ধ্বনি,বর্ণ ও অক্ষর বা দল সম্পর্কে সহজেই জ্ঞান লাভ (বাংল ব্যাকরণ)

dream
0

ধ্বনি,বর্ণ ও অক্ষর বা দল সম্পর্কে সহজেই জ্ঞান লাভ (বাংল ব্যাকরণ)

ধ্বনি,বর্ণ ও অক্ষর বা দল



ধ্বনি : বাগযন্ত্রের অল্প একটু চেষ্টায় উচ্চারিত আওয়াজকে ধ্বনি বলে। শ্বাস কাজের সময় যে বাতাস আমরা ফুসফুস থেকে নাক-মুখ দিয়ে বের করে দেই, তাকে নিঃশ্বাস বায়ু বলে। আমাদের ইচ্ছাকৃত পেশী সঞ্চালনের ফলে এই বাতাস নিঃশ্বাস বায়ু) কণ্ঠনালী থেকে ওষ্ঠ পর্যন্ত যদি কোথাও সামান্য একটু বাধা পায় তাহলেই ধ্বনির সৃষ্টি হয়। অর্থযুক্ত ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টিকে শব্দ বলে। শব্দ পর পর সাজিয়ে মনের ভাব সম্পূর্ণ ভাবে বাক্যের মধ্যে আমরা প্রকাশ করি। 

যেমন আমি ভাত খাই তিনটি শব্দ বা কথা দিয়ে একটি বাক্য। 

“আমি’, ‘ভাত’, ‘খাই’—তিনটি কথা পরপর একসঙ্গে উচ্চারণ করে বাক্যটি বললাম। 

“আমি” কথাটা বললাম - আ-ম-ই তিনটি পৃথক্ ধ্বনি গেঁথে।

এই ভাবে ভ-আ-ত=ভাত, খ-আ-ই-খাই। তা হলে দেখা যাচ্ছে, কথা বা বাক্য আসলে আলাদা-আলাদা কতগুলি ধ্বনি গেঁথেই তৈরি হয়। বাক্যকে যদি ধরি মালা, শব্দ হচ্ছে সেই মালার ফুল, আর শব্দ-ফুলের পাপড়ি হচ্ছে ধ্বনি। অতএব, কোনও ভাষার উচ্চারিত শব্দকে (word) বিশ্লেষণ করলে যে ক্ষুদ্রতম অংশ পাওয়া যায় ব্যাকরণে তাকেই ধ্বনি বলে।

বর্ণ: ধ্বনি উচ্চারিত হয় এবং কানে শােনা যায়। এই ধ্বনিকে যখন আমরা লিখে প্রকাশ করি অর্থাৎ চোখে দেখতে চাই তখনই তা এক-একটা প্রতীক বা ছবির আকার ধারণ করে। তাই, ধ্বনির লিখিত রূপ বা ধ্বনি প্রকাশক চিহ্নকে বর্ণ বলে। ধ্বনিকে লিখে দেখালে বর্ণ আর বর্ণকে উচ্চারণ করলে ধ্বনি।

কোন ভাষায় যে ধ্বনি বা বর্ণসমষ্টি ব্যবহার করা হয়, তাদের সমষ্টিকে বর্ণমালা বলে। বাংলা ভাষায় মােট বর্ণের সংখ্যা পঞ্চাশ। এই পঞ্চাশটি বর্ণের সমষ্টি হল বাংলা বর্ণমালা। বাংলা বর্ণমালাকে উচ্চারণের দিক থেকে স্বর ও ব্যঞ্জন এই দু’ভাগে ভাগ করা হয়। স্বরধ্বনি বা তার লিখিত রূপ স্বরবর্ণের সংখ্যা এগারটি এবং ব্যঞ্জনধ্বনি বা তার লিখিত রূপ ব্যঞ্জনবর্ণের সংখ্যা ঊনচল্লিশটি।

