উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের চরিত্র,প্রকৃতি, বিতর্ক ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা কর।

8

উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের চরিত্র প্রকৃতি বিতর্ক ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা কর। 


বাংলার নবজাগরণের চরিত্র,প্রকৃতি, বিতর্ক

প্রিয় মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা,

আজকে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করবো মাধ্যমিক দ্বিতীয় অধ্যায় উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের চরিত্র প্রকৃতি বিতর্ক ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা পাবে|দশম শ্রেনীর দ্বিতীয় অধ্যায় সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা থেকে নবজাগরণের চরিত্র পেয়ে যাবে|এছাড়াও তোমরা মাধ্যমিক দ্বিতীয় অধায় ১ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|মাধ্যমিক দ্বিতীয় অধায় ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর মাধ্যমিক দ্বিতীয় অধায় ৪ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|মাধ্যমিক দ্বিতীয় অধায় ৮ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|পেয়ে যাবে এগুলি তোমাদের যে পরিক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন হবে।তো বন্ধুরা তোমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে মাধ্যমিক ইতিহাসের উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের চরিত্র, প্রকৃতি, বিতর্ক ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করা আছে। আমাদের আশা এই প্রশ্নটি তোমাদের পরিক্ষায় খুবই কাজে আসবে।

উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের চরিত্র,প্রকৃতি, বিতর্ক ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা কর। 

ভুমিকাঃ রেনেসাঁস একটি ফরাসি শব্দ এর বাংলা অর্থ হল ‘নবজাগরণ’। রেনেসাঁস শব্দটি ইউরোপে বিশেষত ইটালির ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত। এই শব্দের দ্বারা মূলত ১৪-১৬ শতকের ইতালীয় সাহিত্য শিল্পকলা বিজ্ঞান ও রাজনীতির স্ফুরণকে বোঝায়। অপদিকে পাশ্চাত্য সভ্যতার সংস্পর্শে এসে উনিশ শতকের মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজে এক যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদী আড়োলনের সূচনা হওয়ার ফলে তৎকালীন ধর্ম সমাজ শিক্ষা সাহিত্য দর্শন রাজনীতি জীবনের সর্বক্ষেত্রেই ব্যাপক পরিবর্ত্ন পরিলক্ষিত হয় যাকে ঐতিহাসিকরা ‘বঙ্গীয় নবজাগরণ’ বা ‘Bengal Renaissance’ বলে অভিযোগ করেছেন।



নবজাগরণের স্রষ্টাঃ নবজাগরণের স্রষ্টা তারা এ নিয়ে বিতর্ক আছে। পশ্চিমের জ্ঞান বিজ্ঞান যুক্তিবাদ দর্শন মানবতাবাদ উদারনীতি প্রভৃতি বাঙালি মনোজগতে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন এনেছিল আর এই পরিবর্তনের ফলে নবজাগরণের সূত্রপাত হয়েছিল। বাংলার নবজাগরণের অন্যতম দিকছিল হিন্দু ধর্মের সংস্কার সাধন। রাজা রামমোহন রায় দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব হিন্দু ধর্মের পৌত্তলিকতা পুরোহিততন্ত্র ও আচার সর্বস্বতাকে দূর করতে চেয়েছিলেন।



আরও পড়ুন......




              মার্কিন গবেষক ডেভিড কফ মনে করেন যে, উইলিয়াম জোন্স,জোনাথন ডানকান এবং কোলব্রুকের মত ব্যক্তিদের প্রচেষ্টাতেই বাংলায় নবজাগরণ ঘটেছিল। তিনি আরো মনে করেন,বাংলার নবজাগরনে এশিয়াটিক সোসাইটি ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ প্রভূতি প্রতিষ্ঠান বিশেষ ভূমিকা ছিল। যাইহোক রমেশ চন্দ্র মজুমদার বলেন যে পাশ্চাত্য সভ্যতার সংস্পর্শে এসে দেশবাসীর অভ্যন্তরে মানবতাবাদ ও যুক্তিবাদের স্ফুরোন ঘটে এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবধারার সমন্বয়ের ফলে নবজাগরণের সূচনা হয়। ডঃ অমলেশ ত্রিপাঠী বলেন যে, পশ্চিম ও পূর্বের বীজের শংকর ভারতের মাটিতে পড়ে যে ফসল ফলিয়েছে তাই হলো নবজাগরণের ভিত্তি।



বাংলার নবজাগরণের চরিত্র ও প্রকৃতি: উনিশ শতকে বাংলাদেশের নবজাগরণের চরিত্র বা প্রকৃতি বিষয়ে বিভিন্ন মতামত আছে।



 বাংলার নবজাগরণ:- তৎকালীন সামাজিক পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে রাজা রামমোহন রায় এক চিঠিতে আলেকজান্ডার ডাফকে  লিখেছিলেন, আমি ভাবতে শুরু করেছি যে, “ইউরোপীয় রেনেসাঁসের মতো কিছু একটা ভারতে ঘটতে চলেছে”। রামমোহনের মত বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কেশবচন্দ্র সেন, বিপিনচন্দ্র পাল, অরবিন্দ ঘোষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উনিশ শতকের বাংলার মানসিক স্ফুরণ ও সংস্কার আন্দোলনকে নবজাগরণ বলেছেন।



ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার তার ‘বাংলার ইতিহাস' গ্রন্থে উনিশ শতকের বাংলাকে নবজাগরণের পীঠস্থান’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, “কনস্টান্টিনোপলের পতনের পর ইউরোপে যে নবজাগরণ দেখা যায়, উনবিংশ শতকে বাংলার নবজাগরণ ছিল তার থেকেও ব্যাপক, গভীর এবং বৈপ্লবিক।”




আরও পড়ুন......



