সপ্তম শ্রেণি তৃতীয় অধ্যায় ভারতের সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতির কয়েকটি ধারা 5 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর

0

সপ্তম শ্রেণি তৃতীয় অধ্যায়

ভারতের সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতির কয়েকটি

ধারা 5 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর

সপ্তম শ্রেণি তৃতীয় অধ্যায়  ভারতের সমাজ অর্থনীতি ও সংস্কৃতির কয়েকটি  ধারা 5 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর

1. ইউরাোপের সামন্তব্যবস্থার স্তরভেদের চিত্রটি

উ:- সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় সবার ওপরে রাজার অবস্থান ছিল। অতঃপর বিভিন্ন ক্ষমতা ও পদমর্যাদার অধিকারী সামন্তপ্রভুগণ পর্যায়ক্রমে নির্দিষ্ট দায়িত্ব ও আনুগত্যের বন্ধনে আবদ্ধ থাকতেন।

i. রাজা: সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার স্তরবিন্যাসে সর্বোচ্চ ছিলেন রাজা। তিনি ছিলেন সমস্ত ভূমির মালিক বা সর্বোচ্চ ভূস্বামী। তাঁর নির্দেশেই প্রশাসনিক, সামরিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সংস্কারমূলক যাবতীয় কাজ সম্পাদিত হত।

ii. মহাসামন্ত রাজা যে-সমস্ত ব্যক্তিকে সরাসরি জমি দান করতেন তারা হয়ে উঠতেন মহাসামন্ত। এঁরা সাধারণভাবে ডিউক, আর্ল নামে পরিচিত ছিলেন। মহাসামন্তগণ রাজার প্রতি বেশ কতকগুলি শর্তপূরণের মাধ্যমে অনুগত থাকতেন।

iii. মাঝারি সামন্ত মহাসামন্তগণ যে-কয়েকজন অধস্তন ব্যক্তির মধ্যে জমি দান করতেন তাদেরকে মাঝারি সামন্ত বলা হত। এরা সাধারণভাবে ইউরাোপে ব্যারন নামে পরিচিত ছিল। মাঝারি সামন্ত (ব্যারন) মহাসামন্তের (ডিউক, আর্ল) প্রতি অনুগত থাকত। ছাোটো সামন্ত: ব্যারন বা মাঝারি সামন্তের কাছ থেকে

iv. যারা জমি লাভ করত তারা ছাোটো সামন্ত বা ‘নাইট

v. কৃষক: সামন্ততান্ত্রিক কাঠামাোর স্তরবিন্যাসে সবার নীচে কৃষকের অবস্থান ছিল। কৃষকেরা আবার মুক্ত কৃষক এবং ভূমিদাস কৃষক এই দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা কালক্রমে বংশানুক্রমিক হয়ে পড়েছিল, অর্থাৎ ডিউকের পুত্র ডিউক, ব্যারনের পুত্র ব্যারন, কৃষকের পুত্র কৃষক হত। এই ব্যবস্থায় কৃষকভূমিদাসরা সর্বদা শাোষিত ও অত্যাচারিত হত।

2. ভারতবর্ষে সামন্ততন্ত্র গড়ে ওঠার কারণ ও ফলাফল কী ছিল ?

উ:- প্রাচীন ভারতের একটি উল্লেখযাোগ্য দিক ছিল সামন্তপ্রথা। মূলত গুপ্ত যুগে সামন্ততন্ত্রের উদ্ভব হয়। তবে এ নিয়ে বিতর্ক আছে।

i. ভূমিদান প্রথা: গুপ্ত যুগে ব্রাত্মণকে বা মন্দিরকে রাজারা ভূমি দান করতে শুরু করে। এইভাবে এর ফলে ব্রাত্মণরা একসময় প্রচুর ভূসম্পত্তির মালিক হয়ে পড়ে।

ii. রাজকর্মচারীদের এলাকা দান: সরকারি পদগুলিও রাজকর্মচারীরা বংশানুক্রমিকভাবে ভাোগ করতে থাকে। এইভাবে বিষয় ও ভুক্তির কর্মচারীরা নিজ নিজ এলাকা ভাোগদখল করতে শুরু করে। এদের মধ্যে অনেকেই সামন্ত, মহাসামন্ত উপাধি নিয়ে নিজ নিজ এলাকা ভাোগদখল করে। এলাকার শাসন ক্ষমতাও তাদের হাতে চলে যায়।

iii. জমির ফসল দখল: পরবর্তী গুপ্ত রাজাদের দুর্বলতার সুযাোগ নিয়ে এই সমস্ত রাজকর্মচারীগণ নিজ নিজ এলাকায় সমস্ত জমির মালিক হয়ে ওঠে। আর কৃষকরা জমি ইজারা নিয়ে জমি চাষ করত। ভূমিহীন কৃষকরা সামন্তদের জমিতে বেগার শ্রম দিত। কিন্তু জমির ফসল আত্মসাৎ করত সামন্তরা।

