ফ্রান্সিস বেকন এর জীবনী

dream
0

ফ্রান্সিস বেকন এর জীবনী

ফ্রান্সিস বেকন

ফ্রান্সিস বেকন [1561-1626 খ্রিঃ]

ভূমিকাঃ- ষােড়শ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব সমূহ এক রকম দার্শনিক চিন্তাধারার মধ্যে আবদ্ধ ছিল। অথচ তারই পাশাপাশি চলছিল কারিগরদের দ্বারা নতুন নতুন যন্ত্রপাতির উদ্ভাবন। কারিগররা অবশ্য বিশেষ কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ধারে পাশে যেতেন না। কেবল প্রয়ােজনই তাদের উদ্বুদ্ধ করাতাে নব নব আবিস্কার। বিজ্ঞান ও কারিগরী বিদ্যার মধ্যে দুরতুও ছিল অনেকখানি। পন্ডিতেরা চিন্তা করে দেখলেন, এই দুটির মধ্যে বিভেদ আদৌ নেই। বরং একটি অপরটির পরিপূরক। তখন তারা বিজ্ঞান ও কারিগরীবিদ্যার মধ্যে সমন্বয় সাধনে যত্নবান হন। অপরদিকে তাঁদের দেখাদেখি কারিগররাও যন্ত্রপাতি নির্মাণের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বকে প্রয়ােগ করতে প্রয়াসী হন। ফলে দার্শনিক তত্ত্ব থেকে মুক্তি লাভ করে বিজ্ঞান তার আপন পথটি খুজে পায়। এক কথায় তখনই বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে আসে একটি বিপ্লব। এই বিপ্লবকে যারা বহন করে এনেছিলেন তাঁদের মধ্যে ফ্রান্সিস বেকন নিঃসন্দেহে একজন।

জন্ম ও পরিচয়ঃ- বেকন 1561 খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথম জীবনে দর্শন ও আইনশাস্ত্র অধ্যয়ন করার পর তিনি অধ্যাপক হিসাবে জীবন যাপন শুরু করেন। অতি অল্পদিনের মধ্যে তাঁর পান্ডিত্যের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ায় ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমস-এর বিচার বিভাগে যােগদানের জন্য আমন্ত্রণ পেলেন বেক অধ্যাপনা বৃত্তি পরিত্যাগ করে বিচার বিভাগে যােগদান করেন এবং অনন্যা সাধারণ প্রতিভার জন্য অতি অল্পকালের মধ্যে তিনি উক্ত বিভাগের প্রধানরূপে মনােনীত হন। বেকন্ ছিলেন মূলত ও দার্শনিক। তবে বিজ্ঞানের প্রতি ছিল তাঁর আন্তরিক টান। এই উদ্দেশ্যে তিনি সংগ্রহ করেন প্রাচীন গ্রীক পন্ডিতদের আমল থেকে বর্তমান পর্যন্ত সময় প্রচলিত বৈজ্ঞানিক তথ্যাবলী। তার ফলেই বিজ্ঞানের নতুন সম্ভাবনার কথা তাঁর মনে উদিত হয়।

বিজ্ঞানী মোনোভাবঃ- বেক অতঃপর কারিগরী বিদ্যা এবং প্রচলিত যন্ত্রপাতির দিকে আকর্ষণ বােধ করেন। কিছুকাল এ বিষয়ে চিন্তা করার পর তাঁর জন্মে, ঐ বিজ্ঞান এবং কারিগরীবিদ্যাই মানবসভ্যতার অগ্রগতির ইতিহাসে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করবে। উৎসাহিত বেক এবর আরম্ভ করেন প্রচন্ড পরিশ্রম। তাঁর চিন্তা ভাবনাগুলি 1605 খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশ করেন “দি অ্যাডভনমেন্ট অফ লার্নিং” নামক একখানি পুস্তকের আরে। প্রকৃতপক্ষে বিজ্ঞান ও কারিগরী বিদ্যাকে জন প্রিয় করার এই তাঁর প্রথম প্রয়াস এবং সত্য কথা বলতে কি, এই ধরণের প্রয়াস তার পূর্বে কেউ করেন নি।

পুস্তক প্রকাশঃ- 1620 খ্রিষ্টাব্দে বেক প্রকাশ করেন, “গ্রেড ইনস্টরেশন অফ লার্নি” নামক দ্বিতীয় একখানি মহামূল্যবান পুস্তক। বিজ্ঞানের ইতিহাসে এই পুস্তকখানির গুরুত্ব অনেকখানি। পুস্তকটির প্রথম খন্ডে বেক প্রচলিত বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলি সংগ্রহ করে লিপিবদ্ধ করেন এবং নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেন। এই খন্ডে তিনি উল্লেখ করেন যে, বিজ্ঞানকে অগ্রগতি দান করতে হলে নতুন নতুন তত্ত্ব ও পদ্ধতির উদ্ভাবন করতে হবে এবং প্রাচীন বৈজ্ঞানিক মতবাদগুলি সংগ্রহ করতে হবে। পন্ডিত ব্যক্তিরা যাতে এই কাজে এগিয়ে আসেন তার জন্য তিনি অনুরােধ রাখেন। পুস্তকখানির দ্বিতীয় খন্ডে তিনি যন্ত্রবিদ্যার উল্লেখ করেন এবং কোন কোন যন্ত্রে কোন কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রযুক্ত হয়েছে তাও ব্যাখ্যা করতে সচেষ্ট হন। চতুর্থ খন্ডে কারিগরী জ্ঞান এবং বিজ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্ক আলােচনা করেন। পুস্তুকখানির আরও কয়েকটি খন্ড তিনি প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন কিন্তু সময়াভাবে কৃতকার্য হতে পারেন নি।

শেষ জীবনঃ- ফ্রান্সিস বেকনের চিন্তাধারা তৎকালীন পন্ডিত সমাজে যথেষ্ট আলােড়নের সৃষ্টি করে এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার পথ উন্মুক্ত হয়। প্রকৃত পক্ষে বিজ্ঞানরাজ্যে তিনিই প্রথম বিপ্লবের সূচনা করেন। পরে গ্যালিলিও, দেকার্ত প্রভৃতি মহামনীষীদের আপ্রাণ চেষ্টা ও যত্নে বিজ্ঞান তার নিজের পথের সন্ধান লাভ করে। তাই ফ্রান্সিস বেকনের নাম বিজ্ঞান চিরকাল শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারণ করবে। 1626 খ্রিষ্টাব্দে এই মহান চিন্তানায়কের জীবনাবসান হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top