চতুর্থ অধ্যায় (২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর)

0

 চতুর্থ অধ্যায় ( নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর)

 চতুর্থ অধ্যায় ( নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর)


1.   সভা সমিতির যুগ বলতে কী বোঝো অথবা উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধকে সভা সমিতির যুগ বলা হয় কেন?
উনিশ শতকের দ্বিতীয় অর্ধে জাতীয় জাগরণের ঊষালগ্নে ভারতবাসি উপলদ্ধি করে যে, অত্যাচারী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে দেশীয় স্বার্থরক্ষা ও সমাজ কল্যানের জন্য জনমত গঠনের একমাত্র উপায় হল সংঘবদ্ধ রাজনৈতিক আন্দোলন। এই প্রেক্ষাপটে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে ওঠে। যেমন কলকাতায় বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা, মাদ্রাজের মাদ্রাজ মহাজন সভা এবং বোম্বায়ে জাতীয় কংগ্রেস প্রভৃতি। এই জন্য ঊনিশ শতকের দ্বিতীয় অর্ধকে ডঃ অনীল শীল সভা সমিতির যুগ বলে অবিহিত করেছেন।
2.   ভারতমাতা চিত্রের গুরুত্ব কি ?
ভারতমাতা চিত্রটি শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এক অসামান্য সৃষ্টি। বঙ্গভঙ্গের প্রেক্ষাপটে এই ব্যাঞ্জনাময় চিত্রট অঙ্কিত হয়। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেশমাতার প্রতিমূর্তি হিসেবে একটি গেরুয়া বস্ত্র পরিহিতা চার হাত বিশিষ্ট একটি নারীর চিত্র এঁকেছেন যার চারটি হাতে পুস্তক , ধানের শিষ, শ্বেত বস্ত্র ও জপের মালা আছে। এই কাল্পনিক ভারতমাতা নীল আকাশের নীচে পৃথিবীর উপর দাঁড়িয়ে আছে। তিনি জাতীয়তার প্রতীক। বিদেশি শাসনের বন্ধন থেকে তিনি জাতিকে জেগে ওঠার  আহ্বান জানাচ্ছেন। এদিক দিয়ে জাতীয়তাবাদ জাগ্রত করার ক্ষেত্রে চিত্রটির গুরুত্ব অপরিসীম। ভগিনী নিবেদিতা ভারতমাতা চিত্রটির অকুন্ঠ প্রসংশা করেছেন।
3.   হিন্দু মেলার অপর নাম কি এর উদ্দেশ্য কি ছিল?
হিন্দু মেলার অপর নাম চৈত্র মেলা।
১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে নবগোপাল মিত্রের উদ্যোগে কলকাতায় ‘জাতীয় মেলা’ বা ‘চৈত্র মেলা’ বা ‘হিন্দুমেলা প্রতিষ্ঠিত হয়।
হিন্দুমেলার উদ্দেশ্য ; (i) বাংলা তথা ভারতের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশেষ করে শিক্ষিত যুবকদের মধ্যে জাতীয় ঐক্যবোধ জাগ্রত করা, (ii) হিন্দুধর্মের অতীত গৌরবগাথা ছড়িয়ে দেওয়া, (iii) সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নতি ঘটানো বিশেষ করে শিক্ষা, সাহিত্য, শিল্প, সংগীত, স্বাস্থ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নতি সাধন করা, (iv) পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রসার প্রতিরোধ করা, (v) জাতীয় প্রতীকগুলিকে মর্যাদা দেওয়া ইত্যাদি ছিল এর উদ্দেশ্য।
4.   ইউরোপীয়রা কেন ইলবার্ট বিলের বিরোধিতা করেন ?
উদারপন্থী শাসক লর্ড রিপন তার আইন সচিব কোর্টনি পি ইলবার্টের মাধ্যমে ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় বৈষম্য দূর করার জন্য একটি বিল প্রস্তুত করেন। এটি ‘ইলবার্ট বিল’ নামে পরিচিত।
ইলবাট বিলের সংশোধন : এই বিলে ভারতীয় বিচারকদের শ্বেতাঙ্গদের বিচারের অধিকার দান করা হলে শাসক জাতি শ্বেতাঙ্গরা তা মানতে অস্বীকার করে। কলকাতা হাইকোর্টের ব্যারিস্টার ব্রানসন-এর নেতৃত্বে এর বিরুদ্ধে গড়ে ওঠে ‘ডিফেন্স অ্যাসোসিয়েশন’। ভারত ও ইংল্যান্ডে ইংরেজরা এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ শুরু করে। বাধ্য হয়ে লর্ড রিপন জুরি ব্যবস্থা প্রবর্তন করে বিলের সঙ্গে মাধ্যমে শ্বেতাঙ্গদের আধিপত্য মেনে নেন। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারতসভা এই বিলের স্বপক্ষে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে।

