স্বরধ্বনি ও স্বরবর্ণ সম্পর্কে সহজেই জ্ঞান লাভ (বাংলা ব্যাকরণ) Part-2

dream
0

স্বরধ্বনি ও স্বরবর্ণ সম্পর্কে সহজেই জ্ঞান লাভ (বাংলা ব্যাকরণ) Part-2



এই স্বরবর্ণটির উচ্চারণে মুখবিবর সম্পূর্ণ খােলা থাকে। জিহ্ব কণ্ঠের দিকে আকৃষ্ট হয়ে নিচে শােয়ানাে থাকে এবং ধ্বনিটি সরাসরি কণ্ঠ থেকে নির্গত হয়, তাই একে কণ্ঠ্যবর্ণ বলে। আ-দীর্ঘস্বরধ্বনি (ব্য দুই মাত্রা) হিসাবে চিহ্নিত হলেও বাংলায় এর স্বাভাবিক উচ্চারণ হ্রস্ব বা একমাত্রার। তবে একাক্ষর শব্দে এবং শব্দের আদিতে আগত ‘আ’-এর উচ্চারণ দীর্ঘ। যেমন - মা (দীর্ঘ), দাঁত্ (দীর্ঘ), আ-জীবন (দীর্ঘ), আ-ভূমি (দীর্ঘ)। পদ্যে, গানে কখনাে বা গদ্যে ‘আ’-এর দীর্ঘ দুই মাত্রার) উচ্চারণ হয়। যেমন- ‘ভারত ভাগ্য বিধাতা!’ গাছ থেকে নাম বলছি।

আ-কারের কখনাে কখনাে কিছুটা বিকৃত উচ্চারণ হয়। যথা অদ্য > আইজ, আজি > আজ, কল্য > কাইল, কালি > কাল।

ই, ঈ

ই, ঈ – বর্ণদুটির উচ্চারণে জিহ্বা সম্মুখে প্রসারিত হয় এবং তালুর দিকে আকৃষ্ট হয়ে উচ্চে অবস্থান করে ; মুখবিবরের আয়তন সংবৃত ও ওষ্ঠদ্বয় প্রসৃত থাকে। একে তালব্যবৰ্ণ বলে। বাংলায় ই-কার ও ঈ-কার একই ধ্বনি, তাই এদের ই-বর্ণ বলে। বাংলায় ই-ধ্বনির উচ্চারণে হ্রস্ব বা দীর্ঘের পার্থক্য সাধারণত করা হয় না। যেমন- যদি (ই-হ্রস্ব), নদী (ঈ-এর উচ্চারণ হস্ব)। তবে, কখনাে কখনাে পদ্যে এবং জোর দিয়ে কিছু বলবার সময় ঈ-কারের দীর্ঘ উচ্চারণ হয়। ধীরে সমীরে যমুনা তীরে। কী বলছ তুমি ? চীন দেশের মানুষ।

উ,ঊ

উ,ঊ- বর্ণদুটির উচ্চারণে জিহ্বা পশ্চাতে সরে গিয়ে, তালুর দিকে আকৃষ্ট হয়ে উচ্চে অবস্থান করে, মুখবিবরের আয়তন সংবৃত ও ওষ্ঠদ্বয় বর্তুল (গােলাকার) কুঞ্চিত থাকে। উ, ঊ – উচ্চারণে কুঞ্চিত ওষ্ঠদ্বয়ের প্রাধান্য থাকে, তাই ওষ্ঠ্যবর্ণ। বাংলায় উ-কার ও উ-কার একই ধ্বনি, তাই এদের উ-বর্ণ বলে।বাংলায় উ-ধ্বনির উচ্চারণের হ্রস্ব বা দীর্ঘের পার্থক্য সাধারণত করা হয় না। মধু (উ-হ্রস্ব), বধূ (উ-এর উচ্চারণ হ্রস্ব) কোন পার্থক্য নেই। পদ্যে বা গানে কখনাে কখনাে দীর্ঘ উচ্চারণ হয়। যথা ‘রূপ লাগি আখি ঝুরে, করে জয় নাদ’, ‘বিজয় গর্বে তুর্য বাজায়ে’, ‘রূপ সনাতন’। ঢ়-এর পূর্বে উ-কারের উচ্চারণ দীর্ঘ। যথা ‘রূঢ় দীপের, মূঢ় মতি, গৃঢ় কথা ইত্যাদি। যেমন ভুজে 

