সাধু-ভাষা ও শিষ্ট চলিত-ভাষা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা (বাংলা ব্যাকরণ)

dream
0

 

সাধু-ভাষা ও শিষ্ট চলিত-ভাষা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা

(বাংলা ব্যাকরণ)



সাধু-ভাষা ও শিষ্ট চলিত-ভাষা

সংস্কৃত ভাষ্য ধাতুর অর্থ কথা বলা। ভা ধাতু থেকেই ‘ভাষা’ শব্দটির উৎপত্তি। দৈনন্দিন জীবনে সাক্ষাৎ আলাপে ব্যবহৃত মুখের কথাই ভাষা। তাই এক সময় ‘ভাষা’ বলতে ‘সংস্কৃত নয় এমন চলিত বা কথিত ভারতীয় ভাষা’কেই বােঝাত। প্রত্যেক উন্নত ভাষাই কালে কালে দুটি রূপ লাভ করে থাকে। একটি কথিত বা মৌখিক রূপ আর একটি লিখিত রূপ। মুখের কথা বা ভাষাকে স্থায়ীরূপ দেবার তাগিদেই লিখিত রূপের উৎপত্তি। লিখিত ও মৌখিক রূপের মধ্যে অল্পবিস্তর পার্থক্যও থাকে। প্রাচীন কাল থেকেই বাংলা ভাষায়ও দুটি রূপ লক্ষ্য করা যায় একটি মৌখিক বা চলিত রূপ, অপরটি শিক্ষিত সমাজের লেখাপড়ার কাজে ব্যবহৃত সাহিত্যিক রূপ বা সাধু রূপ। বাংলা সাহিত্যিক ভাষার লিখিত পদ্য রূপটি প্রায় হাজার হাজার বছরের পুরনাে কিন্তু তার লিখিত সাধু গদ্য রূপটির উদ্ভব মােটামুটি ভাবে বলা যায় ঊনবিংশ শতাব্দীতে।

চলিত-ভাষা : দৈনন্দিন জীবনে কথা বলার জন্য ব্যবহৃত চলিত বা কথ্য রূপটি অঞ্চল ভেদে কথা বলার ঢং ও উচ্চারণরীতির পার্থক্য হেতু আঞ্চলিক রূপ লাভ করে থাকে। একে উপভাষা বা Dialect বলে। যেমন ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, কলকাতা, পুরুলিয়া, উত্তরবঙ্গ প্রভৃতি অঞ্চলের বাঙালীরা কথা বলার সময় বিশেষ বিশেষ ঢং ও উচ্চারণরীতিতে কথা বলে থাকে, ফলে একই বাংলা ভাষা অঞ্চল ভেদে এক-একটি আঞ্চলিক রূপও লাভ করেছে। আঞ্চলিক ভাষা অঞ্চল বিশেষের মানুষের দৈনন্দিন কথা বলার ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বর্তমানে আমরা ‘চলিত-ভাষা’ বলতে যেটিকে বুঝি, তা আসলে রাজধানী কলকাতা ও ভাগীরথী নদী তীরের অধিবাসীদের মৌখিক ভাষার উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে। পলাশী যুদ্ধে (১৭৫৭ খৃঃ) ইংরেজদের সাফল্যের পর থেকেই কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী ভাগীরথী তীরবর্তী অঞ্চলের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বেড়ে যায়। ফলে, রাজধানী অঞ্চলের মানুষের মুখের ভাষাটি সমগ্র বঙ্গদেশের শিক্ষিত মানুষের স্বীকৃতি লাভ করে। অথাৎ শিক্ষিত বাঙালী ( যে অঞ্চলেরই হােক না কেন) প্রকাশ্য আলােচনার সময় কলকাতা ও ভাগীরথী নদীতীরবর্তী অঞ্চলের মুখের ভাষাকেই আদর্শ হিসাবে বরণ করে নিলেন। উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে এসে, শিক্ষিত বাঙালীদের মধ্যে প্রকাশ্য আলােচনায় ব্যবহৃত এই শিষ্ট মৌখিক ভাষাটিই সর্বজনগ্রাহ্য একটা সাহিত্যিক রূপও লাভ করে। বাংলা ব্যাকরণে একেই বলে চলিত-ভাষা। কলকাতা অঞ্চলের মৌখিক ভাষাকে সচেতন ভাবে সাহিত্যে প্রথম ব্যবহার করেন প্যারিচাঁদ মিত্র ‘আলালের ঘরের দুলালে’ ও কালীপ্রসন্ন সিংহ ‘হুতােম প্যাঁচার নক্স’-য়। লেখার কাজে ‘চলিত-ভাষা ব্যবহারের পক্ষপাতী ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। রবীন্দ্রনাথ-ও পরবর্তী কালে চলিত-ভাষায় উৎকৃষ্ট সাহিত্য রচনা করেন। “চলিত-ভাষা’কে সাহিত্যের সর্বক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য আন্দোলন গড়ে তােলেন প্রমথ চৌধুরী (বীরবল)। বলা যায় প্রমথ চৌধুরীর চেষ্টায় ও রবীন্দ্রনাথের সহযােগিতায় চলিত-ভাষা সাহিত্যের সর্বশাখায় ব্যবহারের স্বীকৃতি লাভ করে।