iv. ফলাফল

v.  স্বাতন্ত্র্য লাোপ: জমির মালিকানা জমিদারদের হাতে চলে যাওয়ায় কৃষকদের স্বাতন্ত্র লাোপ পায়।

vi. মধ্যস্বত্বভাোগী: জমিদার ও কৃষকের মাঝখানে গড়ে ওঠে মধ্যস্বত্বভাোগী। তাতে কৃষকদের ওপর শাোষণ বেড়ে গিয়েছিল।

vi. দুর্বল রাজশক্তি: এলাকাভিত্তিক জমিদারি গড়ে ওঠায় রাজশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। তাতে রাষ্ট্রীয় ঐক্য ও সংহতি নষ্ট হয়।

viii. কৃষকদের দুর্দশা: উল্লেখ্য যে, সামন্তপ্রথায় সবচেয়ে করুণ অবস্থা হয়েছিল কৃষকের। তারা সামন্ততান্ত্রিক শাোষণ ও অত্যাচারের শিকার হয়। অনাহার ও অকালমৃত্যু ছিল তাদের নিত্যসঙ্গী।

3. রাজপুত সমাজের সামন্ততন্ত্র সম্পর্কে কী জানাো ?

উ:- ভারতীয় মধ্যযুগে রাজপুত জাতির উদ্ভব একটি উল্লেখযাোগ্য অধ্যায়। তবে রাজপুত সমাজে ধীরে ধীরে সামন্ততান্ত্রিক কাঠামাো গড়ে ওঠে। সেই সামন্ততান্ত্রিক কাঠামাোর বিভিন্ন স্তরগুলি হল

i. রাজা: রাজপুত সমাজ ছিল গাোষ্ঠীভিত্তিক। গাোষ্ঠীর প্রধানকে রাজা বলা হত। তিনিই ছিলেন তাঁর রাজ্যের সব জমির মালিক।

ii. বড়াো সামন্ত রাজার নীচে থাকত বড়াো সামন্তপ্রভুরা। এদের উপাধি ছিল মহাসামন্ত, মণ্ডলেশ্বর ইত্যাদি। এরা ছিল বেতনভুক।

iii. ছাোটো সামন্ত:বড়াো সামন্তদের নীচে থাকত  সামন্তরা। এদের বলা হত ঠাকুর, রাজা, সামন্ত প্রভৃতি। ছাোটো সামন্তরা বেতন পেত না।

iv. দায়িত্ব: ছাোটো সামন্তপ্রভুদের দায়িত্ব ছিল অনেক। এরা জমির ফসলের একটি অংশ ভাোগ করত। তার একটি নির্দিষ্ট অংশ ছছাটো সামন্তপ্রভুরা রাজাকে দিতে বাধ্য হত। প্রয়াোজনমতাো এদের রাজদরবারে হাজির হতে হত। যুদ্ধের সময় রাজাকে সৈন্য দিয়ে সাহায্য করতে হত। এককথায় এরা ছিল রাজার অনুগত।

v. কুফল: কিন্তু রাজা দুর্বল হলেই এরা বিদ্রোহ করত। পূর্বশর্ত পালন করত না। যার ফলে রাজতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে। আর এজন্যই রাজপুতদের মধ্যে কোনাো শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় ঐক্য গড়ে ওঠেনি।

4. প্রাচীনকালে বাঙালির খাওয়াদাওয়া সম্পর্কে পরিচয় দাও।

উ:- প্রাচীনকালে বাংলার প্রধান ফসল ছিল ধান। তাই বাঙালির প্রধান খাদ্য ছিল ভাত। প্রাচীন কাব্যে বর্ণনা রয়েছে। যে, গরম ভাতে গাওয়া ঘি, তার সঙ্গে মৌরলা মাছ, নালতে (পাটশাক), সরপড়া দুধ, আর পাকা কলা দিয়ে খাবার বাঙালির রসনায় তৃপ্তি আনত। বাংলায় উৎপন্ন লবণ অন্য মাত্রা যাোগ করেছিল রান্নায়।

i. শাকসবজি: বাঙালির খাদ্যতালিকায় নানা ধরনের শাকসবজি ছিল। সেই সময় তাদের খাবারে জায়গা করে নিয়েছিল বেগুন, লাউ, কুমড়াো, ঝিঙে, কাঁকরাোল, কচু ইত্যাদি সবজি।

ii. মাছ: বাংলা হল নদীনালার দেশ। নানা ধরনের মাছে সমৃদ্ধ ছিল নদনদীগুলি। রুই, পুঁটি, মৌরলা, শাোল, ইলিশ এমনকি সে সময়ে শুকনাো মাছ খাওয়ার অভ্যাসও ছিল।

iii. মাংস জাতীয় খাবার: প্রাচীনকালে বাঙালি সমাজের সকলে না-হলেও অনেকেই হরিণ, ছাগল, নানা রকমের পাখি, কচ্ছপের মাংস, কাঁকড়া, শামুক ইত্যাদি খেত।

