আধুনিককালে নারী ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
অথবা
নারী ইতিহাসের ওপর একটি টীকা লেখ।
আধুনিককালে নারী ইতিহাসচর্চা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো
ভূমিকা : সভ্যতা-সংস্কৃতির বিকাশে নারীর ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হলেও পুরুষশাসিত সমাজে নারীরা হয়েছে অবহেলিত। যুগে যুগে নারীর ভূমিকা কী ছিল তার চর্চা বর্তমান কালে শুরু হয়েছে। নারীর গুরুত্বকে তুলে ধরার ইতিহাসচর্চাই হল নারী ইতিহাসচর্চা।1970-এর দশকে একদল ঐতিহাসিক উপলব্ধি করেন নারীদের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি। তাদের মর্যাদা ও অবস্থানের পর্যালোচনা প্রয়োজন। আমেরিকা ও ব্রিটেনে নারীবাদী চর্চার সূত্রপাত ঘটে। বর্তমানে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারী ইতিহাস চর্চা বিশেষ গুরুত্বলাভ করেছে।
নারী ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্যসমূহ : আধুনিককালে নারী ইতিহাসচর্চার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
i. পুরুষকেন্দ্রিক ইতিহাস সংশোধন:- সভ্যতার ইতিহাসে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেও নারী তার প্রাপ্য ও যোগ্য সম্মান পায়নি। অবহেলিত, উপেক্ষিত নারীর সম্মান পুনরুদ্ধার করার এবং পুরুষকেন্দ্রিক ইতিহাস সংশোধন করাই নারী ইতিহাসচর্চার বৈশিষ্ট্য।
ii. অধিকার ও সমতা প্রতিষ্ঠা : নারী ইতিহাসচর্চার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল নারীর অধিকার আদায় করা ও নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
iii. নারী নির্যাতনের অবসান : যুগে যুগে দেশে দেশে নারীরা হয়েছে নির্যাতনের, অত্যাচারের ও সামাজিক কুপ্রথার শিকার। নারী ইতিহাসচর্চার মাধ্যমে নারী নির্যাতনের অবসান ঘটানো এর বৈশিষ্ট্য।
iv. সামাজিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ : কোনো সমাজের প্রকৃত অবস্থা বোঝা যায় সেই সমাজের নারীর অবস্থা থেকে। কোনো দেশে নারীরা কতটা সামাজিক, রাজনৈতিক, আর্থিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার ভোগ করে সে দেশের নারী ইতিহাসচর্চা থেকেই তা জানা যায়।
v. স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ : নারী ইতিহাসচর্চার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের বীরত্বপূর্ণ অংশগ্রহণের কথা তুলে ধরা। রানি লক্ষ্মীবাঈ, কল্পনা দত্ত, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, মাতঙ্গিনী হাজরা প্রমুখের বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা ও দেশপ্রেমের কথা নারী ইতিহাসচর্চা থেকে জানা যায়।
vi. নারী ইতিহাসচর্চা বিষয়ক গ্রস্থ : বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারীবাদী ইতিহাসচর্চা বিষয়ক বহু গ্রন্থ রচিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে জোয়ান কেলির ‘ডিড উইমেন হ্যাভ আ রেনেসাঁ’, নীরা দেশাই-এর ‘উইমেন ইন মডার্ন ইন্ডিয়া’, জেরাল্ডিন ফোর্বস-এর ‘উইমেন ইন মডার্ন ইন্ডিয়া’, হিরন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভারতের নারীমুক্তি আন্দোলন প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
উপসংহার :- উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় পুরুষশাসিত সমাজে নারী তার যোগ্য সম্মান ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। নারী ইতিহাসচর্চাকে সেদিক থেকে সংশোধনবাদী ইতিহাসচর্চা বলা হয়।