Advertisement

অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস| সপ্তম অধ্যায়|২ ও ৩ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর| সাম্প্রদায়িকতা থেকে দেশ ভাগ

অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস| সপ্তম অধ্যায়|২ ও ৩ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|সাম্প্রদায়িকতা থেকে দেশ ভাগ


অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস সপ্তম অধ্যায় ২ ও ৩ উত্তর

প্রিয় বন্ধুরা 

অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস| সপ্তম অধ্যায়|২ ও ৩ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর| সাম্প্রদায়িকতা থেকে দেশ ভাগ আজকে আলোচনা করব |তোমরা West Bengal Class 8 History পেয়ে যাবে|অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর|অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস সপ্তম অধ্যায় ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|West Bengal Class Eight| অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস সপ্তম অধ্যায় ৩ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|Class 8 History Question and Answer|Class 8 History 7th chapter Suggestion WBBSE|Class 8 History 7th chapter Notes WBBSE |ইতহাস প্রশ্নোত্তর|ইতিহাস মক টেস্ট| itihas proshno o uttor|History Mock Test|


এছাড়াও তোমরা পাবে অষ্টম শ্রেণী সপ্তম অধ্যায় সাম্প্রদায়িকতা থেকে দেশ ভাগ থেকে বহুবিকল্প ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর|MCQ, Very Short Question, Short Questions, Descriptive Question and Answer এগুলি তোমরা যারা পশ্চিমবঙ্গের VIII History Examination এর জন্য পরিক্ষা দিতে যাচ্ছ অথবা পশ্চিমবঙ্গ অষ্টম শ্রেণীতে পড়াশুনা করছো তাদের ইতিহাস পরীক্ষার জন্য এই ২ নম্বরের প্রশ্নগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ন এবং তোমরা যারা অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস (সপ্তম অধ্যায় সাম্প্রদায়িকতা থেকে দেশ ভাগ) ৩ নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর চাইছো, তারা নীচের দেওয়া প্রশ্নউত্তর গুলি ভালো করে পড়ে নিতে পারবে।


অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস|সপ্তম অধ্যায়|২ ও ৩ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|সাম্প্রদায়িকতা থেকে দেশ ভাগ

1. সাম্প্রদায়িকতা বলতে কী বাোঝাো ?

উ:-  বহু ধর্ম, বর্ণ, পেশায় বিভক্ত আমাদের সমাজ। কোনাো ধর্ম, বর্ণ বা পেশাগগাষ্ঠী যখন কেবল নিজ নিজ স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টায় লিপ্ত থাকে, তখন তাকে সাম্প্রদায়িকতা বলে।

i.ধর্মীয়: কোনাো একটি ধর্মীয় গাোষ্ঠীর মানুষেরা যদি কেবল নিজেদের মঙ্গল, সুযাোগসুবিধার চেষ্টা করে, তাকে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা বলে।

ii. শ্রেণি: বিভিন্ন ধর্মের মানুষ যখন এক আর্থ-সামাজিক কাঠামাোর মধ্যে নিজ শ্রেণির সুযাোগসুবিধার চেষ্টা করে তাকে শ্রেণি সাম্প্রদায়িকতা বলে।

অধ্যাপক এ আর দেশাই সাম্প্রদায়িকতা প্রসঙ্গে বলেছেন, সাম্প্রদায়িকতা হল বিভিন্ন ধর্মের কায়েমি স্বার্থবাদীদের মধ্যে সংগ্রামের ছদ্মবেশমাত্র। এরা বিভিন্ন বিরাোধকে সাম্প্রদায়িক রূপে পরিণত করে। সাম্প্রদায়িক বিরাোধের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বুদ্ধিজীবী শ্রেণি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।


2. ভারতে সাম্প্রদায়িকতা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদ প্রসারের কারণগুলি কী ছিল?

