলি তোমাদের ফাইনাল পরিক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন হবে।| তো বন্ধুরা তোমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে দশম শ্রেনীর প্রথম অধ্যায় ইতিহাসের ধারনা থেকে 1 নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা রয়েছে।|তো তো বন্ধুরা আমাদের আসা এই প্রশ্নের উত্তরটি তোমাদের ফাইনাল পরিক্ষায় খুবই কাজে আসবে।

মাধ্যমিক প্রথম অধ্যায় ইতিহাসের ধারনা থেকে 4 নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর

1.সরলা দেবী চৌধুরানীর আত্মজীবনী জীবনের ঝরাপাতা ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে কতখানি  সহায়ক  হয়েছে ?

ভুমিকাঃ “জীবনের ঝরাপাতা” হল সরলা দেবী চৌধুরানীর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ। সরলা দেবী চৌধুরানী ছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বোন স্বর্ণকুমারী দেবীর মেয়ে। জীবনের ঝরাপাতা কাহিনীটি দেশ পত্রিকায় 1944-45 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল এবং পরে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। জীবনের ঝরাপাতা থেকে সমকালীন ইতিহাস এর বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়-


i.ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলঃ- এই গ্রন্থ থেকে ঠাকুর বাড়ির শিশুদের জীবনচর্চা, দুধমা-ধাইমা দিয়ে সন্তান পালন, গৃহশিক্ষক প্রথা, নারী শিক্ষা,জন্মদিন পালন ইত্যাদি কথা জানা যায়।


Ii.স্বাদেশিকতাঃ- বঙ্গভঙ্গ স্বদেশী আন্দোলনের সময় সরলা দেবী চৌধুরানী স্বদেশী দ্রব্যের উৎপাদন ব্যবহারের প্রচার করার জন্য লক্ষীর ভান্ডার নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন। 1910 সালে জাতীয় কংগ্রেসের এলাহাবাদে অধিবেশনের সময় তিনি নিখিল ভারত মহিলা সম্মেলন আহবান করেন এবং তাঁরই উদ্যোগে 1911 খ্রিস্টাব্দে ভারত স্ত্রী মহামন্ডল প্রতিষ্ঠা করা হয়।


iii.অর্থনৈতিক শোষণের ইতিহাসঃ- নীল চাষীদের, বাগানের কুলিদের মজুরদের ওপর ব্রিটিশদের অত্যাচারের কথা,অবিচারের কথা তিনি জীবনের ঝরাপাতায় লিখেছিলেন। সরলা দেবী চৌধুরানী ভারতী পত্রিকায় বিলিতি ঘুষি বনাম দেশি কিল নামে একটি প্রবন্ধ উপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে লিখেছিলেন তা জানা যায়।


iv.রাজনৈতিক কার্যকলাপ বাঙ্গালী যুবকদের স্বাধীনতা সংগ্রামে উপযুক্ত করার উদ্দেশ্যে তাদের অস্ত্র শিক্ষা প্রদানের জন্য গড়ে তোলেন প্রতাপাদিত্য উৎসব,উদয়াদিত্য উৎসব, বীরাষ্টমী ব্রত ইত্যাদি। এছাড়াও জীবনের ঝরাপাতা থেকে সমকালীন সমাজে নারী শিক্ষা, নারী সমাজের বিভিন্ন আদব-কায়দা ব্রাহ্মসমাজের কার্যকলাপের কথা জানা যায়।


উপসংহারঃ-জীবনের ঝরাপাতা গ্রন্থে সরলা দেবীর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও উপলব্ধির কথা লেখা আছে। তবে আধুনিক ইতিহাসচর্চায় এই গ্রন্থের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসচর্চার এক অপরিহার্য দলিল।




2.আধুনিককালে নারী ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো। অথবা নারী ইতিহাসের ওপর একটি টীকা লেখ।

ভূমিকা:- সভ্যতা-সংস্কৃতির বিকাশে নারীর ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হলেও পুরুষশাসিত সমাজে নারীরা হয়েছে অবহেলিত। যুগে যুগে নারীর ভূমিকা কী ছিল তার চর্চা বর্তমান কালে শুরু হয়েছে। নারীর গুরুত্বকে তুলে ধরার ইতিহাসচর্চাই হল নারী ইতিহাসচর্চা। 1970-এর দশকে একদল ঐতিহাসিক উপলব্ধি করেন নারীদের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি। তাদের মর্যাদা ও অবস্থানের পর্যালোচনা প্রয়োজন। আমেরিকা ও ব্রিটেনে নারীবাদী চর্চার সূত্রপাত ঘটে। বর্তমানে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারী ইতিহাস চর্চা বিশেষ গুরুত্বলাভ করেছে।