 


অধ্যাপক সুশোভন সরকার বলেছেন যে, বাংলাদেশেই সর্বপ্রথম ব্রিটিশ শাসনে বুর্জোয়া অর্থনীতি ও আধুনিক পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাব অনুভূত হয়। তার ফলে যে সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটে তাকে সাধারণভাবে নবজাগরণ বলা হয়ে থাকে। ইউরোপীয় নবজাগরণের সেই ভূমিকা পালন করেছিল বাংলা (তৎকালীন বাংলাদেশ)।



বাংলার নবজাগরণ প্রকৃত নবজাগরণ নয় : অনেকে বাংলার নবজাগরণের কথা স্বীকার করলেও অনেকে আবার একে প্রকৃত অর্থে নবজাগরণ বলতে রাজি নন।



তথাকথিত নবজাগরণঃ  প্রখ্যাত পণ্ডিত অশোক মিত্র ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে আদমশুমারি বা Census তৈরির সময় বাংলায় উনিশ শতকের জাগরণকে “তথাকথিত নবজাগরণ” (So called Renaissance) বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সুবাদে নয়া জমিদারশ্রেণি সাধারণ রায়তদের শোষণ করে যে বিপুল অর্থ লাভ করেছিল তার একটা বিরাট অংশ তারা কলকাতার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ব্যয় করেছিলেন। এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সাধারণ মানুষের কোনও যোগ ছিল না।



ইউরোপীয় নবজাগরণের সমতুল্য নয় : গবেষক সুপ্রকাশ রায় বলেছেন, বাংলায় সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রকৃতি ছিল ইউরোপের আন্দোলন থেকে ভিন্ন এবং বিপরীতমুখী। তিনি বলেছেন, আমাদের আধুনিক যুগের লেখকগণ ইউরোপের অনুকরণে সোহাগভরে বাংলার নগরকেন্দ্রিক আন্দোলনটির নাম দেয় নবজাগরণ। ইউরোপের নবজাগরণ ছিল সামন্তপ্রথার বিরুদ্ধে; কিন্তু বাংলার নবজাগরণ ছিল জমিদার ও মধ্যস্বত্বভোগীদের সাথে একত্রিত হয়ে সামন্ততান্ত্রিক ভূস্বামীদের আন্দোলন। আবার বাংলার বিশাল কৃষকশ্রেণি ছিল ভূস্বামীদের শত্রু ও বিরোধী।



ঐতিহাসিক প্রতারণাঃ ঐতিহাসিক বিনয় ঘোষ তার ‘বাংলার নবজাগৃতি’ গ্রন্থে বলেছেন উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণ ছিল একটি মিথ্যাচার। নবজাগরণ কে তিনি একটি ঐতিহাসিক প্রতারণা বলে অভিযোগ করেছেন। 



অরবিন্দ পোদ্দার, ডঃ বরুন দে, ডঃ অশোক সেন এবং  সুমিত সরকারও ঠিক অনুরূপ বক্তব্য রেখছেন। অরবিন্দ পোদ্দার এর মতে উনিশ শতকের  বাংলার নবজাগরণ ছিল ‘একটি বিকৃত ও নীরস নবজাগরণ’



নবজাগরণের গুরুত্ব: উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলতে পারি যে,নানা দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও উনিশ শতকে নবজাগরণের ফলে ভারতীয়রা পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সম্পর্কে অবহিত হওয়ার সুযোগ পায়। এছাড়াও বাংলার সমাজ ধর্ম ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে এই নবজাগরণ কিছুটা পরিবর্তন এনেছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই।জনৈক জার্মান সমাজতত্ত্ববিদের মতে, ভারতে নবজাগরণের মাধ্যমে মধ্যযুগ থেকে আধুনিক যুগের সূচনা ঘটেছিল।






File Details

 

File Name/Book Name

উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের চরিত্র প্রকৃতি বিতর্ক ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা কর। 

File Format

PDF

File Language

Bengali

File Size

94 KB

File Location

GOOGLE DRIVE

Download Link

Click Here to Download PDF File


 

Join Telegram... Members







একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

8 মন্তব্যসমূহ
  1. Sir তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার সম্পর্কে লেখ চার নম্বরে দিলে খুব উপকৃত হয়

    উত্তরমুছুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
To Top