সপ্তম
শ্রেণি প্রথম অধ্যায়ের ইতিহাসের ধারণা 5 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর
সপ্তম শ্রেণি প্রথম অধ্যায়ের ইতিহাসের ধারণা 5 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর
1. কাদের, কেন ইতিহাসের গাোয়েন্দা বলা হয়
উ:- ঐতিহাসিকদের ইতিহাসের গাোয়েন্দা বলা হয়। কারণ প্রকৃত গাোয়েন্দারা
যেমন কোনাো ঘটনার সত্য খুঁজে বার করেন, তেমনি ঐতিহাসিকরা পুরাোনাো দিনের ঘটনাবলির ধারাবাহিক
বিবরণ ও তার সত্যতা উদঘাটন করেন এদের প্রধান কাজগুলি হল
i. পুরাোনাো দিনের ইতিহাস রচনা: প্রাচীনকালের মানবসভ্যতার ইতিহাস জানা
খুবই দুষ্কর ছিল। কারণ সে সময়কার কোনাো লিখিত বিবরণ পাওয়া যায় না। যা পাওয়া যায়
তা হল মানুষ বা জন্তুর হাড়গাোড় এবং মানুষের ব্যবহৃত হাতিয়ার ইত্যাদি। এগুলি অনুসন্ধান
ও পরীক্ষানিরীক্ষা করেই ঐতিহাসিকরা পুরাোনাো দিনের ইতিহাস রচনা করেন।
ii. মানবসভ্যতার জীবনযাত্রা সম্পর্কে আলাোকপাত করা: এ ছাড়া প্রত্নতাত্ত্বিক
উপাদান, যেমন—লিপি, মুদ্রা, প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ ও স্থাপত্য-ভাস্কর্যগুলির সূত্র ধরে
ঐতিহাসিকগণ সমকালীন মানবসভ্যতার জীবনযাত্রা সম্পর্কে আলাোকপাত করেন।
iii. সত্য উদঘাটন: আবার কিছু ঘটনার প্রকৃত সূত্র পাওয়া যায় না। ফলে
প্রকৃত সত্য উদঘাটনের ফাঁক থেকে যায়। তখন ঐতিহাসিকরা যুক্তি ও কল্পনা দিয়ে সেই ফাঁক
ভরাট করেন এবং একটি সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, সিন্ধু সভ্যতার
ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে অনেক সূত্রই ঐতিহাসিকদের অজানা ছিল। তবুও ঐতিহাসিকরা বিজ্ঞান,
যুক্তি ও কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সিন্ধু সভ্যতার ওপর আলাোকপাত করতে সক্ষম হয়েছেন।
2. ইতিহাসের উপাদান হিসেবে লিপি বা লেখএর গুরুত্ব কী লেখাো ?
উ:- প্রাচীন যুগের ইতিহাস জানতে গেলে প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান হিসেবে
লিপি বা লেখ-এর গুরুত্ব অপরিসীম। এই লপি বা লেখগুলি থেকে যে-যে তথ্য সম্পর্কে জ্ঞাত
হওয়া যায় তা হল
i. রাজার পরিচয়: প্রাচীন লিপিগুলি থেকে বিভিন্ন রাজার নাম, তাঁদের
বংশ পরিচয়, রাজত্বের সময়কাল প্রভৃতি সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাওয়া যায়। এমনই একটি লিপির
উদাহরণ হল সমুদ্রগুপ্তের এলাহাবাদ প্রশস্তি। ii. রাজ্যবিস্তার: প্রাপ্ত লিপিগুলি থেকে
প্রাচীন রাজাদের রাজ্যবিস্তারের কাহিনি জানা যায়। সম্রাট অশাোকের লিপি, সমুদ্রগুপ্তের
এলাহাবাদ প্রশস্তি, দ্বিতীয় পুলকেশীর আইহাোল লিপি থেকে স্ব-স্ব রাজন্যবর্গের রাজ্যবিস্তার
সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যায়। জেনে রাখাো সম্রাট অশাোকের শিলালিপিগুলির প্রথম পাঠোদ্ধার
করেন সার প্রিন্সেপ ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে। এরপর তিনি খরাোষ্ঠী লিপিরও পাঠোদ্ধার করেন ।
iii. ভাষা ও বর্ণ: প্রাচীনকালে মানুষের ভাষা কী ছিল এবং তারা লেখার
ক্ষেত্রে কী বর্ণ ব্যবহার করত তা জানা যায় লিপি থেকেই। যেমন, সম্রাট অশাোকের লিপির
ভাষা ছিল প্রাকৃত।
iv. জীবনযাত্রা: লিপি থেকেই সেযুগের মানুষের ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক
জীবন সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যায়।
3. ইতিহাসের উপাদান হিসেবে মুদ্রার গুরুত্ব কী ছিল ?
