বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো || মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় | প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ

2

বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো||মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়|প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ

বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা


প্রিয় মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা,

আজকে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো||মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়|প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ||৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর| Madhyamik History Question and Answer |10th History Examination – দশম শ্রেনীর চতুর্থ অধ্যায় প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ থেকে ১ ও ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর পেয়ে যাবে|itihas class 10|এছাড়াও তোমরা মাধ্যমিক তৃতীয় অধ্যায় ১ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর| মাধ্যমিক তৃতীয় অধ্যায় ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|Ten History Examination- মাধ্যমিক তৃতীয় অধ্যায় ৪ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|মাধ্যমিক তৃতীয় অধ্যায় ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|দশম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর পেয়ে যাবে এগুলি তোমাদের ফাইনাল পরিক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন হবে। 


তো বন্ধুরা প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ অধ্যায় থেকে বহুবিকল্পভিত্তিক সংক্ষিপ্ত অতিসংক্ষিপ্ত এবং রোচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর MCQ Very Short Short Descriptive Question and Answer |তোমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়|প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ||ওয়াহাবি আন্দোলনের উদ্দেশ্য চরিত্র ও গুরুত্ব আলোচনা করো সম্পর্কে আলোচনা করা আছে। আমাদের আশা এই প্রশ্নগুলি তোমাদের পরিক্ষায় খুবই কাজে আসবে।


বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো||মাধ্যমিক ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায়|প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ


বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো 

অথবা 

ওয়াহাবি আন্দোলনের উদ্দেশ্য চরিত্র ও গুরুত্ব আলোচনা করো


উত্তর:-

ওয়াহাবি আন্দোলন:-ভারতবর্ষে ওয়াহাবি আন্দোলন শুরু করেন দিল্লির বিখ্যাত মুসলিম সন্ত শাহ ওয়ালিউল্লাহ ও তার পুত্র আজিজ। তবে ভারতবর্ষে ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রকৃ ত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রায়বেরিলির অধিবাসী সৈয়দ আহমদ।


ওয়াহাবি আন্দোলনের উদ্দেশ্য: 

i. ইসলামধর্মের সংস্কার:-ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রকৃত নাম হল তারিকা- ই- মহম্মদীয়া অর্থাৎ ইসলামধর্মের প্রতিষ্ঠাতা হজরত মহম্মদ প্রদর্শিত পথ। ওয়াহাবি আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল ইসলামধর্মের মধ্যে প্রচলিত কুসংস্কার দূর করে মহম্মদের নির্দেশ অনুসরণ করে ইসলামধর্মের সংস্কার করা।


ii. ভারতবর্ষ থেকে ইংরেজদের বিতাড়ন:-ওয়াহাবি আন্দোলনকারীরা বিধর্মী ইংরেজ- শাসিত ভারতকে দার- উল- হারব বা শত্রুর দেশ বলে অভিহিত করত। তাই তারা ধর্মযুদ্ধের মাধ্যমে ভারতবর্ষ থেকে বিধর্মী ইংরেজদের বিতাড়িত করার জন্য আন্দোলন করেছিল।


iii. অত্যাচারী জমিদারদের উচ্ছেদ:-ওয়াহাবি আন্দোলনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল অত্যাচারী জমিদারদের উচ্ছেদ করা। এই কারণে পাঞ্জাবের অত্যাচারী জমিদারদের বিরুদ্ধে সৈয়দ আহমেদ যুদ্ধ করে পেশোয়ার দখল করেছিলেন এবং বাংলায় তিতুমির পুড়ার জমিদারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।


iv. নৈতিক ও আধ্যাত্মিক আদর্শ:-ওয়াহাবি আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল এক সহজসরল জীবনযাত্রা এবং নৈতিক ও আধ্যাত্মিক আদর্শের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।


তিতুমিরের নেতৃত্বে বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলন:-বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রাণপুরুষ ছিলেন মির নিশার আলি যিনি তিতুমির নামে অধিক পরিচিত। তিতুমির ২৪ পরগনা জেলার বাদুড়িয়া থানার অন্তর্গত হায়দারপুর গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ৩৯ বছর বয়সে মক্কায় হজ করতে গিয়ে সৈয়দ আহমদের সংস্পর্শে এসেছিলেন এবং দেশে ফিরে ইসলামধর্মের কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। পরবর্তীকালে এই আন্দোলন কৃষক আন্দোলন -এ পরিণত হয়েছিল। বারাসত অঞলে তিতুমিরের এই আন্দোলন বারাসত বিদ্রোহ নামেও পরিচিত।


 তিতুমিরের আন্দোলনের মূল কথা:- তিতুমিরের আন্দোলনের মূল কথা ছিল-

i. একমাত্র আল্লাহকে মান্য করতে হবে।

ii. মুসলমানদের ইসলাম ধর্ম বহির্ভূত সংস্কার পরিত্যাগ করতে হবে।

iii. অনুগামীদের দাড়ি রাখতে হবে।

iv. অত্যাচারী জমিদারদের রাজস্ব দাবির বিরোধিতা করতে হবে।


তিতুমিরের বিরুদ্ধে জমিদারদের প্রতিক্রিয়া:-তিতুমিরের প্রভাবে ২৪ পরগনা নদিয়া মালদহ রাজশাহি ঢাকা প্রভৃতি অঞ্চলের কৃষকরা ওয়াহাবি আন্দোলন শুরু করলে জমিদার নীলকর সাহেব ও মুসলমান মোল্লারা তিতুমিরের বিরোধিতা শুরু করে। পুড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব  রায় তিতুমিরের অনুগামীদের দমন করার জন্য দাড়ির উপর ২.৫ টাকা কর ধার্য করেছিলেন। ফলে জমিদারের সঙ্গে তিতুমিরের অনুগামীদের সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল।


