সপ্তম
শ্রেণীর ষষ্ঠ অধ্যায়
নগর
বণিক বাণিজ্য
5 নম্বরের
প্রশ্ন উত্তর
সপ্তম শ্রেণীর ষষ্ঠ অধ্যায় নগর বণিক বাণিজ্য 5 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর
1. সাম্রাজ্যবাদী তৈমুর লঙের ভারত আক্রমণের বিবরণ দাও।
উ:- ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে তৈমুর লঙের ভারত আক্রমণের ঘটনা ভারতীয় ইতিহাসে
এক সুদূরপ্রসারী ও তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। তৈমুর লঙের ভারত আক্রমণের বিবরণ
i. উদ্দেশ্য: জানা যায় যে, ভারতবর্ষের সম্পদ লুণ্ঠন করে সমরখন্দে নিয়ে
যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তৈমুর লঙ ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন। এ কথা সত্য যে, ভারতবর্ষে স্থায়ী
সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করার কোনাো অভিসন্ধি তাঁর ছিল না। সৈন্যবাহিনী নিয়ে পাঞ্জাবে
হাজির হন। তাঁর লক্ষ্য ছিল দিল্লি তথা সুলতানি সাম্রাজ্য আক্রমণ করা।
ii. বাস্তব চিত্র: সমকালীন ঐতিহাসিক বায়ুনির বিবরণে তৈমুরের দিল্লি
লুণ্ঠনের চিত্র ধরা পড়েছে। জানা যায় এই লুণ্ঠন পরবর্তী সময়ে দিল্লিতে নেমে এসেছিল
শ্মশানের স্তব্ধতা। দিল্লির আকাশে প্রায় দু-মাস কোনাো পাখির কলরব দেখা যায়নি।
iii. এই আক্রমণের ফলে ক্ষয়িষ্ণু সুলতানি সাম্রাজ্যের ভিত একেবারে নড়ে
যায়।
iv. অবাধ লুণ্ঠন ও শস্য ধ্বংসের ফলে সুলতানি সাম্রাজ্যে দেখা দেয় খাদ্যাভাব
ও দুর্ভিক্ষ।
v. ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের দরুন দেখা দেয় বায়ু ও জলদূষণ। যার পরাোক্ষ
ফল ছিল মহামারি।
vi. সমরখন্দে ফেরার আগে দিল্লির মসনদে নিজপুত্র খিজির খাঁকে প্রতিষ্ঠা
করে যান।
vii. দিল্লি আক্রমণ: ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিশাল সাম্রাজ্যের সার্বিক
বিশৃঙ্খলার সুযাোগ নিয়ে পাঞ্জাব, মুলতান, সিন্ধু প্রভৃতি অঞল স্বাধীন হয়ে যায়। এইভাবে
সুলতানি সাম্রাজ্য নিশ্চিত পতনের সম্মুখ হয়।
2. টীকা লেখাো : পানিপতের প্রথম যুদ্ধ।
উ:- মধ্যযুগের ভারত-ইতিহাসে পানিপতের প্রথম যুদ্ধ একটি গুরুত্বপূর্ণ
ঘটনা। কারণ এই যুদ্ধের মধ্যদিয়েই ভারতে মাোগল সাম্রাজ্যের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
i. প্রথম আক্রমণ: ইব্রাহিম লাোদি ছিলেন অত্যাচারী শাসক। তাঁর অত্যাচারে
দিল্লিবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে।এই অবস্থায় পাঞ্জাবের শাসক দৌলত খাঁ ললাদি ইব্রাহিম লাোদিকে
উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার লক্ষ্যে কাবুলের শাসক বাবরকে ভারত আক্রমণ করতে অনুরাোধ করেন।
কিন্তু বাবর এই সুযাোগ গ্রহণ করে দিল্লিতে চিরস্থায়ী রাজত্ব করার মনস্থির করেন। তাই
১৫২৪ খ্রিস্টাব্দে বাবর ভারত আক্রমণ করেন। কিন্তু তাঁর মতলব দৌলত খাঁর পছন্দ হয়নি।
এজন্য তিনি বাবরের বিরুদ্ধে যান। ফলে বাবর সুবিধা করতে -পেরে কাবুলে ফিরে যান। এরপর
তিনি বেশ কয়েকবার ভারত আক্রমণ করেন।
ii. শেষ আক্রমণ: ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে বাবর ষষ্ঠবার ভারত আক্রমণ করেন।
এবার তিনি দৌলত খাকে পরাজিত করেন।ইব্রাহিম লাোদি বাবরকে বাধা দিলে উভয়ের মধ্যে ১৫২৬
