স্বরসন্ধি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা (বাংলা ব্যাকরণ)
স্বরসন্ধি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা (বাংলা ব্যাকরণ)
সংস্কৃত স্বরসন্ধি
১.
অ-কার কিংবা আ-কারের
পর অ-কার কিংবা আ-কার থাকলে, উভয়ে মিলে আ-কার হয়; আ-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়।
অ + অ আ। যথা শশ + অঙ্ক
শশাঙ্ক, ধর্ম + অধর্ম = ধর্মাধর্ম, সূর্য + অস্ত = সূর্যাস্ত, রােষ + অম্বিত রােষাম্বিত,
তত্ত্ব + অবধান = তত্ত্বাবধান, স্থূল + অক্ষর = লাক্ষর, স্ব + অক্ষর = স্বাক্ষর, অপর
+ অহ্ন = অপরাহু। অনুরূপ -মুরারি, মধ্যাহ্ন, পূর্বাহ্, পূর্বাচল, অদ্যাপি, পদার্থ,
পরমাণু, পরাধীন, মতান্তর ইত্যাদি।
অ + আ = আ। যথা দেব
+ আলয় = দেবালয়, স্ব + আয়ত্ত কুশ + আসন = কুশাসন, হিম + আলয় = হিমালয়। অনুরূপ
। রত্নাকর, জলাশয়, গ্রন্থাগার, পরমারাধ্য, স্নেহাশিস, ' সিংহাসন ইত্যাদি।
আ + অ = আ। মহা + অর্ণব
= মহার্ণব, ভিক্ষা + অন্ন ভিক্ষান্ন, তথা + অপি = তথাপি, আজ্ঞা + অধীন = আজ্ঞাধীন।
অনুরূপ যথার্থ, আশাতীত ইত্যাদি। সন্ধ্যাবধি, চূড়ান্ত,
আ + আ =আ। মহা + আশয়
মহাশয়, বিদ্যা + আলয় বিদ্যালয়, পরীক্ষা + আগার = পরীক্ষাগার, মহা + আনন্দ মহানন্দ।
অনুরূপ কারাগার, দয়া, নৌকারােহী, ক্ষুধাতুর ইত্যাদি।
২.
ই-কার কিংবা ঈ-কারের
পর ই-কার কিংবা ঈ-কার থাকলে, উভয়ে মিলে ঈ-কার হয়। ঈ-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়।
অতি ই + ই = ঈ। যথা
অভি + ইষ্ট অভীষ্ট, রবি + ইন্দ্র রবীন্দ্র, + ইত অতীত, প্রতি + ইতি = প্রতীতি। অনুরূপ
মুনী, অধীন, অতীন্দ্রিয় ইত্যাদি।
ই + ঈ= ঈ। যথা প্রতি
+ ঈক্ষা প্রতীক্ষা, গিরি + ঈশ অভি + ঈপ্সা = অভীপ্সা। অনুরূপ। পরীক্ষা, অধীশ্বর, ক্ষিতীশ
ইত্যাদি। ঈ + ই ঈ। যথা মহী + ইন্দ্র মহীন্দ্র, যােগী + ইন্দ্র = যােগীন্দ্র, বলী +
ইন্দ্র = বলী। অনুরূপ শচীন্দ্র, সুধীন্দ্র ইত্যাদি।
শ্রীশ, মহী ঈ + ঈ ঈ।
যথা সতী + ঈশ = সতীশ, শ্রী + ঈশ + ঈশ্বর = মহীশ্বর। অনুরূপ ফণীশ্বর, পৃথ্বীশ ইত্যাদি।
৩.
