ষষ্ঠ শ্রেণী ইতিহাস|পঞ্চম অধ্যায়|৫ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|সাম্রাজ্যবিস্তার ও শাসন

0

ষষ্ঠ শ্রেণী ইতিহাস|পঞ্চম অধ্যায়|৫ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|সাম্রাজ্যবিস্তার ও শাসন


ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর

প্রিয় বন্ধুরা 

ষষ্ঠ শ্রেণী ইতিহাস|পঞ্চম অধ্যায়|৫ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|সাম্রাজ্যবিস্তার ও শাসন আজকে আলোচনা করব|তোমরা West Bengal Class 6 History পেয়ে যাবে|ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর|ষষ্ঠ শ্রেণী ইতিহাস পঞ্চম অধ্যায় ৫ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|West Bengal Class Six|Class 6 History Question and Answer| Class 6 History 5th chapter Suggestion WBBSE|Class 6 History 5th chapter Notes WBBSE|Class 6 History 5 marks Question and Answer|ইতহাস প্রশ্নোত্তর|ইতিহাস মক টেস্ট|itihas proshno o uttor| History Mock Test|


এছাড়াও তোমরা পাবে ষষ্ঠ শ্রেণী পঞ্চম অধ্যায় সাম্রাজ্যবিস্তার ও শাসন থেকে বহুবিকল্প ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর|MCQ, Very Short Question, Short Questions, Descriptive Ques -tion and Answer এগুলি তোমরা যারা পশ্চিমবঙ্গের VI History Examination এর জন্য পরিক্ষা দিতে যাচ্ছ অথবা পশ্চিমবঙ্গ ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশুনা করছো তাদের ইতিহাস পরীক্ষার জন্য এই নম্বরের প্রশ্নগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ন এবং তোমরা যারা ষষ্ঠ শ্রেণী ইতিহাস (পঞ্চম অধ্যায় সাম্রাজ্যবিস্তার ও শাসন) নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর চাইছো, তারা নীচের দেওয়া প্রশ্নউত্তর গুলি ভালো করে পড়ে নিতে পারবে।




ষষ্ঠ শ্রেণী ইতিহাস|পঞ্চম অধ্যায়|৫ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|সাম্রাজ্যবিস্তার ও শাসন



১. চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে ভারতের প্রথম ঐতিহাসিক সম্রাট বলা হয় কেন ? অথবা, তাঁর রাজ্য বিস্তারনীতি সম্পর্কে কী জানো ?

উত্তর:- মৌর্যবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। মিলিন্দ পঞ হো গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, তিনি কৌটিল্যকে সঙ্গে নিয়ে এক বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করেন এবং নন্দবংশের শেষ রাজা ধননন্দকে পরাজিত করে পাটলিপুত্র দখল করেন।

 

রাজ্যবিস্তার :- আলেকজান্ডার ভারতবর্ষ ত্যাগ করে। চলে গেলে, উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের শাসকগণ চন্দ্রগুপ্তের। বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। সিংহাসনে বসেই চন্দ্রগুপ্ত এই বিদ্রোহ দমন করেন। গ্রিক সেনাপতি সেলুকাস ভারতে আধিপত্য বিস্তারে উদ্যোগী হলে তাঁর সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। যুদ্ধে সেলুকাস পরাজিত হন। চন্দ্রগুপ্ত সেলুকাসের কন্যাকে বিবাহ করেন। ফলে কাবুল, কান্দাহার ও হিরাটে মগধের সাম্রাজ্য বিস্তারলাভ করে।

রাজ্যসীমা :- চন্দ্রগুপ্তের আমলে মৌর্য সাম্রাজ্য পূর্বে বঙ্গদেশ থেকে উত্তর-পশ্চিমে সৌরাষ্ট্র ও হিন্দুকুশ পর্বতমালা পর্যন্ত এবং উত্তরের হিমালয় থেকে দক্ষিণে তিনেভেলি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তবে দক্ষিণ ভারত চন্দ্রগুপ্তের আমলে মৌর্য সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। ঐতিহাসিক ড. হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী মনে করেন যে, দক্ষিণ ভারত আগে থেকেই নন্দরাজাদের অধিকারে ছিল।

 

মূল্যায়ন :-

এইভাবে চন্দ্রগুপ্তের বাহুবলে প্রাচীন ভারতে সর্বপ্রথম রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই ঐতিহাসিক ড. হেমচন্দ্র রায়চৌধুরী চন্দ্রগুপ্তকে ভারতের প্রথম ঐতিহাসিক সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা বলে অভিহিত করেছেন।

 

২.চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য কীভাবে মগধকে শক্তিশালী করে গড়ে তােলেন ?