অতএব বলা যায়, উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে কলকাতা ও ভাগীরথী-তীরবর্তী অঞ্চলের শিক্ষিত জনগণের মৌখিক ভাষার উপর ভিত্তি করে উদ্ভব হয়, তাকে বলে শিষ্ট চলিত-ভাষা।

যে সর্বজনগ্রাহ্য সাহিত্যিক ভাষার সাধু-ভাষা : সাধু-ভাষা, আরাে নির্দিষ্ট করে বললে বলতে হয় সাধু গদ্যভাষা-র উছুব উনবিংশ শতাব্দীতে। পুরনাে দলিল দস্তাবেজে ও ব্যক্তিগত চিঠিপত্রের মধ্যে সংস্কৃত ও আরবি-ফারসি শব্দবহুল বাংলা গদ্য ভাষার দু-একটি নিদর্শন হয়ত আছে। কিন্তু সমগ্র বাংলার শিক্ষিত মানুষ লেখা-পড়ার কাজে যে গদ্য ভাষা ব্যবহার করেন তার উদ্ভব ঊনবিংশ শতাব্দীতেই। রামমােহন রায়, তাঁর ‘বেদান্ত গ্রন্থে (১৮১৫ খৃঃ) ‘সাধুভাষা' কথাটি সম্ভবত প্রথম ব্যবহার করেন। সংস্কৃত জানা, শিক্ষিত সংস্কৃতিমান লােকেদের দ্বারা ব্যবহৃত ভাষা-ই সাধু-ভাষা। আর, সংস্কৃতে অনভিজ্ঞ লােক সাধারণের মধ্যে প্রচলিত ভাষা হল অপর ভাষা। বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর ‘বাঙ্গালা ভাষা' প্রবন্ধে লিখেছেন, “কিছু কাল পূর্বে দুইটি পৃথক ভাষা বাঙ্গলায় প্রচলিত ছিল। একটির নাম সাধু-ভাষা অপরটির নাম অপর ভাষা। একটি লিখিবার ভাষা, দ্বিতীয়টি কহিবার ভাষা। পুস্তকে প্রথম ভাষাটি ভিন্ন, দ্বিতীয়টির কোন চিহ্ন পাওয়া যাইত না।” ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার, হরপ্রসাদ রায়, রাজীবলােচন মুখােপাধ্যায় প্রমুখ সংস্কৃত পণ্ডিতেরাই প্রথম সাধু বাংলা গদ্যরীতির একটা কাঠামাে দাঁড় করান, তারপর রামমােহন রায় থেকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের কালে পৌঁছে তা সমগ্র শিক্ষিত বাঙালীর লিখিত ভাষার আদর্শ-রূপ হয়ে যায়। বিদ্যাসাগর লিখিত, সাহিত্য-গুণান্বিত সাধুরূপটিই বঙ্কিমচন্দ্র-রবীন্দ্রনাথের প্রতিভার দানে পুষ্ট হয়ে সহজ-সরল ও সর্বজনগ্রাহ্য হয়ে ওঠে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ দিপাল সাহিত্যিকেরাও তাঁদের রচনায় সাধু-ভাষাই ব্যবহার করেছেন। এখনাে অনেকে, পাঠ্যপুস্তক ও প্রবন্ধাদি সাধু-ভাষাতেই লিখে থাকেন। অতএব বলা যায় উনিশ শতকের প্রথম থেকে সমগ্র বাংলার শিক্ষিত-সমাজ লেখা-পড়ার কাজে, মৌখিক ভাষা থেকে স্বতন্ত্র, ক্রিয়া ও সর্বনাম পদের পূণাঙ্গরূপসহ তৎসম শব্দবহুল যে মার্জিত গদ্যভাষা ব্যবহার করে আসছেন, তাকে বলে সাধু-ভাষা।

