সময়ের ধারায় ‘নবজীবীয় যুগের শ্রেণিবিভাগ আলােচনা করাে।
ভূমিকা :আজ থেকে প্রায় 500 কোটি বছর আগে পৃথিবীর জন্ম হয়। জন্মের সময় কোনাে প্রাণের চিহ্ন পৃথিবীতে ছিল সৃষ্টির সময় পৃথিবী ছিল একটি জ্বলন্ত গ্যাসীয় পিণ্ড। তাপ বিকিরণের মাধ্যমে পৃথিবী ক্রমশ শীতল হয় এবং ধীরে ধীরে প্রাণের সৃষ্টি হয়। 125 কোটি বছর আগে পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের সৃষ্টি হয়। এককোশী প্রাণী থেকে দীর্ঘ বিবর্তনের মধ্য দিয়ে পৃথিবী বর্তমান রূপটি ধারণ করেছে।
শ্রেণিবিভাগ : প্রাণী বা উদ্ভিদের জন্ম ও ক্রমবিকাশের সময়কাল থেকে বর্তমান কালকে প্রধানত তিনটি যুগে ভাগ করা হয়। যথা
i. পুরাজীবীয় যুগ (Palaeozoic Age)
ii. মধ্যজীবীয় যুগ (Mesozoic Age)
iii. নবজিবীয় যুগ (Cenozoic Age)
i. পুরাজীবীয় যুগ : এই যুগের সূচনা হয় আজ থেকে 50 কোটি বছর আগে এবং সমাপ্তি ঘটে আজ থেকে 20 কোটি বছর আগে।
ii. মধ্যজীবীয় যুগ : মধ্যজীবীয় যুগের সূচনাকাল আজ থেকে 20 কোটি বছর আগে। এই যুগের সমাপ্তি ঘটে আজ থেকে 6 কোটি 50 লক্ষ বছর আগে।
iii. নবজীবীয় যুগ : মধ্যজীবীয় যুগের অবসানের পর আজ থেকে 6 কোটি 50 লক্ষ বছর আগে নবজীবীয় যুগের সূচনা হয়। বর্তমানে এই যুগ চলছে। এই যুগের আগে মানব প্রজাতির অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই মানবজাতির ইতিহাস চর্চা শুরু হয়েছে নবজীবীয় যুগ থেকেই।
নবজীবীয় যুগের শ্রেণিবিভাগ :নবজীবীয় যুগকে দুটি যুগে ভাগ করা হয়। যথা—i. টারসিয়ারি যুগ (Tertiary Age), ii. কোয়াটারনারি যুগ (Quaternary Age)।
i. টারসিয়ারি যুগ : এই যুগের সূচনা হয় আজ থেকে 6 কোটি 50 লক্ষ বছর আগে এবং সমাপ্তি ঘটে আজ থেকে 20 লক্ষ বছর আগে। টারসিয়ারি যুগে ভূপ্রকৃতির বিরাট পরিবর্তন ঘটে। পৃথিবীতে পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা ও অন্যান্য প্রাকৃতিক গঠনগুলি সম্পূর্ণ হয়। এই যুগে আদি মানুষ রামাপিথেকাসের উদ্ভব হয়। প্যালিওসিন, ইওসিন, অলিগােসিন, মায়ােসিন, প্লায়ােসিন প্রভৃতি যুগ টারসিয়ারি যুগের উপবিভাগ।
ii. কোয়াটারনারি যুগ : কোয়াটারনারি যুগের সূচনা হয় আজ থেকে 20 লক্ষ বছর পূর্বে। বর্তমান কাল পর্যন্ত এই যুগ চলছে। কোয়াটারনারি যুগকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা—a. প্লেইস্টোসিন যুগ (Pleistocene Age) ও b. হােলােসিন যুগ (Holocene Age)।
a. প্লেইস্টোসিন যুগ : প্লেইস্টোসিন যুগ শুরু হয় আজ থেকে 20 লক্ষ বছর আগে এবং শেষ হয় আজ থেকে 10-15 হাজার বছর আগে। এই যুগে হিম বা তুষার যুগের সূত্রপাত হয়। এই হিমযুগগুলি চারটি ভাগে বিভক্ত, যথা—গুনজ (Gunz), মিনডেল (Mindel), রিস্ (Riss) ও ঊরম্ (Wurm)। প্লেইস্টোসিন যুগের একেবারে শেষভাগে আধুনিক মানুষের উদ্ভব ঘটে। মানবজাতির বিবর্তনের জীবাশ্ম এই যুগেরই এই যুগেই প্রাচীন প্রস্তর যুগের সূচনা হয়।
b. হােলােসিন যুগ : হােলােসিন যুগের সূচনা হয় আজ থেকে 10 হাজার বছর আগে। এই যুগ বর্তমানেও চলছে গুহাচিত্র, জীবাশ্ম, হাতিয়ার এবং প্রাচীন মানুষের ব্যবহৃত জিনিসপত্র থেকে এই যুগের ইতিহাস জানা যায়। হােলােসিন যুগেই একে একে আগমন ঘটে মধ্যপ্রস্তর ও নব্যপ্রস্তর যুগের। নব্যপ্রস্তর যুগের শেষভাগে প্রাচীন মানুষ তামা ও ব্রোঞ্জ ব্যবহারের কৌশল আয়ত্ত করে। এর ফলে নব্যপ্রস্তর যুগের পরবর্তীকালে তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগের সূচনা হয়
মূল্যায়ন : দীর্ঘ বিবর্তনের মাধ্যমে এক জাতীয় নরবানর থেকে আধুনিক মানুষ অর্থাৎ হােমােস্যাপিয়েন্স মানবের উদ্ভব ঘটেছে। এই বিবর্তন ঘটেছে খুবই ধীর গতিতে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে। তবে ধাতুর আবিষ্কার ও ব্যবহারের ফলে মানুষের জীবনযাত্রার দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। মানুষ বুদ্ধি ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে অন্যান্য বন্য জন্তু ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে মােকাবিলা করে। মানুষের এই পরিবর্তনের ধারাগুলি সুষ্ঠুভাবে বিশ্লেষণ করার জন্য সময়কালকে বিভিন্ন যুগে ও উপযুগে ভাগ করা হয়।