খ্রিস্টাব্দে পানিপতের প্রান্তরে দুপক্ষের তুমুল যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে ইব্রাহিম লাোদি
পরাজিত ও নিহত হন। এই যুদ্ধ পানিপতের প্রথম যুদ্ধ নামে পরিচিত। যুদ্ধের ফলাফল/গুরুত্ব
i. এই যুদ্ধে বাবর সুলতানি বংশের শেষ সুলতান ইব্রাহিম লাোদিকে পরাজিত
ও নিহত করেন। ফলে দিল্লিতে সুলতানি সাম্রাজ্যের পতন হয়। ভারতে মাোগল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত
হয়।
ii. ইব্রাহিম লাোদির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ভারতে ৩২০ বছরের সুলতানি শাসনের
অবসান হয়। ভারতে আফগানরাও দুর্বল হয়ে পড়ে।
iii. ভারতের ইতিহাসে বাবর এই প্রথম কামান ও বন্দুকের ব্যবহার করেন।
3. টীকা লেখাো : খানুয়ার যুদ্ধ।
উ:- ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত
খানুয়ার যুদ্ধ মধ্যযুগীয় ভারতীয় ইতিহাসে একটি উল্লেখযাোগ্য অধ্যায়। কারণ এই যুদ্ধে
জয়লাভ করে বাবর ভারতে মাোগল সাম্রাজ্যের প্রকৃত ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেন। খানুয়ার যুদ্ধ
i. যাদের মধ্যে যুদ্ধ : খানুয়ার যুদ্ধে বাবরের প্রতিপক্ষ ছিল এক বিশাল সামরিক জোট। এই জোটে ছিলেন—মেবারের রানা সংগ্রাম সিংহ, ইব্রাহিম লাোদির ভ্রাতা মাহমুদ লাোদি এবং মাড়াোয়ার, চান্দেরি, অম্বর ও আজমিরের রাজপুত রাজারা। উভয় পক্ষের শক্তির বিচারে বাবরের সৈন্য ছিল অত্যন্ত কম। তবুও এই যুদ্ধে বাবর জয়লাভ করেন।
ii. যুদ্ধের গুরুত্ব : ভারতের ইতিহাসে খানুয়ার যুদ্ধের গুরুত্ব ছিল
সুদূরপ্রসারী কারণ—
iii. স্থায়ী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা : এই যুদ্ধে জয়লাভ করে বাবর ভারতে
তাঁর কর্তৃত্ব স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করেন।
iv. রাজপুত শক্তির দুর্বলতা: মেবারের রানা প্রতাপসিংহ সহ অন্যান্য রাজপুত
শক্তির পতনের ফলে ভারতে রাজপুত শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।
v. আফগান শক্তির পতন: অন্যদিকে আফগান শক্তির শেষ দীপটুকু নির্বাপিত
হয়।
vi. দিল্লিতে আধিপত্য: ভারতে মাোগল সাম্রাজ্যের ভিত্তি আরও দৃঢ় হয়
এবং ভারতের রাজনৈতিক ভারকেন্দ্র কাবুল থেকে দিল্লি ও আগ্রায় স্থানান্তরিত হয়। ও মূল্যায়ন
: অনেকেই গুরুত্বের বিচারে পানিপতের প্রথম যুদ্ধ অপেক্ষা খানুয়ার যুদ্ধকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ
বলে দাবি করেছেন। কারণ এই যুদ্ধে বাবর জয়ী না-হলে ভারতে রাজপুত শক্তির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত
হত। সেক্ষেত্রে রাজপুতদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হত আফগান শক্তি।
4. টীকা লেখাো : পানিপতের দ্বিতীয় যুদ্ধ।
উ:- পানিপতের প্রথম যুদ্ধের
৩০ বছর পর ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দে পানিপতের দ্বিতীয় যুদ্ধ হয়। মধ্যযুগের ইতিহাসে এই যুদ্ধ
ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। পানিপতের দ্বিতীয় যুদ্ধ
i. দুই প্রতিপক্ষ : পানিপতের দ্বিতীয় যুদ্ধ হয়েছিল মাোগলদের সঙ্গে
আফগানদের। মাোগলদের হয়ে যুদ্ধ করেন হুমায়ুনের নাবালক পুত্র আকবরের অভিভাবক তথা সেনাপতি