সাধু ও চলিত-ভাষার পার্থক্য

সাধু ও চলিত-ভাষার মৌলিক পার্থক্য কোথায় তা নির্দেশ করে আচার্য সুনীতিকুমার লিখেছেন ‘সাধুভাষা সমগ্র বঙ্গদেশের সম্পত্তি। ইহার চচা সর্বত্র প্রচলিত থাকাতে, বাঙালীর পক্ষে ইহাতে লেখা সহজ হইয়াছে। এই সাধুভাষার ব্যাকরণের রূপগুলি (বিশেষতঃ অসমাপিকা, সমাপিকা ক্রিয়া ও সর্বনাম পদের রূপগুলি) প্রাচীন বাংলার রূপ। এই রূপগুলি এককালে সারা পশ্চিমবঙ্গেই চলিত ছিল, কিন্তু এখন আর সর্বত্র মৌখিক বা কথিত ভাষায় চলিত নাই কেবল সাধুভাষার লেখাতেই এগুলির ব্যবহার করা হয়।সাহিত্যে সাধুভাষার পাশে, রাজধানীর এই মৌখিক ভাষার আধারের উপরে গঠিত আর এক সাহিত্যিক ভাষা-রূপ বিশেষ প্রতিষ্ঠা লাভ করিয়াছে। ইহাকে বলা হয়। চলিতভাষা।...সাধুভাষার নিজস্ব ভঙ্গি ও ছন্দ আছে, চলিতভাষারও নিজস্ব ভঙ্গি ও ছন্দ আছে। কিন্তু ইহা বাংলা সাধুভাষা ও চলিতভাষার মধ্যে পার্থক্যের প্রধান লক্ষণ নহে। বিশেষ ভাবে অসমাপিকা ও সমাপিকা ক্রিয়া এবং সর্বনাম পদের রূপের পার্থক্য ধরিয়াই বাংলা সাধুভাষা ও চলিতভাষার মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করা হইয়া থাকে।”

সাধু-ভাষা ও শিষ্ট চলিত-ভাষা সূত্রাকারে এবার সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য: 

১. সাধু-ভাষা সাধারণত সংস্কৃত বা তৎসম শব্দবহুল। সংস্কৃত ভাষার অনুকরণে সন্ধি ও সমাসবহুল পদবিন্যাসের ঝোঁকও ঊনবিংশ শতাব্দীর সাধু-ভাষায় লক্ষ্য করা গেছে। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের যুগ থেকে ধীরে ধীরে সাধু-ভাষায় সন্ধি ও সমাসবহুল তৎসম শব্দ ব্যবহারের প্রবণতা কমে আসে।

চলিত-ভাষায় তদ্ভব শব্দের ব্যবহার-ই বেশি। অনেকে দেশী ও বিদেশী শব্দও আকছার ব্যবহার করে থাকেন। কেউ কেউ তৎসম শব্দও বহুল পরিমাণে ব্যবহার করেন। এ ক্ষেত্রে বাঁধাধরা কোন নিয়ম নেই। তবে, সন্ধি-সমাসবদ্ধ তৎসম শব্দের ব্যবহার যতদূর সম্ভব কমিয়ে চলিত-ভাষা লেখাই উচিত। সাধারণত দেখা যায় তৎসম-তদ্ভব শব্দগুলাে স্বরসঙ্গতি, অপিনিহিতি, অভিশ্রুতি, সমীকরণ, ধ্বনিলােপ প্রভৃতি ধ্বনি-পরিবর্তনের নিয়মে কিছুটা বদলে গিয়েই চলিত ভাষায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন—