5.   জাতীয়তাবাদ বলতে কি বোঝো ?
মানবজাতির ক্রমবিবর্তনের ইতিহাসে জাতীয়তাবাদ একটি মহান আদর্শরূপে পরিচিত। জাতীয়তাবাদের উদ্ভব হয় নিজের দেশ ও জাতির প্রতি ভালোবাসা থেকে। জাতীয়তাবাদ একটি ভাবগত ধারণা। কোনো একটি জনসমাজের মধ্যে বংশ, ভাষা, ধর্ম, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ইত্যাদি কারণে ঐক্যবোধ সৃষ্টি হওয়ার ফলে যখন স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জন্য রাজনৈতিক আদর্শ গড়ে ওঠে, তখন সেই আদর্শকে ‘জাতীয়তাবাদ’ বলা হয়।
6.   বাঙালি সমাজ কেন মহাবিদ্রোহ কে সমর্থন করেননি?
সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সমগ্র শিক্ষিত বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজ 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের বিরোধিতা করেন। এমনকি বিদ্রোহ দমনে সরকারকে সাহায্যের প্রস্তাবও দেন।
সমর্থন না করার কারণ কারণ :
(i) তাঁরা ব্রিটিশ শাসনকে ভারতের পক্ষে কল্যাণকর মনে করতেন (ii) ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর কেউ ভারতে জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবে কিনা তাতে তারা ছিলেন সন্দিহান, (iii) ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটলে নিজেদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত - হবেন এই ভয়ে তারা ছিলেন ভীত।
7.   জমিদার সভার প্রথম সভাপতি কে ছিলেন? এর উদ্দেশ্য কি ছিল?
জমিদার সভার প্রথম সভাপতি  হলেন রাধাকান্ত দেব।1838 খ্রিস্টাব্দের 12 নভেম্বর কলকাতার বিশিষ্ট জমিদাররা গড়ে তোলেন ‘জমিদার সভা’ বা ল্যান্ডহোল্ডার্স সোসাইটি।
জমিদার সভার উদ্দেশ্য : এর লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিল
(i) বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা প্রদেশের জমিদারদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও স্বার্থ রক্ষা করা, (ii) ভারতের সর্বত্র চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রসার ঘটানো,(iii) ব্রিটিশ আমলাতন্ত্রকে জমিদারদের অনুকূলে আনা, (iv) নিষ্কর জমি বাজেয়াপ্ত হতে না দেওয়া, (v) রাজস্ব, বিচার ও পুলিশ বিভাগের সংস্কার সাধনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানানো ইত্যাদি।
8.   গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর কিভাবে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যের সমালোচনা করেছেন?
বাংলার চিত্রশিল্প ও কার্টুন শিল্পের ক্ষেত্রে গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর (1867-1938  খ্রিঃ) এক উজ্বল ব্যক্তিত্ব। তিনি বিভিন্ন ব্যঙ্গচিত্রের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক সমাজের তীব্র সমালোচনা করেছেন। এ ছাড়া এগুলিতে বাঙালি চরিত্রের নানা দিক যেমন বাঙালির ইংরেজ প্রীতি, বাঙালির চরিত্রের নানা দিক, ঔপনিবেশিক শাসনের বিভিন্ন দিক ইত্যাদির কথা তুলে ধরেছেন। তিন খণ্ডে প্রকাশিত অদ্ভুত লোক, ‘বিরূপ বস্ত্র’, ‘নয়া হুল্লোড়’ গ্রন্থে তাঁর ব্যঙ্গচিত্রগুলি অন্তর্ভুক্ত। এগুলি ‘প্রবাসী’ ও ‘মডার্ন রিভিউ’ প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে যৌথভাবে তিনি গড়ে তোলেন ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ‘ওরিয়েন্টাল আর্ট’ (1907 খ্রিঃ) নামক এক শিল্প প্রতিষ্ঠান।
9.   মহারানীর ঘোষণাপত্র কি?
1858 খ্রিস্টাব্দের 1লা নভেম্বর ইংল্যান্ডের মহারানি ভিক্টোরিয়া ভারতের শাসন সংক্রান্ত বিষয়ে একটি আইন পাস করেন যা ‘মহারানির ঘোষণাপত্র’ নামে পরিচিত। এতে বলা হয়- (i) ব্রিটিশ সরকার অতঃপর ভারতীয়দের ধর্মীয় ও সামাজিক ব্যাপারে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ করবে না, (ii) জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি  যোগ্যতাসম্পন্ন ভারতীয়ই সরকারি চাকরিতে নিযুক্ত হতে পারবে, (iii) এতে ‘স্বত্ববিলোপ নীতি’ পরিত্যক্ত হয় ও দেশিয় রাজাদের দত্তক পুত্র গ্রহণের অধিকার দান করা হয়, (iv) সরকার ভারতে আর সাম্রাজ্য বিস্তার করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, (v) দেশীয় রাজ্যগুলির সঙ্গে কোম্পানির স্বাক্ষরিত চুক্তি মেনে চলার আশ্বাস দেওয়া হয় ইত্যাদি।