উ:- বহুজাতি অধ্যুষিত ভারতবর্ষে সাম্প্রদায়িকতা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদ প্রসারের পিছনে একাধিক কারণ ছিল 

i. ব্রিটিশ সরকার শিক্ষা, সরকারি চাকরি ইত্যাদি ক্ষেত্রে ধর্মীয় পরিচয়কে গুরুত্ব দিতে থাকে। ফলে মুসলিমরা হিন্দুদের মতাো সুযাোগসুবিধা পেত না, যা তাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল।

ii. মুসলিম সমাজ ও ইংরেজি শিক্ষাগ্রহণ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছিল।

iii. ঔপনিবেশিক সরকারের বিভাজন নীতিও সাম্প্রদায়িকতা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদে ইন্ধন জুগিয়েছিল।

iv. ব্রিটিশ সরকার ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠা এবং পৃথক জাতির জন্য পৃথক নির্বাচনের অধিকার প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।


3. ভারতীয় সমাজে পৃথকরণের ধারণা তৈরিতে ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারির কী ভূমিকা ছিল ?

উ:- ভারতীয় সমাজে পৃথককরণের ধারণা তৈরিতে ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এই গণনায় পরিষ্কার হয় যে, বাংলা ও পঞ্জাবে জনসংখ্যার অর্ধেকই হল মুসলমান। জনগণনার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকার ব্যক্তির ধর্মীয় ও জাতিগত পরিচয়কেই প্রধান বলে মনে করত। প্রতিটি সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য আলাদা আলাদা হিসাব বিভিন্ন ধর্মীয় গাোষ্ঠী এবং যার ফলে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সুযাোগসুবিধা পাওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা পরবর্তীকালে সাম্প্রদায়িকতার জন্ম দিয়েছিল, যার প্রভাব পড়েছিল ভারতীয় সমাজ ও রাজনীতিতে।


4. স্বদেশি আন্দোলন বাংলার হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ককে কীভাবে প্রভাবিত করেছিল?

উ:- ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জনের বাংলা ভাগের প্রতিবাদে স্বদেশি আন্দোলন হয়েছিল। স্বদেশি আন্দোলনকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক প্রভাবিত হয়েছিল।

i. স্বদেশি আন্দোলনকে ঘিরে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক জটিল হয়েছিল। এই সময় বঙ্গভঙ্গ-বিরাোধী হিন্দু নেতারা বলেন যে, হিন্দুদের তুলনায় মুসলমানদের বেশি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ফলে এই সময় বাঙালি পরিচয়ের পরিবর্তে হিন্দু-মুসলমান পরিচয় বড়াো হয়ে ওঠে।

ii. বঙ্গভঙ্গ বিরাোধীদের গরিব চাষিদের বিদেশি কাপড় বর্জন করার জন্য জোর করার ফলেও হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক তিক্ত হয়েছিল ।


আরও পড়ুন......


5. খিলাফৎ আন্দোলন বলতে কী বাোঝায়? এই আন্দোলনের লক্ষ্য কী ছিল ?

উ:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় মুসলমানরা ইসলাম জগতের ধর্মগুরু খলিফা’-র মর্যাদা রক্ষার জন্য যে আন্দোলন করেছিল তা খিলাফৎ আন্দোলন’ নামে পরিচিত।

i. আন্দোলনের লক্ষ্য: খিলাফৎ আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল মূলত মুসলমান জগতের ধর্মগুরু খলিফার মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখা। 2 ধর্মগুরু খলিফার তুরস্কের সাম্রাজ্য অটুট রাখা। 3 মুসলমানদের পবিত্র তীর্থস্থানগুলির উপর বিদেশি হস্তক্ষেপ বন্ধ করা।


6. ভারতীয় মুসলমানরা খিলাফৎ আন্দোলন শুরু করেছিল কেন ?