উ:- প্রাচীন যুগের ইতিহাস জানতে গেলে আমাদের প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের
ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান হিসেবে মুদ্রার গুরুত্ব অপরিসীম ।
মুদ্রার গুরুত্বগুলি হল
i. রাজা: মুদ্রা থেকে জানা যায় প্রাচীন রাজাদের নাম ও তাঁদের রাজত্বকাল
সম্বন্ধে। যেমন, কনিষ্কের মুদ্রা প্রমাণ করে যে-তিনি ৭৮ অব্দে সিংহাসনে বসেন। মুদ্রা
প্রাচীন রাজন্যবর্গের শৌর্য-বীর্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। কারণ মুদ্রা থেকেই বিভিন্ন
রাজার বিভিন্ন উপাধি ধারণের কথা জানা যায়। যেমন—সমুদ্রগুপ্তের
মুদ্রায় পাওয়া যায় ‘বিক্রমাঙ্ক’ শব্দটি।
ii. ধর্মীয় জীবন: মুদ্রা থেকে জানা যায় প্রাচীন রাজাদের রাজধর্ম সম্পর্কে।
যেমন রাজাদের মুদ্রায় প্রাপ্ত লন্দু দেবীর প্রতিকৃতি, কুয়াণ রাজাদের দ্রীয় মহেশ্বরের
মূর্তি প্রমাণ করে যে, সেযুগে প্রচলিত ছিল বৈবধর্ম ও
iii. অর্থনীতি: দক্ষিণ ভারতে যে-রাোমান মুদ্রাগুলি পাওয়া গিয়েছে তা
প্রাচীন রাোম- ভারতের বাণিজ্যের সাক্ষ্য বহন করে। মুদ্রা থেকে বিভিন্ন সময়ের অর্থনীতির
পরিচয় পাওয়া যায়। যেমন- স্কন্দগুপ্তের খাদমিশ্রিত স্বর্ণমুদ্রাগুলি তার আমলের ভঙ্গর
গুপ্ত অর্থনীতির কথা জানিয়ে দেয়।
iv. সংস্কৃতি: মুদ্রা সমকালীন ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক জীবনের ওপর বিশেষভাবে আলাোকপাত করে। সমুদ্রগুপ্তের বীণাবাদনরত মুদ্রা থেকে সঙ্গীতানুরাগের পরিচয় পাওয়া যায় । সমুদ্র গুপ্তের বীণাবাদরত মুদ্রা
4. প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান হিসেবে প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের গুরুত্ব নিরূপণ
করাো।
উ:- প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসের প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানগুলির মধ্যে অন্যতম
ছিল প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ। সাধারণভাৱে প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ বলতে বাোঝায় মাটি খুঁড়ে প্রাপ্ত
বিভিন্ন সভ্যতা ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলিকে।
i. বৈদিক সভ্যতা ও সিন্ধু সভ্যতা; ১৯২২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আমাদের
ধারণা ছিল ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা হল বৈদিক সভ্যতা। কিন্তু সিন্ধু সভ্যতা আবিষ্কৃত
হওয়ার পর সে ধারণাও আজ ভূল বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই নগরকেন্দ্রিক সভ্যতার মানুষ আধুনিক
জীবন্যাত্রার মতাোই তাদের জীবন অতিবাহিত
ii. মেহেরগড় সভ্যতা : সম্প্রতি জানা গিয়েছে ভারতবর্ষের প্রাচীনতম
সভ্যতা হল মেহেরগড় সভ্যতা। খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৭০০০ বছর আগে গড়ে ওঠা এই সভ্যতার
সাংস্কৃতিক জীবনযাত্রার মান এতটাই উন্নত ছিল যে-তা আমাদের বিস্মিত করে।
iii. ভারতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতির পীঠস্থান :প্রথম শতকের তক্ষশীলা ও সপ্তম
শতকের নালন্দা বৌদ্ধবিহার দুটি ছিল ভারতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতির পীঠস্থান।
iv. এ ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন স্থানে বহু স্থাপত্যের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া
গিয়েছে। যা প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার এক নবদিগন্তের সূচনা করেছে।
v.উপসংহার: ভারতবর্ষ হল প্রাচীন ধ্বংসাবশেষের আকর। ভারতবর্ষের নানা
স্থানে এরূপ অসংখ্য সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলির মধ্যে অন্যতম নব্যপ্রস্তরযুগীয়
মেহেরগড় সভ্যতা, তাপ্রস্তরযুগীয় সিন্ধু সভ্যতা, খ্রিস্টীয় প্রথম শতকের পারতাম না।
বাংলার উত্তর চব্বিশ পরগনার চন্দ্রকেতুগড় ইত্যাদি। এই সভ্যতাগুলি আবিষ্কার করার জন্য
আমরা ঐতিহাসিকদের কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। এই সভ্যতাগুলি আবিষ্কার না-হলে প্রাচীন সভ্যতা
ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আমরা সম্যক জ্ঞানলাভ করতে