মাধ্যমিক দ্বিতীয় অধ্যায় সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ৪ ও ৮ নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর

1

মাধ্যমিক দ্বিতীয় অধ্যায় সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ৪ ও ৮ নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর


মাধ্যমিক দ্বিতীয় অধ্যায় ৪ ও ৮ নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর

মাধ্যমিক দ্বিতীয় অধ্যায় সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ৪ ও ৮ নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর

প্রিয় মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা,

আজকে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো মাধ্যমিক দ্বিতীয় অধ্যায় সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা ৪ ও ৮ নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর থেকে সম্পর্কে আলোচনা পাবে|দশম শ্রেনীর দ্বিতীয় অধ্যায় সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা থেকে ১ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|মাধ্যমিক দ্বিতীয় অধ্যায় ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর | দ্বিতীয় অধ্যায় ৪ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|মাধ্যমিক দ্বিতীয় অধ্যায় ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|তোমরা পেয়ে যাবে ইতিহাস অতি সংক্ষিপ্ত, অতিসংক্ষিপ্ত, রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর যেগুলি তোমাদের যে ফাইনাল পরিক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন হবে। তো বন্ধুরা তোমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে মাধ্যমিক দ্বিতীয় অধ্যায় সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা থেকে ৪ ও ৮ নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর সম্পর্কে আলোচনা করা আছে। আমাদের আশা এই প্রশ্নটি তোমাদের পরিক্ষায় খুবই কাজে আসবে।


1.স্বামী বিবেকানন্দের নব্য বেদান্ত সম্পর্কে কি জানা যায় আলোচনা করো


ভূমিকা: উনিশ শতকে বাংলা তথা ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্মপ্রচারক ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ (1863-1902 খ্রিস্টাব্দ)। তিনি ছিলেন শ্রীশ্রীরামকৃয়দেবের অত্যন্ত প্রিয় ও প্রধান শিষ্য। ধর্মীয় ক্ষেত্রে তার দেওয়া নতুন আদর্শ ‘নব্য বেদান্ত’ নামে পরিচিত। স্বামীজির ধর্মভাবনা, সকল কর্মপ্রয়াস ও সাধনার মূল ভিত্তি ছিল গুরু শ্রীরামকৃষ্ণদেবের শিক্ষা ও বেদান্ত বা উপনিষদের শাশ্বত বার্তা। গুরুর নির্দেশে বেদান্তকে তিনি নতুনভাবে ব্যাখ্যার দ্বারা তাকে যুক্তিগ্রাহ্য ও গ্রহণযোগ্য করে তোলেন। ধর্মচিন্তাকে তিনি ঈশ্বর সাধনার মধ্যে আবদ্ধ না রেখে তাকে মানবকল্যাণে প্রয়োগ করেন।



নব্য বেদান্ত:- বিবেকানন্দের ধর্মীয় চিন্তার গুরুত্বপূর্ণ দিক হল নব্য বেদান্তবাদ। প্রাচীন অদ্বৈতবাদ বা অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনে বলা হয়েছে ব্রহ্ম সত্য, জগৎ মিথ্যা অর্থাৎ, ব্ৰত্ম ছাড়া জগতের কোন অস্তিত্ব নেই। বিবেকানন্দ প্রাচীন অদ্বৈত বেদান্ত দর্শনের নিজস্ব ব্যাখ্যা দ্বারা একে জনপ্রিয় করে তোঁলেন। তিনি বলেন, সর্বত্রই যেহেতু ব্রত্মের উপস্থিতি, তাই সাধারণ মানুষের সেবা করলেই ব্রহ্মের সেবা করা হবে। তিনি ‘শিবজ্ঞানে জীবসেবার কথা বলেন। সেবাকে তিনি উপাসনায় পর্যবসিত করেন। তাঁর মতে, আনুষ্ঠানিক বা আচারকেন্দ্রিক ধর্ম হল ধর্মের গৌণরূপ। ধর্মের মুখ্যরূপ হল জীবসেবা।



বাস্তবায়িত বেদান্ত: তিনি প্র্যাকটিক্যাল বেদান্ত বা বাস্তবায়িত বেদান্ত দ্বারা সন্ন্যাস ও সমাজের মেলবন্ধনে উদ্যোগী হন। তিনি বলেন, প্রাচীন সন্ন্যাসীরা ছিলেন মানববিমুখ, সমাজবিমুখ ও সংসারবিমুখ। তারা সমাজ থেকে বহু দূরে গিয়ে অরণ্যের নিভৃত কুটিরে বা পাহাড়ের গুহায় ঈশ্বর সাধনায় মগ্ন থাকতেন। তিনি সন্ন্যাসকে অরণ্য থেকে তুলে এনে স্থাপন করেন লোকালয়ে, সামাজিক দায়বদ্ধতার মধ্যে। তাঁর নব্যবেদান্ত বা প্র্যাকটিক্যাল বেদান্তের অভিমুখ ছিল একটাই, আত্মনো মোক্ষার্থং জগদ্ধিতায়চ'। অর্থাৎ, জগতের কল্যাণের মধ্যেই নিজের মোক্ষলাভ। তাই তিনি সকলকে জগতের কল্যাণে তাদের উৎসর্গ করার কথা বলেন এবং সকল জীবকে শিবজ্ঞানে সেবার কথা বলেন।



শিকাগো ধর্ম সম্মেলন: 1893 খ্রিস্টাব্দের শিকাগো বিশ্বধর্ম সম্মেলনে তিনি যোগদান করেন। সেখানে বেদান্তের মহিমা ও বিশ্বজনীনতার আদর্শ প্রচার করে ভারতের সনাতন হিন্দুধর্মকে জগৎসভায় পরিচিত করান। হিন্দুধর্মের ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সেবার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বহু বিদেশি তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।



উপসংহার: বিবেকানন্দ তার ধর্মীয় আদর্শ দ্বারা সনাতন হিন্দুধর্মকে সঠিক পথে চালিত করেন। ফলে বহু মানুষ হিন্দু ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়। সমগ্র বিশ্বে মানবকল্যাণের আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য, গুরুর আদর্শ ও বাণী বাস্তবে রূপায়িত করার জন্য 1897 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন রামকৃষ্ণু মঠ ও মিশন।




আরও পড়ুন......




2.উনিশ শতকের সমাজ সংস্কার আন্দোলনে রামমোহন রায়ের উদ্যোগ কি রকম ছিল?