উ:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্ক ছিল ইংল্যান্ডের প্রতিপক্ষ। তুরস্কের সুলতান ইসলাম ধর্মীয় জগতের গুরু বা খলিফা ছিলেন। আবার ভারত ইংল্যান্ডের শাসনাধীন ছিল। তাই আনুগত্যের প্রশ্নে ভারতীয় মুসলমানরা সমস্যায় পড়ে। তারা খিলাফৎ আন্দোলন শুরু করে (১৯১৯ খ্রি.)।

i. খলিফার মর্যাদা রক্ষা: প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের পরাজয় ঘটে। ইংল্যান্ড তুর্কি সাম্রাজ্যের ব্যবচ্ছেদ করে ও কিছু অংশ দখল করে। এর ফলে তুর্কি সুলতানের তথা মর্যাদাহানি ঘটে।

ii. পবিত্র স্থান রক্ষা: মুসলমানদের পবিত্র তীর্থস্থানগুলি (মক্কা, মদিনা, কারবালা, বাগদাদ) ইংল্যান্ড ও মিত্রশক্তির নিয়ন্ত্রণে আসে।

iii. প্রতিশ্রুতিভঙ্গ: যুদ্ধের সময় ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ ভারতীয় মুসলমান নেতাদের প্রতিশ্রুতি দেন, খলিফার অমর্যাদা করা হবে না। কিন্তু যুদ্ধশেষে সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়নি। প্রশ্নে ভারতীয এই সমস্ত কারণে ইসলামের নিরাপত্তার মুসলমানরা খিলাফৎ আন্দোলন শুরু করে।


7. খিলাফৎ আন্দোলন কেন বন্ধ হয়?

উ:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত তুরস্কের সুলতান তথা খলিফা মর্যাদা রক্ষা ও ইসলামের পবিত্র স্থানগুলি রক্ষার দাবিতে ভারতী মুসলিমরা খিলাফৎ আন্দোলন করে। কিন্তু তা বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে যায় ?

i. অসহযাোগ আন্দোলন প্রত্যাহার: হিন্দু-মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠা জন্য গান্ধিজি অসহযাোগের সঙ্গে খিলাফৎ আন্দোলনকে যু করেন। দুটি আন্দোলন একসঙ্গে পরিচালিত হয় (১৯২০ খ্রি.) কিন্তু চৌরিচৌরা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গান্ধিজি অসহযাো আন্দোলন প্রত্যাহার করেন (১৯২২ খ্রি., ৫ ফেব্রুয়ারি)। ফলে খিলাফৎ আন্দোলনও গতি হারিয়ে ফেলে।

ii. খলিফাতন্ত্রের অবসান: ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে কামাল পাশ খলিফাতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে তুরস্ককে প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণ করেন। ফলে আন্দোলন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে।


8. আলিগড় আন্দোলন বলতে কী বাোঝায়?

উ:- ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির আমলে মুসলিম সমাজ পাশ্চাত্য শিক্ষাগ্রহণ না করে শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে। এই অবস্থায় মুসলিম সমাজের ত্রাণকর্তা ছিলেন স্যার সৈয়দ আহমদ খান (১৮১৭-৯৮)। তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের জন্য ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে সায়েন্টিফিক সাোসাইটি এবং ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে আলিগড় অ্যাংলাো ওরিয়েন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এই আলিগড় কলেজকে কেন্দ্র করে মুসলমান সমাজের ।


9. আলিগড় আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য কী ছিল ?

উ:- স্যার সৈয়দ আহমদ খান ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে আলিগড়ে মহামেডান অ্যাংলাো ওরিয়েন্টাল কলেজ* প্রতিষ্ঠা করেন। এই কলেজকে কেন্দ্র করে মুসলিম সমাজের সংস্কার আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল বলে একে আলিগড় আন্দোলন বলা হয়।

i. মুসলমান সমাজের আধুনিকীকরণ করা। তাই তিনি এখানে ইসলামীয় ধর্মতত্ত্বের সঙ্গে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন।

ii. মুসলমান সমাজ যাতে ব্রিটিশ শাসনের সুযাোগসুবিধাগুলাো ব্যবহার করতে পারে তার চেষ্টা করা।

iii. মুসলমান অভিজাত ও শিক্ষিত শ্রেণিকে স্বনির্ভর করা।

iv. মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে একটি গাোষ্ঠী-মানসিকতা গড়ে তাোলা


10. স্যার সৈয়দ আহমদ খানের মৃত্যুর পর আলিগড় আন্দোলনের গুরুত্ব কমে যায় কেন?

