স্বরধ্বনি ও স্বরবর্ণ সম্পর্কে সহজেই জ্ঞান লাভ (বাংলা ব্যাকরণ) Part-1
স্বরধ্বনি ও স্বরবর্ণ: |
স্বরধ্বনি
ও স্বরবর্ণ:
বাগ্যন্ত্রের সামান্য একটু চেষ্টায় যে ধ্বনি একা একাই উচ্চারিত হয়, যার উচ্চারণে অন্য ধ্বনির সাহায্য লাগে না তাকে স্বরধ্বনি বলে। স্বরধ্বনির উচ্চারণে মুখবিবর খােলা থাকে। নিঃশ্বাস বায়ু কোথাও বিশেষ বাধা পায় না। শুধু জিহ্বার অবস্থান আর ওষ্ঠ দ্বয়ের আকুঞ্চন ও প্রসারণের ফলে মুখবিবরের আকারের যে রদ-বদল ঘটে তাতেই স্বরধ্বনির উচ্চারণ সম্ভব হয়। স্বরধ্বনির লিখিত চিহ্নকে স্বরবর্ণ বলে। বাংলা স্বরবর্ণের সংখ্যা এগারটি। যথা অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ।
স্বরধ্বনির শ্রেণীবিভাগ :
হ্রস্বস্বর ও দীর্ঘস্বর : উচ্চারণের সময় অনুযায়ী স্বরধ্বনিগুলিকে হ্রস্ব ও দীর্ঘ এই দুটি ভাগে ভাগ করা হয়।
অ, ই, উ, ঋ এই চারটি স্বরবর্ণের উচ্চারণে সময় কম লাগে, তাই এরা হ্রস্বস্বর। আ, ঈ, উ, এ, ঐ, ও, ঔ এই সাতটি স্বরবর্ণের উচ্চারণে সময় বেশি লাগে তাই এরা দীর্ঘস্বর। স্বরের উচ্চারণ সময়কে মাত্রা বলে। সাধারণত হ্রস্বস্বরে একমাত্রা ও দীর্ঘস্বরে দুই মাত্রা গণনা করা হয়। তবে, এই প্রসঙ্গে একটি কথা মনে রাখতে হবে সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুযায়ী বাংলায় হ্রস্বস্বর দীর্ঘস্বর ভাগ করা হয়। কিন্তু বাংলা উচ্চারণে দীর্ঘস্বরগুলি সাধারণত হ্রস্বসরের মত সময় (একমাত্রা) নিয়েই উচ্চারিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ ঈ উ ইত্যাদি দীর্ঘস্বরগুলি বেশি সময় নিয়ে (দু’মাত্র) উচ্চারিত হবেই এমন কোন কড়াকড়ি নিয়ম নেই। শব্দে অক্ষরের সংখ্যার উপর বরের হ্রস্ব-সীতা নির্ভর করে। উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। যেমন ‘জল’ (জ+ অ ল) একাক্ষর শব্দ। এখানে ‘অ-কার দীর্ঘ; কিন্তু ‘জলা’ (জ লা) দু-অক্ষর শব্দ এখানে অ-কার হুস্ব। “দিন’ (দিবস)-এর ‘ই’-কার দীর্ঘ কিন্তু দিন-কাল’ শব্দে ‘ই’-কার হ্রস্ব। দীন’ (দরিদ্র)-এর ঈ-কার উচ্চারণে দীর্ঘ; কিন্তু দীন-দুঃখী” শব্দে ঈ-কার হ্রস্ব। ৰূপ (রূ-প)-এর উ-কার দীর্ঘ, কিন্তু “রূপা’ শব্দের উ-কার উচ্চারণে হ্রস্ব। তাই বলা যায়, বাংলায় হ্রস্ব-দীর্ঘ স্বরের উচ্চারণে কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই। তবে, একাক্ষর শব্দে স্বরটি সাধারণত দীর্ঘ (দু’মাত্রা) উচ্চারিত হয়। পদ্যে, গানে স্বরধ্বনির দীর্ঘ উচ্চারণ হয়। এমন কি জোর দিয়ে কিছু বলতে গেলে কখনাে কখনাে গদ্যেও স্বরধ্বনির দীর্ঘ উচ্চারণ হয়ে থাকে। নিচের উদাহরণগুলি লক্ষ্য করাে-