উত্তর:- মৌর্য বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য। তিনি তার বাহুবল ও বুদ্ধি দিয়ে মগধকে একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্যে পরিণত করেন।

 

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের কৃতিত্ব :-

(ক) গ্রিকদের সঙ্গে যুদ্ধ :- চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য সিংহাসনে বসেই গ্রিকদের সঙ্গে যুদ্ধ করেন। তিনি যুদ্ধে সেলুকাসকে পরাজিত করেন। ফলে কাবুল, কান্দাহার, হিরাট প্রভৃতি অঞ্চল মৌর্য সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। এ ছাড়া তিনি সেলুকাসের মেয়েকে বিবাহ করেন।

(খ) অন্যান্য রাজ্য জয় :- তিনি সৌরাষ্ট্র জয় করেন। কোঙ্কনের অংশ বিশেষ তিনি জয় করেন। সম্ভবত তাঁর সাম্রাজ্য দক্ষিণে চিতল দুর্গ ও তিনেভেলি পর্যন্ত বিস্তারলাভ করেছিল। এ ছাড়া বাংলাদেশেও তাঁর বিজয়রথ পৌঁছেছিল।

(গ) রাজ্যসীমা :- এইভাবে তিনি একটার পর একটা রাজ্য জয় করে মগধকে এক বিশাল সাম্রাজ্যে পরিণত করেন। উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে তিনেভেলি এবং পশ্চিমে গুজরাট থেকে পূর্বে বাংলাদেশ পর্যন্ত তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তারলাভ করে।

 

মূল্যায়ন :-

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য শুধু রাজ্য বিজেতাই নন, তিনি সুশাসকও ছিলেন। তিনি একটি কেন্দ্রীভূত মৌর্য শাসনব্যবস্থাও গড়ে তোলেন। ফলে ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

৩. সম্রাট অশোককে ভারতের শ্রেষ্ঠ সম্রাট বলা হয় কেন ?

উত্তর:- ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ সম্রাট ছিলেন অশোক। তিনি তাঁর নানান জনকল্যাণমূলক কাজের জন্যই এই শ্রেষ্ঠত্বের উপাধি লাভ করেন।

 

(ক) রাজ্য জয় :- মগধের সিংহাসনে বসেই সম্রাট অশোক কলিঙ্গ রাজ্য আক্রমণ ও জয় করেন। কিন্তু এই যুদ্ধে বহু মানুষ হতাহত হয়। সম্পত্তি বিনষ্ট হয়। মানুষের রক্তের স্রোত বয়ে যায়। এই বিভীষিকা দেখে অশোক দারুণ ব্যথিত হন। ঠিক করেন আর কখনও যুদ্ধ করবেন না।

(খ) ধর্ম বিজয় :- কলিঙ্গ যুদ্ধের পর তিনি চিরতরে অস্ত্র বর্জন করেন। তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন এবং বুদ্ধের অহিংসা ব্রত পালন করেন। মানুষের উপকারের জন্য তিনি নানা প্রজাকল্যাণমূলক কর্মসূচি নিয়েছিলেন। যেমনরাস্তাঘাট নির্মাণ, রাস্তার দুধারে বৃক্ষরোপণ ও সরাইখানা নির্মাণ করেন। মানুষের চিকিৎসার জন্য দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেন।

(গ) অন্যান্য নীতি :- তিনি পশু হত্যা বন্ধ করেন। নিজে শিকার অভিযান বন্ধ করেন। বৌদ্ধধর্ম প্রচারের জন্য সিংহলে নিজের কন্যা সংঘমিত্রাকে প্রেরণ করেন। বিচার ব্যবস্থায় মৃত্যুদণ্ড তুলে দেন। এ ছাড়া অনেক স্কুপ ও বৌদ্ধমঠ নির্মাণ করেন।

 

৪. সম্রাট কনিষ্কের অবদান/কৃতিত্ব লেখো।

উত্তর:- কুষাণ বংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট ছিলেন কনিষ্ক। তিনি তাঁর সামরিক প্রতিভা ও সুশাসনের জন্যে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পেয়েছেন।

 

কনিষ্কের কৃতিত্ব :-

(ক) রাজ্যবিস্তার :- উত্তরাধিকার সূত্রে কনিষ্ক সিন্ধু, পাঞ্জাব, ব্যাকট্রিয়া, পার্সিয়া প্রভৃতি অঞ্চলের অধিকারী ছিলেন। জানা যায়, তিনি কাশ্মীর জয় করেন। তা ছাড়া তিনি কাশগড়, খোটান, ইয়ারখন্দ প্রভৃতি রাজ্য জয় করেন। অলবিরুনির বিবরণ অনুযায়ী তিনি আফগানিস্তান জয় করেছিলেন।

(খ) ধর্ম :- তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর আমলেই পুরুষপুরে চতুর্থ ‘বৌদ্ধ সংগীতিআহূত হয়। তাঁর আমলে বুদ্ধের মূর্তি পুজো শুরু হয়। এ ছাড়া তিনি অশোকের মতো বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন।

(গ) সংস্কৃতি :- শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা ও অনুপ্রেরণা ছিল। এজন্য তাঁর আমলে অনেক চৈত্য ও বৌদ্ধ মঠ নির্মিত হয়। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতায় গন্ধার শিল্পের উদ্ভব হয়। তার স্থপতি ছিলেন গ্রিক শিল্পী এজেসিলাস। তাঁর রাজসভা অলংকৃত করতেন যেসমস্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তাঁরা হলেন-সাহিত্যিক অশ্বঘোষ যিনি বুদ্ধচরিত রচনা করেন এবং বসুবন্ধু যিনি মহাবিভাষ লেখেন।

 

৫. মেগাস্থিনিসের বিবরণ বা ইন্ডিকা গ্রন্থ থেকে সমকালীন ভারতবর্ষের সমাজজীবন সম্পর্কে কী জানা যায় ?