উ:- স্যার সৈয়দ আহমদ খানের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আলিগড় আন্দোলন মুসলিম সমাজে আধুনিকতা ও নবজাগরণের সূচনা করেছিল। কিন্তু তার মৃত্যুর পর এই আন্দোলনের গুরুত্ব কমে যায়।

i. নেতৃত্বের অভাব: স্যার সৈয়দ আহমদ খানের মৃত্যুর (১৮৯৮ খ্রি.) পর যাোগ্য নেতৃত্বের অভাব ঘটে। রক্ষণশীল মুসলিম সমাজকে পাশ কাটিয়ে ইংরেজদের সাহায্য নিয়ে উন্নতি করতে কেউ পারেনি। আলি ভ্রাতৃদ্বয়ের মতাো ধর্মীয় নেতার উদ্ভব ঘটে।

ii. বিকল্প চিন্তা: সমকালীন মুসলিম সমাজ আর্থ-সামাজিক দিক থেকে হিন্দুদের তুলনায় পিছিয়ে ছিল। তাই সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য মুসলিম সমাজ বিকল্প চিন্তা করে। তা ছিল একদিকে ইসলামীকরণ ও অন্যদিকে সংকীর্ণ বিচ্ছিন্নতা।

iii. শিক্ষাপ্রসার: ভারতের অন্যান্য মুসলিমপ্রধান অঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। সেইসব অণ্ডলে শিক্ষাবিস্তার ঘটে। ফলে আলিগড়ের গুরুত্ব কমে যায় 


11. ভারতে মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট কী ছিল ?

উ:-  স্যার সৈয়দ আহমদ খান আলিগড় আন্দোলনের মাধ্যমে যে দ্বিজাতি তত্ত্বের বীজ বপন করেন, তা ক্রমে অঙ্কুরিত হয় এবং নিখিল ভারত মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করে।

i. মুসলিমদের হতাশা: পাশ্চাত্য শিক্ষা সরকারি চাকুরি, আর্থিক অবস্থা প্রভৃতি ক্ষেত্রে মুসলমানরা হিন্দুদের তুলনায় পিছিয়ে ছিল। সামাজিক প্রগতি অবরুদ্ধ ছিল। এই দুরবস্থার প্রতিকার দরকার ছিল।

ii. হিন্দু প্রতিক্রিয়া: সমাজে মুসলমানদের প্রতি হিন্দুদের তাচ্ছিল্য ও নেতিবাচক মনাোভাব মুসলমানদের জোটবদ্ধ ও আধুনিক হতে উদ্বুদ্ধ

iii. পরিণতি: এই প্রেক্ষাপটে স্যার সৈয়দ আহমদ খানের প্রতিষ্ঠিত মুসলিম শিক্ষা সম্মেলনের ঢাকা অধিবেশনে (৩ ডিসেম্বর, ১৯০৬ খ্রি.) নবাব সলিমউল্লাহর সভাপতিত্বে নিখিল ভারত মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠিত


12. মহম্মদ আলি জিন্নাহ কী কারণে চোদ্দো দফা দাবি পেশ করেন ? এই দাবিগুলি কী ছিল?

উ:- নেহরু রিপাোর্টকে কেন্দ্র করে যখন মুসলিম লিগ দ্বিধাবিভক্ত, তখন মুসলমান সমাজের মধ্যে ঐক্য ফিরিয়ে আনার জন্য মহম্মদ আলি জিন্নাহ ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ২৮ মার্চ লিগের দিল্লি অধিবেশনে কতকগুলি প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এই প্রস্তাবগুলি ইতিহাসে ‘চোদ্দ দফা দাবি নামে বিখ্যাত হয়ে আছে।

