প্রশ্নঃ
বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহনের চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা
সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর
পৃথিবীর সবদেশেই স্বাধীনতা আন্দোলন অহিংস ও সহিংস দুটি পথেই পরিচালিত হয়। ভারতের ক্ষেত্রেও তাঁর ব্যাতক্রম হয়নি। দেশমাতার
মুক্তির উদ্দেশ্যে বোমা-পিস্তল হাতে নিয়ে সশস্ত্র পথে একদল তরুন-তরুনি
সাম্রাজ্যবাদীশক্তির বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। বিশ শতকের সুচনায় বাংলার বুকে
বিপ্লব বাদের পদ ধবনি শোনা যেতে থাকে। প্রথমদিকে ভগ্নিনিবেদিতা এবং সরলাদেবী
চৌধুরীর মতো প্রমুখ নারীদের গোপন যোগাযোগ থাকলেও সাধারনভাবে মেয়েদের এসব কর্মকাণ্ড
থেকে দূরে রাখা হতো। তবে মেয়েরা মা,বোন স্ত্রী হিসাবে
বহুক্ষেত্রে তারা পলাতক বিপ্লবীদের গোপনে আশ্রয় দিতেন, পিস্তল বা রিভলবার লুকিয়ে রাখতেন বা অন্যত্র পৌঁছে দিতেন, এমনকি গোপনে চিঠিপত্র আদান-প্রদান করতেন।
এই ধরনের আন্দোলনে
যেসমস্ত নারীরা উল্লেখযোগ্য ভুমিকা গ্রহন করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন
বীরভুমের দুকড়িবালাদেবী, যিনি নিজের বাড়িতে রডা কোম্পানির ৭টি পিস্তল
ও এক বাক্স কার্তুজ লুকিয়ে রাখার অভিযোগে ২ বছরের জন্য কারাবরন করেছিলেন। হাওড়ার
বাল বিধবা ননী বালাদেবী পলাতক বিপ্লবিদের আশ্রয় দিতেন যার জন্য তাকে ১৮১৮ সালে
রাজবন্দী করা হয়। এছাড়াও অনেক উদাহরন আছে যে মেয়েরা নিজ শক্তিতে বলীয়ান হয়ে
নিজেরাই বিপ্লব কর্মে অগ্রসর হয়েছিলেন। এইপ্রসঙ্গে ১৯২৩ খ্রীষ্টাব্দে ঢাকায় লীলা
নাগের (১৯০০-৭০ খ্রিঃ) উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ‘দীপালি সংঘ’র কথা বলা যায়। নারী জাগরণ ও নারীদের
আত্মপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনের বেশ কিছু কর্মধারা ও শাখা সংগঠন
ছিল। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত ‘দীপালি ছাত্রী সংঘ’ঢাকা ও কলকাতায় ছাত্রীদের মধ্যে যথেষ্ট
উদ্দীপনার সাঞ্চার করেছিল। এটি ছিল ভারতের প্রথম ছাত্রী সংগঠন।
বাংলা তথা ভারতের বিপ্লব আন্দোলনে চট্টগ্রামের প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার
(১৯১১-৩২খ্রিঃ) ও কল্পনাদত্ত(১৯১৩-৯৫খ্রিঃ), বেণীমাধব দাসের কন্যা বীণাদাসের
(১৯১১-৮৬খ্রিঃ) অবদান ভুলবার নয়। চট্টগ্রামের প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং
কল্পনাদত্ত সূর্য সেনের নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে যুক্ত
ছিলেন। মাস্টারদার নির্দেশে এই দুই অগ্নি কন্যা চট্টগ্রামে পাহাড়তলি ইউরোপিয়ান ক্লাব
আক্রমনের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু একসপ্তাহ আগেই কল্পনাদত্ত গ্রেফতার
হয়েযান এবং প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এই অভিযান শেষ
পর্যন্ত সফল করেন। কিন্তু তিনি পুলিশের হাতে ধরা না দেওয়ায় আত্মহত্যা করেছিলেন।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে ভারতীয় মহিলারা খুবই বিরত্বপূর্ন ভুমিকা প্রদর্শন করেছিলেন। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু মনে করতেন যে, দেশের মুক্তি
সংগ্রামে নারী-পুরুষ সবার সমান অধিকার আছে।এই ভাবনা থেকেই তিনি আজাদ হিন্দ
বাহিনীতে ঝাসির রানী লক্ষ্মীবাইয়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে একটি নারী বিভাগ গঠন করেন তার নাম ছিল ‘ ঝাঁসির রাণী বাহিনী’। এই বাহিনীর প্রধান
ছিলেন মাদ্রাজের মেডিকেল কলেজ থেকে সদ্য পাশ করা চিকিৎসক ডা. লক্ষ্মী স্বামীনাথন।
নানা ধর্ম ও প্রদেশের সম্ভ্রান্ত ঘরের প্রায় ১৫০০ মেয়ে এই বাহিনীতে্ যোগ
দিয়েছিলেন।যদিও শেষ পর্যন্ত এই বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছিল তবুও ‘ঝাঁসির রাণী বাহিনী’–র মহিলাদের বীরত্ব ও
আত্মদান আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়।
এই ভাবে নারীরা
ইংরেজদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে।ব্যাপ্তিতে সীমিত হলেও প্রকৃতিগতভাবে তা অবশ্যই
উল্লেখযোগ্য ছিল যা ইংরেজ শাসকদের মনে ভীতির সঞ্চার করেছিল তাই পরিশেষে বলা যায় যে, ভারতের স্বাধীনতা
সংগ্রামে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও বিরত্ব প্রদর্শন ও আত্মদান করেছিলেন। সুতরাং
আজকে আমরা যে স্বাধীনতা ভোগকরছি তাতে মেয়েদের অবদানের কথা কখনও ভুলে যাওয়া উচিত
নয়।
Nice
উত্তরমুছুনok
মুছুনthanks
মুছুনit is very helpfull
উত্তরমুছুনNice answer
উত্তরমুছুনThanks.. For your help.
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
উত্তরমুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনদারুণ ভাল লেগেছে
উত্তরমুছুনদারুণ ভালো লেগেছে
উত্তরমুছুন