নারী ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্যসমূহ : আধুনিককালে নারী ইতিহাসচর্চার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল—

i.পুরুষকেন্দ্রিক ইতিহাস সংশোধন:- সভ্যতার ইতিহাসে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেও নারী তার প্রাপ্য ও যোগ্য সম্মান পায়নি। অবহেলিত, উপেক্ষিত নারীর সম্মান পুনরুদ্ধার করার এবং পুরুষকেন্দ্রিক ইতিহাস সংশোধন করাই নারী ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্য।


ii.অধিকার ও সমতা প্রতিষ্ঠা : নারী ইতিহাসচর্চার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল নারীর অধিকার আদায় করা ও নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করা।


iii.নারী নির্যাতনের অবসান : যুগে যুগে দেশে দেশে নারীরা হয়েছে নির্যাতনের, অত্যাচারের ও সামাজিক কুপ্রথার শিকার। নারী ইতিহাসচর্চার মাধ্যমে নারী নির্যাতনের অবসান ঘটানো এর বৈশিষ্ট্য।


iv.সামাজিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ : কোনো সমাজের প্রকৃত অবস্থা বোঝা যায় সেই সমাজের নারীর অবস্থা থেকে। কোনো দেশে নারীরা কতটা সামাজিক, রাজনৈতিক, আর্থিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার ভোগ করে সে দেশের নারী ইতিহাসচর্চা থেকেই তা জানা যায়।


নারী সমাজের ইতিহাসের গুরুত্ব : নারী ইতিহাস বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন—

                          I.  এ যে বিষয়গুলি উপেক্ষিত ছিল এখন তা গুরুত্ব সহকারে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। পারিবারিক ক্ষেত্রে হিংসাত্মক কার্যকলাপ, শিশুর উপর নিপীড়ন, বধূহত্যা, নারী নির্যাতন ও অন্যান্য অত্যাচার প্রভৃতির কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য।

      II.  .লিঙ্গবৈষম্য, পারিবারিক সম্পর্ক ও সামাজিক ব্যবস্থার কথা তুলে ধরে নারী ইতিহাস।

      III.  নারীর ক্ষমতায়ন ও দক্ষতার উপর আলোকপাত করে এবং

      IV.  বিভিন্ন যুগে নারীর মানসিক, সামাজিক ও নৈতিক অবস্থার কথা তুলে ধরে।

এই ভাবেই নারীদের ক্ষমতায়ন ও দক্ষতার পরিচয় নারী ইতিহাস চর্চায় স্থান লাভ করেছে।


3. আধুনিক ইতিহাস চর্চার উপাদান হিসেবে ইন্টারনেটের সুবিধা ও অসুবিধা আলোচনা কর।

ভূমিকা: কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ইন্টারনেট বলা হয়। ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে বর্তমান যুগে তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটেছে। তাই বর্তমান যুগকে তথ্য-বিস্ফোরণের যুগ’ বলা হয়। ইন্টারনেটের সাহায্যে ইতিহাসের অনেক তথ্য পাওয়া যায় তবে ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহে ইন্টারনেট ব্যবহারের যেমন সুবিধা আছে তেমনি বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে। 


সুবিধাসমূহ: 

i)তথ্যের সহজলভ্যতা : ইন্টারনেটের সাহায্যে ঘরে বসে দেশ-দুনিয়ার অসংখ্য তথ্য নিমেষের মধ্যে জানা যায়। ইন্টারনেট থেকে সহজে বহু তথ্যসংগ্রহ করে ইতিহাস রচনা করা যায়।

ii)   সহজে মূল তথ্য ও ছবি সংগ্রহ: ইন্টারনেটের সাহায্যে বিভিন্ন বিষয়ের মূল তথ্য ও তার ছবি পাওয়া যায়, যার ফলে বিশেষ বিষয় সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস রচনা করা সম্ভব হয়। অনলাইন লাইব্রেরি’ ও ‘আর্কাইভ’ থেকে আসল বই ও রিপোর্টের কপি পাওয়া যায়।

iii) সময় সাশ্রয় :বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বই বা অন্য উৎস থেকে তথ্যসংগ্রহ করা প্রচুর সময়সাপেক্ষ। কিন্তু ইন্টারনেটের সাহায্যে অল্প সময়ে প্রচুর তথ্যসংগ্রহ করা যায়।

iv)  কম খরচে তথ্যসংগ্রহ:-ইন্টারনেটের সাহায্যে কম খরচে অনেক বেশি তথ্য পাওয়া যায়। বই কিনে বা অন্যভাবে তথ্যসংগ্রহকরা অনেক বেশি ব্যয়বহুল-