ভূমিকা: উত্তর উনিশ শতকে বাংলার সমাজসংস্কার আন্দোলনের ইতিহাসে যে-সমস্ত জ্যোতিষ্ক চিরস্মরণীয় অবদান রেখেগেছেন, তাঁদের মধ্যে একজন বাস্তববাদী ও মানবতাবাদী সংস্কারক ছিলেন ‘ভারত পথিক’ রাজা রামমোহন রায়। রাজা রামমোহন রায় সমাজের কুসংস্কার দূর করে আধুনিক সমাজ গঠনে প্রথম সচেষ্ট হয়েছিলেন।



সমাজ সংস্কার:

ক)সতীদাহপ্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন: সমাজসংস্কারের ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের সবচেয়ে বড়ো অবদান সতীদাহপ্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন। এই প্রথা অনুসারে মৃত স্বামীর চিতায় তার জীবিত স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারা হত।ধর্মশাস্ত্র ব্যাখ্যা-সহ বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে রামমোহন এই পৈশাচিক প্রথা বন্ধ  করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। তার এই প্রচেষ্টার ফলে শেষপর্যন্ত গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক 1829 খ্রিস্টাব্দে 17 নং রেগুলেশন জারি করে সতীদাহপ্রথা নিষিদ্ধ বলে ঘোষনা করেন।



খ) নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা: রাজা রামমোহন রায় নারীদের অধিকার ও দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর যাতে তার বিধবা স্ত্রী স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে পারে তার জন্য তিনি স্বামীর সম্পত্তির উপর স্ত্রীর অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়েও আন্দোলন করেন।


গ) বহুবিবাহের বিরুদ্ধে আন্দোলন: রামমোহন বহুবিবাহ প্রথার বিরুদ্ধেও আন্দোলন করেছিলেন। তিনি ভারতীয় শাস্ত্রের ব্যাখ্যা করে তা দেখিয়েছিলেন যে, প্রাচীন শাস্ত্রে পুরুষের বহুবিবাহের যথেচ্ছ অধিকার দেওয়া হয়নি। তবে প্রাচীনকালে কোন স্ত্রী ব্যাভিচারিণী, সুরাসক্ত ও বন্ধ্যা হলে পুরুষ পুনরায় বিবাহ করতে পারত।

ঘ) কৌলীন্য প্রথা ও বাল্যবিবাহের বিরোধিতা: রামমোহন কৌলীন্য প্রথাবিরোধী ছিলেন। কারণ এই কৌলীন্য প্রথার জন্যই সমাজচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় অল্পবয়স্ক মেয়েদের মৃত্যুপথযাত্রী বৃদ্ধের সঙ্গে বিবাহ দেওয়া হত।

         এছাড়াও রামমোহন রায় 1828 খ্রিস্টাব্দে  ব্রাত্মসভা প্রতিষ্ঠা করেন, তা 1830 খ্রিস্টাব্দে ব্রাত্মসমাজ নামে খ্যাতি লাভ করে। এই প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিল পৌত্তলিকতা পরিহার করে নিরাকার পরমব্রহ্মের উপাসনা করা।তিনি এখানেই থেমে যাননি, শিক্ষা-সংস্কৃতির জগতেও রামমোহন অগ্রণী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষাবিস্তার ও গণতান্ত্রিক চেতনা প্রসারের চেষ্টা।



মূল্যায়ন: এভাবে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের উপর যুক্তির প্রাধান্য— যা নবজাগরণের মূল কথা, তা রামমোহনের কার্যকলাপে লক্ষ করা যায়। তার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের জন্য তাকে ‘ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ’ বলা হয়।



3.উনবিংশ শতকের বাংলায় নব বঙ্গ আন্দোলনের ভূমিকা কি ছিল ?

ভূমিকা: হিন্দু কলেজের তরুণ শিক্ষক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও তৎকালীন সমাজে প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন, যা ‘’নব্যবঙ্গ আন্দোলন’ নামে অভিহিত করা হয় এবং তাঁর অনুগামীরা  ‘ইয়ং বেঙ্গল’ (Young Bengal) বা ‘নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী’  নামে পরিচিত।

            মাত্র 17 বছর বয়সে ডিরোজিও হিন্দু কলেজের শিক্ষক নিযুক্ত হন। তার দেশপ্রেম, যুক্তিবাদ, সত্যের প্রতি নিষ্ঠা তার প্রতি ছাত্রদের আকৃষ্ট করেছিল। তার আকর্ষণে হিন্দু কলেজের অনেক ছাত্র তাঁর অনুগামী হয়ে উঠেছিল। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন রামতনু লাহিড়ি, রামগোপাল ঘোষ, কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রসিককৃষ্ণ মল্লিক, রাধানাথ শিকদার প্রমুখ।


কার্যকলাপ: ডিরোজিও 1828  খ্রিস্টাব্দে ‘অ্যাকাডেমিক অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি সমিতি গঠন করে হিন্দুসমাজের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অনুগামী যারা তাদের উৎসাহিত করতেন। তিনি ‘পার্থেনন’ পত্রিকার মাধ্যমে সমিতির মতামত প্রচার করেন। ডিরোজিও এবং তার অনুগামীরা নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে ছিলেন-


ইতিবাচক দিকসমূহঃ

১) নব্যবঙ্গ গোষ্ঠী জাতিভেদ  প্রথা, অস্পৃশ্যতা, নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের তীব্র সমালোচনা করে।

২) তারা হিন্দুসমাজের রক্ষণশীলতাকে আক্রমণ করার জন্য প্রকাশ্যে ব্রাত্মণের পৈতা ছিড়ে  দিতেন, এমনকি  নিষিদ্ধ  মাংসও  খেতেন।

নেতিবাচক দিকসমূহ/সীমাবদ্ধতাঃ ডিরোজিও এবং তার অনুগামীরা তৎকালীন সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন চালিয়েছিল তার মধ্যে বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল-

i.ব্রিটিশ বিরোধি মনোভাবের অভাব

ii.শহর কেন্দ্রিক আন্দোলন

iii.পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রতি অন্ধ বিশ্বাস




উপসংহারঃ- নববঙ্গ গোষ্ঠীর কার্যকলাপ হিন্দু সমাজে প্রবল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, তবে তাদের আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি ডিরোজিও-এর মৃত্যুর  কিছুকাল পরে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে। তাই পরিশেষে বলা যায় যে, দারুন উম্মাদনা নিয়ে নব্য বঙ্গ আন্দোলন শুরু হলেও এই সমস্ত সীমাবদ্ধতা বা নেতিবাচক দিকগুলো কারণে নব্যবঙ্গ আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল। তাসত্ত্বেও একথা অনস্বীকার্য যে,তাদের খাদহীন স্বদেশপ্রেম ও কুসংস্কার বিরোধী মনোভাব ভারতীয় সমাজকে অনেকটাই অনুপ্রাণিত করেছিল।





4.গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' পত্রিকা থেকে উনিশ শতকের বাংলার কী ধরনের সমাজচিত্র পাওয়া যায়?

ভূমিকা :- ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ হল বাংলা থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকা। ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের এপ্রিল মাসে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এর প্রথম সম্পাদক ছিলেন হরিনাথ মজুমদার, যিনি কাঙাল হরিনাথ’ নামেও পরিচিত ছিলেন। এটি প্রথমে মাসিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হলেও পরে পাক্ষিকও সাপ্তাহিক পত্রিকা হিসেবে প্রকাশিত হয়।


গ্রামবার্তা প্রকাশিকায় তৎকালীন সমাজচিত্র: গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' পত্রিকা থেকে সমসাময়িককালের সমাজ সম্পর্কে জানা যায়।



সমাজে নারীদের অবস্থাঃ- ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' পত্রিকা থেকে সমাজে নারীদের দুরবস্থা সম্পর্কে জানা যায়। এক শ্রেণির প্রগতিশীল মানুষ নারীশিক্ষার প্রসারে সচেষ্ট ছিলেন। নারীশিক্ষার প্রসারে গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।



জমিদারি শোষণ:- এই পত্রিকা গ্রাম্য প্রজাদের উপর জমিদারি শোষণের কথা প্রচার করত। তখন বাংলায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু ছিল। জমির মালিক ছিলেন জমিদার। জমির উপর প্রজার স্বত্ব বা অধিকার ছিল না। চড়া রাজস্ব, অতিরিক্ত কর, কারণে-অকারণে জমি থেকে প্রজা উচ্ছেদ করা হত। অভাগা চাষিদের দুর্দশার কাহিনি এই পত্রিকায় ছাপা হত।


