সপ্তম শ্রেণি পঞ্চম অধ্যায়
মুঘল সাম্রাজ্য
5 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর
সপ্তম শ্রেণি পঞ্চম অধ্যায় মুঘল সাম্রাজ্য 5 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর
1. এয়াোদশ-ষাোড়শ শতক পর্যন্ত রাজধানী হিসেবে দিল্লি কীভাবে গড়ে ওঠে
?
উ:- মধ্য যুগে দিল্লি শহরের বিকাশের দুটি পর্যায় ছিল। একটি হল- খ্রিস্টীয়
ত্রয়াোদশ-চতুর্দশ শতকের দিল্লি, অপরটি হল সপ্তদশ শতকে মাোগল সম্রাট শাহজাহানের তৈরি
শাহজাহানাবাদ। এখানে উপরাোক্ত দুটি পর্যায়ে দিল্লি শহর কেমনভাবে গড়ে উঠেছিল তা আলাোচনা
করা হল।
i. দাসবংশের সময় : কুতুবউদ্দিন আইবকের রাজত্বকালে দিল্লি গঠন হয়েছিল
রাজপুত শাসকদের শহর কিলা রাই পিথাোরাকে কেন্দ্র করে। এটিই ছিল সুলতানি আমলের প্রাথমিক
পর্বের দিল্লি। গিয়াসউদ্দিন বলবনের সময়কালে গিয়াসপুর নামে একটি শহরতলি যমুনা নদীর
পারে তৈরি হয়েছিল। বলবনের পৌত্র কায়কোবাদ খ্রিস্টীয় ত্রয়াোদশ শতকের শেষে যমুনা
নদীর তীরে গড়ে তাোলেন কিলাোঘড়ি প্রাসাদ।
ii. খলজিদের সময় : জালালউদ্দিন খলজির আমলে তৈরি হয় শহর-ই-নও। এই শহরে
আমির ও সর্দার শ্রেণির লাোকেরা এসে বসবাস শুরু করে। তাদের সঙ্গে ছিল গায়ক ও বাজনাদার,
এঁরা একত্রে বসবাস করতেন।
iii. তুঘলকদের সময়: সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুঘলক ‘পুরাোনাো শহর থেকে
দূরে প্রস্তুত করেছিলেন তুঘলকাবাদ। তবে এই শহরটি কখনাোই পুরাোপুরি একটি রাজধানী বা
বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠেনি। মহম্মদ-বিন-তুঘলকের আমলে কুতুব দিল্লি, সিরি ও জাহানপনাহকে
ঘিরে একটি বড়াো শহর গড়ে তাোলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সে কাজ সম্পূর্ণ হয়নি।
সুলতানি আমলের প্রথম দিল্লি (কুতুব দিল্লি) কখনাোই তার গুরুত্ব হারায়নি। এই সময় সুফি
সাধকদের হাত ধরে এই দিল্লির মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। এর নাম হয় হজরত-ই-দিল্লি। ফিরাোজ
শাহ তুঘলক যমুনা নদীর তীরে গড়ে তাোলেন ফিরাোজাবাদ শহর। এর ফলে ব্যাবসাবাণিজ্য উন্নত
হয়। জলের সমস্যার সমাধান হয়। ফলে পুরাোনাো দিল্লির মর্যাদা কমে যায়।
iv. মাোগল যুগ : ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে মাোগল সম্রাট বাবর ইব্রাহিম লাোদিকে
পরাজিত করে ভারতে দিল্লিকেন্দ্রিক মাোগল সাম্রাজ্য গড়ে তাোলেন। এরপর শাহজাহান যমুনা
নদীর পশ্চিম দিকে শাহজাহানাবাদ নগর প্রতিষ্ঠা করেন। এর ফলে দিল্লি পুনরায় ভারতের প্রধান
রাজনৈতিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। মধ্যযুগে ভারতের বিভিন্ন রাজবংশের সময় গড়ে ওঠা বিভিন্ন
গুরুত্বপূর্ণ শহর
v. টীকা লেখাো : মাোগল যুগের শিল্প। মাোগল যুগে কৃষি ছাড়াও বহু মানুষ
শিল্পের মাধ্যমে জীবিকানির্বাহ করত। এযুগের শিল্প ছিল মূলত কুটিরশিল্প। মাোগল যুগে
শিল্প
2. ভারতে ইউরাোপীয় বাণিজ্যের প্রভাব কী পড়েছিল ?
