1789 সালের ফ্রান্সের সংবিধানসভার (Constituent Assembly) কার্যবলী ও গুরুত্ব আলোচনা কর।
গঠন : সংবিধান সভা তৃতীয় সম্প্রদায়ের র্নিবাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৯ জুলাই গঠিত হয়।
গঠন : সংবিধান সভা তৃতীয় সম্প্রদায়ের র্নিবাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৯ জুলাই গঠিত হয়।
সংবিধান সভার কৃতিত্ব : সংবিধান সভা ফ্রান্সের জন্য একটি সংবিধান রচনা করেছিল। তবে সংবিধান রচনার পূর্বে সংবিধান সভা দুটি উল্লেখযোগ্য কাজ করে—
1.সামন্তপ্রথার অবসান : ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ আগস্ট সংবিধান সভা এক প্রস্তাবের মাধ্যমে সামন্তপ্রথার বিলুপ্তির কথা ঘোষণা করে। এর ফলে অভিজাতদের সামন্তপ্রথা সংক্রান্ত সুযোগসুবিধাগুলি লোপ পায়।
2.মানবিক ও নাগরিক অধিকারের ঘোষণা : ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট সংবিধান সভা ব্যক্তি-নাগরিকের অধিকার ঘোষণা করে। এতে বলা হয় স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার এবং সব মানুষের অধিকার সমান, আইনের চোখে সবাই সমান ইত্যাদি।
সংবিধানসভার কার্যাবলী: সংবিধানসভার কার্যাবলীকে চারভাগে ভাগ করা যায়– (A) শাসনতান্ত্রিক (B) অর্থনৈতিক (C) বিচারবিভাগীয় (D) গির্জার পুনর্গঠন।
(A)শাসনতান্ত্রিক সংস্কার: রাজা ও চনতা ও মর্যাদা ও মন্তেস্তুর ক্ষমতা-বিভাজন নীতি অনুসারেশাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ পৃথক করা হয়। ফ্রান্সে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজার দৈব । অধিকারের দাবি নাকচ করা হয়। তিনি আইন রচনা, আইনসভার ওপর নিয়ন্ত্রণ, রাজ্যের কর্মচারী ও বিচারকদের নিয়োগ এবং ইচ্ছামতো রাজকোষ ব্যবহারের অধিকার হারান।
আইন সভা : ৭৪৫ জন সদস্য নিয়ে এককক্ষ-বিশিষ্ট আইনসভার হাতে আইন প্রণয়ন, বিদেশ নীতি নির্ধারণ, অর্থ-বরাদ্দকরণ প্রভৃতির দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল। আইনসভা ছিল প্রকৃত সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।রাজা কখনই আইনসভা ভেঙে দিতে বা আইনসভা প্রণীত কোনো আইন বাতিল করতে পারতেন না।
(B) অর্থনৈতিক সংস্কার: ফরাসি বিপ্লবের প্রত্যক্ষ কারণ ছিল সরকারের প্রবল অর্থসংকট। (a) সংবিধান-সভা ফ্রান্সের গির্জার সকল ভূ-সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে (১৭৯০ খ্রিঃ)। (b) জমি ও অস্থাবর সকল সম্পত্তির ওপর কর - ধার্য করা হয়।(c) সকল প্রকার পরোক্ষ কর তুলে দেওয়া হয়।
(C) বিচার বিভাগীয় সংস্কার: সামন্তপ্রভুদের বিচারালয়গুলির বিলোপসাধন করে বিচার বিভাগকে পুনর্গঠন - করা হয়। আইনের চোখে সব নাগরিক সমান’ - এই নীতি প্রবর্তিত হয়। এর ফলে জন্মসূত্রে প্রাপ্ত ‘বিশেষ সুবিধা বিলুপ্ত হয়। বিনা বিচারে কোনো ব্যক্তিকে আটক রাখা আইন-বিরুদ্ধ বলে ঘোষিত হয়।
(D) গির্জার পুনর্গঠন : গির্জার গুনর্গঠনের জন্য দুটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। (a) আর্থিক সংকট মোচনের জন্য গির্জার সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। (b) সিভিল কনস্টিটিউশন অব দি ক্লার্জি’(১৭৯১ খ্রিঃ) বা ‘ধর্মর্যাজকদের। ‘সংবিধান’ নামক দলিল দ্বারা গির্জার ওপর র্থৈকে পোপের সব কর্তৃত্বের অৱসান ঘটে এবং গির্জা রাষ্ট্রের একটি দপ্তরে পরিণত হয়। ধর্মযাজকেরা রাষ্ট্র কর্তৃক নির্বাচিত হতেন এবং তারা রাষ্ট্রের বেতনভুক কর্মচারীতে পরিণত হন। তাদের সংবিধানের প্রতি আনুগত্যের শপথ নিতে বলা হয়। যাঁরা শপথ নিয়েছিলেন, তারা 'সাংবিধানিক যাজক’ বলে পরিচিত হন। যাঁরা শপথ নেননি তারা পরিচিত হন ‘বিক্ষুব্ধ.যাজক’ রপে।
সংবিধানসভার গুরুত্ব: ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাসে সংবিধানসভার গুরুত্ব অপরিসীম। ঐতিহাসিক কার্লটন হেজ বলেন যে, সংবিধানসভার উল্লেখযোগ্য কাজ হল অভূতপূর্ব ধ্বংসসাধন। এত স্বল্প সময়ের মধ্যে আর কোন আইনসভা এত ব্যাপক ধ্বংসসাধন করতে পারেনি। পুরোনো ধরনের সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি ও ধর্মব্যবস্থা - অর্থাৎ স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র, সামন্ত প্রথা, অভিজাতশ্রেণির বিশেষ অধিকার ও ক্যাথলিক গির্জার একাধিপত্যের মূলে কঠারাঘাত হেনে সংবিধান-সভা ফ্রান্সের ইতিহাসে এক নবযুগ ও নবচেতনার সঞ্চার করেছিল। নানা ত্রুটি সত্ত্বেও সংবিধানসভার কৃতিত্বকে কোনোভাবেই খর্ব করা যায় না।
পোস্ট টি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাল লেগে থাকলে অবশ্যই অন্যদের শেয়ার কর
|