উত্তর:- (ক) মেগাস্থিনিসের পরিচয় :- সিরিয়ার রাজা সেলুকাসের রাষ্ট্রদূত হিসেবে মেগাস্থিনিস মৌর্য সম্রাট চট্রগুপ্তের রাজদরবারে উপস্থিত হন। মেগাস্থিনিস ছিলেন প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে প্রথম বিদেশি রাষ্ট্রদূত।

(খ) ইণ্ডিকা গ্রন্থের বিবরণ :- ভারতবর্ষ সম্পর্কে তিনি ইন্ডিকা নামক একটি বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেন। এই গ্রন্থটি প্রাচীন ভারতের একটি অমূল্য প্রামাণ্য দলিল। মৌর্য যুগের ইতিহাস জানতে গেলে এই গ্রন্থের ওপর বিশেষ নির্ভর করতে হয়। মৌর্য যুগের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবন সম্পর্কে বহু মূল্যবান তথ্য এই গ্রন্থ থেকে পাওয়া যায়।

 

এই গ্রন্থ থেকে জানা যায় : -

মৌর্যদের রাজধানী পাটলিপুত্রের সমৃদ্ধির কথা। সে সময় পাটলিপুত্র ছিল ভারতের সর্বাপক্ষো উল্লেখযোগ্য নগরী। এযুগে সমাজের নৈতিকমানও ছিল খুব উঁচু। চুরি, ডাকাতি প্রায় ছিল না বললেই চলে। তিনি সমাজের ৭ টি শ্রেণির কথা উল্লেখ করেছেন। সমাজে নারী স্বাধীনতা হ্রাস পেয়েছিল। এ ছাড়া ইন্ডিকা গ্রন্থ থেকে মৌর্য যুগের বহু তথ্য পাওয়া যায়।

 

৬. সমুদ্রগুপ্ত ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের কৃতিত্ব আলোচনা করো।

উত্তর:- সমুদ্রগুপ্তের উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব

 

সমুদ্রগুপ্ত :-

ক) উত্তর ভারত অভিযান:- আর্যাবর্ত বা উত্তর ভারত। অভিযান করে সমুদ্রগুপ্ত নয়জন রাজাকে পরাজিত করেন। এঁরা ছিলেন নাগসেন, মতিল, গণপতিনাগ, বলবর্মন প্রমুখ রাজন্যবর্গ।

(খ) দক্ষিণ ভারত অভিযান:- তিনি দক্ষিণ ভারতে অভিযান চালিয়ে মোট বারোটি রাজ্য জয় করেন। যেমন কোত্তর, কাঞী, আভামুক্তা, বেঙ্গী ইত্যাদি। তবে এই রাজ্যের রাজাদের রাজত্ব ফিরিয়ে দিয়ে রাজ্যগুলিকে করদ রাজ্যে পরিণত করেন।

(গ) সীমান্তবর্তী রাজ্য অভিযান:- তিনি সীমান্তবর্তী আরও পাঁচটি রাজ্য, যেমন- নেপাল, সমতট, দভক, কামরূপ ইত্যাদি জয় করেন। নয়টি উপজাতীয় রাজ্য জয় করেন।

(ঘ) আটবিক রাজ্য অভিযান:- এ ছাড়া তিনি ভারতের আঠারোটি আটবিক রাজ্য জয় করে এক বিশাল গুপ্ত সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন।

 

দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত :-

দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের উপাধি ছিল ‘বিক্রমাদিত্য।

 

(ক) মালব জয় :- তিনি ভারতের পশ্চিমদিকে মালব জয় করেন। সৌরাষ্ট্রের শকদের পরাজিত করে তিনি শকারি উপাধি ধারণ করেন।

(খ) সিন্ধু ও পাঞ্জাব জয় :- তিনি খুব সম্ভবত সিধু ও পাঞ্জাব জয় করেছিলেন।

(গ) বৈবাহিক সম্পর্ক :- গুপ্ত সাম্রাজ্যের ভিত্তি মজবুত করার জন্য তিনি পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। তিনি নাগবংশীয় কুবের নাগকে বিবাহ করেন এবং নিজের মেয়ের সঙ্গে বকাটক রাজার বিবাহ দেন।

 

৭. হর্ষবর্ধনের রাজ্যবিস্তার নীতি সংক্ষেপে লেখো।

উত্তর:- ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেই হর্ষবর্ধন গৌড়রাজ শশাঙ্ককে সমুচিত শাস্তি দিতে যুদ্ধযাত্রা করেন। পুলকেশি ও হর্ষের দ্বন্দ্বের কারণ হল পশ্চিম উপকূলের বাণিজ্যিক বন্দর এর দখল দুজনেই করতে চেষ্টা করেছিলেন তবে শশাঙ্কের বিরুদ্ধে তিনি কতটা সাফল্য পেয়েছিলেন তা সঠিক জানা যায় না।