উ:- পাোর্তুগিজদের পর একে একে দিনেমার, ফরাসি ও ইংরেজ কোম্পানিগুলি
ভারতে বাণিজ্য করতে আসে ভারতীয় বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে এর ফল হয়েছিল সুদূরপ্রসারী।
ইউরাোপীয় বাণিজ্যের প্রভাব
i. প্রথমদিকে পাোর্তুগিজ বণিকগণ নগদ রুপাো বা বুলিয়ানের বিনিময়ে এদেশে
বাণিজ্য করত। কিন্তু ইউরাোপ থেকে এই সময় রুপাো আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে তারা
বিনিময় প্রথার অনুসরণ করে। চিনা সিল্ক, টিন, গহনা ভারতে বিক্রি করে তার বিনিময়ে ভারতীয়
মশলা, বস্ত্র, গাোলমরিচ প্রভৃতি পারস্য ও আরবে রপ্তানি করত। আর সেখান থেকে ঘাোড়া,
কার্পেট, খেজুর, হাবসি খাোজা প্রভৃতি আনত অন্যদিকে পাোর্তুগিজ ও ইংরেজ বণিকরা ভারতে
সাোনা সতেরাো শতকে ভারতে বুলিয়ান আমদানি বেড়ে যায়। ইংরেজ বণিকগণ ১৬১৬ খ্রিস্টাব্দে
ভারতে প্রায় ২২ হাজার পাউন্ড মূল্যের বুলিয়ান আমদানি করে। ১৬৩১ খ্রিস্টাব্দে তা বেড়ে
দাঁড়ায় ৫২ হাজার পাউন্ড এবং সতেরাো শতকের শেষের দিকে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৮
লক্ষ পাউন্ড। ইংরেজ বণিকগণ এই সময় বাংলার তাঁতিদের দাদন দিয়ে তাঁদের তৈরি কাপড় ক্রয়
করত। পাোর্তুগিজ বণিকেরা পারসিক রেশম ওইন্দোনেশিয়ার মশলার বিনিময়ে ভারতের ক্যালিকো
ও নীল কিনত।
উ:- মাোগল যুগে ভারতে যতগুলি দেশ বাণিজ্য করতে এসেছিল, তাদের মধ্যে
সর্বশ্রেষ্ঠ ছিল ইংল্যান্ড, তথা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।ইংরেজ বণিকদের কার্যকলাপ ১৬০০
খ্রিস্টাব্দে রানি প্রথম এলিজাবেথের আমলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন্ম হয়। ১৬০৯ খ্রিস্টাব্দে
ক্যাপটেন হকিন্স প্রথম এবং ১৬১৫ খ্রিস্টাব্দে স্যার টমাস রাো সম্রাট জাহাঙ্গিরের কাছে
ভারতে বাণিজ্য করার অনুমতি চান। যদিও দুই ক্ষেত্রেই ইংরেজগণ বিশেষ সুযাোগ সুবিধা লাভ
করতে পারেনি। অবশ্য ১৬৫১ খ্রিস্টাব্দের মধ্য তারা সুরাট, আগ্রা, আহম্মদনগর, হরিহরপুর,
বালেশ্বর, হুগলি, মাহে, পাটনা, কাশিমবাজার প্রভৃতি স্থানে বাণিজ্য কুঠি নির্মাণ করার
অধিকার পায়। এরপর ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দের ফারুকশিয়ারের ফরমান দ্বারা তারা বাংলায় বিনাশুল্কে
বাণিজ্য করার অধিকার পায়। ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে বন্দিবাসের যুদ্ধে ফরাসিগণ ইংরেজদের কাছে