উ-কার কিংবা উ-কারের
পর উ-কার কিংবা উ-কার থাকলে, উভয়ে মিলে উ-কার হয়; উ-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়।
কটু + উক্তি সু + উক্ত
2 উ + উ উ। যথা কটুক্তি, মরু + উদ্যান মরূদ্যান, সূক্ত (স্তোত্র বা সৎ বচন)। অনুরূপ
বিধৃদয়, সাধুত্তম, সাধূচিত, গুরূপদেশ, মৃত্যুত্তীর্ণ ইত্যাদি।
উ + উ = উ। যথা লঘু
+ ঊর্মি = লঘূর্মি, তনু + ঊর্ধ্ব = তনূর্ধ্ব। উ। যথা বধূ + উচিত = বধূচিত, বধূ + উক্তি
= বধূক্তি, বধূ + উৎসব = বধূৎসব।
উ + উ = উ। যথা ভূ
+ ঊর্ধ্ব = ভূর্ধ্ব, সরযূ + উর্মি সরঘূর্মি।
৪.
অ-কার বা আ-কারের
পর ই-কার বা ঈ-কার থাকলে, উভয়ে মিলে এ-কার হয়। এ-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়।
এ। যথা দেব + ইন্দ্র।
দেবেন্দ্র, স্ব + ইচ্ছা, পূর্ণ + ইন্দু = পূর্ণেন্দু। অনুরূপ ঈশ্বরেচ্ছা, নরেন্দ্র,
জীতেন্দ্রিয়, ইতরেতর, শুভেচ্ছা, প্রেমেন্দ্র ইত্যাদি।
অ + ঈ = এ। যথা দেবেশ,
অপ + ঈক্ষা অপেক্ষা। অনুরূপ অবেক্ষণ, দীনেশ, রামেশ্বর, পরমেশ্বর ইত্যাদি। দেব + ঈশ।
আ + ই =এ। যথা যথা
+ ইষ্ট = যথেষ্ট, যথা + ইচ্ছা = যথেচ্ছা, অনুরূপ। মহেন্দ্র, রসনেন্দ্রিয় (জিহ্বা)
ইত্যাদি।
আ+ ঈ = এ। যথা উমা + ঈশ উমেশ, রমা + ঈশ রমেশ। অনুরূপ মহেশ,
লঙ্কেশ্বর, ঢাকেশ্বরী, গঙ্গেশ ইত্যাদি।
৫.
অ-কার বা আ-কারের
পর উ-কার বা উ-কার থাকলে, উভয়ে মিলে ও-কার হয়; ও-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়।
অ + উ= ও। যথা। নীল
+ উৎপল নীলােৎপল, তীর্থ + উদক তীর্থোদক, সূর্য + উদয় = সূর্যোদয়, উত্তর + উত্তর উত্তরােত্তর,
মূল + উচ্ছেদ মূলােচ্ছেদ। অনুরূপ জলােচ্ছ্বাস, পরােপকার, নরােত্তম, হিতােপদেশ, পদোন্নতি
ইত্যাদি।
অ + উ= ও। যথা নব +
ঊঢ়া নবােঢ়া (নববিবাহিতা), চল + উর্মি = চলাের্মি, পর্বত + উ = পর্বতােপ্ট ইত্যাদি।
মহা + উৎসব
আ + উ= ও। যথা মহােৎসব,
যথা + উচিত। যথােচিত, কথা + উপকথন = কথােপকথন। অনুরূপ গঙ্গোদক, মহােচ্চ, দুগগাৎসব,
মহােপকার, যথােপযুক্ত ইত্যাদি।
আ + উ= ও। যথা গঙ্গা
+ উর্মি = গঙ্গোর্মি, মহা + উর্মি = মহর্মি।
৬.
অ-কার বা আ-কারের
পর ঋ-কার থাকলে, উভয়ে মিলে অরূ হয়; অরের অ-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয় এবং ‘’ রেফ
হয়ে পর বর্ণে যুক্ত হয়। অ + ঋ অরু। যথা দেব + ঋষি = দেবর্ষি, উত্তম + ঋণ উত্তমর্ণ।
অনুরূপ অধমর্ণ, সপ্তর্ষি, ব্রহ্মর্ষি ইত্যাদি।
আ + ঋ = অর্। যথা মহা
+ ঋষি = মহর্ষি। রাজা + ঋষি = রাজর্ষি,
কিন্তু আ + ঋত = আর্ত,
শীত + ঋত = শীতার্ত, ক্ষুধা + ঋত ক্ষুধার্ত, হিম + ঋত = হিমার্ত, দুঃখ + ঋত = দুঃখাত,
তৃষ্ণা + ঋত তৃষ্ণার্ত ইত্যাদি।
৭.