সুদখোর মহাজনদের শোষণ:- ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা' থেকে জানা যায়, সমাজে সুদখোর মহাজনদের রমরমা ছিল। তারা চড়া সুদের বিনিময়ে টাকা ধার দিত। গ্রামের অনেক সাধারণ মানুষ মহাজনের কাছে ঋণ নিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছিল।



নীলকর সাহেবদের অত্যাচার :-‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকায় সমাজে নীলকর সাহেবদের কর্মকাণ্ডজনিত আতঙ্কের চিত্র ধরা পড়েছে। নীলকর সাহেবরা অধিক অর্থ উপার্জনের জন্য চাষিদের জোর করে নীলচাষ করাত। উৎপাদিত নীল তারা চাষিদের কাছ থেকে অল্প দামে কিনে নিত। তবে নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে চাষিরা যে সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল তাও জানা যায় এই পত্রিকা থেকে।



শিক্ষাপ্রসার:- সেসময় নিরক্ষর মানুষের সংখ্যা ছিল প্রচুর। এর মধ্যে নারীশিক্ষার হার ছিল অত্যন্ত কম, প্রায় ছিল না বললেই চলে। পত্রিকায় শিক্ষা প্রসার বিশেষত নারীশিক্ষা প্রসারের উপর গুরুত্ব দিয়ে  বিভিন্ন লেখা প্রকাশিত হয়।



মূল্যায়ন:- এই পত্রিকাটি সুলভ মূল্যের ছিল। প্রকাশক হরিনাথ মজুমদার অতি দারিদ্র্যের মধ্যেও পত্রিকা প্রকাশনার কাজ চালিয়ে যান। তিনি কাঙাল হরিনাথ’ নামে পরিচিত ছিলেন। উনিশ শতকের - দ্বিতীয়ার্ধের বাংলার সমাজচিত্র এই পত্রিকা থেকে পাওয়া যায়।




5.চার্লস উডের প্রতিবেদন সম্পর্কে একটি টীকা লিখ।

অথবা চার্লস উডের প্রতিবেদন কি? একে কে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ম্যাগনাকার্টা বলা হয়?



ভুমিকাঃ- বোর্ড অফ কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উড ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের জন্য 1854 খ্রিস্টাব্দের 19 জুলাই একটি নির্দেশনামা প্রকাশ করেন। এই নির্দেশনামা চার্লস উডের প্রতিবেদন (Wood's Despatch) নামে খ্যাত।



চার্লস উডের সুপারিশ : উডের নির্দেশনামা বা প্রতিবেদনের সুপারিশগুলি হল—

a.শিক্ষার প্রসারের জন্য স্বতন্ত্র শিক্ষাবিভাগ গঠন করা।

b.কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।

c.সুদক্ষ শিক্ষক তৈরির জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ বা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ স্থাপন করা।

d.দেশীয় ভাষার মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষা প্রদান করা।

e.নারীশিক্ষার প্রসার ঘটানো।



চার্লস উডের সুপারিশের ফুলফিল: চার্লস উডের নির্দেশনামার ফলে—

a.১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে বড়লাট লর্ড ডালহৌসি বাংলা, বোম্বাই, পাঞ্জাব প্রভৃতি প্রদেশে শিক্ষাদপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন।


b.১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।

পরিশেষে বলা যায়, ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের ইতিহাসে উডের প্রতিবেদনের ফলে 1882 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সারা ভারতে সরকারি বিদ্যালয়ের সংখ্যা হয় 1363 টি, যা 1854 খ্রিস্টাব্দে ছিল মাত্র 169 টি। এই সময়ে বেসরকারি উদ্যোগেও বহুবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।



গুরুত্বঃ- এ পর্যন্ত ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার গতি ছিল অত্যন্ত ধীর। উডের  রিপোর্টের ফলে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বহু স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। কলকাতা, বোম্বাই ও মাদ্রাজে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতীয় শিক্ষার ইতিহাসে এটি ছিল উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এইজন্য উড-এর নির্দেশনামাকে শিক্ষার মহাসনদ বা ম্যাগনাকার্টা’ বলা হয়।



6.জাতীয়তাবোধের বিকাশে দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকটির গুরুত্ব লেখ।

অথবা, টীকা লেখ নীলদর্পণ’ নাটক ।

অথবা, নীলদর্পণ’ নাটকে সমকালীন বাংলার সমাজব্যবস্থার যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা সংক্ষেপে লেখ।


ভূমিকা: বাংলা তথা ভারতের জাতীয়তাবোধের বিকাশে যে সমস্ত গ্রন্থ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটক তার মধ্যে ছিল অন্যতম। নীলচাষিদের ওপর নীলকর সাহেবদের শাসন, শোষণ, নিপীড়ন, অত্যাচার-লাঞ্ছনার মর্মন্তুদ চিত্র গ্রন্থটিতে ফুটে উঠেছে।


প্রকাশকাল : 1860 খ্রিস্টাব্দে ‘কস্যাচিৎ পথিকস্য’ ছদ্মনামে তিনি নাটকটি লেখেন। মাইকেল মধুসূদন দত্ত এটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। পাদ্রী রেভারেন্ড জেমস লঙ-এর নামে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।


নীলকরদের শোষণ: এই গ্রন্থ থেকে জানা যায়—

(i)বাংলার নীলচাষিদের কীভাবে নীলকর সাহেবরা নীলচাষে বাধ্য করত,

(ii)নীলচাষের জন্য চাষিদের অগ্রিম বা ‘দাদন’ নিতে বাধ্য করত।

(iii)নীল কেনার সময় ওজন বেশি, দাম কম দিয়ে ঠকাত।

চাষিদের ওপর অত্যাচার: এই নাটকে তুলে ধরা হয় অনিচ্ছুক চাষিদের ওপর নীলকরদের অমানুষিক অত্যাচারের কথা। অনিচ্ছুক চাষিদের ঘরবাড়ি লুণ্ঠন ও আগুন দেওয়া হত, গোরু-বাছুর, ছাগল, হাঁস, মুরগি কেড়ে নেওয়া চাষিদের মারধর শিশু ও মহিলাদের আটকে রেখে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হত—এসব ঘটনার কথা জানা যায়। অভিযোগ জানিয়েও পুলিশ, প্রশাসন, আইন, আদালতের কোনো সাহায্য চাষিরা পেত না।


চাষিদের প্রতিবাদী আন্দোলন:- অতঃপর অত্যাচারিত, শোষিত কৃষক অহিংস উপায়ে সংঘবদ্ধ হয়। তাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিবাদে সরকার পঞ্চম ও সপ্তম আইন দ্বারা নীলচাষ চাষিদের ইচ্ছাধীন করেন। , ফলে তারা নীলচাষ করতে অস্বীকার করে।


শিক্ষিত মধ্যবিত্তশ্রেণির ভূমিকাঃ- 1860 খ্রিস্টাব্দে নীলদর্পণ নাটকটি - প্রকাশিত হলে সাধারণ ও মধ্যবিত্ত শিক্ষিত শ্রেণির মধ্যে ইংরেজ-বিরোধী - মানসিকতা তৈরি হয় এবং তারা চাষিদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। ইংরেজিতে অনুবাদের ফলে দেশ-বিদেশে নীলকরদের অত্যাচারের কথা ছড়িয়ে পড়ে।