বারাসত বিদ্রোহ:-তিতুমির বারাসতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে নিজেকে স্বাধীন বাদশাহ বলে ঘোষণা করেছিলেন ও মইনউদ্দিন নামে এক অনুগামীকে প্রধানমন্ত্রী এবং ভাগ্নে গোলাম মাসুমকে প্রধান  সেনাপতি নিযুক্ত করে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করার পরিকল্পনা করেন। তিনি নারকেলবেড়িয়ার সদর দপ্তরে বাঁশের কেল্লা নির্মাণ করে ওই অঞ্চলের জমিদারদের কাছে রাজস্ব দাবি করেন। এটি ইতিহাসে বারাসত বিদ্রোহ নামে পরিচিত।


বারাসত বিদ্রোহের অবসান:-তিতুমিরের বিরুদ্ধে স্থানীয় জমিদার ও নীলকর সাহেবরা গভর্নর জেনারেল লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্কের শরণাপন্ন হলে 1831 খ্রিস্টাব্দে লর্ড বেন্টিং তার বিরুদ্ধে  এক অভিযান প্রেরন করেন এবং কামানের আঘাতে বাঁশেরকেল্লা ধ্বংস হয়। তিতুমীর ও তার কয়েকজন অনুগামী বীরের মতো যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ দেন বন্দি সৈন্যদের ফাঁসি হয় এবং অনেকে দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড ভোগ করেন।


তিতুনিবের আন্দোলনের চরিত্র:-তিতুমিরের আন্দোলনের চরিত্র নিয়েও ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। সমকালীন লেখক বিহারীলাল সরকার কুমুদনাথ মল্লিক তিতুমিরের আন্দোলনকে ধর্মোন্মাদ মুসলমানদের কাণ্ড এবং হিন্দু- বিরোধী আন্দোলন বলে চিহ্নিত করেছেন। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার একে নিছক সাম্প্রদায়িক আন্দোলন বলেছেন।  অপরপক্ষে হান্টার থর্নর্টন প্রমুখ ঐতিহাসিক এতে কোন সাম্প্রদায়িকতা দেখতে পাননি। ডব্ল. সি. স্মিথ ডঃ কুয়েমুদ্দিন আহমদ নরহরি কবিরাজ  প্রমুখ এর মধ্যে জমিদার নীলকর ও ইংরেজ বিরোধিতা লক্ষ্য করেছেন। ড. বিনয়ভূষণ চৌধুরী  বলেন যে তিতুমিরের সংগ্রাম ছিল জমিদারের অনাচারের বিরুদ্ধে। সে যুগে জমিদারদের অধিকাংশই হিন্দু হওয়ায় এই আন্দোলনকে হিন্দু- বিরোধী বলে মনে হতে পারে কিন্তু মুসলিম জমিদারদের তিনি ছেড়ে দেননি। নিম্নবর্ণের বহু হিন্দু তাকে সমর্থন করত।


গুরুত্ব:-ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে ওয়াহাবি আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। তিতুমিরের নেতৃত্বে পরিচালিত ওয়াহাবি আন্দোলন ধর্মসংস্কার আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও এটি কৃষক বিদ্রোহের রূপ পরিগ্রহণ করেছিল।অত্যাচারী জমিদার ও নীলকর সাহেবদের হাতে নির্যাতিত মানুষদের সংগঠিত করে তিতুমির বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। লর্ড উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক প্রেরিত ইংরেজ বাহিনীর বিরুদ্ধে তিনি প্রাণপণ সংগ্রাম করেছিলেন। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন যে তিতুমিরের বিদ্রোহীদের উদ্দেশ্য ছিল ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটানো। ড. শশীভূষণ চৌধুরী বলেছেন যে এই বিদ্রোহের মূল চালিকাশক্তি ছিল কৃষকরা এবং এই বিদ্রোহ ছিল আসলে ধর্মীয় আদর্শে অনুপ্রাণিত কৃষক বিদ্রোহ। যাইহোক পরবর্তীকালে এই আন্দোলনে ধর্মীয় স্পর্শ লক্ষ্য করা গেলেও এই আন্দোলনের মাধ্যমে হিন্দু-মুসলিম দরিদ্র কৃষক জমিদার নীলকর সাহেব এবং ব্রিটিশ- বিরোধী সংগ্রামে অবতীর্ণ হয় এবং হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির সমন্বয়ে ভারতে এক মিশ্র-সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল।তাই এই আন্দোলনের গুরুত্ব কে অস্বীকার করা যায় না।


  • বন্ধুরা ২০২২ সালের অধ্যায় ভিত্তিক ইতিহাস সাজেশন এর জন্য  Click Here
  • নারী শিক্ষা বিস্তারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো Click Here

File Details

 

File Name/Book Name

আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার প্রধান উপাদানগুলি সংক্ষেপে আলোচনা কর।

File Format

PDF

File Language

Bengali

File Size

89 KB

File Location

GOOGLE DRIVE

Download Link

Click Here to Download PDF File


Join Telegram... Members

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

2 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
To Top