অসুবিধাসমূহ: তবে ইন্টারনেট ব্যবহারের বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে-

i. প্রাপ্ত তথ্যের নির্ভরযোগ্যতার অভাব: ইন্টারনেটে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্য কতটা নির্ভরযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকে নিজের মনগড়া বা বিকৃত তথ্য সংযোজন (upload) করে থাকেন।


ii.পরস্পরবিরোধী তথ্য: ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইটে(website)একই বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের ও পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া যায়, যে তথ্যগুলি ইতিহাস রচনায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে।


iii. তথ্যের অসম্পূর্ণতা: অনেক ক্ষেত্রে ইন্টারনেটে প্রয়োজনীয় বিষয়ের উপর আংশিক তথ্য পাওয়া যায়। তা ছাড়া সব বিষয়ের সঠিক তথ্যও অনেক সময়ে পাওয়া যায় না।


iv. যন্ত্র-প্রযুক্তিগত অসুবিধা: ইন্টারনেট ব্যবহার করে তথ্যসংগ্রহ করার জন্য বিদ্যুৎ-সহ বিভিন্ন যন্ত্র-প্রযুক্তির সহায়তা প্রয়োজন, যা সবসময় সব জায়গায় পাওয়া সম্ভব নয়।


উপসংহার: তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। ইতিহাসের তথ্যসংগ্রহে ইন্টারনেট বিশেষভাবে সহায়ক। কিন্তু এই ব্যবস্থা ত্রুটিমুক্ত নয়। ইন্টারনেট থেকে তথ্যসংগ্রহ করে ইতিহাস রচনা করতে গেলে ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য যতটা সম্ভব মূল নথি বা উৎসের সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া উচিত। তবেই প্রকৃত ইতিহাস রচনা করা সম্ভব হবে।




আরও পড়ুন......





4.আধুনিক ভারতের ইতিহাস চর্চার উপাদান হিসেবে বঙ্গদর্শন পত্রিকার গুরুত্ব আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ- আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সমসাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।এ প্রসঙ্গে বঙ্গদর্শন পত্রিকাটির কথা বলা যায়,যা আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে অনেক তথ্য সমৃদ্ধ। 1872 খ্রিস্টাব্দের 12ই এপ্রিল বঙ্গদর্শন পত্রিকাটি সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। বঙ্গদর্শন পত্রিকা থেকে সমকালীন বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।


ক) সমকালীন তথ্যঃ বঙ্গদর্শন পত্রিকা থেকে সমকালীন সমাজ,অর্থনীত্‌ রাজনীত,শিক্ষা,ধর্ম,সংস্কার প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।এই পত্রিকা থেকে ব্রিটিশ সরকারের শাসন ও শোষণ এর পরিচয় পাওয়া যায়।


খ) বাঙালির স্বদেশ চেতনাঃ এই বঙ্গদর্শন পত্রিকাটি বাঙালি জাতির মধ্যে স্বদেশ চেতনার বিকাশ ঘটায়।এই পত্রিকায় বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা বন্দেমাতরম সঙ্গীতটি প্রথম প্রকাশিত হয় যা পরবর্তীকালে বাঙালি তথা ভারতীয় বিপ্লবী ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মূলমন্ত্রে পরিণত হয়েছিল।


গ) সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা প্রসারঃ এই পত্রিকায় সাম্য সহ বিভিন্ন প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়।এর ফলে বাঙালি সমাজে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার প্রসার ঘটে।


ঘ) বাঙালি সমাজের মেলবন্ধনঃ বঙ্গদর্শন পত্রিকাটি সমকালীন বাঙালি জাতির উচ্চশিক্ষিত সম্প্রদায়ের চিন্তাধারা তুলে ধরত যা, অসংখ্য সাধারণ পাঠক ও শ্রোতার সঙ্গে উচ্চশিক্ষিত ও সাধারণ বাঙালির ভাবধারার মেলবন্ধন ঘটাত।


উপসংহারঃ পরিশেষে বলা যায় যে বঙ্গদর্শন পত্রিকাটি ছিল একটি অতি জনপ্রিয় পত্রিকা। এটি বাঙালি জাতির মনে নতুন উদ্দীপনা উৎসাহ ও সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা সঞ্চার করেছিল। যা নতুন সমাজ গঠনের পক্ষে সহায়ক হয়েছিল।



5.আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার উপাদান হিসাবে সোমপ্রকাশ পত্রিকার গুরুত্ব আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ- আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সমসাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।এ প্রসঙ্গে সোমপ্রকাশ পত্রিকাটির কথা বলা যায়,যা আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে অনেক    তথ্য সমৃদ্ধ। 1858 খ্রিস্টাব্দের 15ই নভেম্বর সোমপ্রকাশ পত্রিকাটি দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। সোমপ্রকাশ পত্রিকা থেকে সমকালীন বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।