 

হর্ষবর্ধনের রাজ্যবিস্তার :-

(ক) দ্বিতীয় পুলকেশির সঙ্গে যুদ্ধ :- আইহোল লেখ থেকে জানা যায় যে, তিনি চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশির বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করেন এবং পরাস্ত হন। ফলে দক্ষিণ দিকে তাঁর সাম্রাজ্য নর্মদা নদী পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

(খ) মগধ, উত্তরবঙ্গ, কঙ্গোদ অভিযান :- হর্ষবর্ধন মগধ, উত্তরবঙ্গ, কঙ্গোদ প্রভৃতি নিজের সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।

(গ) দ্বিতীয় ধ্রুবসেনের পরাজয় :- পশ্চিম ভারতে তিনি বলভিরাজ দ্বিতীয় ধ্রুবসেনকে পরাজিত করেন এবং তাঁর কন্যাকে বিবাহ করেন।

 

(ঘ) সিন্ধু ও কাশ্মীর অভিযান :- হর্ষচরিত থেকে জানা যায় যে, তিনি সিধু ও কাশ্মীরেও অভিযান প্রেরণ করেছিলেন।

 

রাজ্য সীমানা: হর্ষবর্ধন সমগ্র উত্তর ভারতকে কনৌজের অধীনে আনতে সমর্থ হন এবং তাই তিনি সকলোত্তরপথনাথ উপাধিতে ভূষিত হন। বাণভট্টের হর্ষচরিত থেকে জানা যায় যে, তিনি পঞ্চ ভারতের অধীশ্বর হয়েছিলেন। সাধারণভাবে এই পঞ্চ ভারত বলতে বোঝায় __পাঞ্জাবের পূর্বাঞ্চল, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, বাংলা ও ওড়িশার কঙ্গোদ অঞ্চল ।

 

মূল্যায়ন :-

প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে হর্যবর্ধনের রাজত্বকাল ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। কারণ তাঁরই প্রচেষ্টায় গুপ্তদের পর উত্তর ভারতে ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

 

৮. কৌটিল্য ও ‘অর্থশাস্ত্র-র ওপর টীকা লেখো।

উত্তর :- কৌটিল্যের আসল নাম ছিল বিষ্ণু গুপ্ত। সম্ভবত তাঁর অপর নাম ছিল চাণক্য। তিনি প্রথম জীবনে তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন। জানা যায় যে, তক্ষশিলার এই চতুর ব্রাত্মণ মগধরাজ ধননন্দ কর্তৃক অপমানিত হলে তিনি চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ধননন্দকে পরাজিত করে নন্দ বংশের উচ্ছেদ করেন এবং মৌর্য রাজ্যের সেনাপতি নিযুক্ত হন।

 

তিনি অর্থশাস্ত্র রচনা করেন। গ্রন্থটি সংস্কৃত ভাষায় লেখা। এর রচনাকাল ধরা হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে। তবে এই গ্রন্থের রচনাকার কে ছিলেন তা নিয়ে ঐতিহাসিক ব্যাসাম, কিথ, প্রমুখগণ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কৌটিল্যের রাষ্ট্রনীতিতে রাজাদর্শ ছিল যে, শক্তিমান মাত্রই যুদ্ধ করবে এবং শত্রু নিপাত করবে। অর্থশাস্ত্র শুধু রাজনীতি বিষয়ক গ্রন্থ নয়; এতে সমকালীন রাষ্ট্রব্যবস্থা, সমাজ, অর্থনীতি প্রভৃতির ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক তথা রাষ্ট্রনীতি বিষয়ক জ্ঞানের জন্য অনেক কৌটিল্যকে ভারতের মেকিয়াভলি রূপে চিহ্নিত করেছেন ।

 

৯. গৌতমীপুত্র সাতকর্ণি সম্পর্কে কী জানো ?

উত্তর:- গৌতমীপুত্র সাতকর্নি ছিলেন সাতবাহন বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা। তিনি ১০৬খ্রিস্টাব্দে সিংহাসন আরোহণ করেন। নাসিক প্রশস্তি থেকে জানা যায় যে, তিনি শক, যবন, পহ্লাব প্রভৃতি বিদেশি শক্তিকে পরাজিত করে এই বংশের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনেন। কৃয়া থেকে কাথিয়াবাড় এবং বেরার থেকে কোঙ্কন পর্যন্ত বিস্তৃত ভূভাগে তিনি রাজত্ব করতেন।

 

তিনি শুধু বীরযোদ্ধাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন সুশাসক। তিনি বর্ণপ্রথা বা ধর্মীয় গোঁড়ামি পছন্দ করতেন । তিনি বহু বৌদ্ধমঠ সংস্কার করেন এবং ভূমিদান করে বৌদ্ধদের অকুণ্ঠ ভালোবাসা অর্জন করেছিলেন। ক্ষত্রিয়দের দর্প চূর্ণ করে তিনি ব্রাত্মণদের শ্রেষ্ঠত্ব স্থাপন করেন। তিনি রাজরাজ উপাধি গ্রহণ করেন এবং নিজেকে ত্রি-সমুদ্রতোয়া-পীচ বাহন বলে ঘোষণা করেন।