ঋ - খাঁটি বাংলাতে ঋ’ স্বরধ্বনি নেই। সংস্কৃত শব্দের বানানে ঋ ও ঋ-কারের ব্যবহার আমরা করি। ঋ” এই মূর্ধন্য বর্ণটি বাংলা উচ্চারণে হয়ে যায় র+ ই = রি বা র-ফলা। ঋণ (রিন্), ঋষি (রিশি), ঋতু (রিতু), ঋগবেদ (রিগবেদ), মৃত্যু (ফ্রি), কৃপণ (ক্রিপ, ঘৃত (খ্রিত) ইত্যাদি। খাঁটি বাংলা শব্দ বা বিদেশী শব্দের বানানে ঋ-কারের পরিবর্তে তাই র-ফলা ব্যবহার করাই রীতি। যথা খৃষ্ট (খ্রিস্ট), বৃটিশ (ব্রিটিশ) ইত্যাদি।

 

এ- এই স্বরবর্ণটির উচ্চারণে মুখবিবর অর্ধসংবৃত এবং ওষ্ঠদ্বয় প্রসৃত থাকে। জিহ্বা সম্মুখে প্রসারিত হয় এবং উচ্চ-মধ্য স্থানে অবস্থান করে। কণ্ঠ ও তালুর সহযােগে উচ্চারিত হয়, তাই এটি কণ্ঠ-তালব্যবৰ্ণ।

এ- দীর্ঘস্বর, তবে বাংলায় এর উচ্চারণ সাধারণত হ্রস্ব হয়ে থাকে। পদ্যে বা কাউকে ডেকে কিছু বললে এ-কারের উচ্চারণ দীর্ঘ হয়। যেমন—‘কতকাল পরে বল ভারত রে’, ওহে শোেন, হে প্রভু ইত্যাদি।

এ-কারের স্বাভাবিক উচ্চারণ : 

১. তৎসম, তদ্ভব, দেশী, বিদেশী সমস্ত শব্দের মধ্য ও অন্তের এ-কারের উচ্চারণ স্বাভাবিক। যেমন গ্রামে, আবেগে, রামের, প্রমথেশ, চলে, বলে, স্কুলে, যাবেন, হাসেন, হাতে, ক্লাসের ইত্যাদি। 

২. তৎসম শব্দের আদিতে অবস্থিত এ-কারের উচ্চারণ স্বাভাবিক। যথা দেশ, বেশ, কেশ, স্নেহ, প্রেম, মেধা, নেতা, একদা, একান্ত, এষা, ফেনিল ইত্যাদি। 

৩, এ-কারের পর ই, উ, ই এবং অ বা আ-কারান্ত যুক্ত ব্যঞ্জন থাকলে এ-কারের স্বাভাবিক উচ্চারণ হয়। যেমন দেখি, নেই, তেলী, নেড়ী, দেখিব, কেহ, দেহ, কেষ্ট, তেষ্টা, বেল্লিক, সেরেস্তা, বেলুন ইত্যাদি।

৪, আদিতে এ-কার যুক্ত বিশেষণ শব্দের শেষে ‘য়’ থাকলে, এ-কারের স্বাভাবিক উচ্চারণ হয়। যথা -- পেয়, জ্ঞেয়, শ্রদ্ধেয়, অজেয় ইত্যাদি।

৫. নিচের উদাহরণ গুলিতে আদিতে অবস্থিত এ-কারের স্বাভাবিক উচ্চারণ হয়। যথা শেখা, শেখানাে, লেখা, লেখাই, কেনা, মেলানাে, গেলা, হেথা, সেথা, এখানে, সেখানে, এরূপ, যেরূপ ইত্যাদি।