ক)সমকালীন তথ্যঃ- সোমপ্রকাশ পত্রিকা থেকে সমকালীন সমাজ অর্থনীতি রাজনীতি ও ধর্ম সংস্কার প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।এই পত্রিকা থেকে ব্রিটিশ সরকারের শাসন ও শোষণ এর পরিচয় পাওয়া যায়।


খ) বাঙালির সমাজ সংস্কারঃ সোমপ্রকাশ পত্রিকা সমকালীন বাঙালি সমাজের সংস্কার আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন কুপ্রথা যেমন বাল্যবিবাহ,বহুবিবাহ,পণপ্রথা ইত্যাদির বিরুদ্ধে সোমপ্রকাশ লেখা প্রকাশ করত। তৎকালীন সমাজে বিধবা বিবাহের প্রসারেও সোমপ্রকাশ জনমত গঠনে সচেষ্ট হয়েছিল।


গ) ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনঃ এই পত্রিকা ব্রিটিশ সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে ভারতীয়দের আন্দোলনের খবর গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করত।এই পত্রিকা থেকে ‘দেশীয় ভাষায় সংবাদপত্র আইন বিরোধী’ইলবার্ট বিল’ সহ ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের বিভিন্ন আন্দোলন সম্পর্কে জানা যায়।


উপসংহারঃ- যাইহোক পরিশেষে বলা যায় যে,সোমপ্রকাশ ছিল একটি দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত নির্ভীক সাপ্তাহিক পত্রিকা। এতে ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন জনবিরোধী নীতির সমালোচনা করা হতো।যার জন্য পত্রিকাটিকে সরকারের আইনের কপে পড়তে হয়েছিল ।সম্পাদককে মুচলেকা ও জরিমানা দিতে বলা হলে তিনি অস্বীকার করলে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।পরে 1980 খ্রিস্টাব্দ থেকে এটি পুনরায় প্রকাশিত হলেও পূর্বের জনপ্রিয়তা অনেক কমে যায় এবং ধীরে ধীরে এর প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়।



6. আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সরকারি নথিপত্রের গুরুত্ব আলোচনা কর।

আধুনিক ভারতের ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো সরকারি নথিপত্র।এই সরকারি নথিপত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সরকারি প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিভিন্ন পদাধিকারী যেমন পুলিশ গোয়েন্দা বা সরকারি আধিকারিকদের রিপোর্ট-প্রতিবেদন বিবরণ ও চিঠিপত্র ইত্যাদি।


সরকারি প্রতিবেদন : সরকারি আধিকারিকরা, গুরুত্বপূর্ণ কর্মচারী, পুলিশ বা গোয়েন্দা,  প্রভৃতিরা বিভিন্ন ঘটনার প্রতিবেদন পাঠাতো সরকারের কাছে। আন্দোলন বা গুপ্তবিপ্লবী কার্যকলাপ সব ধরনের প্রতিবেদনই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


বিশেষ কমিশনের প্রতিবেদন: সরকার বিশেষ বিশেষ সমস্যার জন্য কমিশন গঠন করে এবং সেই কমিশন সরকারকে রিপোর্ট জমা দিত। এই রিপোর্টে বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়। সাইমন কমিশন, হান্টার কমিশন প্রভৃতি প্রতিবেদন থেকে ঐতিহাসিক উপাদান সংগ্রহ করা যায় তাই এই প্রতিবেদনগুলি গুরুত্বপূর্ণ।


চিঠিপত্রের আদান-প্রদান : সরকারি ব্যবস্থায় চিঠিপত্র আদান-প্রদান করা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। বিশেষ করে প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় শাসনকর্তাদের চিঠিপত্রের ব্যাপক আদান-প্রদান ঘটত। এই চিঠিপত্রের মাধ্যমে তারা শাসনকার্য পরিচালনায় বিভিন্ন প্রস্তাবের যেমন আলোচনা করতেন, তেমনি কোন শাসনতান্ত্রিক সমস্যার সমাধানের জন্য চেষ্টা করতেন। যেমন 1905 খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গের প্রকৃত উদ্দেশ্য কি ছিল তা লর্ড কার্জনের চিঠি থেকে জানা যায়।