তৎসম ‘হস্ত’ > তদ্ভব ‘হাত’, চন্দ্র > চাঁদ, পক্ষী > পাখি, অদ্য > আজ, মৃত্তিকা > মাটি, চক্ষু চোখ, দ্বিপ্রহর > দুপুর ইত্যাদি। সংস্কৃত ‘জালিক’ শব্দটি > জলিয়া > অপিনিহিতি জাইল্যা থেকে অভিশ্রুতির ফলে চলিত-ভাষায় ‘জেলে হয়েছে। অধিকাংশ ক্রিয়াপদ অভিশ্রুতির ফলেই চলিত রূপ লাভ করে থাকে। করিয়া > কইর্যা > করে, যাইয়া > যেয়ে, চলিয়া > চলে ইত্যাদি। স্বরসঙ্গতির নিয়মে বিলাতি > বিলিতি, দেশী> দিশি, নাই>নেই, লিখা > লেখা, ভিজা >ভেজা, শিয়াল > শেয়াল, লিখাইব > লেখাব, শুনা > শােনা, গিয়া > গিয়ে ইত্যাদি শব্দ রূপান্তরিত হয়ে চলিত ভাষায় ব্যবহৃত হয়। 

স্বরধ্বনি, ব্যঞ্জনধ্বনি ইত্যাদি লােপের ফলেও বহু তৎসম শব্দ রূপান্তরিত হয়ে চলিত রূপ লাভ করে থাকে। অলাবু > লাউ, কলিকাতা > কলকাতা, উডুম্বর > ডুমুর, বড়দিদি > বড়দি, আলোেক > আলাে, অশ্বত্থ > অশথ, কাপাস > কাপাস, ফলাহার > ফলার, মহাশয় > মশায়, তাহার > তার, গাহিতে > গাইতে, নাহিতে >নাইতে ইত্যাদি। - >

২. সাধু ও চলিত ভাষার ক্ষেত্রে সমাপিকা, অসমাপিকা ও যৌগিক ক্রিয়ার রূপের পার্থক্যটি বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায়। অসমাপিকা ও সমাপিকা ক্রিয়ার পূর্ণাঙ্গ সাধু রূপগুলি চলিত-ভাষায় সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়। সমাপিকা ক্রিয়া - হইতেছে (সাধু) হচ্ছে (চলিত), হইয়াছে > হয়েছে, হইল > হ’ল, হইত > হত, হইতেছিল > হচ্ছিল, হইয়াছিল > হয়েছিল, হইবে > হবে ইত্যাদি। অসমাপিকা ক্রিয়া যাইয়া (সাধু) > যেয়ে (চলিত), হাসিতে > হাসতে, দেখিবার > দেখবার ইত্যাদি। যৌগিক বা সংযােগমূলক ক্রিয়াপদ গমন করিল (সাধু) > গেল (চলিত), শ্রবণ করিলেন > শুনলেন, রােদন করিতে করিতে > কাঁদতে কাঁদতে, ভ্রমণে বাহির হইলেন > বেড়াতে গেলেন, নিপতিত হইল > পড়ল ইত্যাদি।

৩. সাধু-ভাষার সর্বনাম পদের পূর্ণাঙ্গ রূপটি চলিত ভাষায় সব সময়ই সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়। যেমন তাহার (সাধু-ভাষার পূর্ণাঙ্গ রূপ) > তার (চলিত-ভাষার সংক্ষিপ্ত রূপ), তাঁহাদের > তাঁদের, যাহাদের > যাদের, কাহারা > কারা, কাহাকেও > কাউকে, ! কাকেও, কেহ > কেউ, তাহা > তা, সেই > সে, উহার > ওর ইত্যাদি। 