পদ্যে - নীল-সিন্ধুজল’ ‘নীল’ শব্দের ঈ-কার দীর্ঘ। “সিন্ধু’ শব্দের ই-কার দীর্ঘ। একি কৌতুক করিছ নিত্য ‘কে’-এর ঔ-কার দীর্ঘ। নিত্য' -এর ই-কার দীর্ঘ।
গানে- ‘জনগণ মন অধিনায়ক জয় হে ভারত ভাগ্য বিধাতা? না-আ-কার, ছে-এ-কার, ভা-আ-কার, আ-আ-কার, ধা-আ-কার, তা-আ-কার দীর্ঘ। গদ্যে তুমি, কী খাবে? --ঈ-কার দীর্ঘ।
প্লুতস্বর : দূর থেকে ডেকে কিছু বলতে গেলে, কান্নার সময় বা গানে খুব টেনে যখন স্বরধ্বনির উচ্চারণ হয় তখন তাকে জুতর বলে। যেমন “ওহে, শুনছ এখানে এ-কারের খুব দীর্ঘ উচ্চারণ অর্থাৎ দ্রুতস্বর। কত কাল পরে বল ভারত রে’ এখানে গানের সময় আ-কার ও এ-কারের খুব দীর্ঘ উচ্চারণ অর্থাৎ এরা দ্রুতস্বর। প্লতস্বর উচ্চারণের সময়কে তিন মাত্রা ধরা হয়।
একাধিক স্বরধ্বনি মিলে যৌগিক স্বরধ্বনি গঠিত হয়। যৌগিক স্বরধ্বনিকে সন্ধিস্বর বা সন্ধ্যক্ষরও বলা হয়। যেমন ঐ (ও+ ই বা অ+ ই), ঔ (অ+ উ বা ও+ উ)। এছাড়াও মৌলিক স্বরধ্বনি পাশাপাশি বসিয়েও যৌগিক স্বরধ্বনিকে প্রকাশ করা হয়। ভাষাচার্য সুনীতিকুমার এ রকম পঁচিশটি যৌগিক স্বরধ্বনির উল্লেখ করেছেন। নিচে তার কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল ‘অও’ (কও, হও), “আও’ (খাও, দাও), ‘আই’ (যাই, খাই), ‘ইউ’ (মিউ-মিউ), ‘ওআ’ (মােয়া, ধােয়া), ‘এই’ (নেই, সেই), ‘অই’ (বই), ‘ওউ’ (বউ) ইত্যাদি।
মুখের মধ্যে জিভের অবস্থান অনুযায়ী স্বরধনির শ্রেণীবিভাগ
১. জিভের অগ্র-পশ্চাৎ স ল ল' মুখের মধ্যে জিভের অগ্র-পশ্চাৎ সঞ্চালন অনুযায়ী স্বরধ্বনিগুলিকে তিনটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়
(ক) সম্মুখ স্বরধ্বনি: ই (ঈ), এ, অ্যা - এই স্বরধ্বনিগুলি উচ্চারণের সময় জিভ সামনের দিকে এগিয়ে আসে, তাই এদের সম্মুখ স্বরধ্বনি বলে।
(খ) পশ্চাৎ স্বরধ্বনি : উ (উ), ও, অ – এই স্বরধ্বনিগুলি উচ্চারণের সময় জিভ পিছনের দিকে পিছিয়ে যায়, তাই এদের পশ্চাৎ স্বরধ্বনি বলে।
২. জিভের উচ্চ-নিম্ন অবস্থান : মুখের মধ্যে জিভের উচ্চ-নিম্ন সঞ্চালন অনুযায়ী স্বরধ্বনিগুলিকে চারটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়