উপসংহারঃ সরকারি নথিপত্র থেকে ইতিহাস রচনা করতে গেলেও  গবেষকদের সর্তকতা অবলম্বন করতে হয়।কারণ পুলিশ গোয়েন্দা ও সরকারি আধিকারিকদের রিপোর্ট অনেক ক্ষেত্রে ভুল ও বিকৃত থাকে।তবে এইসব তথ্যের কে অন্য তথ্যের সঙ্গে যাচাই করে ইতিহাস রচনা করলে প্রকৃত ইতিহাস রচনা করা সম্ভব।



7.ইতিহাসের উপাদান হিসেবে আত্মজীবনীমূলক স্মৃতিকথা কেন গুরুত্বপূর্ণ

ভুমিকাঃ- ইতিহাস লেখার জন্য বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করতে হয় তার মধ্যে লিখিত অবদান হল গুরত্বপূর্ন । লিখিত উপাদানের মধ্যে আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা থেকে বহু তথ্য পাওয়া যায়। তাই তৎকালীন ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে এগুলি গুরুত্ব অপরিসীম। আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথাগুলিও এক ধরনের সাহিত্য। লেখক তার চোখে দেখা বিভিন্ন ঘটনা ও নিজের অভিজ্ঞতার কথা এই জীবনীগ্রন্থে প্রকাশ করেন।


আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা গুরুত্বঃ-

1.সাধারণ মানুষের কথা, লেখক এর পারিপার্শিক পরিবেশ, কোন কোন ঘটনার বিবরণী প্রভুতি ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে তথ্যের জোগান দেয়।

2.রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির বিভিন্ন ধর্মী ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।

3.স্থানীয় ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে এই উপাদান সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

4.বৃহত্তম বা জাতীয় ইতিহাসের বহু উপেক্ষিত বিষয়ের উপর আলোকপাত করে।


সীমাবদ্ধতাঃ- যদিও এ প্রসঙ্গে বলতে হয় যেহেতু স্মৃতিকথা লেখক স্মৃতিপট থেকে সংগ্রহ করে আনেন তাই অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত ঘটনা এবং স্মৃতিকথায় বর্ণিত ঘটনায় অসংগতি বা অতিরঞ্জিত ব্যাপার চোখে পড়ে।


উপসংহারঃ তবে সতর্কভাবে অন্যান্য তথ্যের দ্বারা যাচাই করে আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার বিভিন্ন ঘটনাবলী ইতিহাসের উপাদান হিসাবে ব্যবহার করলে একটি সুষ্ঠু ইতিহাস রচনা করা সম্ভব হবে বলে ঐতিহাসিক এবং গবেষকেরা মনে করেন। এদিক দিয়ে বিচার করলে আত্মজীবনী এবং স্মৃতিকথা ইতিহাসের উপাদান হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।



আরও পড়ুন......


8. ইন্দ্রাকে লিখা জহরলাল নেহেরুর চিঠি থেকে কিভাবে আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান পাওয়া যায়?

ভূমিকাঃ- আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসেবে ব্যক্তিগত চিঠিপত্রকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। এরূপ ব্যক্তিগত চিঠিপত্রের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল ‘লেটার্স ফ্রম আ ফাদার টু হিজ ডটার'।


I.পিতার উপদেশ : পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু 1928 খ্রীষ্টাব্দে এলাহাবাদ জেল থেকে মহীশূরে তাঁর 10 বছর বয়সি কন্যা ইন্দ্রা গান্ধিকে অসংখ্য চিঠি লিখেছিলেন। এরুপ 30টি চিঠির একটি সংকলন পরবর্তীকালে 'Letters from a Father to His Daughter শিরোনামে এলাহাবাদ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এই চিঠির সংকলন হল কন্যার প্রতি একজন স্নেহময় পিতার অমূল্য তত্ত্বাবধান ও উপদেশ।


II.উদ্দেশ্য :- জওহরলাল নেহরু তার কন্যা ইন্দিরাকে আমাদের বিশ্বের বিভিন্ন বিস্ময়, প্রাকৃতিক ইতিহাস এবং সভ্যতার গল্প শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে এসব চিঠি লিখেছিলেন।


III.সভ্যতার প্রতিষ্ঠা: বুদ্ধি কীভাবে মানুষকে অন্যান্য প্রাণীদের চেয়ে চতুর ও শক্তিশালী করে তুলল, কীভাবে ধর্মবিশ্বাসের প্রচলন হল, অর্থবহ শব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে কীভাবে ভাষার উদ্ভব হল, প্রাচীনকালে কীভাবে সমাজ, সভ্যতা, রাজতন্ত্র ও রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হল প্রভৃতি বিষয়ে সহজ ভাষায় সুন্দর গল্প লিখে জওহরলাল তার কন্যা ইন্দিরাকে পাঠাতেন।


