মহারানির ঘোষণাপত্র কী? মহারানির শাসনকালকে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অধ্যায়’ কেন বলা হয়? / What is Queen's proclamation and why it's called the chapter of the breaking promises ?

8
মহারানির ঘোষণাপত্র কী? মহারানির শাসনকালকে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অধ্যায়’ কেন বলা হয়?
Or
মহারানির ঘোষণাপত্র কী?  মহারানির ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব কী ছিল?


মহারানির ঘোষণাপত্র


মহাবিদ্রোহের পর ইংল্যাণ্ডের রাজনৈতিক মহল মনে করে যে, ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির মতো একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের হাতে ভারতের মতো একটি বিশাল দেশের শাসনভার থাকা উচিত নয়। এই কারণে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর এলাহাবাদে এক দরবারের আয়োজন করে মহারানী ভিক্টোরিয়া ভারতীয়দের কাছে কোম্পানির ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা এক ঘোষনা পত্রের মাধ্যমে পেশ করেন এই ঘটনা ইতিহাসে মহারানীর ঘোষণাপত্র বা Queen’s Proclamation নামে পরিচিত এই ঘোষণাপত্রে বলা হয় যে,
   ১) ভারতবাসীর ধর্মীয় ও সামাজিক কোন ব্যাপারেই সরকার  কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না।
     ২) প্রত্যেক ভারতবাসী ধৰ্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবে।
    ৩) জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যোগ্যতাসম্পন্ন সকল ভারতবাসীই সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত হতে পারবে। ৪) স্বত্ববিলোপ নীতি বিলোপ করা হয়।
                ৫) দেশীয় রাজন্যবর্গকে দত্তক গ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয় ।
                   ৬) সরকার ভারতে আর সাম্রাজ্য বিস্তারে আগ্রহী নয়।
                      ৭) দেশীয় রাজ্যগুলিকে আশ্বস্ত করা হয় যে, কোম্পানির সঙ্গে স্বাক্ষরিত তাদের সব চুক্তি ও সন্ধিগুলিকে মেনে চলা হবে।
                    (এর দ্বারা মূলত দেশীয় রাজ্ন্যবর্গ তথা  ভারতীয় সমাজকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছিল আবার অন্যদিকে এর মাধ্যমে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ভিত তৈরি করা হয়েছিল ।কিন্তু মহারানীর ঘোষনাপত্রের প্রতিশ্রুতিগুলি শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি।)
মহারানির ঘোষণাপত্র
সমালোচনাঃ  বলা বাহুল্য, মহারানির এইসব প্রতিশ্রুতি ঘোষণাপত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল ।
                 ১) মহারানির ঘোষণাপত্রে ভারতীয় ও ইউরোপীয়দের প্রতি সমান আচরণ ও সমানাধিকারের কথা বলা হয় এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। ইংরেজরা নিজেদের ‘রাজার জাতি বলে মনে করত এবং ভারতীয়দের প্রতি তাদের আচরণ ছিল বিজেতা-সুলভ।
                ২)জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল প্রজার জন্য সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সমানাধিকার নীতি ঘোষণা করেও উচ্চপদস্থ চাকরিগুলির ক্ষেত্রে ভারতীয়দের প্রবেশাধিকার রুদ্ধ করে দেওয়া হয়।
               ৩) ভারতীয়রা যাতে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে এই উদ্দেশ্যে মহাবিদ্রোহের পরবর্তীকালে সরকার বিভেদ নীতি অবলম্বন করে। বিভিন্ন ধর্ম, সম্প্রদায়, জাতিগোষ্ঠী ও অঞ্চলের মানুষকে পরস্পরের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক করে তোলা হয়।               সুতরাং ভারতবাসীর সামাজিক ও ধর্মীয় জীবনে ইংরেজদের হস্তক্ষেপ মহাবিদ্রোহের অন্যতম কারণ হিসেবে  বিবেচিত হলেও রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্য তারা জাতিভেদ ও সাম্প্রদায়িকতার বীজ ববন করতে থাকে।
     তাই এই আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি যে, মহারানির ঘোষণাপত্রে উল্লিখিত প্রতিশ্রুতিগুলি বেশির ভাগই ঘোষনাপত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই কারণে মহারানির শাসনকালকে অনেকে যেমন ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অধ্যায়’ (period of broken pledges) বলে চিহ্নিত করেছেন।




***যদি আপনাদের পোস্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করে অন্যদের পড়ার সু্যোগ করেদিন।****ধন্যবাদ*****

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

8 মন্তব্যসমূহ
  1. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  2. আমার এই প্রশ্নটাই দরকার ছিল।
    Thank you ,Sir.

    উত্তরমুছুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
To Top