(ক) উচ্চাবস্থিত স্বরধ্বনি: ই (ঈ), উ (উ) – এই স্বরধ্বনিগুলি উচ্চারণের সময় জিভ একদম উপরের দিকে উঠে থাকে, তাই এদের উচ্চাবস্থিত স্বরধ্বনি বলে।
(খ) উচ্চমধ্যস্থ স্বরধ্বনি : এ, ও - এই স্বরধ্বনি দুটি উচ্চারণের সময় জিভ উচ্চ-স্বরধ্বনির তুলনায় একটু নিচে নেমে থাকে, তাই এদের উচ্চমধ্যস্থ স্বরধ্বনি বলে।
(গ) নিম্নাবস্থিত স্বরধ্বনি : আ – এই স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিভ একদম নিচের দিকে নেমে থাকে, তাই এটি নিম্নাবস্থিত স্বরধ্বনি।
(ঘ) নিম্নমধ্যস্থ স্বরধ্বনি: অ, অ্যা – এই স্বরধ্বনি দুটি উচ্চারণের সময় জিভ নিম্ন-স্বরধ্বনির তুলনায় একটু উপরের দিকে উঠে থাকে, তাই এদের নিম্নমধ্যস্থ স্বরধ্বনি বলে।
[উচ্চমধ্যস্থ (এ, ও), নিম্নমধ্যস্থ (অ, অ্যা) স্বরধ্বনিগুলিকে শুধু ‘মধ্যস্থ স্বরধ্বনি’ বলেই আমরা পরবর্তী আলােচনায় উল্লেখ করব।]
৩. ঠোঁটের আকৃতি ও মুখ-বিবরের আয়তন অনুযায়ী বিভাগ:
(ক) প্রসূত স্বরধ্বনি : ই (ঈ), এ, অ্যা,আ-এই সম্মুখ স্বরধ্বনিগুলি উচ্চারণের সময় ঠোঁটদুটি প্রসৃত বা বিস্তৃত থাকে, তাই এরা প্রসূত স্বরধ্বনি।
(খ) কুঞ্চিত স্বরধ্বনি: অ, ও, উ (উ) এই পশ্চাৎ স্বরধ্বনিগুলি উচ্চারণের সময় ঠোঁটদুটির মধ্যের ফাঁক বর্তুল (গােলাকার) ও কুঞ্চিত হয়, তাই এরা কুঞ্চিত স্বরধ্বনি।
(গ) বিবৃত স্বরধ্বনি: আ – এই স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখবিবর খােলা বা বিবৃত থাকে, তাই এটি বিবৃত স্বরধ্বনি।
(ঘ) অর্ধবিবৃত স্বরধ্বনি: অ, অ্যা এই স্বরধ্বনি দুটি উচ্চারণের সময় মুখবিবর অপেক্ষাকৃত কম বিবৃত থাকে, তাই এদের অর্ধবিবৃত স্বরধ্বনি বলে।
(ঙ) সংবৃত স্বরধ্বনি: ই (ঈ), উ (উ) এই স্বরধ্বনিগুলি উচ্চারণের সময় মুখবিবরের আয়তন একেবারে কম বা সংবৃত থাকে, তাই এদের সংবৃত স্বরধ্বনি বলে।
(চ) অর্ধসংবৃত স্বরধ্বনি: এ, ও— এই স্বরধ্বনি দুটি উচ্চারণের সময় মুখবিবরের আয়তন সংবৃত স্বরধ্বনির তুলনায় একটু বেশি থাকে, তাই এদের অসংবৃত স্বরধ্বনি বলে।
উচ্চারণ অনুসারে স্বরধ্বনির শ্রেণীবিভাগ
স্বরধ্বনি |
জিভের উচ্চ-নিম্ন অবস্থান |
জিভের সম্মুখ-পশ্চাৎ সঞ্চালন |
ঠোঁটের আকৃতি |
ঠোঁটের ফাঁকের আয়তন |
ই (ঈ) |
উচ্চাবস্থিত |
সম্মুখ |
প্রসৃত |
সংবৃত |