৪. সাধু ও চলিত ভাষার অব্যয় ও অনুসর্গের (পদান্বয়ী অব্যয়) রূপের ক্ষেত্রেও পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।– জন্য (সাধু) > জন্যে (চলিত), দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক > দিয়ে, হইতে > হতে, থেকে, অপেক্ষা চেয়ে ইত্যাদি। অৰ্যয় – সংস্কৃত অব্যয় পদ চলিত-ভাষায় তম্ভব রূপ লাভ করে। যেমনঅত্র (সংস্কৃত) > এইখানে (সাধু) / > উপর > ওপর, যদ্যপি>যদিও যদিই, তথাপি> তবুও, পুনঃ > আবার, পুনরপি > এখানে (চলিত), অনন্তর । অতঃপর > তারপর, অদ্য > আজ, উপরি / > আবারও ইত্যাদি।

৫. “সাধু-ভাষার নিজস্ব ভঙ্গি ও ছন্দ আছে, চলিত-ভাষারও নিজস্ব ভঙ্গি ও ছন্দ আছে।” অথাৎ সাধু-ভাষার চাল গুরুগম্ভীর এবং চলিত-ভাষার চাল কিছুটা লঘু। চলিত-ভাষায় তদ্ভব, দেশী, বিদেশী, ধ্বন্যাত্মক শব্দ বেশি ব্যবহার করা হয়। ফলে, লিত-ভাষায় একটা স্বচ্ছন্দ গতি লক্ষ্য করা যায় এবং লােকে সহজে তা বুঝতে পারে।

সাধু-ভাষার উদাহরণ

১. তৎসম শব্দবহুল সাধু-ভাষা: 

i.“দণ্ডকারণ্যে প্রাচীন নদীতীরে বহু কালাবধি এক তপস্বী তপস্যা করেন বিবিধ কৃচ্ছসাধ্য তপঃ করিয়াও তপঃসিদ্ধিভাগীহন না।” ------প্রবােধ চন্দ্রিকা মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার 

ii.“তাঁহার অনুগতদিগের ঐ গ্রন্থ বিখ্যাত করাতে অন্তঃকরণে যথেষ্ট হর্ষ জন্মিয়াছে যে এইরূপ শাস্ত্রার্থের অনুশীলনের দ্বারা সকল শাস্ত্র প্রসিদ্ধ যে পথ তাহা প্রকাশ হইতে পারিবে।”

                                                                                         ---- ভট্টাচার্যের সহিত বিচার রামমােহন রায় 

iii.“এইরূপ কৌতূহলাক্রান্ত হইয়া রাজা শব্দানুসারে কিঞ্চিৎ অগ্রসর হইয়া দেখিলেন, এক অতি অল্পবয়স্ক শিশু সিংহশিশুর কেশর আকর্ষণ করিয়া অতিশয় উৎপীড়ন করিতেছে, দুই তাপসী সমীপে দণ্ডায়মান আছেন। দেখিয়া চমৎকৃত হইয়া রাজা মনে মনে কহিতে লাগিলেন, তপােবনের কি অনির্বচনীয় মহিমা!”

                                                                                                                    ------- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর 

iv.“এখানে এক দিবস দুঃসহ গ্রীষ্মতিশয় প্রযুক্ত অত্যন্ত ক্লান্ত হইয়া সায়ংকালে যমুনাতীরে উপবেশন পূর্বক সুললিত লহরীলীলা অবলােকন করিতেছিলাম।” -------স্বপ্নদর্শন-বিদ্যাবিষয়ক অক্ষয়কুমার দত্ত 

২. সন্ধি-সমাস প্রায় বর্জিত সাধু-ভাষা:

i.‘‘অশ্বারােহী পর্বতের উপর হইতে দেখিল, চারিজনে একজনকে বাঁধিয়া রাখিয়া চলিয়া গেল। আগে কি হইয়াছে, তাহা সে দেখে নাই, তখন সে পৌঁছে নাই পাচ্ছে না।' 

ii.“আহারাদির পর দুপুরবেলা তাহার মা কখনাে কখনাে জানালার ধারে আঁচল পাতিয়া শুইয়া হেঁড়া কাশীদাসী মহাভারতখানা সুর করিয়া পড়িত। বাড়ীর ধারে নারিকেল গাছটাতে শঙ্খচিল ডাকিত, অপু নিকটে বসিয়া হাতের লেখা ক-খ লিখিতে লিখিতে একমনে মায়ের মুখের মহাভারত পড়া শুনিত।” 

                                                                                                         -----বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top