ষষ্ঠ শ্রেণী ইতিহাস|দ্বিতীয় অধ্যায়|৫ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারণা

0

ষষ্ঠ শ্রেণী ইতিহাস|দ্বিতীয় অধ্যায়|৫ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারণা


ষষ্ঠ শ্রেণী ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় ৫ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর


প্রিয় বন্ধুরা 

ষষ্ঠ শ্রেণী ইতিহাস|দ্বিতীয় অধ্যায়|৫ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারণা আজকে আলোচনা করব|তোমরা West Bengal Class 6 History পেয়ে যাবে|ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাস প্রশ্ন ও উত্তর|ষষ্ঠ শ্রেণী ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় ৫ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|West Bengal Class Six|Class 6 History Question and Answer|Class 6 History 2nd chapter Sugges -tion WBBSE| Class 6 History 2nd chapter Notes WBBSE|Class 6 History 5 marks Question and Answer|ইতহাস প্রশ্নোত্তর| ইতিহাস মক টেস্ট|itihas proshno o uttor| History Mock Test|


এছাড়াও তোমরা পাবে ষষ্ঠ শ্রেণী দ্বিতীয় অধ্যায় ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারণা থেকে বহুবিকল্প ভিত্তিক সংক্ষিপ্ত অতিসংক্ষিপ্ত এবং রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর|MCQ, Very Short Question, Short Questions ,Descriptive Question and Answer এগুলি তোমরা যারা পশ্চিমবঙ্গের VI History Examin -ation এর জন্য পরিক্ষা দিতে যাচ্ছ অথবা পশ্চিমবঙ্গ ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াশুনা করছো তাদের ইতিহাস পরীক্ষার জন্য এই ৫ নম্বরের প্রশ্নগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ন এবং তোমরা যারা ষষ্ঠ শ্রেণী ইতিহাস (দ্বিতীয় অধ্যায় ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারণা) ৫ নম্বরের প্রশ্ন এবং উত্তর চাইছো, তারা নীচের দেওয়া প্রশ্নউত্তর গুলি ভালো করে পড়ে নিতে পারবে।


ষষ্ঠ শ্রেণী ইতিহাস|দ্বিতীয় অধ্যায়|৫ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর|ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারণা


১. মেহেরগড় সভ্যতার আবিষ্কার, প্রাচীনত্ব ও বিস্তৃতি সম্বন্ধে যা জানো লেখো।


উত্তর :- নব্য প্রস্তরযুগে মানুষের জীবনযাত্রার চরিত্র অনেকটাই পালটে যায়। এই সময় মানুষ খাদ্য সংগ্রাহক থেকে খাদ্য উৎপাদনকারীতে পরিণত হয়। এভাবেই সভ্যতার ঊষালগ্নের সূত্রপাত হয়েছিল। এই পর্বে ভারতীয় উপমহাদেশে মেহেরগড় সভ্যতার আবির্ভাব ঘটেছিল। 


আবিষ্কার: ১৯৭৪  খ্রিস্টাব্দে ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ জাঁ ফ্রাঁসোয়া জারিজ ও মার্কিন প্রত্নতত্ত্ববিদ রিচার্ড মেডো সর্বপ্রথম মেহেরগড় সভ্যতা আবিষ্কার করেন। ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে জারিজ ও সায়েন্টিফিক আমেরিকান তার সহকর্মীরা সভ্যতাটির জনসমক্ষে প্রকাশ করেন। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে সায়েন্টিফিক আমেরিকান পত্রিকায় মেহেরগড় সম্পর্কিত গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়।

প্রাচীনত্ব:- সভ্যতাটির ধ্বংসাবশেষ ও ব্যবহৃত নানা দ্রব্য পরীক্ষানিরীক্ষার পরে ঐতিহাসিকেরা ঘোষণা করেন মেহেরগড় সভ্যতাটি আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০ অব্দে গড়ে উঠেছিল। এই সভ্যতাটির প্রথম স্তরগুলি নব্য প্রস্তরযুগের সমসাময়িক।

অবস্থান:- পাকিস্তানের বোলান নদীর কাছে সমভূমিতে মেহেরগড় সভ্যতা অবস্থিত ছিল বলে ঐতিহাসিকেরা মনে করেন। মেহেরগড় ছাড়া রানা ঘুনতাই, কিলিগুল মোহম্মদ, কোটদিজি, গুমলা, আনজিরা প্রভৃতি ছিল এই সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।

বিস্তৃতি:- আধুনিক ঐতিহাসিকেরা মনে করেন যে, বেলুচিস্তানের বোঝ নদী থেকে পশ্চিম ভারতের সিন্ধুনদ পর্যন্ত বিশাল অঞ্চল জুড়ে মেহেরগড় সভ্যতা প্রায় ৫০০ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। এই সভ্যতাটির পূর্বদিকে থর মরুভূমি ও হিমালয় পর্বত, পশ্চিমে আরবের মরুভূমি, ইরাক ও ইরান, উত্তরে হিন্দুকুশ, কারাকোরাম প্রভৃতি পর্বতমালা এবং দক্ষিণে ছিল মহেনজোদারো সভ্যতা।