 

১০.আলেকজান্ডার কে ছিলেন? ভারতীয় উপমহা -দেশে তাঁর অভিযান সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

উত্তর:- আলেকজান্ডার ছিলেন গ্রিসের ম্যাসিডনের শাসক।

 

ভারতীয় উপমহাদেশে অভিযান:- ভারতীয় উপমহা -দেশের বহু ছোটো-বড়ো শাসকদের সঙ্গে আলেকজা -ন্ডারের যুদ্ধ হয়েছিল। এদের মধ্যে এলডার পোরোস বা রাজা পুরু ছিলেন বিশেষ উল্লেখযোগ্য। পুরুর সঙ্গে আলেকজান্ডারের যুদ্ধ ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।

 

পুরু রাজত্ব করতেন বিলাম ও চেনাব নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে। পুরু এক বিরাট বাহিনী নিয়ে আলেকজান্ডারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত আলেকজা -ন্ডারের বাহিনীর কাছে তিনি পরাজিত হন।

আলেকজান্ডারের ফিরে যাওয়া:- ভারতীয় উপমহা -দেশে প্রায় তিনবছর আলেকজান্ডার ছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৫ অব্দে তিনি তাঁর বাহিনী নিয়ে স্বদেশে ফিরে যান। পশ্চিম এশিয়া হয়ে গ্রিসে ফিরে যাওয়ার সময় ব্যাবিলনে তাঁর মৃত্যু ঘটে।

ফলাফল:- ভারতীয় উপমহাদেশে আলেকজান্ডার পাঞ্জাব পর্যন্ত অগ্রসর হতে পেরেছিলেন। তবে তাঁর অভিযানের ফলে উপমহাদেশের ছোটো ছোটো রাজ্যগুলির ক্ষমতা কমে গিয়েছিল।

 

১১. কলিঙ্গ যুদ্ধের পর অশোকের মনে কী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় ? তিনি দেশ শাসনের ক্ষেত্রে তাঁর ধম্মনীতিকে কীভাবে ব্যবহার করেছিলেন ?

উত্তর:- অশোকের জীবনের একটি মাত্র যুদ্ধ ছিল কলিগ যুদ্ধ। এই যুদ্ধে অসংখ্য মানুষ মারা যায়। সে-কারণেই তিনি মর্মাহত হন। এই ঘটনার পর তিনি বৌদ্ধ সন্ন্যাসী উপগুপ্তের কাছে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নেন। এর প্রভাবে অশোক যুদ্ধ করা ছেড়ে দেন, পশুহত্যা বন্ধ করে দেন। আর তাঁর সব প্রজারা যাতে ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারে তার ব্যবস্থাও করেন।

 

ধম্মনীতির প্রয়োগ :- শাসনকার্যে মৌর্যসম্রাট অশোকের মূল আদর্শ ছিল তাঁর ‘ধম্মনীতি'। এই ‘ধর্মনীতি বা ধম্মনীতি দিয়ে তিনি প্রজাদের একজোট করার চেষ্টা করেছেন। কলিঙ্গ যুদ্ধের পর তিনি আর কোনো যুদ্ধ করেননি। এরপর থেকেই তিনি শান্তির নীতি গ্রহণ করেন। বৌদ্ধ রীতিনীতি তাঁর ওপরে প্রভাব ফেলেছিল। তিনি মানুষ ও পশুপাখিদের ওপর হিংসা ও হত্যা বন্ধ করার ওপর জোর দিয়েছিলেন। সব মানুষের জন্য তিনি তাঁর ধম্মের কথা বলেন। সাম্রাজ্যের সব জায়গায় তিনি ধম্মের বাণী পৌঁছে দেন।

 

১২. ভারতে কুষাণ যুগের বিশেষ অবদানগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর :- ভারতবর্ষের ইতিহাসে কুষাণ রাজাদের অবদান অনস্বীকার্য, যেমন­­-

 

(ক) স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন:- কুষাণগণ ভারতে প্রথম স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন করেন।

(খ) বুদ্ধমূর্তির পুজোর প্রচলন:- সম্রাট কনিষ্কের আমলে সর্বপ্রথম ভগবান বুদ্ধের মূর্তি পুজোর প্রচলন হয়।

(গ) পোশাক ব্যবহার:- কুষাণদের কাছ থেকে ভারতীয়রা টুপি, চামড়ার বুট, লম্বা কোট বা জেব্বা ও শিরস্ত্রাণের ব্যবহার শেখে।

(ঘ) শিল্পসাহিত্য ও সংস্কৃতির উন্নতি:- এই যুগে ভারতে শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির উন্নতি ঘটে; গন্ধার শিল্পের চরম উন্নতি এযুগেই হয়।

(ঙ) বিজ্ঞান চিকিৎসার উন্নতি:- এযুগে বিজ্ঞান ও চিকিৎসাশাস্ত্রের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছিল। শল্যবিদ সুশ্রুত ও আয়ুর্বেদজ্ঞ চরক ছিলেন কুষাণ যুগের প্রখ্যাত চিকিৎসক।