দাবিসমূহ: এই দাবিগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল— 

i. কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মন্ত্রীসভায় ১/৩ অংশ মুসলিম সদস্য গ্রহণ

ii. যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন।

iii. ভারতীয় প্রদেশগুলির পুনর্গঠন এবং তাদের স্বশাসনের অধিকার দান।

iv.প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে তাদের ধর্মপালনের সমান সুযাোগ প্রদান। এবং প্রতিটি সম্প্রদায়কে যৌথ নির্বাচনী ব্যবস্থা গ্রহণের অধিকার দান।

v. ইসলাম ধর্ম, সংস্কৃতি ও আইন সংরক্ষণের জন্য সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রদান।

vi. রাজ্যস্তরে ও স্থানীয় সংস্থাগুলিতে মুসলিমদের জন্য পদ সংরক্ষণ ইত্যাদি।


13. ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ ভারতে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কেন?

উ:- ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দ ভারতে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সময়। এইসময় থেকে দ্বিজাতিভিত্তিক সাম্প্রদায়িক বিচ্ছিন্নতার যুগ শুরু হয়।


আরও পড়ুন......

 ১ নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর


14. দ্বিজাতি তত্ত্ব বলতে কী বাোঝায়?

উ:- দ্বিজাতি তত্ত্ব ভারত ইতিহাসে একটি বহু আলাোচিত বিষয়। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির উত্থান ও বিচ্ছিন্নতার ক্ষেত্রে এই মতবাদ ভূমিকা পালন করে।

i. দ্বিজাতি তত্ত্ব: ভারতবর্যেবসবাসরত হিন্দু ও মুসলমানরা কেবল দুটি আলাদা ধর্মীয় সম্প্রদায়ই নয়, তারা আলাদা দুটি জাতি। স্যার সৈয়দ আহমদ খান তাদের পরস্পর যুদ্ধরত দুটি দেশ বলে উল্লেখ করেন। মহম্মদ আলি জিন্নাহ তাদের সমাজ-সাহিত্য-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য সবকিছুকেই আলাদা বলেন। এ ছাড়া জাতি সংক্রান্ত যে-কোনাো ব্যাখ্যায় মুসলিমদের আলাদা জাতি বলে অভিহিত করেন।


15. কে প্রথম স্বতন্ত্র মুসলিম রাষ্ট্রের দাবি জানান? ইতিহাসে তিনি স্মরণীয় কেন?

উ:-  মহম্মদ ইকবাল প্রথম স্বতন্ত্র মুসলিম রাষ্ট্রের দাবি জানান।

i. আধুনিক ভারতের একজন খ্যাতনামা উর্দু কবি ছিলেন মহম্মদ ইকবাল। তিনি দার্শনিক ও রাজনীতিক হিসেবেও পরিচিত।

ii. মুসলিম লিগের সভাপতি হিসেবে ইকবাল ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে পঞ্জাব

iii. মানবতাবাদী ইকবাল বিশ্বাস করতেন মহম্মদ ইকবাল যে, ভালাো কাজ মানুষকে শান্তি ও অমরত্ব প্রদান করে।

iv. তাঁর দেশাত্মবাোধক কবিতা ‘সারে জাহা সে আচ্ছা, হিন্দুস্তাঁ হমারা  রচনার জন্য তিনি অধিক পরিচিত।


16. সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা বলতে কী বাোঝায় ?

উ:-  ১৯৩০-এর দশক ছিল দ্বিজাতি তত্ত্বভিত্তিক সাম্প্রদায়িক বিচ্ছিন্নতার গুরুত্বপূর্ণ সময়। এর পাশাপাশি এই দশকের শুরুতেই দেখা দিয়েছিল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন আইন অমান্য আন্দোলন, যাতে মুসলিম সমাজের অংশগ্রহণ ছিল খুব কম। ফলে এই সময় সমাজে হিন্দু ও মুসলমানদের বিভেদ বিশেষভাবে প্রকট হতে থাকে।

i. পাকিস্তানের উল্লেখ : ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লিগের সভাপতি মহম্মদ ইকবাল ও পরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র চৌধুরি রহমৎ আলি পঞ্জাব, উ: পশ্চিম সীমান্তপ্রদেশ, বালুচিস্তান ও কাশ্মীর নিয়েমুসলমানদের জন্য পৃথকরাষ্ট্রগঠনের প্রস্তাব দেন। রহম আলি অস্পষ্টভাবে পাকিস্তান নামটি উল্লেখ করলে বিভেদনীতি চরম পর্যায়ে পৌঁছাোয়।


17. পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে কবি ইকবাল ও চৌধুরি রহমৎ আলির প্রস্তাবগুলি আলাোচনা করাো।

উ:- মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠার (১৯০৬ খ্রি.) পর মুসলিমদের সুযাোগসুবিধা লাভের জন্য কিছু দাবি সরকারের কাছে পেশ করা হয়। অনেক পরে পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি ওঠে। এক্ষেত্রে কবি ইকবাল ও রহমৎ আলি কতকগুলি প্রস্তাব দেন।

i কবিইকবাল: ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লিগের সভাপতির ভাষণে তিনি বলেন, আমার মতে মুসলমানদের চূড়ান্ত নিয়তি হল ভারতের উ: পশ্চিম অঞ্ছলে একটি আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।

ii. রহমৎ আলি: কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঞ্জাবি ছাত্র ছিলেন চৌধুরি রহমৎ আলি।


18. সি আর ফর্মুলা বা চক্রবর্তী রাজাগাোপালাচারী প্রস্তাবিত সমঝাোতাগুলি কী ছিল ?

উ:- ভারত-পাকিস্তান দেশবিভাজন আটকানাোর উদ্দেশ্যে কংগ্রেস নেতা চক্রবর্তী রাজাগাোপালাচারী মুসলিম লিগের প্রধান নেতা মহম্মদ আলি জিন্নাহর প্রতি কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে রাজাগাোপালাচারী প্রস্তাবিত এই নির্দেশগুলিই ‘সি আর ফর্মুলা নামে পরিচিত।


19. ওয়াভেল কে ছিলেন? তার পরিকল্পনা কী ছিল?

উ:- লর্ড লিনলিথগাোর পর লর্ড ওয়াভেল ভারতের বডোলাট হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতে রাজনৈতিক সংকট দেখা দিলে তিনি সমাধানের জন্য একটি পরিকল্পনা করেন।

i. লর্ড ওয়াভেল: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আফ্রিকার জার্মান উপনিবেশ ও ইতালির বিরুদ্ধে সফল ব্রিটিশ সেনাপতি ছিলেন লর্ড ওয়াভেল। তিনি ভারতের বড়াোলাট (ভাইসরয়) নিযুক্ত হন।



আরও পড়ুন......


20. ওয়াভেলের সিমলা বৈঠক বলতে কী বাোঝায়?

উ:- লর্ড ওয়াভেল তার পরিকল্পনার বিষয়ে আলাোচনার জন্য ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫ জুন সিমলায় একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন। একে ‘সিমলা বৈঠক’ বলা হয়। ওই বৈঠকে জিন্নাহ পাকিস্তানের দাবিতে অনড় থাকেন। কংগ্রেসের পক্ষেও তাঁর দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না, ফলে সিমলা বৈঠক ব্যর্থ হয়েছিল।


21. ক্যাবিনেট মিশন (মন্ত্রী মিশন, ১৯৪৬ খ্রি.) কী উদ্দেশ্যে ভারতে এসেছিল? ক্যাবিনেট মিশনের (মন্ত্রী মিশনের) পরিকল্পনা কী ছিল?