iv. আলু ও ডাল: মধ্যযুগে বাঙালিরা পাোর্তুগিজদের কাছ থেকে আলু খাওয়া শিখেছে। তারা ডাল খাওয়ার অভ্যাস পেয়েছে উত্তর ভারতের মানুষের কাছ থেকে।

v. মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার: বাঙালির প্রতিদিনের খাবারে ছিল মিষ্টি জাতীয় খাদ্যবস্তু। দুধ ও তার থেকে দই, পায়েস, ক্ষীর ও আখের গুড় ছিল প্রধান।

vi. পানীয়: বাঙালি সমাজে পানীয় খাওয়ার চলও ছিল। মহুয়া ও আখ থেকে তৈরি পানীয় তাদের সমাজে চালু ছিল।

5. বিক্রমশীল মহাবিহার সম্পর্কে পরিচয় দাও। (

উ:- পালরাজ ধর্মপাল (৭৭০-৮১০ খ্রিস্টাব্দ) মগধে বিহারের ভাগলপুর জেলা) বিক্রমশীল মহাবিহার প্রতিষ্ঠা করেন। ধর্মপালের অপর নাম ‘বিক্রমশীলদেব অনুসারে মহাবিহারটি ‘বিক্রমশীল মহাবিহার নামে পরিচিত।

i. শিক্ষা পরিকাঠামাো: বিক্রমশীল মহাবিহার ছিল নালন্দার মতাো বিদ্যাশিক্ষার একটি উল্লেখযাোগ্য কেন্দ্র। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংখ্যা ছিল প্রায় তিন হাজার। সমস্ত ছাত্রের আবাসিক শিক্ষালাভের ব্যবস্থা ছিল। ছাত্রাবাসের যাবতীয় ব্যয় রাষ্ট্র বহন করত। দেশ বিদেশের বহু পণ্ডিত ও বিদ্যার্থীর পঠনপাঠনের সুব্যবস্থা ছিল এখানে। ব্যাকরণ, তর্কশাস্ত্র, দর্শন ইত্যাদি বিষয় পড়ানাো হত। এখানে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে ভরতি হতে হত। শিক্ষা শেষে তাদের উপাধি দেওয়া হত।

ii. অধ্যাপকবৃন্দ: বিক্রমশীল মহাবিহারের বহু অধ্যাপকের মধ্যে উল্লেখযাোগ্য ছিলেন শান্তিপদ, কল্যাণ রক্ষিত, শ্রীধর, অভয়াকর গুপ্ত প্রমুখ। অতীশ দীপঙ্কর বা দীপঙ্কর-শ্রীজ্ঞান (অতীশ) ছিলেন বিক্রমশীল মহাবিহারের অধ্যক্ষ। মহাবিহারের

iii. ধ্বংসসাধন: সময় থেকে পরবর্তী প্রায় ৪০০ বছর বিক্রমশীল মহাবিহার শিক্ষাচর্চার অন্যতম কেন্দ্র ছিল। লক্ষ্মণ সেনের রাজত্বের শেষদিকে বখতিয়ার খলজি (১২০৪-১২০৫ খ্রিস্টাব্দ) বাংলা আক্রমণ করেন। বখতিয়ার খলজি বিক্রমশীল মহাবিহারকে সামরিক কেন্দ্র মনে করে সেটিকে ধ্বংস করেন।

6. দক্ষিণ ভারতের চোল শাসনব্যবস্থার স্তরগুলি কেমন ছিল ?

উ:- চোল শাসনব্যবস্থায় রাজা ছিলেন সর্বেসর্বা। তিনি চোল শাসনব্যবস্থার শীর্ষে অবস্থান করতেন। সমগ্র চোল রাজ্যকে বলা হত চোলমণ্ডলম।

i. মণ্ডলম: চোলমণ্ডলম বা সমগ্র চোল সাম্রাজ্য কতকগুলি মণ্ডলম বা প্রদেশে বিভক্ত ছিল।

ii. কোট্টাম: মণ্ডলম বা প্রদেশগুলি কতকগুলি কোট্টাম বা জেলায় বিভক্ত ছিল।

iii. নাড়: কোট্টাম বা জেলাগুলি কতকগুলি নাড়ু বা অঞলে বিভক্ত ছিল। কতকগুলি গ্রাম নিয়ে গড়ে উঠেছিল নাড়ু।

iv. উর: গ্রাম ছিল চোল শাসনব্যবস্থায় ক্ষুদ্রতম একক। গ্রামগুলি শাসন করার জন্য গড়ে তাোলা হত উর বা গ্রামপরিষদ।

v. নগরম: ব্যবসায়ীদের স্বার্থ এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও তাদের উন্নতির জন্য একটি পরিষদ গড়ে তাোলা হত। এগুলিকে বলা হত নগরম।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top