কিংবদন্তি ও পৌরাণিক কাহিনীর মধ্যে
পার্থক্য কি? ইতিহাসের গুরুত্ব গুলি লেখ
কিংবদন্তি ও পৌরাণিক কাহিনীর মধ্যে পার্থক্য কি? ইতিহাসের গুরুত্ব গুলি লেখ |
কিংবদন্তি ও পৌরাণিক কাহিনির মধ্যে
পার্থক্য :পৌরাণিক কাহিনি ও কিংবদন্তিগুলির চরিত্রগুলির মধ্যে বেশ কিছু
বিষয়ে মিল বা সাদৃশ্য থাকলেও কিছু কিছু বিষয়ে বৈসাদৃশ্য বা পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
এই পার্থক্যগুলি হল—
(i) রচনার সময়গত পার্থক্য : প্রাগৈতিহাসিক যুগে রচিত
হয়। কিন্তু বিভিন্ন কিংবদন্তির পথ চলা শুরু হয় পৌরাণিক কাহিনিগুলি সৃষ্টির পরবর্তীকালে।
(ii) কালপঞ্জিগত : বর্তমান সময়ের ভিত্তিতে পৌরাণিক কাহিনিগুলির কোনাে রকম ধারাবাহিক
কালপঞ্জি থাকে না। পৌরাণিক কাহিনিগুলির একটি নিজস্ব কালপঞ্জি থাকে। কিন্তু যথাযথ সত্য
না হলেও বর্তমান সময়ের ভিত্তিতে কিংবদন্তি ঘটনাগুলির একটি আনুমানিক কালপঞ্জি থাকে।
(iii) ভিত্তিগত : ধর্মের ওপর ভিত্তি করে পৌরাণিক কাহিনিগুলি রচিত হয়, যেমন—পৃথিবী
কীভাবে সৃষ্টি হয় বা মানুষের সৃষ্টি কীভাবে হয় ইত্যাদি। ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে পৌরাণিক
কাহিনিগুলি তার ব্যাখ্যা দেয়। কিন্তু কিংবদন্তি কাহিনিগুলি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তির
ওপর রচিত হয়। কোনাে-না-কোনাে দেশের সমাজ ও সভ্যতার ওপর ভিত্তি করে কিংবদন্তি কাহিনিগুলি
তৈরি হয়।
(iv) প্রধান চরিত্রের পার্থক্য
: পৌরাণিক কাহিনিগুলির প্রধান চরিত্র হল ঈশ্বর বা দেবদেবীরা। পৌরাণিক
কাহিনিগুলিতে সর্বাধিক গুরুত্ব আরােপ করা হয় ঐশ্বরিক শক্তি ও কর্মকাণ্ডের ওপর। কিন্তু
কিংবদন্তি কাহিনির প্রধান চরিত্র মানব-মানবী। মানুষের শক্তি ও কর্মকাণ্ডের ওপরই কিংবদন্তির
কাহিনিগুলি সর্বাধিক গুরুত্ব আরােপ করে।
(v) তথ্য বা উপাদানের পার্থক্য
: পৌরাণিক কাহিনিগুলির কোনাে সঠিক তথ্য বা প্রমাণ থাকে না। তথ্য
থাকলেও তার ঐতিহাসিক ভিত্তি খুব দুর্বল হয়। যেমন— গ্রিক পুরাণে আছে অ্যাটলাস পৃথিবীকে
কাঁধে করে ধরে রেখেছেন। কিন্তু কিংবদন্তির কাহিনিগুলির একটি মূল ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে,
যেমন— মহাভারত মহাকাব্যে শ্রীকৃয় চরিত্রটির সম্পর্কে বহু অবিশ্বাস্য কাহিনি প্রচলিত
থাকলেও দ্বারকাতে শ্রীকৃষ্ণ বলে একজন ব্যক্তি বাস্তবে ছিলেন।
(vi) বিষয়বস্তুর পার্থক্য : পৌরাণিক কাহিনিগুলিতে প্রাকৃতিক জগতের বিবরণ দেওয়ার সময়ও উপমা
ব্যবহার করে অতীতের বর্ণনা দেওয়া হয়। কাহিনির প্রয়ােজনে অতীত সংস্কৃতির সঙ্গে ঈশ্বরকে
যুক্ত করা হয়। অপর দিকে কিংবদন্তিতে কোনাে অতীত সংস্কৃতির একটি অসামান্য চরিত্র থাকে।
কিংবদন্তির কাহিনিকে বাস্তবতা দেওয়ার জন্য কিছু কাল্পনিক চরিত্র সৃষ্টি করা হয়।
(vii) সহায়ক উপাদানের পার্থক্য
: পৌরাণিক কাহিনিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সহায়ক উপাদান হিসেবে
উপমার ব্যাপক ব্যবহার করা হয়। অপরদিকে কিংবদন্তির কাহিনি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য
সহায়ক উপাদানরূপে বিভিন্ন কাল্পনিক উপাদান ব্যবহার করা হয়
কিংবদন্তির ঐতিহাসিক গুরুত্ব : কিংবদন্তিগুলিতে অতিরঞ্জন বা অবিশ্বাস্য কাহিনির প্রাধান্য থাকলেও
মৌখিক ইতিহাস-এর উপাদানরূপে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।
(i) ঐতিহাসিক ভিত্তি : কিংবদন্তির কাহিনিগুলি রূপকথার মতাে কাল্পনিক নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে
কিংবদন্তি কাহিনিগুলির একটি বাস্তব ভিত্তি আছে। যেমন— কিংবদন্তির বিক্রমাদিত্যের সঙ্গে
গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের মিল আছে। কারণ কিংবদন্তি বিক্রমাদিত্য ও দ্বিতীয়
চন্দ্রগুপ্ত উভয়েই শকদের পরাজিত করে ‘শকারি’ উপাধি নেন এবং উজ্জয়িনীতে রাজধানী স্থাপন
করেন।
(ii) নতুন ঐতিহাসিক তথ্য আবিষ্কার
: বিভিন্ন কিংবদন্তির কাহিনির ওপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিক ঘটনার সত্যতা
নির্ধারণ করা সম্ভব হয়। যেমন— কিংবদন্তির কাহিনির ওপর ভিত্তি করে 1968 খ্রিস্টাব্দে
ও 1972 খ্রিস্টাব্দে খননকার্য চালিয়ে প্রাচীন বৌদ্ধবিহারের নিদর্শন পাওয়া গেছে।