উ:- ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ক্রিপস মিশন ব্যর্থ হলে তার সূত্র ধরেই পুনরায় একই দল ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ক্যাবিনেট মিশন বা ‘মন্ত্রী মিশন  নামে ভারতে আসে।

i. উদ্দেশ্য: ভারতীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ভারতের স্বাধীনতা সংক্রান্ত আলাোচনা করার জন্য ক্যাবিনেট মিশন ভারতে এসেছিল।

ii. পরিকল্পনা: ক্যাবিনেট ক্যাবিনেট মিশন মিশনের পরিকল্পনা -গুলি হল— ব্রিটিশ শাসিত ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠন করা হবে।

এই ব্যবস্থা ছিল ঐক্য ও বিচ্ছিন্নতার মধ্যে একটি সমন্বয় -সাধনের চেষ্টা। মুসলিম লিগ পরিকল্পনাটি গ্রহণ করলেও কংগ্রেস বর্জন করে


22.  মুসলিম লিগ কেন প্রত্যক্ষ সংগ্রাম-এর ডাক দেয়?

উ:-  ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট মুসলিম লিগ নেতা মহম্মদ আলি জিন্নাহ প্রত্যক্ষ সংগ্রাম-এর ডাক দেন।

i. কারণ: মন্ত্রী মিশন পরিকল্পনায় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাব ছিল। মুসলিম লিগ পরিকল্পনাটি গ্রহণ করে এবং সরকারে অংশগ্রহণ করতে সম্মত হয়। কংগ্রেস সংবিধান সভায় অংশগ্রহণে সম্মত হয়, কিন্তু সরকারে অংশ নেবে কিনা, তা জানতে সময় নষ্ট করে। এই পরিস্থিতিতে জিন্নাহ সাংবিধানিক অধিকার আদায়ের জন্য মুসলিমদের প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক দেন।


23. মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা কী?

উ:-  ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেনকে ভারতের ক্ষমতা হস্তান্তরের দায়িত্ব দিয়ে পাঠান। তিনিই ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের শেষ ভাইসরয় এবং স্বাধীন ভারতের প্রথম বড়াোলাট।

i. মাউন্টব্যাটেনের পরিকল্পনা: ভারতের বড়াোলাট লর্ড মাউন্টব্যাটেন। ভারত বিভাগের যে পরিকল্পনা ঘাোষণা করেছিলেন (১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৩ জুন) তা মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা’ নামে খ্যাত।


24. ভারতীয় স্বাধীনতা আইনব্রিটিশ পার্লামেন্টে কবে পাস হয় এবং কবে তা রাজকীয় সম্মতি লাভ করে?ভারতীয় স্বাধীনতা আইনের দুটি প্রধান ধারা উল্লেখ করাো ?

উ:-  ভারতীয় স্বাধীনতা আইন পাস ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৪ জুলাই ভারতীয় স্বাধীনতা আইন ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হয়। ল এটি ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুলাই রাজকীয় সম্মতি লাভ করে আইনে পরিণত হয়।


25.  স্যার সিরিল র্যাডক্লিফ কে ছিলেন? র্যাডক্লিফ লাইন বলতে কী বাোঝাো ?

উ:-  স্যার সিরিল র্যাডক্লিফ ছিলেন বিশিষ্ট ব্রিটিশ আইনজীবী। লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারত বিভাগের সময়ে যে সীমান্ত কমিশন গঠন করেছিলেন র্যাডক্লিফ ছিলেন তার সভাপতি। 

i. র্যাডক্লিফ লাইন: ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত র্যাডক্লিফ লাইন নামে পরিচিত। স্যার র্যাডক্লিফ অতি অল্প সময়ের মধ্যে ভারত বিভাজনের মানচিত্র তৈরি করেছিলেন। তবে এতে অনেক ত্রুটি ছিল। কারণ ভারতের ভৌগাোলিক অবস্থা সম্পর্কে র্যাডক্লিফের কোনাো প্রত্যক্ষ ধারণা ছিল না এবং সাধারণ মানুষের মতামতকেও কোনাো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।




আরও পড়ুন......



File Details

 

File Name/Book Name

অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস| সপ্তম অধ্যায়|২ ও ৩ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|

File Format

PDF

File Language

Bengali

File Size

130 KB

File Location

GOOGLE DRIVE

Download Link

Click Here to Download PDF File



Join Telegram... Members




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