উপসংহারঃ- নীলদর্পণ সমসাময়িক বাংলা সাহিত্য ও সমাজে গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। নাটকের তৎকালীন সাধারণ মানুষের জীবনকথা যথার্থভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। অনেকেই নাটককে বাংলার প্রথম গণনাটক হিসেবে স্বীকার করেন। নীলদর্পণ প্রথম বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার কথা বলে মানুষের মনে জাতীয়তাবাদের সঞ্চার করেছিল ।



7.নারী শিক্ষার প্রসারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান লেখো।


ভূমিকা: বাংলাদেশে নারী শিক্ষার বিস্তারে যে সকল মনীষী নিরলস প্রয়াস চালিয়েছিলেন সমাজসংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাদের মধ্যে স্মরণীয়। ইতিপূর্বে খ্রিস্টান মিশনারি ও কিছু উদার ইংরেজের  ব্যক্তিগত উদ্যোগে নারী শিক্ষার সূচনা হলেও বিদ্যাসাগরই ছিলেন বাংলা তথা ভারতের নারী শিক্ষা বিস্তারের পথিকৃৎ।


উদ্দেশ্য: নবজাগরণের প্রতিমূর্তি এই সংস্কৃত পণ্ডিত উপলব্ধি করেছিলেন একমাত্র শিক্ষার মাধ্যমেই কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভারতীয় নারীর মুক্তিলাভ সম্ভব। নারীর উন্নতি ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।


হিন্দু বালিকা বিদ্যালয়: ব্রিটিশ সরকারের আইন সচিব ড্রিঙ্কওয়াটার বিথুন 1849 খ্রিস্টাব্দে ‘হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হলে বিদ্যাসাগর তাকে সাহায্য করেন। এটি ছিল ভারতের প্রথম বালিকা বিদ্যালয়। তিনি ছিলেন এই বিদ্যালয়ের সম্পাদক। বর্তমানে এটি ‘বেথুন স্কুল’ নামে পরিচিত।


স্ত্রী-শিক্ষা সম্মিলনী গঠন: নারীদের মধ্যে শিক্ষা সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তিনি বর্ধমান, হুগলি, মেদিনীপুর প্রভৃতি জেলায় গড়ে তোলেন স্ত্রী-শিক্ষা সম্মিলনী।বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তিনি নারী শিক্ষার সপক্ষে লেখালেখি শুরু করেন। গ্রামে গ্রামে ঘুরে অভিভাবকদের বুঝিয়ে ছাত্রী সংগ্রহের নিরলস প্রচেষ্টা চালান।


বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন: 1854 খ্রিস্টাব্দে উডের নির্দেশনামায় স্ত্রী-শিক্ষা বিস্তারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। বাংলার ছোটোলাট স্যার ফ্রেডারিক হ্যালিডে কর্তৃক ঈশ্বরচন্দ্র দক্ষিণবঙ্গের বিদ্যালয় পরিদর্শক নিযুক্ত হন। স্ত্রী-শিক্ষায় সরকারের আগ্রহ দেখে তিনি 1857 খ্রিস্টাব্দ থেকে 1858 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালে মাত্র সাত মাসের মধ্যে নিজ ব্যয়ে নদিয়া, বর্ধমান, হুগলি ও মেদিনীপুর জেলায় 35টি বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এগুলিতে প্রায় 1300 ছাত্রী পড়াশুনো করতো। কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন-এর নতুন ডিরেক্টর গর্ডন ইয়ং নতুন স্কুলগুলিকে অর্থ বরাদ্দ করতে অস্বীকার করলে তিনি পরিদর্শক ও সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ পদে ইস্তফা দেন। তবে ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চালিয়ে বিদ্যালয়গুলির জন্য কিছু আর্থিক সহায়তা আদায় করেন।


মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন: বিদ্যাসাগর নিজ উদ্যোগে ও খরচে কলকাতায় ‘মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে এটি ‘বিদ্যাসাগর কলেজ’ নামে


ভগবতী বিদ্যালয়: মাতা ভগবতী দেবীর স্মৃতিতে তিনি 1890 খ্রিস্টাব্দে নিজ জন্মভূমি বীরসিংহ গ্রামে ভগবতী বিদ্যালয় স্থাপন করেন।

উপসংহার : স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, রামকৃষ্ণের পর, আমি বিদ্যাসাগরকে অনুসরণ করি (After Ramakrishna, I follow Vidyasagar.) নারীশিক্ষায় বিদ্যাসাগরের অবদান ছিল অসামান্য। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “বিধাতা বিদ্যাসাগরের প্রতি বঙ্গভূমিকে মানুষ করিবার ভার দিয়াছিলেন”। তিনিই ছিলেন বাংলার নবজাগরণের এক উজ্জ্বল পথিকৃৎ। 






8.পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা আলোচনা কর।

ভূমিকা:- উনিশ শতকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে রাজা রামমোহন রায় (1772-1833 খ্রি.) উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। তিনি মনে করতেন যে, আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার ওপর ভিত্তি করেই নতুন ভারত গড়ে উঠবে।


পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার:- পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে রামমোহন পাশ্চাত্য দর্শন, গণিত, রসায়ন, অস্থিবিদ্যা প্রভৃতি শিক্ষার জন্য ব্যাপক প্রচার চালান।


ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা:- 1815 খ্রিস্টাব্দে রাজা রামমোহন রায় নিজ উদ্যোগে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে কলকাতায় অ্যাংলো-হিন্দু স্কুল নামে একটি ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।


সরকারি সহযোগিতার জন্য আবেদন:- 1823 খ্রিস্টাব্দে রামমোহন লর্ড আমহার্স্টকে এক চিঠিতে শিক্ষাখাতে ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রদত্ত এক লক্ষ টাকা পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে ব্যবহারের জন্য আবেদন জানান।


বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা:- কুসংস্কার দূর করে পাশ্চাত্য পদার্থবিদ্যা ও সমাজবিজ্ঞানের ধারণা প্রসারের উদ্দেশ্যে রামমোহন 1826 খ্রিস্টাব্দে বেদান্ত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন

এছাড়াও ডেভিড হেয়ার আলেকজান্ডার দ্য প্রমুখ পাশ্চাত্য শিক্ষার সমর্থকদের তিনি নানাভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা করেন। এভাবে তিনি ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে স্মরণীয় হয়ে আছেন।




9.পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে ডেভিড হেয়ারের অবদান লেখোক অথবা, ডেভিড হেয়ার কেন স্মরণীয়?

ভূমিকা : ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে যে কয়েকজন ইউরোপীয়-এর কাছে ভারতবাসীকে চিরকৃতজ্ঞতায় আবদ্ধ থাকতে হয় তাদের মধ্যে মানবতাবাদী, ভারত প্রেমিক স্কটল্যান্ড নিবাসী ঘড়ি ব্যবসায়ী ডেভিড হেয়ার অন্যতম। পাশ্চাত্য শিক্ষার মাধ্যমে এদেশের মানুষের মধ্যে জ্ঞানের আলোক প্রজ্জ্বলিত করার জন্য, তাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার জন্য তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেন।



হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা: তিনিই প্রথম কলকাতায় একটি আধুনিক ইংরেজি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের কথা চিন্তা করেন। এক্ষেত্রে তাকে সাহায্য করেন তৎকালীন সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি হাইড ইস্ট, এছাড়া রাধাকান্ত দেব, বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।এরই ফলশ্রুতিতে ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দের ২০ জানুয়ারি স্থাপিত হয় হিন্দু কলেজ।বর্তমানে এটি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত।