IV.সভ্যতার অগ্রগতি : প্রাচীন ভারতে সভ্যতার অগ্রগতি, আর্যদের আগমন, রামায়ণ ও মহাভারতের আদর্শ, শক্তিশালী রাজবংশ, দরিদ্ৰশ্রেণির দুরবস্থা প্রভৃতির আলোচনাও জওহরলাল নেহরুর চিঠিপত্রে স্থান পেয়েছে।


উপসংহারঃ-  'Letters from a Father to His Daughter’ চিঠির সংকলনটি জওহরলাল নেহেরু ইন্দিরা গান্ধির মানসিকতাও আদর্শ সম্পর্কে জানার এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রেও তার গুরুত্ব অপরিসীম। জওহরলাল নেহেরু পরে বলেছিলেন’ ‘যারা এগুলি পড়বে তারা ধীরে ধীরে আমাদের এই পৃথিবীতে বিভিন্ন জাতি নিয়ে তৈরি একটি বৃহৎ পরিবার হিসেবে ভাবতে শুরু করবে।‘ বিখ্যাত হিন্দি সাহিত্যিক মুন্সি প্রেমচাঁদ এ বইটি ‘পিতাকে পত্র পুত্রীকে  নাম’’ শিরোনামে হিন্দিতে অনুবাদ করেন।



9.বিপিনচন্দ্র পালের আত্মজীবনী “সত্তর বছর” বছর কিভাবে আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হয়ে উঠেছে তা বিশ্লেষন কর।


ভূমিকাঃ- আধুনিক ভারতের ইতিহাসে একজন বিখ্যাত রাজনীতিবিদ,লেখক ও সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত বিপিনচন্দ্র পাল। তিনি তাঁর আত্মজীবনী “সত্তর বছর” গ্রন্থে  তার জীবনের প্রথম 22 বছরের সমকালের কথা বর্ণনা করেছেন।এই গ্রন্থটি প্রথমে প্রবাসী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।তবে এটি তিনি সম্পূর্ণ করেননি।ফলে মূলত এটি তার বাল্য ও কৈশোর কালের এবং কিছুটা যৌবনের স্মৃতিকথা।


ক) সামাজিক ইতিহাস:- i) “সত্তর বৎসর” আত্মজীবনী থেকে বিপিনচন্দ্র পালের বংশ ও পারিবারিক ইতিহাস জানা যায়। যেমন শ্রীহট্টের গ্রামজীবন, শিক্ষাব্যবস্থা ও মিশনারীদের প্রভাব, সেখানকার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন জানা যায়।


ii) গ্রামীণ সংস্কৃতি- যাত্রাগান,পুরাণপাঠ দোল উৎসব, দুর্গোৎসব, বিবাহের নিয়ম নীতি প্রভুতি সম্পর্কে জানা যায়।


iii) এই আত্মজীবনী থেকে গ্রামের পাশাপাশি তৎকালীন কলকাতা শহরের সংস্কৃতি, খাদ্যাভাস, মেয়েদের জীবন রাস্তাঘাট, মদ্যপান ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানা যায়।


iv) তৎকালীন সমাজে নারীরা কিভাবে শোষিত হতো তার বর্ণনা এবং সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কিভাবে রুখে দাঁড়ানো যায় তার পথের সন্ধান দিয়েছেন এই আত্মজীবনীতে।


রাজনীতিক ইতিহাসঃ “সত্তর বছর” গ্রন্থ থেকে সমকালীন ভারতীয়দের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন ও সভা-সমিতি সম্পর্কে জানা যায়। ব্রিটিশ সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়ের “ভারত সভার” গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল তা জানা যায়।এই সময় নবগোপাল মিত্র ও তার প্রতিষ্ঠিত হিন্দু মেলার জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপ সম্পর্কে জানা যায়। তাছাড়া পুরনো কলকাতা, তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজ,ব্রাহ্মসমাজ,ব্রাহ্ম সমাজের ভাঙ্গন প্রভুতি সম্পর্কে জানা যায়।

                    যাইহোক এই আত্মজীবনীটি সম্পূর্ণ লেখা হলে আরো অনেক ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যেত।তবে 1880 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত যা পাওয়া গেছে তা ভারতীয় ইতিহাসের উপাদান হিসাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


10. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী “জীবনস্মৃতি” - কে কেন ইতিহাসের উপাদান রূপে গণ্য করা হয়?

অথবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী “জীবনস্মৃতি” থেকে কি কি ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়?