উ (উ) |
উচ্চাবস্থিত |
পশ্চাৎ |
বর্তুল-কুঞ্চিত |
সংবৃত |
এ |
উচ্চমধ্যস্থ |
সম্মুখ |
প্রসৃত |
অর্ধসংবৃত |
ও |
উচ্চমধ্যস্থ |
পশ্চাৎ |
বর্তুল-কুঞ্চিত |
অর্ধসংবৃত |
অ্যা |
নিম্নমধ্যস্থ |
সম্মুখ |
প্রসৃত |
অর্ধবিবৃত |
অ |
নিম্নমধ্যস্থ |
পশ্চাৎ |
বর্তুল-কুঞ্চিত |
অর্ধবিবৃত |
আ |
নিম্নাবস্থিত |
কেন্দ্রীয় |
প্রসৃত |
বিবৃত |
[১.ঈ, উ’ যথাক্রমে ‘ই, উ’-এর দীর্ঘ উচ্চারণ মাত্র ; তাই এদের শ্রেণীবিভাগ সেই অনুযায়ী করা হয়েছে।
২. অ্যা* মৌলিক স্বরধ্বনি, তবে এটির স্বতন্ত্র কোন বর্ণ বা স্বরচিহ্ন নেই।
8. এরা কোন স্বতন্ত্র স্বরধ্বনি নয়। অ + ই/ও + ই ঐ এবং অ + উ/ও + যৌগিক স্বরধ্বনি। তাই উপরের তালিকায় আলাদাভাবে দেখান হয়নি।
স্বরবর্ণের উচ্চারণস্থান
আমরা ইতিপূর্বেই বলেছি, স্বরধ্বনিগুলির উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাস বায়ুমুখবিবরের কোথাও বাধা পায় না। জিহ্বার অবস্থান এবং ওষ্ঠদ্বয়ের আকুঞ্চন-প্রসারণের ফলেই তাদের উচ্চারণ সম্ভব হয়। এই দিকে লক্ষ্য রেখে স্বরধ্বনির প্রতীক বর্ণগুলির উচ্চারণস্থান নির্দেশ করা হল-
বর্ণ |
উচ্চারণস্থান |
উচ্চারণস্থান অনুযায়ী নাম |
অ, আ, |
কণ্ঠ (জিহা কণ্ঠের দিকে আকৃষ্ট হয়) |
কন্ঠবর্ণ |
ই,ঈ |
তালু (জিহ্বা তালুর দিকে আকৃষ্ট হয়) |
তালব্যবর্ণ |
উ, ঊ |
ওষ্ঠ (সংকুচিত ওষ্ঠদ্বয়ের প্রাধান্য) |
ওষ্ঠ্যবর্ণ |
ঋ |
মূর্ধা (জিহ্বা মূর্ধাকে প্রায় স্পর্শ করে) |
মূর্ধবর্ণ |
এ,ঐ |
কণ্ঠ ও তালু (এদের সহযোগে উচ্চারিত) |
কন্ঠ-তালব্য বর্ণ |
ও,ঔ |
কণ্ঠ ও ওষ্ঠ (এদের প্রাধান্য থাকে) |
কন্ঠৌষ্ঠ্যবর্ণ |
[১. স্বরবর্ণের উচ্চারণে ধ্বনির গাম্ভীর্য বা “ঘােষ’ থাকে, তাই এরা ঘােষবর্ণ।
২. স্বরচিহ্ন বা-কার: ব্যঞ্জনধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনি যুক্ত হলে, তা লিখে দেখানাের সময় স্বরধ্বনির আলাদা চিহ্ন ব্যবহার করা হয় ; এই চিহ্নকে স্বরচিহ্ন বা-কার বলে।
অ-কারের আলাদা চিহ্ন নেই অ-কার ব্যঞ্জনবর্ণের গায়েই মিশে থাকে। যেমন + + ক, খৃ + অ = খ, চ + অ = চ ইত্যাদি। ব্যঞ্জনবর্ণের গায়ে কোন স্বরচিহ্ন নেই বােঝাতে ব্যঞ্জনবর্ণের তলায় হস্ চিহ্ন দিয়ে লিখতে হয়। যেমন, ক ইত্যাদি। আ-কার থেকে ঔ-কার পর্যন্ত সকলেরই আলাদা চিহ্ন আছে। যেমন আ =1, ই = ঈ = প,উ =, উ =4, ঋ =<, এ =, ঐ =, ও =া,ওঁ —ী। ৫= অ = অ = খ =