এ-কারের বিকৃত উচ্চারণ : এ-কারের বিকৃত উচ্চারণে ‘অ্যা’ হয়। যথা এক (এক), দেখ (দ্যাখাে), বেলা (ব্যালা), বেচা (ব্যাচা), বেটা (ব্যাটা), ফেনা (ফানা), কেন (ক্যানাে), মেও (ম্যাও), ঠেলাগাড়ি (ঠ্যালাগাড়ি), এখন (এ্যাখােন্), কেমন (ক্যামাে), হেলায় (হ্যালায়), তেরাে (ত্যারাে), একাত্তর (একাত্তর), পেঁচ (প্যাচ), বেঙ (ব্যাঙ), পেঁচা (প্যাঁচা), নেয় (ল্যায়), জেঠা (জ্যাঠা) ইত্যাদি।

ঐ- স্বতন্ত্র কোন স্বরধ্বনি নয়। “ও+ ই’ এই যৌগিক স্বরধ্বনির প্রতীক। ঐ-কারের উচ্চারণে গােলাকার কুঞ্চিত ওষ্ঠদ্বয় হঠাৎ দু’দিকে প্রসৃত হয়। এটি কণ্ঠ ও তালুর সহযােগে উচ্চারিত, তাই কষ্ঠ-তালব্যবৰ্ণ। ঐ-দীর্ঘস্বর, তবে বাংলায় এর দীর্ঘ (ওই) ও হ্রস্ব (অই) দু’রকম উচ্চারণই চলে। যেমন – ঐ (ওই) আসে ঐ (ওই) অতি ভৈরব (ভােইরব) হরষে’ ; ‘চাঁদ উঠেছে ঐ (ওই); ঐক্য (ওইক্য) চৈতন্য (চোইতন্য), বৈদেশিক (বােইদেশিক) ইত্যাদি দীর্ঘস্বর। খৈ (খই =অই), খৈল (খইল । অই), দৈ (দই= অই), মৈ (মই= অই) এসব ক্ষেত্রে ঐ (অই)-এর হ্রস্ব উচ্চারণ। 

 

ও- এই স্বরবর্ণটির উচ্চারণে মুখবিবর অর্ধসংবৃত এবং ওষ্ঠদ্বয় গােলাকার কুঞ্চিত থাকে। জিহ্বা পশ্চাতে সরে এসে উচ্চমধ্যস্থানে অবস্থান করে। কণ্ঠ ও ওষ্ঠের প্রাধান্য থাকে, তাই এটি কঠৌষ্ঠ্য বর্ণ।

বাংলা বর্ণমালায় ও দীর্ঘস্বর হিসাবে চিহ্নিত কিন্তু এর হ্রস্ব দীর্ঘ দু’রকম উচ্চারণই হয়ে থাকে। একাক্ষর শব্দে ও-গরের উচ্চারণ দীর্ঘ। যেমন রােগ, যােগ, ভােগ, শােক ইত্যাদি। একাধিক অক্ষর যুক্ত শব্দে ও-কারের উচ্চারণ হ্রস্ব। যেমন রােগী, যােগী, ভােগী, শােকানল, মােটা, তপােবন ইত্যাদি। ও-কারের উচ্চারণ সর্বত্র স্বাভাবিক হয়।

ঔ- স্বতন্ত্র কোন স্বরধ্বনি নয়। “ও+উ” এই যৌগিক স্বরধ্বনির প্রতীক। ঔ-কারের উচ্চারণে অর্ধসংবৃত ওষ্ঠদ্বয় হঠাৎ সংবৃত হয়ে যায়। এটির উচ্চারণে কণ্ঠ ও ওষ্ঠের প্রাধান্য থাকে, তাই কষ্ঠৌষ্ঠ্যবর্ণ দীর্ঘস্বর, তবে বাংলায় এর দীর্ঘ (ওউ) ও হ্রস্ব (অউ) দু'রকম উচ্চারণই চলে। হােয়ন --- সৌরভ (সৌউরভ, গৌরব (গৌউরব, যৌবন (যােউব), মৌলিক (মোউলিক) ইত্যাদি দীর্ঘস্বর।

কখনো কখনাে ঔ-এর ‘অউ হস্ব উচ্চারণ। যথা বৌ (বউ =অউ), মৌ (মউ =অউ), জেী (জউ =উ)।

 

 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top