উদ্দেশ্য: পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কার দূর করা ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসার ঘটানোই ছিল তার লক্ষ্য। এই কলেজের মাধ্যমেই ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলা তথা ভারতে নবজাগরণের সূত্রপাত ঘটে। 



স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা: ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুলাই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘স্কুল বুক সোসাইটি ইংরেজি ও ভারতীয় ভাষায় পাঠ্যপুস্তক রচনা এবং বিনামূল্যে কিংবা নামমাত্র মূল্যে পুস্তক বিতরণই ছিল এর উদ্দেশ্য। ক্যালকাটা দারুল।



সোসাইটি: কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় নতুন পদ্ধতিতে ডেভিড হেয়ার ইংরেজি ও বাংলা শেখার স্কুল প্রতিষ্ঠা করা ও প্রচলিত স্কুলগুলির উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে তিনি ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি।



হেয়ার স্কুল প্রতিষ্ঠা: ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগে কলকাতায় একটি ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। বর্তমানে।এটি ‘হেয়ার স্কুল’ নামে পরিচিত।



নারী শিক্ষাঃ নারী শিক্ষার প্রসারে তিনি যথেষ্ট উৎসাহী ছিলেন। তাঁরই আন্তরিক প্রচেষ্টায় কলকাতায় কয়েকটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি চার্চ মিশনারি সোসাইটি পরিচালিত স্কুলগুলির দায়িত্বও গ্রহণ করেন।



মেডিক্যাল কলেজ: ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ১ জুন কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠায় তিনি সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেন। এর প্রথম অধ্যক্ষ ডা: এম জে ব্রামলি-র মৃত্যুর পর তিনি মেডিক্যাল কাউন্সিলের সম্পাদক নিযুক্ত হন। তিনি এই কলেজে ছাত্রদের ভরতি হওয়ার উৎসাহ জোগান। তিনি শব ব্যবচ্ছেদেও উৎসাহ দেন।



উপসংহার: পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারের মাধ্যমে আধুনিক ভারত গড়ার জন্য তাঁর অবদান অপরিসীম। সাধারণ মানুষের কাছে  ইংরেজি শিক্ষার জনক’ রূপে ডেভিড হেয়ার স্মরণীয়।







10.পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে রাজা রাধাকান্ত দেব-এর ভূমিকা আলোচনা করো।

ভূমিকা: রাজা রাধাকান্ত দেব ছিলেন উনিশ শতকের বাংলার একজন বিশিষ্ট পণ্ডিতও হিন্দুসমাজের একজন বিশিষ্টরক্ষণশীল নেতা। রাধাকান্ত দেব এক দিকে ছিলেন হিন্দুসমাজের রক্ষণশীলতার প্রতীক, অপরদিকে তিনি ছিলেন পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের সমর্থক। আসলে তিনি চেয়েছিলেন “প্রাচ্যবাদী শিক্ষার কাঠামোর মধ্যে ‘পাশ্চাত্য শিক্ষার বিকাশ’



হিন্দু কলেজ পরিচালনায় সহযোগিতা: শিক্ষাবিস্তারের ক্ষেত্রে রাধাকান্ত দেব খুবই প্রগতিশীল ও আন্তরিক ছিলেন। 1817 খ্রিস্টাব্দে স্যার এডওয়ার্ড হাইড ইস্ট ও ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। রাধাকান্ত দেব এই হিন্দু কলেজের পরিচালনা ও ব্যয়ভার বহনের দায়িত্ব নেন। তিনি  হিন্দু কলেজের পরিচালন সমিতির সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন (1818-1850 খ্রি.)



ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি ও ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটির সঙ্গে সহযোগিতা: 1817 খ্রিস্টাব্দে ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগে ভালো স্কুল পাঠ্যবই তৈরি করার জন্য ক্যালকাটা স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হলে রাধাকান্ত দেব তার অবৈতনিক সম্পাদক পদে নিযুক্ত হন।1818 খ্রিস্টাব্দে ‘ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি’ প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি তাতেও যুক্ত হন। এই প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে গোঁড়া হিন্দুদের সন্দেহ ছিল। কিন্তু রাধাকান্ত দেব এর সঙ্গে যুক্ত থাকায় রক্ষণশীল হিন্দুরাও এখান থেকে বই কিনত।



নারীশিক্ষাপ্রসারে প্রচেষ্টা: নারীশিক্ষা প্রসারে রাধাকান্ত দেব আন্তরিকভাবে আগ্রহী ছিলেন। 1812 খ্রিস্টাব্দে ‘স্ত্রীশিক্ষা বিধায়ক’ নামে একটি গ্রন্থ তিনি রচনাকরেন। এতে তিনি প্রমাণ করেন যে, নারীশিক্ষা হিন্দু আদর্শ ও ঐতিহ্যের পরিপন্থী নয়। প্রাচীন ভারতেও হিন্দু নারীরা শিক্ষালাভ করত। তিনি তার পরিবারের মহিলাদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য ইংরেজ শিক্ষিকা নিযুক্ত করেন। 1819 খ্রিস্টাব্দে ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি’স্থাপিত হয়। এই স্কুলের ছাত্রীদের নিয়মিত পরীক্ষা দেওয়ার জন্য রাধাকান্ত দেব নিজের বাড়িতে ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি প্রতি বছর তার প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিজ ভবনে সমবেত করে পুরস্কার দিতেন।



পাশ্চাত্য চিকিৎসাবিদ্যায় ভূমিকা: আধুনিক চিকিৎসাবিদ্যা চর্চার প্রয়োজনে শবব্যবচ্ছেদ আবশ্যিক ছিল। প্রচলিত হিন্দুসমাজ ছিল শবব্যবচ্ছেদের বিরোধী। রাজা রাধাকান্ত দেব কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের হিন্দু ছাত্রদের শবব্যবচ্ছেদের বিষয়ে সমর্থন করেছিলেন।



মূল্যায়ন: রাধাকান্ত দেব পাশ্চাত্য শিক্ষার বিরোধী ছিলেন না। তবে তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষার মাধ্যমে হিন্দুদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করা বা ভারতীয়দের অন্ধভাবে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি অনুকরণ করার ঘোর বিরোধী ছিলেন। বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষাপ্রসারের ফলে সমাজ, ধর্ম, সাহিত্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে যে যুক্তিবাদী ও উদারনৈতিক ভাবধারা সৃষ্টি হয়েছিল রাধাকান্ত দেব তার কিছুটা কৃতিত্ব অবশ্যই দাবি করতে পারেন।



আরও পড়ুন......




11.বামাবোধিনী পত্রিকায় উনিশ শতকের বাংলা সমাজের কি প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়?