স্বরবর্ণের উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য
অ বাংলা বর্ণমালার প্রথম বর্ণ। “অ” উচ্চারণের সময় মুখবিবর অর্ধবিবৃত ও ওষ্ঠদ্বয় গােলাকার কুঞ্চিত থাকে। জিহ্বা পশ্চাতের দিকে আকৃষ্ট হয়ে নিম্নমধ্য স্থানে অবস্থান করে এবং ধ্বনিটি সরাসরি কণ্ঠ থেকে নির্গত হয়, তাই একে কণ্ঠ্যবর্ণ বলে।
বাংলায় অ— এই স্বরবর্ণটির দু’রকম উচ্চারণ (১) প্রকৃত ও স্বাভাবিক উচ্চারণ (২) বিকৃত উচ্চারণ। জল, বলা, সরল, অস্থির, অনন্ত ইত্যাদি শব্দে অ-কারের প্রকৃত বা স্বাভাবিক উচ্চারণ।
অতুল (ওতুল), অমূল্য (ওমূল্য), লভ্য (লােভ্য), লক্ষ (লােখ), (ভালাে), মসৃণ (মােসৃণ), অমল (অমােল) ইত্যাদি শব্দে অ-কারের বিকৃত উচ্চারণ। শব্দের অন্তস্থিত অ-কার বাংলা উচ্চারণে প্রায়শই লােপ পায়। যেমন > ভাল।
ফুল (ফুল), মূল (মূল), অমল (অমাে), জল (জ), সমীরণ (সােমীর) ইত্যাদি।
অ-এর প্রকৃত উচ্চারণ:
১. ‘অ’-এর অর্থ যেখানে ‘না’-এর মত সেখানে অ-কারের প্রকৃত উচ্চারণ হয়। যথা – অ-মৃত, অ-স্থির, অসীম, অ-ধীর, অ-কুল, অ-বিরাম ইত্যাদি।
২.শব্দের আদিতে সহিত অর্থে এবং সমাউসগ যুক্ত হলে অ-কারের প্রকৃত উচ্চারণ হয়। যেমন সবিনয় বিনয়ের সহিত), সপুত্রক, সজল, স-বৎস, ( স-বংশ, সস্ত্রীক, স-ফেম, সঘন ইত্যাদি। সম্পল (সম-পত্র), সত্তম (সম্- এম), সম্মান (সম্মান), সম্মতি সিম-অতি) ইত্যাদি।
৩. শব্দের আদিতে অ-কার কিন্তু পরে যদি অ, আ খ ও থাকে তাহলে অ-এর প্রকৃত উচ্চারণ হয়। যেমন চলন, দর্শন, কলম, কথা, লল, মরাই, চড়াই, চকোর, সরােজ ইত্যাদি।
৪. একাক্ষর শব্দের আদিতে ‘ম’-এর প্রকৃত উচ্চারণ হয়। যেমন দল, মঠ, ঘট, পট, পথ, চল, সৎ ইত্যাদি।
৫. ধ্বন্যাত্মক শব্দের আদিতে ‘অ’-এর সাধারণত প্রকৃত উচ্চারণ হয়। যথা বন্-ব, শ-শ, ক-ক, খখ, হন-হ ইত্যাদি।
অ-এর বিকৃত উচ্চারণ :
১, ই, ঈ, উ, ঊ-কার অন্ত ব্যঞ্জনবর্ণ পরে থাকলে তার পূর্বস্থিত অ-কারের উচ্চারণ বিকৃত হয়ে ও-কার হয়। যেমন – অনিল (ওনিল), অতুল (ওতুল), মণি (মােনি), নদী (নােদী), সমীর (সােমীর), অরুণ (ওরুণ), কটুক্তি (কোটুক্তি, যদু (যােদু), মধু (মােধু) ইত্যাদি।
২. অ-কার যুক্ত ধ্বনির পর যদি য-ফলা থাকে তাহলে, অ-কার স্থানে ও-কার, এ-কার এবং অ্যা (এ্যা)-কার হয়। যেমন – গণ্য (গাে), ভব্য (ভােব), কাব্য - (কাববা), আলস্য (আলােশশাে), ব্যক্তি (বেক্তি, ব্যতীত (বেতীত), ব্যথা (ব্যাথা), ব্যবহার (ব্যাবহার), ব্যক্ত (ব্যক্তি) ইত্যাদি।