(চ) মিশ্রসংস্কৃতি:- কুষাণ যুগেই ভারতে সর্বপ্রথম একটি ‘মিশ্র সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।

 

১৩. ভারতে সাতবাহন রাজবংশের পরিচয় দাও।

উত্তর:- ভারতীয় রাজনীতি থেকে মৌর্যদের বিদায়ের পর ভারতের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে গ্রিক, শক, পহ্লব ও পরে কুষাণগণ যখন উত্তর-পশ্চিম ভারত ও উত্তর ভারতে প্রাধান্য বিস্তারে ব্যস্ত ছিল তখন দক্ষিণ ভারতে সাতবাহনগণের উত্থান ঘটে। সাতবাহনদের বংশ পরিচয় ও রাজত্বকাল নিয়ে ঐতিহাসিক মহলে নানা মত আছে। পুরাণে এই রাজবংশকে ‘অর্ধ বংশ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। পুরাণে উল্লেখিত তথ্য অনুসারে খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে সাতবাহন বংশের উদ্ভব ঘটে। স্মিথ, গোপালাচারি প্রমুখ পণ্ডিতদের মতে সাতবাহনদের শাসনকাল শুরু হয়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব ২৪৫ অব্দ থেকে ২৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে। তাদের রাজধানী ছিল প্রতিষ্ঠান বা পৈঠান । এই বংশের প্রথম রাজা ছিলেন সিমুক। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২৩০ অব্দে কান্বদের পরাজিত করে তিনি সাতবাহন বংশের প্রতিষ্ঠা করেন।

 

১৪. ভারতীয় উপমহাদেশে সাতবাহনরা কীভাবে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল ?

উত্তর:- মৌর্যদের পর দাক্ষিণাত্যে সাতবাহন শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

 

(ক) সিমুক :- সাতবাহন বংশের প্রথম শাসক ছিলেন সিমুক। প্রতিষ্ঠান ও নানাঘাট এলাকায় তাঁর শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

(খ) প্রথম সাতকর্ণি :- প্রথম সাতকর্ণি বংশের তৃতীয় রাজা। তাঁর আমলে এই বংশের প্রভাবপ্রতিপত্তি বেড়ে যায়। প্রায় সমগ্র দক্ষিণ ভারতে তিনি ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এসময় শক-সাতবাহন যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে শক শাসক নহপান জয়ী হন।

(গ) গৌতমীপুত্র সাতকর্ণি :- গৌতমীপুত্র সাতকণির আমলে সাতবাহনদের ক্ষমতা পুনরায় ফিরে আসে। পশ্চিম উপকূল থেকে পূর্ব উপকূল পর্যন্ত এক বিরাট অঞ্চল তাঁর দখলে ছিল। মালবেও তাঁর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এসময় শক-ক্ষত্ৰপ রুদ্রদামনের সঙ্গে সাতবাহনদের যুদ্ধ শুরু হয়। শক-সাতবাহন লড়াইয়ের পিছনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণ ছিল।।

 

উপসংহার :-

ধীরে ধীরে দাক্ষিণাত্যে সাতবাহন শাসনের অবসান ঘটে। ফলে তার জায়গায় বেশ কয়েকটি ছােটো ছােটো নতুন রাজবংশ গড়ে উঠেছিল।

 

১৫. শাসনব্যবস্থায় কুষাণ ও সাতবাহনদের বৈশিষ্ট্য কী ছিল ?

উত্তর :- কুষাণ ও সাতবাহনদের শাসনব্যবস্থা __

 

কুষাণ শাসন:- কুষাণ সম্রাটরা নিজেদের ‘দেবতার পুত্র বলে মনে করতেন। তাঁরা দেবকুল প্রতিষ্ঠা করেন। দ্বৈতশাসন : কুষাণ সাম্রাজ্যের সবচাইতে বড়ো বৈশিষ্ট্য হল দুজনে মিলে রাজ্যের শাসন পরিচালনা করা। এই শাসনব্যবস্থায় পিতা ও পুত্র একসঙ্গে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন।

 

সাম্রাজ্যের ভাগ:- শাসনব্যবস্থার সুবিধার জন্য সাম্রাজ্যকে কতকগুলি প্রদেশে ভাগ করা হয়েছিল এইসব প্রদেশের শাসককে বলা হত ত্রপ।

 

সাতবাহন শাসন:- সাতবাহন শাসনব্যবস্থায় প্রধান ছিলেন রাজা। তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন। শাসনকার্যের সুবিধার জন্য সাতবাহনরা তাঁদের শাসনাধীন অঞ্চলকে কতকগুলি ছোটো ছোটো প্রদেশে ভাগ করেছিলেন।

 

কর্মচারী:- সাতবাহন প্রদেশ শাসনের দায়িত্বে থাকতেন অমাত্য নামক এক শ্রেণির কর্মচারী। এই রাজ্যে প্রজাদের কাছ থেকে ‘ভাগও ‘বলি নামক দুধরনের কর আদায় করা হত। বণিক, কারিগর প্রভৃতির শ্রেণির কাছ থেকেও কর আদায় করা হত। সাতবাহন শাসকরা নুনের ওপরও কর আদায় করেছিলেন। এসময় রাজতান্ত্রিক শাসনের পাশাপাশি অরাজতান্ত্রিক গোষ্ঠীর শাসনও বলবৎ ছিল।

 

১৬. গুপ্তরাজ সমুদ্রগুপ্তের রাজ্যবিস্তার নীতি সম্পর্কে কী জানো ?