ভূমিকা:- উনিশ শতকে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত যেসব সাময়িকপত্রে সমকালীন বঙ্গীয় সমাজের প্রতিফলন ঘটেছে সেগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল উমেশচন্দ্র দত্ত সম্পাদিত ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’ নামক মাসিক পত্রিকা।


পত্রিকার প্রকাশ:- বাংলার ‘বামা’ অর্থাৎ নারী সমাজের উন্নতির উদ্দেশ্যে উমেশচন্দ্র দত্তর সম্পাদনায় 1863 খ্রিস্টাব্দে ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকার প্রকাশ শুরু হয়। উনিশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত বাংলার সমাজের, বিশেষ করে নারীদের অবস্থা কেমন ছিল তা ‘বামাবোধিনী’ পত্রিকা থেকে জানা যায়।


নারীশিক্ষা:- উনিশ শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত বাংলার নারীদের সামাজিক অবস্থার বিশেষ অগ্রগতি ঘটেনি। নারীশিক্ষার বিষয়টিকে সাধারণ মানুষ সুনজরে দেখত না ফলে বাংলায় নারীশিক্ষার বিশেষ প্রসার ঘটেনি।


নারীর মর্যাদা:- এই সময় বাংলার নারীরা সাধারণত বাড়ির অন্দরমহলে জীবন কাটাতে অভ্যস্ত ছিল। তাদের অধিকার ও মর্যাদা বিশেষ ছিল না।


সামাজিক কুসংস্কার:- বামাবোধিনী পত্রিকা উনিশ শতকে বাংলার বিভিন্ন সামাজিক কুসংস্কার তুলে ধরে এসবের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা চালায়। নারীদের বাল্যবিবাহ, পুরুষদের বহুবিবাহ, মদ্যপান প্রভৃতির বিরুদ্ধে এই পত্রিকায় নিয়মিত প্রচার চালানো হয়।


পত্রিকার উদ্যোগ:- বাংলার তৎকালীন সামাজিক সমস্যাগুলি দূর করার উদ্দেশ্যে বামাবোধিনী পত্রিকা নিয়মিত প্রচার চালায়। পত্রিকাটি নারীশিক্ষার প্রসার, নারীর সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বাংলায় নারী আন্দোলনের পটভূমি তৈরি করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।



12.  ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুনের অবদান সংক্ষেপে লেখো।

ভূমিকা: উনিশ শতকে বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে যে সকল উদারমনস্ক ইংরেজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেন জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন (বেথুন সাহেব) তাঁদের মধ্যে অন্যতম। 1848 খ্রিস্টাব্দে বড়োলাট লর্ড ডালহৌসির আইন মন্ত্রী রূপে ভারতে আসেন। এদেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় তিনি ভীষণভাবে ব্যথিত হন। শিক্ষার প্রসারে বিশেষত নারী শিক্ষা বিস্তার ও পাশ্চাত্য শিক্ষার বিস্তারে  গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালণ করেন।


i.মাতৃভাষার মাধ্যমে পাশ্চাত্য শিক্ষা: তিনি মাতৃভাষার মাধ্যমে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এতে শিক্ষার প্রসার যেমন সম্ভব, তেমনি কুসংস্কার, রক্ষণশীলতা থেকেও ভারতবাসীকে মুক্ত করাও সম্ভব বলে মনে করতেন।


ii.বেথুন স্কুল প্রতিষ্ঠা: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শিক্ষা কমিটির সভাপতি বিটন সাহেব ভারতবর্ষের নারীদের দুঃখ-দুর্দশায় ব্যথিত হন। দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মদনমোহন তর্কালঙ্কার, রামগোপাল ঘোষ প্রমুখের সহায়তায় 1849 খ্রিস্টাব্দের 7 মে উত্তর কলকাতায় স্থাপন করেন ‘হিন্দু ফিমেল স্কুল’। বর্তমানে এটি ‘বেথুন  স্কুল’ নামে পরিচিত। তিনি তাঁর যাবতীয় স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি এই বিদ্যালয়ের জন্য  দান করেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এই  বিদ্যালয়ের অবৈতনিক সম্পাদক নিযুক্ত হলে বিদ্যালয়ের খ্যাতি ও মর্যাদা দুইই বৃদ্ধি পায়।


iii.বেথুন কলেজ প্রতিষ্ঠা : শুধু স্কুল শিক্ষা নয়, নারীদের মধ্যে আধুনিক উচ্চশিক্ষার প্রসারের জন্য কলকাতায় একটি মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন।বর্তমানে এটি বেথুন কলেজ নামে পরিচিত। এটি হল ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম মহিলা কলেজ। কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় ও চন্দ্রমুখী বসু ছিলেন এই কলেজের প্রথম ছাত্রী।


iv.অন্যান্য কৃতিত্ব : ‘ফিমেল জুভেনাইল সোসাইটি প্রতিষ্ঠা, কলকাতা পাবলিক লাইব্রেরী’ স্থাপন, বঙ্গানুবাদ সমাজ গঠন প্রভৃতিতে তার ভূমিকা প্রশংসনীয়। 1851 খ্রিস্টাব্দের 12 আগস্ট কলকাতায় তার মৃত্যু হয়।


উপসংহার: ভারতে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য শিক্ষার মেলবন্ধনে, নারী - শিক্ষার বিস্তার প্রভৃতি ক্ষেত্রে তাঁর অবদান চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।



13.  শিক্ষাবিস্তারে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী বিতর্ক কী?

অথবা  উনিশ শতকের বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারে ‘প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ’কেন ঘটে? এর পরিণতি কী হয়

ভূমিকাঃ- আঠারো শতকের শেষ ও উনিশ তকের গোড়ার দিকে কলকাতা ও মফসসল শহরে বেসরকারি উদ্যোগে ইংরেজি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশীয় শিক্ষার ধারাও (সংস্কত, আরবি ও ফারসি) প্রচলিত ছিল সেসময় ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনে এদেশে শিক্ষার জন্য বার্ষিক ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। দেশীয় শিক্ষার জন্য প্রাচ্যবাদীরা এবং ইংরেজি শিক্ষার জন্য পাশ্চাত্যবাদীরা এই টাকা দাবি করলে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। শেষপর্যন্ত পাশ্চাত্যবাদীরা জয়ী হয়।


কারণঃ-

১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইন : বাংলাদেশে ইংরেজ রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ইংরেজরা এদেশীয় সংস্কৃতি ও সভ্যতায় হস্তক্ষেপ করতে চায়নি। পরে এদেশীয়দের কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতা দূর করার জন্য খ্রিস্টধর্ম ও জনহিতবাদের ভিত্তিতে শিক্ষাবিস্তারের দাবি ওঠে। ইংল্যান্ডের এই জনমতের দাবিতে ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের সনদ আইনের ৪৩ নং অনুচ্ছেদে এদেশে শিক্ষাবিস্তারের জন্য বার্ষিক ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়। প্রয়োজনের  তুলনায় কম হলেও এর প্রতীকী গুরুত্ব ছিল অসীম। কারণ এই নির্দেশের দ্বারা কোম্পানি সরকারকে এদেশীয়দের জনশিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়।


প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বঃ- সরকার কর্তৃক বরাদ্দ ১ লক্ষ টাকা পাওয়ার জন্য প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। সরকার শিক্ষাখাতে অর্থব্যয় বন্ধ করে দেয়। সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব দেয় একটি সমিতির উপর। এর নাম ছিল “জেনারেল কমিটি অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশন (GCPI)। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষাবিদদের নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়।


প্রাচ্যবাদীঃ-বাংলাদেশ তথা ভারতবর্ষে সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি শিক্ষা দীর্ঘকাল ধরে চালু ছিল। এই শিক্ষাই হল প্রাচ্যশিক্ষা। এইচ টি প্রিন্সেপ, কোলব্রুক, উইলসন প্রমুখ ছিলেন প্রাচ্যবাদীদের নেতা। তাদের মতে, প্রাচ্যশিক্ষাই হল প্রকৃত শিক্ষা। কারণ এ দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে এই শিক্ষা জড়িত। দেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এই শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত। এই শিক্ষার জন্য উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে। তাই এই শিক্ষার উন্নতির জন্য সরকারি টাকা বরাদ্দ করা উচিত।



