1) তিতুমিরের আন্দোলনের চরিত্র আলচনা কর ।
তিতুমির |
তিতুমিরের আন্দোলনের চরিত্র নিয়েও ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে। সমকালীন লেখক বিহারীলাল সরকার, কুমুদনাথ মল্লিক তিতুমিরের আন্দোলনকে ‘ধর্মোন্মাদ মুসলমানদের কাণ্ড’ এবং হিন্দু-বিরোধী আন্দোলন বলে চিহ্নিত করেছেন। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার একে নিছক সাম্প্রদায়িক আন্দোলন বলেছেন। অপরপক্ষে হান্টার, থর্নটন প্রমুখ ঐতিহাসিক এতে কোনো সাম্প্রদায়িকতা দেখতে পাননি। ডব্লু সি. স্মিথ, ড.কুয়েমুদ্দিন আহমদ, নরহরি কবিরাজ প্রমুখ এর মধ্যে জমিদার, নীলকর ও ইংরেজ বিরোধিতা লক্ষ্য করেছেন। ড. বিনয়ভূষণ চৌধুরী বলেন যে, তিতুমিরের সংগ্রাম ছিল জমিদারের অনাচারের বিরুদ্ধে। সে যুগে জমিদারদের অধিকাংশই হিন্দু হওয়ায় এই আন্দোলনকে হিন্দু-বিরোধী বলে মনে হতে পারে, কিন্তু মুসলিম জমিদারদের তিনি ছেড়ে দেননি। নিম্নবর্ণের বহু হিন্দু তাকে সমর্থন করত।
2) হাজি শরিয়ৎ উল্লাহ কে ছিলেন? তার মতাদর্শ কি?
অথবা ফরাজি আন্দোলনের উপর একটি প্রবন্ধ রচনা কর।
হাজি শরিয়ৎ উল্লাহ |
আদর্শঃ আরবি ভাষায় ‘ফরাজি’ কথার অর্থ হল ইসলাম-নির্দিষ্ট বাধ্যতামূলক কর্তব্য। শরিয়উল্লাহ ঘোষণা করেন যে, ইসলাম ধর্মের অভ্যন্তরে ইসলাম-বিরোধী নানা কুসংস্কার ও দুর্নীতির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। কোরানের নিদের্শ যথার্থভাবে পালন করে তিনি ইসলাম ধর্মের সংস্কার সাধনের কথা বলেন । ধর্মীয় আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও অচিরেই এই আন্দোলন রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করে। ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষকে তিনি ‘দার-উল-হারব’ বা শত্রুর দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন যে, এই দেশ ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের বাসের যোগ্য নয়। তিনি জমিদার ও নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন এবং অচিরেই বরিশাল, ময়মনসিংহ, ঢাকা ও ফরিদপুরের লক্ষ লক্ষ দরিদ্র মুসলিম চাষি, কারিগর ও বেকার তাতি তার শিষ্যত্ব গ্রহণ করে। এইভাবে বাংলার কৃষকদের মধ্যে এক জাগরণের সৃষ্টি হয়। এবং তারা জমিদারের অন্যায় অত্যাচার ও জুলুমের প্রতিবাদ জানাতে সাহসি হয়।
দুদু মিঞার ভূমিকা : ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে শরিয়ত উল্লাহের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র দুদু মিঞা (মহম্মদ মহসীন) ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ফরাজি আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তিনি বাহাদুরপুরে প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে, লাঠিয়াল ও গুপ্তচর বাহিনী গঠন করেন এবং জমিদার নীলকরদের বিরুদ্ধে আক্রমণ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে ফরাজি আন্দোলনকে ধর্মীয় আন্দোলন থেকে আর্থ সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে উন্নীত করেন। আতঙ্কিত জমিদার, মহাজন, নীলকরদের চাপে ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে, ১৮৪১ খ্রিস্টাব্দে এবং ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে দুদু মিঞাকে গ্রেপ্তার করা হলেও প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে দুদু মিঞার মৃত্যুর পর তার পুত্র নোয়া মিঞা এই আন্দোলনে ধর্মীয় আদর্শকে গুরুত্ব প্রদান করলে এই আন্দোলনের গুরুত্ব কমে যায়।
প্রকৃতি : ঢাকা, বরিশাল, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, | ত্রিপুরা প্রভৃতি জেলায় এই আন্দোলন বিস্তার লাভ করে।। ফরাজি আন্দোলন ইসলাম ধর্মের সংস্কার সাধনের উদ্দেশ্যে। শুরু হলেও ক্রমশ তা জমিদার-বিরোধী আন্দোলনে পরিণত। হয়। অধিকাংশ জমিদাররাই হিন্দু হলেও ফরাজি আন্দোলন। সম্পূর্ণভাবে হিন্দু-বিরোধী সাম্প্রদায়িক আন্দোলন ছিল না, কারণ এই আন্দোলনে মুসলমান কৃষকদের পাশাপাশি বহু হিন্দু কৃষকও শামিল হয়েছিল।
ব্যর্থতার কারণ : দুদু মিঞার মৃত্যুর পর যোগ্য নেতৃত্বের অভাব, ধর্মীয় সংকীর্ণতা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবে আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া সাধারণ লোককে জোর করে দলভুক্ত করা, অর্থ আদায়, সরকারি দমননীতি প্রভৃতি কারণে ফরাজি আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যায়।
গুরুত্বঃ ফরাজি আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলেও ব্রিটিশ বিরোধী কৃষক আন্দোলন হিসেবে এই আন্দোলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ড. অভিজিৎ দত্ত বলেছেন, ফরাজিরা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উচ্ছেদ করতে না পারলেও বাংলা থেকে ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ কামনা করেছিল।
3) সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহের চরিত্র কী ছিল?
সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ |
কোম্পানির শাসনের প্রথম দিকে কৃষিজীবী হিন্দু সন্ন্যাসী ও মুসলমান ফকিরদের নেতৃত্বে বাংলা-বিহারের কিছু অঞ্চল জুড়ে যে বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল, তা সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ নামে পরিচিত। দীর্ঘ চল্লিশ বছর (১৭৬৩-১৮০০ খ্রি.) ব্যাপী এই আন্দোলন ছিল কোম্পানির শাসনের বিরুদ্ধে প্রথম সংঘবদ্ধ বিদ্রোহ।
সন্ন্যাসী-ফকির বিদ্রোহ ছিল কোম্পানির শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের প্রথম বিদ্রোহ। বিদ্রোহীরা হিন্দু ও মুসলমানদের এক ছাতার তলায় এনে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছিল। ওয়ারেন হেস্টিংস এই বিদ্রোহকে যতই ‘পেশাদার ডাকাতের উপদ্রব’ বলে অভিহিত করুক না কেন, এডওয়ার্ড উইলিয়াম হান্টারের মতে, এটি ছিল প্রকৃত কৃষক বিদ্রোহ।
****যদি আপনাদের পোস্টটি ভালো লেগে থাকে
তাহলে অবশ্যই শেয়ার করে অন্যদের পড়ার সু্যোগ করেদিন।****ধন্যবাদ*****
|