ভুমিকাঃ- জীবনস্মৃতি হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা স্মৃতিকথামূলক একটি গ্রন্থ। এটি ১৩১৮-১৩১৯ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় এর সম্পাদিত প্রবাসী পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং 1319 বঙ্গাব্দে এটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি গ্রন্থ থেকে যে সমস্ত তথ্য গুলি পাওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হল-


i.ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলঃ-জীবনস্মৃতি থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তথা ঠাকুর পরিবারের শিশুদের ছেলেবেলা, তাদের শিক্ষালাভ,সংগীত চর্চা প্রকৃতি সম্পর্কে এছাড়া অন্তরমহলে নারীদের কথা, পুরুষদের অবস্থা,ভৃত্যদের কাজ-কর্ম উৎসব অনুষ্ঠান প্রভৃতি সম্পর্কে জানা যায়।



ii.বাঙালি সমাজের জাতীয় চেতনার প্রসার:- এই গ্রন্থ থেকে বাঙালি সমাজের জাতীয় চেতনার প্রসারের কথা জানা যায়। বাঙালি সমাজে এই সময়কালে স্বদেশী ভাবধারা প্রসার ঘটে। এছাড়াও পাশ্চাত্য শিক্ষা ও সংস্কৃতি গ্রহণের পাশাপাশি  বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতিও অনুরাগ দেখা যায় সেকথা জানা যায় এছাড়াও নবগোপাল মিত্রের হিন্দুমেলা এবং স্বদেশী কাপড়,স্বদেশী দেশলাই প্রগতি সম্পর্কে যুব সমাজের উদ্যোগ বিষয়ে বিভিন্ন কথা লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ।


iii.রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক যোগঃ- এই গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না না থাকলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে দেশাত্মবোধক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতেন।

পরিশেষে বলা যায় যে, জীবনস্মৃতি কে ইতিহাসের উপাদান হিসাবে ব্যবহার করার বিপদ সম্পর্কে বইয়ের শুরুতেই রবীন্দ্রনাথ পাঠক কে সতর্ক করে বলেছেন যে স্মৃতিকথা আর ইতিহাস এক নয়। তাসত্ত্বেও রবীন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি’কে কিন্তু উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের সামাজিক এবং কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ইতিহাস রচনার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে ব্যবহার করা যায়।



11. সামগ্রিক ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে খেলার ইতিহাস গুরুত্বপূর্ণ কেন?

ভুমিকাঃ- আধুনিক ইতিহাসচর্চার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল খেলাধুলা। সুদূর প্রাচীন কাল থেকে খেলাধুলা শরীরচর্চা ও বিনোদনের মাধ্যম রূপে প্রচলিত থাকলেও বিশ শতকে খেলাধুলার ইতিহাসচর্চা বিশেষ গুরুত্ব লাভ করেছে।




খেলাধুলার গুরুত্ব :-

1.জাতির আত্ম পরিচয় : কোনো দেশের খেলাধুলা সেই দেশের জনগণের আত্মপরিচয় দান করে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্য,সংস্কৃতি ইত্যাদি ফুটে ওঠে।


2.জাতীয়তাবোধ বৃদ্ধি : খেলাধুলাকে কেন্দ্র করে গণ-আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। এর মাধ্যমে জাতীয়তাবোধ, দেশপ্রেম ইত্যাদির প্রভাবিত হয়। 1911 খ্রিস্টাব্দে মোহনবাগান ইস্ট ইয়র্কশায়ার ক্লাবকে 2-1 গোলে হারিয়ে আই এফ এ শিল্ড জয় করে। এর মধ্য দিয়ে জাতীয়তাবোধ বৃদ্ধি পায়।


3.পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতি : দুটি দেশ বা একাধিক দেশের মধ্যে খেলাধুলার সূত্রে যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়, পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নতি ঘটে। ফলে আন্তর্জাতিকতাবাদের প্রসার ঘটে, পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বাতাবরণ তৈরি হয়। এর মাধ্যমে সংকীর্ণ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাবের অবসান ঘটে।


4.একতাবোধ বৃদ্ধি : আন্তর্জাতিক খেলাধুলাকে কেন্দ্র করে প্রতিটি দেশ নিজ নিজ দেশের খেলোয়াড়দের জয়ের জন্য গলা ফাটায়, বিজয়লাভের আনন্দ উপভোগ করে, এতে ঐক্যবোধ গড়ে ওঠে ও ভ্রাতৃত্ববোধ সুদৃঢ় হয়।


5.নারী অগ্রগতি : খেলাধুলায় নারীদের অংশগ্রহণ থেকে সে দেশের নারী অগ্রগতি ও নারী স্বাধীনতার কথা জানা যায়।