অ-কার বা আ-কারের
পর এ-কার বা ঐ-কার থাকলে, উভয়ে মিলে ঐ-কার হয়; ঐ-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়। '
অ + এ =ঐ। যথা জন +
এক = জনৈক, সর্ব + এব= সর্বৈব, হিত + এষী
= হিতৈষী ইত্যাদি।
আ + এ =ঐ। যথা : তথা + এব = তথৈব।
অ + ঐ = ঐ। যথা মত
+ ঐক্য মতৈক্য। দেব + ঐশ্বর্য = দেবৈশ্বর্য।
আ + ঐ= ঐ। যথা মহা
+ ঐশ্বর্য = মহৈশ্বর্য।
৮.
অ-কার বা আকারের পর
ও-কার বা ঔ-কার থাকলে,উভয়ে মিলে ঔ-কার হয়; ঔ-কার পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়। '
অ + ও =ঔ '। যথা বন + ওষধি বনৌষধি।
আ + ও = ঔ যথাঃ- মহা
+ ওষধি = মহৌষধি। পরম + ঔষধ = পরমৌষধ, চিত্ত
+ ঔদার্য = চিত্তৌদার্য।
আ + ঔ = ঔ। যথা মহা
+ ঔদাস্য = মহৌদাস্য, মহা + ঔদার্য= মহৌদার্য।
৯.
ই, ঈ-কারের পরই, ঈ
ভিন্ন স্বরবর্ণ থাকলে ই, ঈ-কার স্থানে ম্ (য-ফলা) হয়। -সেই স্বরটি যুক্ত হয়ে পূর্ব
বর্ণে যুক্ত হয়।
ই + অ =য-ফলা + অ। যথা
যদ্যপি, বি + অঞ্জন ব্যঞ্জন, অতি + অন্ত = অত্যন্ত, প্রতি + অহ = প্রত্যহ, বি + অবস্থা
= ব্যবস্থা, বি + অতীত = ব্যতীত, বি + অর্থ = ব্যর্থ, বি + অভিচার ব্যভিচার, বি + অতিরেক
= ব্যতিরেক, অতি + অদ্ভুত = অত্যদ্ভুত ইত্যাদি। আদি + অন্ত = আদ্যন্ত, যদি + অপি
ই + আ= য-ফলা + আ-কার।
যথা অতি + আচার অত্যাচার, অতি প্রতি + আশা প্রত্যাশা, বি + আধি = ব্যাধি, ইতি + আদি
= ইত্যাদি, + আশ্চর্য = অত্যাশ্চর্য, বি + আয়াম ব্যায়াম, বি। + আসক্ত আসক্ত), বি
+ আহত = ব্যাহত ইত্যাদি।
ই+উ=য-ফলা + উ-কার।
যথা অতি + উচ্চ অত্যুচ্চ, প্রতি + উক্তি = প্রত্যুক্তি, উপরি + উপরি = উপযুপরি, প্রতি
+ উপকার প্রত্যুপকার, অতি + উক্তি = অত্যুক্তি, অতি + উৎকৃষ্ট = অত্যুৎকৃষ্ট, অতি
+ উৎপাদন = অত্যুৎপাদন, অতি + উৎসাহ = অত্যুৎসাহ ইত্যাদি।
ই+ঊ= য-ফলা + উ-কার।
যথা প্রতি + ঊষ প্রত্যুষ, নি + উন = ন্যূন।
ই+এ+= য-ফলা + এ-কার। যথা প্রতি + এক প্রত্যেক।
ই+ঐ= য-ফলা + ঐ-কার।
যথা- অতি + ঐশ্বর্য = অত্যৈশ্বর্য।
ঈ + অ = য-ফলা + অ-কার।
যথা। নদী + অম্বু = নদধু।
১০.