বলাবাহুল্য প্রতিশ্রুতিগুলি ঘোষণাপত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল। সেগুলি পালন করা হয়নি।
10. বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা সম্পর্কে আলোচনা করো।
1836 খ্রিস্টাব্দে টাকির জমিদার কালীনাথ রায়চৌধুরি, দ্বারকানাথ ঠাকুর, প্রসন্নকুমার ঠাকুর প্রমুখের উদ্যোগে কলকাতায় ‘বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা’ গড়ে ওঠে।
‘বঙ্গভাষা প্রকাশিকা সভা’র প্রধান কার্যাবলিগুলি হল- (i) এখানে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা চলতো, (ii) ধর্ম সংক্রান্ত সমস্ত আলোচনা সেখানে নিষিদ্ধ হলেও ব্রিটিশদের গৃহীত। পদক্ষেপগুলি ভারতবাসীর পক্ষে কতটা মঙ্গল-অমঙ্গলের তা এখানে। আলোচনা হত, (iii) 1828 খ্রিস্টাব্দের আইনে নিষ্কর জমির ওপর সরকার কর আরোপ করলে এই সভার মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয় ইত্যাদি।
11.  ভারত সভা সম্পর্কে আলোচনা করো।
সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, আনন্দমোহন বসু, শিবনাথ শাস্ত্রী, দ্বারকানাথ গাঙ্গুলি প্রমুখের উদ্যোগে 1876 খ্রিস্টাব্দের 26 জুলাই কলকাতার অ্যালবার্ট হলে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতসভা বা ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন’।
উদ্দেশ্য :
ভারতসভার দুটি উদ্দেশ্য ছিল- (i) দেশে শক্তিশালী জনমত গঠন করা, (ii) ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন জাতি ও ধর্মাবলম্বী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করা, (iii) হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ঐক্যবোধ জাগ্রত করা ও সম্প্রীতি গড়ে তোলা (iv) জনগণকে ব্রিটিশ-বিরোধী ঐক্য আন্দোলনে শামিল করা ইত্যাদি।
12. ইলবার্ট বিল আন্দোলন বলতে কী বোঝো।
                লর্ড রিপনের (1880-84 খ্রি.) আগে এদেশে কোনো ভারতীয় বিচারক কোনো ইংরেজের বিচার করার অধিকারী ছিল না এই বর্ণবৈষম্য দূর করার উদ্দেশ্যে রিপনের পরামর্শে তার আইন সচিব ইলবার্ট একটি বিল রচনা করেন। এতে ভারতীয় বিচারকরা শ্বেতাঙ্গ ইংরেজদের বিচার করারও অধিকার পায়। এটি ‘ইলবার্ট বিল’ নামে পরিচিত।
13. ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট কি?
ভাইসরয় লর্ড লিটনের শাসনকাল সর্বাধিক বিতর্কিত তাঁর 1878 খ্রীস্টাব্দে 14 মার্চ দেশীয় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণের জন্য প্রণীত  ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্ট এর জন্য। ভার্নাকুলার প্রেস অ্যাক্টের উদ্দেশ্য ছিল দেশীয় সংবাদপত্রের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে পরিচালিত প্রচারণা বন্ধ করা। ভাইসরয় লর্ড লিটন দেশীয় ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রকে কুচক্রী বাজে লেখকদের প্রকাশ্য রাজদ্রোহী প্রচারণা বলে অভিযুক্ত করেন। তিনি মন্তব্য করেন যে, অধিকাংশ দেশীয় সংবাদপত্রের সুস্পষ্ট উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্রিটিশ রাজের পতন ঘটানো।
14. অস্ত্র আইন কি?
                ইংরেজ শাসন-শোষণ ও পীড়নে ভারতবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে বড়োলাট লর্ড লিটন তাদের নিরস্ত্র করার জন্য 1878 খ্রিস্টাব্দে এক আইন পাশ করেন। যা অস্ত্র আইন নামে পরিচিত। এতে বলা হয়, লাইসেন্স ছাড়া কোনো ভারতীয় আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে বা রাখতে পারবে না।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top