ভারতে খেলাধূলার ইতিহাসচর্চা : ভারতে খেলার ইতিহাস নিয়ে চর্চা শুরু হয় 1980-এর দশকে। বাংলা তথা ভারতের খেলাধুলার ইতিহাসচর্চায় যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলে বোরিয়া মজুমদার, কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌতম ভট্টাচার্য, উৎপল শুভ্র, রূপক সাহা প্রমুখ।


উপসংহার: খেলাধুলার ইতিহাসচর্চা থেকে বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন সময়ের ও বিভিন্ন রকমের খেলার নাম, বিখ্যাত খেলোয়াড়দের কৃতিত্ব, বিভিন্ন খেলার কৌশল ইত্যাদির কথা জানা যায়। বিভিন্ন কারণে তাই খেলাধুলা আধুনিক ইতিহাসচর্চায় গুরুত্ব লাভ করেছে।





12. স্থানীয় ইতিহাস চর্চার গুরুত্ব আলোচনা কর।

ভূমিকাঃ- ইতিহাসের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল স্থানীয় ইতিহাস। ভৌগলিকভাবে স্থানীয় প্রেক্ষিতে স্থানীয় সম্প্রদায় ব্যক্তি বা বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে স্থানীয় ইতিহাস। স্থানীয় ইতিহাস থেকে যা জানা যায় তা জাতীয় ইতিহাসে জানা যায়না। স্থানীয় ইতিহাস থেকে জানা যায় অসংখ্য ছোট ছোট বীর, নারী-পুরুষের আত্মদান ত্যাগ ও অদম্য মনোবলের কথা। স্থানীয় ইতিহাস থেকেই বিভিন্ন বড় বড় ঘটনাও জানা যায়। স্থানীয় ইতিহাস কে নিয়ে অনেকেই রচনা করেছেন যেমন- সুধীর কুমার মিত্রের ‘হুগলি জেলার ইতিহাস’, কলহনের ‘রাজতরঙ্গিনী’ ইত্যাদি। স্থানীয় ইতিহাসের সাহায্যে একটি দেশের জাতিয় ইতিহাস জানা যায়।


স্থানীয় ইতিহাসের সুত্রপাতঃ- ঊনিশ শতকে ইংল্যান্ডে প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর বা শহরের ইতিহাস রচনার মাধ্যমে স্থানিয় ইতিহাস রচনা শুরু হয়। পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াতেও এই ধরনের ইতিহাস চর্চা শুরু হয়।


স্থানীয় ইতিহাসে বিষয়ঃ- এই ধরনের ইতিহাস চর্চার দেশ বা ব্যাপক এলাকার পরিবর্তে ক্ষুদ্র এলাকাকে চিহ্নিত করে সেই স্থানের ইতিহাস অন্বেষণ করা হয়। এভাবে স্থানীয় ইতিহাস সমন্বয়ে দেশের ইতিহাস গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। স্থানীয় অঞ্চলের আর্থ সামাজিক বিবর্তন, শিল্প –স্থাপত্য, লোকসংস্কৃতি স্থানীয় শাসকের ইতিবৃত্ত প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে স্থানীয় ইতিহাসের আলোচনায় উঠে আসে।


গুরুত্ব :- আঞ্চলিক বা স্থানীয় ইতিহাস বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন—

1.   প্রামাণ্য ইতিহাসে সব জায়গার পরিচিতি থাকে না। গুরুত্ব বেশি না থাকলে বা বিশেষ উল্লেখযোগ্য ঘটনা না ঘটলে সেই স্থানের বিবরণ থাকে না। সেই ক্ষেত্রে স্থানীয় ইতিহাস এই অভাব পূরণ করে।


2.জাতীয় স্তরের ইতিহাস রচনার সময়ে অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় ইতিহাসকে উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

3.স্থানীয় ইতিহাস, স্থানীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতির অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত চালচিত্র তুলে ধরে।

4.স্থানীয় ইতিহাস সেই অঞলের রাজনৈতিক উত্থানপতনের দীর্ঘ কাহিনির পরিচয় দেয়। স্থানীয় ইতিহাসের মাধ্যমে সেই স্থানের জনগোষ্ঠীর ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায়।


উপসংহারঃ- বর্তমানে স্থানীয় ইতিহাসচর্চার উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। জাতীয় ইতিহাস হল আসলে স্থানীয় ইতিহাসের সমষ্টি। তাই স্থানীয় ইতিহাসের চর্চা জাতীয় ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করে।


আরও পড়ুন......

File Details

 

File Name/Book Name

মাধ্যমিক প্রথম অধ্যায় ইতিহাসের ধারনা থেকে 4 নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর

File Format

PDF

File Language

Bengali

File Size

190 KB

File Location

GOOGLE DRIVE

Download Link

Click Here to Download PDF File



Join Telegram... Members


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