পরাজিত হয়। পরের বছর ইংরেজগণ পণ্ডিচেরি, মাহে, জিঞ্জি প্রভৃতি বাণিজ্যকেন্দ্রগুলি
ফরাসিদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়। ইতিমধ্যে প্যারিসের সন্ধি ও হিউবার্টসবার্গের সন্ধির
শর্তানুযায়ী ইংরেজগণ ফরাসিদের কাছ থেকে ভারতের অধিকাংশ বাণিজ্য কুঠিগুলি অধিকার করে
নেয়। ভারত থেকে ইংরেজ বণিকগণ সুতিবস্ত্র, নীল, লংকা, এলাচ, চিনি, সাোরা, রেশম প্রভৃতি
ক্রয় করত এবং এদেশে বিক্রি করত টিন, সিসা, পারা, হাতির দাঁত, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ প্রভৃতি।
১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধ ও ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভ করার পর
ইংরেজ কোম্পানি এদেশে বাণিজ্যিক কর্তৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হয় এর পর থেকে কোম্পানি তাদের
কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য পেছনের দিকে তাকাতে হয় নি।
4. মাোগল যুগের বহির্বাণিজ্য সম্পর্কে কী জানাোনা ?
উ:- মাোগল যুগে ইউরাোপ ও এশিয়ার
বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক লেনদেন চলত। সিংহল, ব্রহ্লাদেশ, চিন, জাপান,
নেপাল, পারস্য প্রভৃতি দেশগুলির সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে এই সময়।
i. রপ্তানি পণ্য : পাোর্তুগিজ, ওলন্দাজ ও ইংরেজ বণিকগণ ভারতে বাণিজ্য
করতে আসে। এইসময় ভারত থেকে নীল, আফিম, সুতিবস্ত্র, মসলিন বস্ত্র, চিনি, সারা ও ধনসম্পত্তি
রপ্তানি করা হত।
ii. আমদানি পণ্য: ভারতে আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে ছিল- চিনামাটির তৈজসপত্র,
রুপাো, ঘাোড়া, মণিমুক্তা,ভেলভেট, হাতির দাঁত, ব্রোকেট, সুগন্ধি প্রভৃতি।
iii. বাণিজ্যকেন্দ্র ও বন্দর: বহির্বাণিজ্যের উল্লেখযাোগ্যবাণিজ্যকেন্দ্র
ও বন্দরগুলির মধ্যে ছিল সাতগাঁ, চট্টগ্রাম, নেগাপটনম, মাদ্রাজ, লাহাোর, ক্যাম্বে, সুরাট
ব্রোচ, কালিকট, গাোয়া প্রভৃতি।
iv. শুল্কের হার : মাোগলসম্রাটগণ বাণিজ্য শুল্কের হার কমিয়ে দিয়েছিলেন।
একসময় সুরাট বন্দরে রপ্তানিশুল্কের ওপর হার ছিল ৩.৫ শতাংশ বিদেশি বণিক ও পর্যটকদের
বিবরণে মাোগল যুগের বাণিজ্যিক সমৃদ্ধির কথা ফুটে উঠেছে। ঐতিহাসিক বানিয়ে লিখেছেন,
দেশের ব্যাবসাবাণিজ্যের মান খুবই উন্নত ছিল। ইংরেজ বণিক ক্যাপটেন হকিন্স মন্তব্য করেছেন,
‘ভারত স্বর্ণ ও রৌপ্য সমৃদ্ধ ছিল এবং বিদেশি বণিকগণ কর্তৃক আনীত মুদ্রা ভারতে জমা থাকত।