উত্তর :- গুপ্তবংশের শ্রেষ্ঠ সম্রাট ছিলেন সমুদ্রগুপ্ত। প্রথম চন্দ্রগুপ্তের মৃত্যুর পর তিনি ৩৩৫ খ্রিস্টাব্দে মগধের সিংহাসনে বসেন। সিংহাসনে বসেই তিনি রাজ্যবিস্তার নীতি গ্রহণ করেন।

 

সমুদ্রগুপ্তের রাজ্যবিস্তার নীতি :-

 

ক) আর্যাবর্ত জয়:- কৌটিল্যের আদর্শ ‘শক্তিমান মাত্রই যুদ্ধ করবে এবং শত্রু নিপাত করবে যুদ্ধ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি সাম্রাজ্যবিস্তার নীতি গ্রহণ করেন। সিংহাসনে বসে প্রথমেই তিনি আর্যাবর্ত অভিযানে মনোনিবেশ করেন এবং সেখানকার নয়জন রাজা (যথা- অচ্যুত, নাগসেন, মতিল প্রমুখ)-কে পরাজিত করেন।

(খ) দাক্ষিণাত্য জয়:- এরপর তিনি দক্ষিণ ভারত অভিযানে মনোনিবেশ করেন। এখানে তিনি মোট বারোজন রাজাকে পরাস্ত করেন। তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল যেমন- কোশলের মহেন্দ্র, কোত্তরের স্বামীদত্ত, এরপল্পের দমন প্রমুখ এদের বশ্যতা আদায় করে তিনি তাঁদের রাজ্য ছেড়ে দেন। এই রাজ্যগুলিকে করদ রাজ্যে পরিণত করেন।

 

(গ) অন্যান্য রাজ্য জয়:- বিনাযুদ্ধে নেপাল, কর্তৃপুর, সমতট দভক ও কামরূপের নৃপতিগণ তার বশ্যতা স্বীকার করে নেন। এ ছাড়া তিনি নয়টি উপজাতীয় রাজ্য, (যেমন- কাক, আভীর, মদ্রক, মালব) প্রভৃতি জয় করেন।

 

উপসংহার:-এইভাবে সমুদ্রগুপ্ত ভারতের বিশাল এলাকা জুড়ে গুপ্ত সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। এজন্য সমুদ্রগুপ্তকে ভিনসেন্টস্মিথ ‘ভারতেরনেপোলিয়ন’ বলেছেন।

 

১৭. গুপ্ত সাম্রাজ্যের বিস্তার সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখো।

উত্তর:- উত্তর ভারতে কুষাণ শাসন লোপ পায় আনুমা -নিক ২৬২ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ। তার প্রায় পঞ্চাশ বছর পর গুপ্ত সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে।

 (ক) প্রথম চন্দ্রগুপ্তের আমল - ৩১৯-৩২০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ প্রথম চন্দ্রগুপ্ত শাসক হন। তাঁর আমলে মধ্যগঙ্গা উপত্যকাকে কেন্দ্র করে গুপ্ত সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে।

(খ) সমুদ্রগুপ্তের আমল:- সমুদ্রগুপ্ত উত্তর ভারতের ন-জন রাজা এবং দক্ষিণ ভারতের বারোজন রাজাকে যুদ্ধে পরাজিত করেন। পূর্বে রাঢ় থেকে পশ্চিমে গঙ্গা উপত্যকার ওপরের অংশ পর্যন্ত গুপ্ত শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। সুদূর দক্ষিণে তামিলনাড়ুর উত্তর-পূর্ব পর্যন্ত গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।

(গ) দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমল:- সমুদ্রগুপ্তের পুত্র দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত গুজরাত অঞ্চলে শক-ক্ষত্রপদের পরাজিত করেন।

(ঘ) প্রথম কুমারগুপ্তের আমল:- প্রথমকুমার গুপ্তের আমলে গুপ্ত শাসন আগের মতোই ছিল।

(ঙ) স্কন্দ গুপ্তের আমল:- প্রথম কুমারগুপ্তের পুত্র স্কন্দগুপ্ত হুন আক্রমণ রুখে দিয়েছিলেন। তাই তাকে ‘ভারতের রক্ষাকারীবলা হয়।

 

১৮. প্রভাবতী গুপ্তা কে ছিলেন ? দাক্ষিণাত্যে বাকাটক শাসক কেমন ছিল ?