বর্ণ ও অক্ষর: অনেক সময় আলগা ভাবে বর্ণকে অক্ষর বলা হয়। ব্যাকরণে বর্ণ ও অক্ষর কিন্তু আলাদা। ধ্বনি প্রকাশক চিহ্নকে বর্ণ বলে। বর্ণ গেঁথেই শব্দ তৈরি হয়। যেমন ‘আমি’ কথাটা ‘আ-ম-ই’ তিনটি বর্ণ দিয়ে তৈরি। কিন্তু বলবার সময় আমরা ‘আমি’ দুটি অংশে ভাগ করে শব্দটা উচ্চারণ করি। শব্দের মধ্যে একটি মাত্র ঝোঁকে ধ্বনির যতটুকু অংশ উচ্চারণ করি, তাকেই অক্ষর বা দল (syllable) বলে। তাই, শব্দকে অক্ষর সমষ্টিও বলা হয়। যেমন ‘আমি’ শব্দটি আমরা ‘আ’ - ‘মি’ দুটি অংশে ভাগ করে উচ্চারণ করি, তাই শব্দটি দু’অক্ষর বিশিষ্ট। আবার ‘হাত’ কথাটি আমরা একটি মাত্র ঝোঁকে উচ্চারণ করি তাই শব্দটি একাক্ষর বিশিষ্ট। অনুরূপ ‘কিশলয়’ শব্দটিতে ক্+ই+শ+অ+ল+ অ+য়+অ মােট আটটি বর্ণ কিন্তু শব্দটি কি-শ-লয়’ তিনটি অংশে ভাগ করে উচ্চারণ করি, তাই শব্দটি তিন অক্ষর বিশিষ্ট। শুদ্ধ স্বরধ্বনি বা ব্যঞ্জন যুক্ত স্বরধ্বনি দিয়ে অক্ষর গঠিত হয়। অক্ষরের উচ্চারণে অন্তত একটি স্বরধ্বনি থাকবেই। 

অক্ষর (syllable) দুরকমের হয় স্বরান্ত বা বিবৃত ও হলন্ত (ব্যঞ্জনান্ত) বা সংবৃত। যে অক্ষরের অন্তে বা শেষে স্বরধ্বনি থাকে তাকে স্বরান্ত বা বিবৃত অক্ষর বা মুক্তদল বলে। যেমন আমি শব্দের প্রথম অক্ষর ‘আ’ (শুদ্ধ স্বর) দ্বিতীয় অক্ষর ‘মি’ (ব্যঞ্জনের সঙ্গে ‘ই’-স্বর যুক্ত)—‘আ’—“মি’, দুটি অক্ষরই স্বরান্ত। এ, ও, সে (স+ এ), মা (ম+আ) ইত্যাদি স্বরান্ত অক্ষর। কিশলয় (কি-শ-লয়) তিন অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ। কি (ক+ই – স্বরান্ত), শ (শ+অ— স্বরান্ত) লয় (ব্যঞ্জনান্ত বা হলন্ত)। “লয়’ অক্ষরটির অন্তে স্বরধ্বনি নেই। 

যে অক্ষরের শেষে কোন স্বরধ্বনি থাকে না থাকে শুদ্ধ ব্যঞ্জনধ্বনি, তাকে হলন্ত বা সংবৃত অক্ষর বা রুদ্ধদল বলে। হলন্ত বা সংবৃত অক্ষর বােঝাতে হস্  চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। রাম, শ্যাম্, ফল, জল, যাক্, দর্পণ (দর-পন) ইত্যাদি ব্যঞ্জনান্ত (হলন্ত) অক্ষর।

অক্ষরের সংখ্যা অনুযায়ী শব্দটি একাক্ষর (এক অক্ষর বিশিষ্ট), দ্ব্যক্ষর (দ্বি-অক্ষর) বা তার বেশি অক্ষর বিশিষ্ট হতে পারে। সে, মা, ও, এক, ফল, থাক্‌ ইত্যাদি একাক্ষর শব্দ। বি-ফল, অ-মল, হ-রিণ, সে-বক্, দো-লক্ ইত্যাদি দ্ব্যক্ষর শব্দ। কিশলয় (কি-শ-লয়), পৃথিবী (পৃথিবী), বারান্দা (বা-রান্দা) তিন অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ। যশােধারা (য-শাে-ধা-রা), রবীন্দ্রনাথ (রবীন্দ্রনাথ) চার অক্ষর বিশিষ্ট শব্দ। তাই বলা যায়, ‘শব্দ’ এক, দুই বা একাধিক অক্ষর বিশিষ্ট হয়ে থাকে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top