উ, ঊ-কারের পর উ,
ঊ ভিন্ন স্বরবর্ণ থাকলে উ, উ-কার স্থানে অন্তঃস্থ-ব (ব-ফলা) হয় এবং ব-ফলা পরের স্বরটি
যুক্ত হয়ে পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়।
উ + অ = ব-ফলা। যথা—
সু + অল্প স্বল্প, অনু + অয় মনু + অন্তর মন্বন্তর।
স্বাগত, গুবী।
উ + আ= ব-ফলা + আ-কার।
যথা সু + আগত পশু + আচার। পশ্বাচার, মনু + আদি = মম্বাদি। অনু + এষণ = অম্বেষণ, অনু
+ ইত = অম্বিত, গুরু + ঈ + ঈ = তম্বী। অনু + এষা = অম্বেষা, পূ + ই = পবিত্র ইত্যাদি।
স্বরসন্ধির আরাে কয়েকটি নিয়ম
(১) ঋ-কারের পর, ঋ ভিন্ন স্বরবর্ণ থাকলে ঋ-কার স্থানে
র-ফলা হয় এবং পরবর্তী স্বরের সঙ্গে মিলে, র-ফলা পূর্ব বর্ণে যুক্ত হয়। যথা— পিতৃ
+ আলয় পিত্রালয়, ভ্রাতৃ + আদেশ ভ্ৰাত্রদেশ, পিতৃ + ইচ্ছা = পিত্রিচ্ছা, কর্তৃ + ঈ।
কত্রী, ধাতৃ + ঈ ধাত্রী ইত্যাদি।
(২) এ + স্বরবর্ণ=অয়
যথা - শে + অন = শয়ন, নে + অন = নয়ন।
(৩) ঐ + স্বরবর্ণ =
আয়। যথা— নৈ + অক = নায়ক, গৈ + অক গায়ক।
(৪) ও + স্বরবর্ণ =অব্
। যথাপাে + অন পবন, তাে + অন ভবন, গাে + আদি = গবাদি, গাে + আলয় গবালয়, গাে + এষণা
গবেষণা। কিন্তু গাে-শব্দের পর ইন্দ্র, অক্ষ, অস্থি থাকলে ‘অব’ না হয়ে ‘অব’ হয় এবং
‘অব’-এর সঙ্গে পরবর্তী স্বরবর্ণ যুক্ত হয়ে সন্ধি হয়। যথা- গাে + ইন্দ্র গবেন্দ্র,
গাে + গবাক্ষ, গাে + অস্থি = গবাস্থি।
(৫) ঔ + স্বরবর্ণ= আব্। যথা— পৌ + অক পাবক, নৌ + ইক নাবিক, স্তৌ +
অক = স্তাবক, ভৌ + উ = ভাবুক। +
(৬) অক্ষ + উহিনী =
অক্ষৌহিনী, বিম্ব + ওষ্ঠ = বিম্বােষ্ঠ বা বিম্বৌষ্ঠ, প্র + ঊঢ় প্রৌঢ়, স্ব + ঈর স্বৈর,
স্ব + ঈরিণী স্বৈরিণী এগুলি বিশেষ নিয়মে সংস্কৃত সন্ধি।
(৭)
নিপাতনে সিদ্ধ স্বরসন্ধি :
কুল + অটা = কুলটা, সার + অঙ্গ = সারঙ্গ (হরিণ বিশেষ), সীম (ন) + অন্ত সীমন্ত, মার্ত
+ অণ্ড = মার্তণ্ড (সূর্য) এগুলি কোন নিয়মের অধীন নয়, তাই নিপাতনে সিদ্ধ।