উত্তর:- প্রভাবতী গুপ্তা ছিলেন গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের কন্যা। তাঁর সঙ্গে বাকটিক রাজা দ্বিতীয় রুদ্রসেনের বিবাহ হয়। দ্বিতীয় রুদ্রসেনের মৃত্যুর পর প্রভাবতী গুপ্তাই বাকটিক রাজ্যে শাসন পরিচালনা করেছিলেন।

 (ক) বাকাটক শাসন:- বাকাটক শাসনব্যবস্থায় রাজাই ছিলেন প্রধান। তাঁরা কেবল ‘মহারাজা উপাধি নিতেন, অনেক সময় রানিরাও শাসনকার্য পরিচালনা করতেন যেমন প্রভাবতী গুপ্তা।

(খ) কর্মচারী:- সম্রাটকে শাসনের কাজে নানা কর্মচারী সাহায্য করতেন। যেমন-‘অমাত্য বা ‘সচিব। বাকাটক আমলে প্রদেশগুলিকে বলা হত ‘রাজ্য। রাজ্যের শাসককে বলা হত ‘সেনাপতি।

(গ) জেলা:- বাকাটক আমলে জেলাগুলিকে বলা হত পটু বা ‘আহার।

 

উপসংহার :-বাকাটক শাসনব্যবস্থার সঙ্গে গুপ্ত শাসনব্যবস্থার অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়।


১৯. পুষ্যভূতিরা কোথাকার রাজা ছিলেন ? এই বংশের প্রথম রাজা কে ছিলেন ? হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তর:- পুষ্যভৃতিরা থানেশ্বরের রাজা ছিলেন। এই বংশের প্রথম রাজা ছিলেন প্রভাকরবর্ধন।

হর্ষবর্ধনের কৃতিত্ব :- জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা রাজ্যবর্ধন মারা যাওয়ার পর ৬০৬ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ হর্ষবর্ধন অনিচ্ছা শর্তেও পুষ্যভূতি বংশের শাসনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন।

যুদ্ধ :- তাঁর সঙ্গে অনেক রাজ্যের রাজার যুদ্ধ হয়েছিল। মগধের রাজাকে হারিয়ে তিনি মগধরাজ উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। তিনি গৌড়ের রাজা শশাঙ্কের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু তিনি সরাসরি শশাঙ্ককে হারাতে পারেননি। চালুক্যরাজ দ্বিতীয় পুলকেশির সঙ্গেও তাঁর যুদ্ধ হয়েছিল। দ্বিতীয় পুলকেশির সভাকবি রবিকীর্তি-র ‘আইহোল প্রশস্তি থেকে এই যুদ্ধের কথা জানা যায়। হর্ষবর্ধন বহু যুদ্ধ করেও সফল হননি। তাঁকে অনেকে ‘সকলোত্তরপথনাথ বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু পুরো উত্তর ভারত হর্ষবর্ধনের অধীনে ছিল না। তাঁর অন্যতম উপাধি ছিল ‘ শিলাদিত্য। হর্ষবর্ধনের মৃত্যুর পর পুষ্যভূতি বংশের শাসন লোপ পায়।


 ২০. ফাহিয়েনের বিবরণ সম্পর্কে কী জানো ?

উত্তর:- গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের রাজত্বকালে চৈনিক পরিব্রাজক ফাহিয়েন ভারতে আসেন। আনুমানিক তিনি ৩৯৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতের গন্ধার রাজ্যে উপস্থিত হন এবং দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ভারতের বিভিন্ন স্থান পরিভ্রমণ করে ৪১৪ খ্রিস্টাব্দে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি ভারতে থাকাকালীন মথুরা, কপিলাবস্তু, কনৌজ, বারাণসী, পাটলিপুত্র, বৈশালী, কুশিনগর প্রভৃতি তীর্থস্থানগুলি পরিদর্শন করেন।দেশে ফিরে গিয়ে তিনি ফো-কুয়ো-কি নামক একটি অমূল্য ভ্রমণবৃত্তান্ত রচনা করেন। প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে এই ভ্রমণবৃত্তান্তমূলক গ্রন্থটি একটি অমূল্য সম্পদ। 

গুপ্ত যুগের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবন সম্পর্কে আলোকপাত করতে গেলে এই গ্রন্থের ওপর নির্ভর করতে হয়। তিনি পাটলিপুত্র নগরীর সমৃদ্ধির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি তাঁর গ্রন্থে মৌর্য শাসনব্যবস্থা সম্পর্কে উচ্চপ্রশংসা করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে, সে যুগে জাতিভেদপ্রথা ছিল অত্যন্ত কঠোর। তবে সমাজে চোরডাকাতের উপদ্রব ছিল না। জনগণের সুখস্বাচ্ছ্যন্দের অভাব ছিল না। জিনিসপত্র ছিল সুলভ। তিনি গুপ্ত সম্রাটদের ধর্মীয় উদারতার কথাও উল্লেখ করেছেন। তাঁরা ছিলেন প্রজাদরদি। রাজকর্মচারীগণ ছিলেন সৎ ও দায়িত্বশীল।


File Details

 

File Name/Book Name

ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর

File Format

PDF

File Language

Bengali

File Size

75.7 KB

File Location

GOOGLE DRIVE

Download Link

Click Here to Download PDF File


Join Telegram... Members



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top