বৈরাম খাঁ। অন্যদিকে আফগানদের হয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করেন আদিল শাহের হিন্দু সেনাপতি
হিমু। বৈরাম খাঁ
ii. হিমুর পরাজয়: মধ্যযুগীয় ভারতের ইতিহাসে দ্বিতীয়
iii. ফলাফল: পানিপতের দ্বিতীয় যুদ্ধের ফলাফল পানিপতের যুদ্ধের গুরুত্ব
কম নয়। পানিপতের দ্বিতীয় যুদ্ধে হিমু পরাজিত হন।
iv. মাোগল আফগান দ্বন্দ্বের সমাপ্তি: এই যুদ্ধের মধ্যদিয়েই ভারতে মাোগল-আফগান
দ্বন্দ্বের সমাপ্তি হয়। এবং আকবরের নেতৃত্বে ভারতে মাোগল শক্তির ভিত্তি সুদৃঢ় হয়।
v. আকবরের সম্মান বৃদ্ধি: এর ফলে সম্রাট আকবরের সম্মান ও প্রতিপত্তি
বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
vi. মন্তব্য: ঐতিহাসিক কালীকিংকর দত্তের মতে, দ্বিতীয় পানিপথের যুদ্ধে
জয়লাভের মধ্যদিয়ে ভারতে প্রকৃত মাোগল সাম্রাজ্যের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
vii. জমি জরিপ : মাোগল সাম্রাজ্যে শেরশাহ প্রথম জমি জরিপ বা মাপের ব্যবস্থা
করেন। জমির উর্বরতার ভিত্তিতে তিনি রাজস্ব আদায়ের নীতি গ্রহণ করেন। যার পরিমাণ ছিল
এক-তৃতীয়াংশ বা এক-চতুর্থাংশ। শের শাহের রাজস্ব
viii. পাট্টা ব্যবস্থা : রাজস্ব দু-ভাগে দিতে পারত নগদে অথবা শস্য দ্বারা।
রাজস্বব্যবস্থা সহজ করার জন্য তিনি পাট্টা ও কবুলিয়ত প্রথা চালু করেন। পাট্টা থাকত
প্রজার কাছে। আর কী পরিমাণ রাজস্ব ও তা কবে দেওয়া হয়েছে তার বিবরণসহ কবুলিয়ত নামে
দলিল থাকত সরকারের কাছে।
ix. অন্যান্য ব্যবস্থা : তিনি জায়গিরদারদের নগদে বেতন দানের ব্যবস্থা
করেন। এর উদ্দেশ্য ছিল তাদের দুর্নীতি রাোধ করা। এ ছাড়া খরা বা দুর্ভিক্ষের সময় তিনি
প্রজাদের কর মকুব বা ঋণদানের ব্যবস্থা করেন।
5. সংক্ষেপে শেরশাহের শাসনসংস্কার আলাোচনা। করাো।
উ:- শুধু রাজ্যবিজেতা নয় সুশাসক, সংগঠক ও সংস্কারক হসেবে শেরশাহ মধ্যযুগীয়
ভারতের ইতিহাসের পাতায় নিজের আসন পাকা করে নিয়েছেন।
i. কেন্দ্রীয় মন্ত্রী : সম্রাট স্বয়ং ছিলেন শাসনব্যবস্থায় সর্বময়
কর্তা, কিন্তু তিনি স্বেচ্ছাচারী ছিলেন না। তাঁকে সাহায্য করার জন্য কয়েকজন কেন্দ্রীয়
মন্ত্রী ছিলেন, যথা-দেওয়ান-ই-উজিরাৎ (প্রধানমন্ত্রী), দেওয়ান-ইআর্জ (রাজস্বমন্ত্রী),
দেওয়ান-ই-ইনসা (সমর মন্ত্রী), দেওয়ান-ই-রিসালাৎ (সচিব), দেওয়ান-ই-কাজি (প্রধান বিচারপতি)
এবং দেওয়ান-ই-বারিদ (গুপ্তচর বিভাগের প্রধান)।
ii. প্রাদেশিক শাসক : শাসনকার্যের সুবিধার জন্য সমগ্র প্রদেশকে শেরশাহ
৪৭ টি সরকারে, সরকারগুলি কয়েকটি পরগনায় এবং এগুলি আবার কয়েকটি গ্রামে বিভক্ত করেন।প্রত্যেক
সরকার দেখাশাোনা করার জন্য শিকদারই-শিকদারান ও মুনসেফ-ই-মুনসেফান নিয়াোগ করেন।পরগনার
দায়িত্বশীল কর্মচারীগণনিয়াোগকরেনশিকদার, মুনসেফ, আমিন, কানুনগাো, কারকুন, চৌধুরী,
পাটোয়ারি প্রমুখগণদের। গ্রামের শাসনভারের দায়িত্ব ছিল গ্রাম পঞ্চায়েতের ওপর। শেরশাহের
শাসনব্যবস্থার মধ্যে উল্লেখযাোগ্য পদক্ষেপগুলি হল—
iii. রাজস্ব ও শুল্ক সংস্কার : জমি জরিপ করে জমির উর্বরতার ভিত্তিতে
তিনি রাজস্বের হার নির্ধারণ করেন। উৎপন্ন ফসলের ১/৩ বা ১/৪ অংশ অথবা শস্য দ্বারা নেওয়া
হত। তিনি পাট্টা ও কবুলিয়ত প্রথা