৩. অ-কারের পর ‘ক্ষ’ বা ‘জ্ঞ’ থাকলে, পূর্ববর্তী অ-কার বিকৃত হয়ে ও-কার হয়। যথা লক্ষ (লােখ), যক্ষ (যােখ, পক্ষ (পােস্থ), যজ্ঞ (যােগ), দৈবজ্ঞ (দইবােৰ্গ) ইত্যাদি।
৪. ঋ-ফলা ও র-ফলা যুক্ত বর্ণের পূর্ববর্তী অ-কার, ও-কার রূপে উচ্চারিত হয়। যেমন মসৃণ (মােসৃণ), কর্তৃক (কোর্তৃক), বক্তৃতা (বােক্তৃতা), গ্রহ (গ্লোহ), ভ্রমর (দ্রোমাের), ভ্রমণ (ড্রোমণ), প্রভাত (প্রােভাত), প্রণাম (প্রােণাম) ইত্যাদি।
৫. বাংলায় প্রচলিত বহু তৎসম এবং অধিকাংশ তদ্ভব শব্দের অন্তস্থিত অ-কার সাধারণত লুপ্ত হয়ে যায়। যেমন বিচার (বিচার), ফল' (ফ), জীবন (জীবােন্), সুখ (সুখ), হরিণ (হরিণ), চাঁদ (চাঁদ), ঘর (ঘ), দাঁত (দাঁৎ), হাত (হাৎ) ইত্যাদি। স্বরান্ত শব্দের হসন্ত উচ্চারণ বাংলা ভাষার বৈশিষ্ট্য। >
৬. অনেক স্থানে চলিত-ভাষার, ক্রিয়াপদ ও বিশেষ্য-বিশেষণ স্থানীয় পদের অ-কার, ও-কার রূপে উচ্চারিত হয়। যথা কলিকাতা > কলকাতা (কোলকাতা), খরিদ্দার> খদ্দের (খােদ্দের), বলিলেন > বলেন (বােলেন), চলিতেছে > চলছে >(চোলছে), ভাল (ভালাে), কাল (কালাে), কত (কতো) মত মতে), এগার { (এগারাে), ঝর-ঝর (ঝরাে ঝরাে, মরমর (মরাে-মরাে), হইতে> হতে (হােতে), মারধর (মারধাের), পড়ােবাড়ি (পােড়া) ইত্যাদি।
৭. দু’অক্ষর বিশিষ্ট শব্দের অন্তের অ-কার লােপ হয় এবং তার পূর্ববর্তী অ-কার ও-কার রূপে উচ্চারিত হয়। যেমন শ্রবণ (শ্রোবােণ), আদর (আদোর), এখন (এখােন্), জীবন্ (জীবাে), ম-রল (মরােণ), ক-লম্ (কলােম) ইত্যাদি।
৮. একাক্ষর শব্দের অন্তে যদি ণ, ন থাকে তাহলে পূর্ববর্তী অ-কারের উচ্চারণ ও-কারের মত হয়। যথা- পণ (পােন্), মন (মােন্), জন (জো), বন (বােন) ইত্যাদি।
৯, শব্দ মধ্যস্থ অ-কার কখনাে কখনাে লােপ পায়। যেমন কলমী (কোমী), কলসী (কোর্সী), পাগলী (পালী), হাতড়ানাে (হাড়ানাে), ঝলসায় (ঝলসায়), কলকাতা (কোল্কাতা), হেমকুট (হেমকূট), বাটখারা (বাটখারা) ইত্যাদি।
১০. ঋ, ঐ, ঔ, ং, ঃ থাকলে তার পরবর্তী অ-কারস্ত ব্যঞ্জনের অ-কারের উচ্চারণ ও-কারের মত হয়। যথা- তৃণ (তৃণাে), মৃগ (মৃগাে), দৈব (দৈববা), শৈল (শৈলাে), মৌল (মৌলে, গৌণ (গৌণাে), বংশ (বংশাে), দুঃখ (দুখখা) ইত্যাদি।