পাশ্চাত্যবাদীঃ-বাংলাদেশে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠার পর কলকাতা ও মফস্সল শহরে বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কিছু ইংরেজি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। এই স্কুলে পাস করা ছাত্ররা বাণিজ্যিক ও সরকারি চাকুরি পেত। এজন্য এই ধরনের স্কুলের সংখ্যা ও ছাত্রসংখ্যা বেড়ে চলে। এই শিক্ষাই  হল পাশ্চাত্য শিক্ষা। ট্রেভেলিয়ান, আলেকজান্ডার ডাফ, স্যান্ডার্স প্রমুখ ছিলেন পাশ্চাত্যবাদী নেতা। তাদের মতে, ইংরেজি ভাষা হল আন্তর্জাতিক ভাষা। এই ভাষায় রচিত সাহিত্য অতি সমৃদ্ধ এবং তা ছাত্রদের চাকুরি পাওয়ার উপযোগী। ভবিষ্যতে এই ভাষা এদেশের আঞ্চলিক ভাষাগুলিকে সমৃদ্ধ করবে। তাই ইংরেজি শিক্ষার জন্যই সরকারি টাকা বরাদ্দ করা উচিত।


রামমোহনের  স্মারক লিপিঃ- প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার অর্থব্যয় বন্ধ করেছিল। শেষপর্যন্ত (১৮২৩ খ্রি.) সরকার ওই জমা টাকায় একটি সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়। তখন রাজা রামমোহন রায় বড়োলাট লর্ড আমহাস্টকে একটি পত্র লেখেন। এই পত্রটিকে স্মারকলিপি বলা হয়। এই স্মারকলিপিতে সংস্কৃত শিক্ষার পরিবর্তে ইংল্যান্ডের মতো আধুনিক শিক্ষা ভারতে চালু করার কথা বলা হয়।


পরিণতিঃ- রাজা রামমোহন রায় শিক্ষিত ভারতীয়দের প্রতিনিধি ছিলেন। তাই সরকার এই মতকে গুরুত্ব দেয়। বড়োলাট লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক-এর আইনসভার সদস্য স্যার থমাস ব্যাবিংটন মেকলে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি ব্যঙ্গ, বিদ্রুপ ও শ্লেষ-সহ এক মন্তব্য প্রকাশ করেন, যা মেকলে মিনিট নামে পরিচিত। তিনি বলেন, ইউরোপের একটি ভালো লাইব্রেরির এক তাক বই সমস্ত প্রাচ্য সাহিত্যের থেকে মূল্যবান। তার বাগ্মিতা ও যুক্তির দ্বারা বেন্টিঙ্ক প্রভাবিত হন। তিনি ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ মার্চ পাশ্চাত্য শিক্ষাকে সরকারি শিক্ষানীতি হিসেবে গ্রহণ করেন। এইভাবে ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা চালু হয় এবং প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে।




14.  শ্রীরামকৃষ্ণের সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ কি ধরনের ছিল?

অথবা রামকৃষ্ণ সর্বধর্ম সমন্বয়ের আদর্শ তুলে ধরেন কিভাবে?

ভুমিকাঃ উনিশ শতকে হিন্দু সমাজ্ যখন  ধর্মীয় কুসংস্কারের বেড়াজালে আবদ্ধ তখন বাংলার সমাজে উদিত হন শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব (১৮৩৬-১৮৮৬ খ্রীঃ) নামে এক যুগাবাতার মহাপুরুষ।তার সহজ,সরল ও মানবতাবাদী মতবাদ সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছিল।দক্ষিণেশ্বরের কালী সাধক এই পুরোহিত বিভিন্ন ধর্ম ও সাধন পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হয়ে সর্বধর্ম সমন্বয়ের মহান আদর্শ তুলে ধরেন।



সর্বধর্ম অনুশীলন: শ্রীশ্রীরামকৃয় কালীসাধনা ছেড়ে বিভিন্ন সাধনপদ্ধতি অনুশীলন করেন। এই সাধনপদ্ধতি বিভিন্ন ধর্মমতের ছিল। যেমন—


তান্ত্রিক: তিনি এক ভৈরবীর কাছে তন্ত্রসাধনা করেন।


বৈষ্ণবঃ তিনি জটাধারী নামে রামাইত সাধুর কাছে বৈষ্ণবধর্ম চর্চা করেন।


বৈদিক মার্গ: তিনি আচার্য তোতাপুরির কাছে বৈদিক মার্গ অনুশীলন করেন এবং সমাধিলাভের পথ খুঁজে পান।


ইসলাম: তিনি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত গোবিন্দ রায়-এর কাছ থেকে ইসলাম ধর্মসাধনা শেখেন। সন্ধ্যায় নামাজ পড়েন এবং আল্লামন্ত্র জপ করেন।


খ্রিস্ট: তিনি শম্ভুচরণ মল্লিকের কাছ থেকে জিশুখ্রিস্টের জীবনী ও ধর্মমত সম্বন্ধে শিক্ষালাভ করেন।


বৌদ্ধ: তিনি বুদ্ধদেবকে ঈশ্বরের অবতার বলে শ্রদ্ধা ও পূজা করতেন। তিনি বলেন, বৌদ্ধ মতে ও বৈদিক জ্ঞানমার্গে কোনো পার্থক্য নেই।


জৈন: তিনি জৈন তীর্থংকরদের এবং বিশেষ করে মহাবীরকে শ্রদ্ধা করতেন। তাঁর ঘরে বিভিন্ন দেবদেবীর সঙ্গে জিশু ও , মহাবীরের একটি পাথরের মূর্তি থাকত। তিনি এইসব ছবি ও মূর্তির সামনে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় ধূপধুনা দিতেন।


সমন্বয়: এইভাবে তিনি বিভিন্ন ধর্ম সম্বন্ধে পরিচয় এবং তাদের সাধনপদ্ধতি ও ফল বুঝতে পারেন। এরপর তার দৃঢ় বিশ্বাস হয়, সব ধর্মই সত্য—অর্থাৎ যত মত তত পথ।


আদর্শ: শ্রীশ্রীরামকৃয়ের বাণীর মূল কথা হল “শিবজ্ঞানে জীবসেবা”। এজন্য সংসার ত্যাগ করার প্রয়োজন নেই। ঈশ্বর দেবালয়ে থাকেন না, থাকেন জীবের মধ্যে। জীবসেবাই হল ঈশ্বরসেবা।


গুরুত্ব: শ্রীরামকৃষ্মের উদার মতাদর্শ সনাতন হিন্দুধর্মকে উদার হতে, জাতপাতের বিভেদ ও সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমে হিন্দুধর্ম যেমন প্রাণশক্তি ফিরে পায় তেমনি অন্যান্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায়, বৈরিতা কমে এবং সাম্প্রদায়িক মনোভাবের বিনাশ ঘটে।।


15.   সমাজ সংস্কারক হিসেবে বিদ্যাসাগরের অবদান উল্লেখ করো।

উনিশ শতকে বাংলায় সমাজ সংস্কার আন্দোলনে ইতিহাসে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। তিনি ছিলেন একজন বাস্তববাদী সমাজ সংস্কারক। নারীশিক্ষা প্রসার তথা নারীমুক্তি আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্রগামী।


সমাজ সংস্কারক বিদ্যাসাগরঃ-

বিধবা বিবাহঃ- হিন্দু-সমাজে অবহেলিত, বঞ্চিত ও নিপীড়িত নারী সমাজের মুক্তির জন্য বিদ্যাসাগর আজীবন লড়াই করেন। সে যুগে হিন্দু সমাজে বাল্য বিবাহের চল ছিল। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতারা সমাজের ভয়ে তাদের কমবয়সি মেয়েদের বয়স্ক লোকেদের সঙ্গে বিবাহ দিতেন। তাই অনেক সময় অল্প বয়সেই এই সমস্ত মেয়েরা বিধবা হত। এর ফলে তাদের দুর্দশার শেষ থাকত না। নারীজাতির এই করুণ অবস্থা তাঁকে ব্যথিত করে। হিন্দু শাস্ত্র ও পরাশর সংহিতা' অধ্যয়ন করে বাল্যবিধবাদের পুনর্বিবাহের পক্ষে জনমত গঠনের কাজে তিনি মন দেন। শেষপর্যন্ত ব্রিটিশ সরকার বিদ্যাসাগরের পক্ষে দাঁড়ায় এবং 1856 খ্রিস্টাব্দে বড়োলাট লর্ড ডালহৌসি 15 নং বিধি দ্বারা বিধবা বিবাহ আইন বলবৎ করেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় নিজের পুত্র নারায়ণের সঙ্গে ভবসুন্দরী নামে অষ্টাদশী এক বিধবার বিবাহ দেন। এরকম তিনি ৬০টি বিবাহ দেন।


বাল্যবিবাহঃ- হিন্দুধর্মে মেয়েদের বাল্যবিবাহ নামক সামাজিক ব্যাধি দূর করার জন্য তিনি নিরলস সংগ্রাম করেন। তিনি ‘সর্ব শুভকরী’ পত্রিকায় বাল্য বিবাহের দোষ’ শীর্ষক নিবন্ধ প্রকাশ করে বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করেন। এ ব্যাপারে তিনি সফলও হন। 1860 খ্রিস্টাব্দে সরকার আইন করে মেয়েদের বিবাহের বয়স কমপক্ষে 10 বছর ধার্য করে


বহুবিবাহঃ- সে যুগে হিন্দুসমাজে পুরুষের বহু বিবাহ করার অধিকার ছিল। ফলে কুলিন সমাজে এই প্রথার বহুল প্রচলন ছিল।বিদ্যাসাগর এই প্রথার বিরুদ্ধে সরব হন এবং এর বিরুদ্ধে জনমত গঠন করেন। 1873 খ্রিস্টাব্দে বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক বিচার’ নামক একটি পুস্তিকাও রচনা করেন। এ ছাড়া তিনি সরকারি সাহায্য প্রার্থনা করেন। কিন্তু বহুবিবাহ প্রসঙ্গে তিনি বিশেষ সাফল্য পাননি।

অন্যান্য পদক্ষেপঃ- এ ছাড়া বিদ্যাসাগর মহাশয় সে যুগের কৌলিন্য প্রথা, গঙ্গায় সন্তান বিসর্জন প্রথা, জাতিভেদ প্রথা, ও কুষ্ঠরোগী হত্যা প্রভৃতি নানাবিধ প্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। তাঁর উদ্যোগেই খ্যাতনামা চিকিৎসক মহেন্দ্রলাল সরকার বৈদ্যনাথ রাজকুমারী কুষ্ঠাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।


মূল্যায়নঃ- উনিশ শতকে বাংলার অচলায়তন সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করার যে-সাহসিকতা তিনি দেখিয়েছেন তা অভূতপূর্ব। সেই কারণেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই নির্ভীক সমাজ সংস্কারক সম্পর্কে বলেছেন, এই ভীরুর দেশে তিনিই একমাত্র পুরুষ সিংহ। ড. অমলেশ ত্রিপাঠির মতে তিনি ছিলেন একজন ‘ট্রাডিশনাল মর্ডানাইজার’। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন এমন এক মানুষ—“যার মনীষা প্রাচীন ঋষির মতো, কর্মদক্ষতা ইংরেজের মতো এবং হৃদয়বত্তা বঙ্গজননীর মতো।”


16. হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা থেকে উনিশ শতকের বাংলাদেশের কী ধরনের সমাজচিত্র পাওয়া যায়?

ভূমিকা : - বাংলায় নীলচাষ ও তার প্রতিবাদের জন্য যেসব পত্রিকাগুলির নাম আমাদের সর্বাগ্রে মনে আসে তার মধ্যে অন্যতম হিন্দু প্যাট্রিয়ট, যার সম্পাদক হরিশ্চন্দ্র মুখোপাধ্যায়। যদিও এই পত্রিকার প্রথম  সম্পাদক  গিরিশচন্দ্র ঘোস।


প্রথম প্রকাশ:-1853 খ্রিস্টাব্দের 6 জানুয়ারি এই পত্রিকার প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। প্রথমে পত্রিকাটি সাপ্তাহিক ছিল এবং পরে তা দৈনিক পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়।


উদ্দেশ্য :-‘হিন্দু প্যাট্রিয় কথাটির অর্থ হিন্দু দেশপ্রেমিক। এই পত্রিকাটির উদ্দেশ্য ছিল-

1.নীলচাষিদের ব্যথা-বেদনা জনসমক্ষে তুলে ধরা।

2.নীলকরদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলে।

3.সিপাহি বিদ্রোহের খবর প্রকাশ করা।

4.সমাজসংস্কারে অংশ নেওয়া।


অবদান :- হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকাটি যেসব বিষয়ে বেশি আলোকপাত করেছিল সেগুলি হল-

1.নীলচাষিদের পক্ষ নেওয়া, এদেশে  নীলের চাষ শুরু হলে নীলচাষিরা তীব্র দুর্দশার মধ্যে পড়ে, পত্রিকাটি নীলচাষিদের পক্ষ নিয়ে নানা বিষয় গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করে।


2.নীলকর বিরোধী মনোভাব গঠন ,পত্রিকাটি নীলকরদের  নানা অপকীর্তির কথা জনসমক্ষে তুলে ধরে নীলকর বিরোধী  জনমত গড়ে তুলতে সহায়কের ভূমিকা নিয়েছিল।


3.সিপাহি বিদ্রোহের সংবাদ পত্রিকাটিতে সিপাহি  বিদ্রোহের বিভিন্ন খবর প্রকাশিত হত। রামগোপাল  সান্যাল মনে করেন, এই বিদ্রোহের দিনগুলিতে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের প্রতি সহানুভূতি দেখানো হয়।


4.সমাজের প্রতিফলন ও সমাজের বিভিন্ন দিকও এই | পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। বিদ্যাসাগর বিধবাবিবাহের প্রবর্তন করলে এই পত্রিকা বিধবাবিবাহের সমর্থনে জনমত গড়ে তোলে। এ ছাড়া সরকারি শিক্ষানীতি, পতিতা সমস্যা প্রভৃতি বিষয়েও এই পত্রিকায় নানা খবর প্রকাশিত হয়। 


উপসংহার:- হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকাটি যেমন বিবাহবিচ্ছেদ আইন প্রয়োগের বিরোধিতা করেছিল তেমন বাল্যবিবাহ উচ্ছেদের বিরোধিতা করেছিল। তবে এর নেতিবাচক দিক যতই থাকুক না কেন, পত্রিকাটির ইতিবাচক দিকটি ভুললে চলবে না।







File Details

 

File Name/Book Name

 মাধ্যমিক দ্বিতীয় অধ্যায় ৪ ও ৮ নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর

File Format

PDF

File Language

Bengali

File Size

242 KB

File Location

GOOGLE DRIVE

Download Link

Click Here to Download PDF File


 

Join Telegram... Members

 

                                                              






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
To Top