 

২. মেহেরগড় সভ্যতার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।

উত্তর:- মেহেরগড় সভ্যতার উত্তরণের প্রায় সাতটি স্তরের সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলির মাধ্যমে পশুপালকের জীবন থেকে কৃষিভিত্তিক সমাজজীবনে উত্তরণের একটি চিত্র পাওয়া যায়। এই সভ্যতার বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ__

 

কৃষি অর্থনীতির বিকাশ:- মেহেরগড় সভ্যতার মানুষেরা কৃষির ওপরই প্রধানত নির্ভরশীল ছিল। এখানকার অধিবাসীরা গম, যব, বার্লি, নানারকম খাদ্যশস্য, কার্পাস, তুলা প্রভৃতির চাষ করত। এখানকার ধ্বংসাবশেষ থেকে কার্পাস বীজের সন্ধান পাওয়া গেছে। সম্ভবত মেহেরগড় সভ্যতার অধিবাসীরাই সর্বপ্রথম বিশ্বে কার্পাসের ব্যবহার করেছিল।

পশুপালন :- প্রাথমিক পর্বে পশুশিকার ও পশুপালনই ছিল মেহেরগড় সভ্যতার অধিবাসীদের প্রধান জীবিকা। এখানে প্রায় বারো ধরনের জন্তুর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে অনেকগুলি আজ লুপ্তপ্রায়। এখানে মোষ ও ষাঁড়ের হাড় পাওয়া গিয়েছে। এখানে ভেড়া, ছাগল, নীল গাই, হরিণ, হাতি, শুকরের হাড় আবিষ্কৃত হয়েছে।

সমাজব্যবস্থা :- ঐতিহাসিকদের মতে মেহেরগড় সভ্যতার সমাজে তিনটি বা চারটি শ্রেণি ছিল। তবে সমাজে ব্রাত্মণ, ও বণিক শ্রেণির প্রাধান্য ছিল বেশি এখানে একটি মিশ্র সংস্কৃতি ও রাজশক্তির অস্তিত্ব ছিল বলে ঐতিহাসিকেরা মত প্রকাশ করেছেন।

হাতিয়ার :- এখানকার মানুষেরা ছুরি, বড়শি এবং পাথরের নানা অস্ত্র হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করত। হাড়ের চুঁচ, তুরপুন ইত্যাদির পাশাপাশি তারা ধাতুর তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করত।

পতন :- আনুমানিক ২৬০০ অব্দে মেহেরগড় সভ্যতাটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। মেহেরগড় সভ্যতার পতনের জন্য যে-সমস্ত কারণ গুলিকে চিহ্নিত ‘করা হয় সেগুলি হল-

(ক) জলবায়ুর পরিবর্তন বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়।

(খ) বহিঃশত্রুর অমণ।

(গ) সিন্ধু সভ্যতা বিকশিত হওয়ার ফলে মেহেরগড় সভ্যতা এর সঙ্গে একত্রিত হয়ে যায়, যার ও মেহেরগড় সভ্যতার গুরুত্ব কমতে থাকে।

 

গুরুত্ব :-

(ক) মেহেরগড় সভ্যতা আবিষ্কারের পর প্রমাণিত হয় যে, ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা সিধু সভ্যতা নয়। তা হল মেহেরগড় সভ্যতা।

(খ) গ্রামকেন্দ্রিক মেহেরগড় সভ্যতা ছিল সিন্ধু সভ্যতার পূর্বসূরি।

(গ) মেহেরগড় সভ্যতার মানুষেরাই প্রথম কার্পাসের ব্যবহার শুরু করেছিল।

(ঘ) মেহেরগড় সভ্যতা আবিষ্কারের পর ভারতীয় সভ্যতার প্রাচীনত্ব আরও বেড়ে যায়।

 

উপসংহার :- ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা হিসেবে মেহেরগড় সভ্যতার গুরুত্ব অপরিসীম। সব মিলিয়ে মেহেরগড় সভ্যতার বৈশিষ্ট্য ও নানা গুরুত্ব গবেষকদের আজও আকর্ষিত করে

 


৩. সিন্ধু সভ্যতা সম্বন্ধে একটি নিবন্ধ রচনা করো।

উত্তর :- প্রাচীন ভারতের একটি উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ সভ্যতা হল সিন্ধু সভ্যতা বা হরপ্পা সভ্যতা। সিন্ধুনদের অববাহিকায় গড়ে ওঠা তা-ব্রোঞ্জ যুগের এই সভ্যতাটি মেসোপটেমীয়, মিশরীয় ও চৈনিক সভ্যতার সমকক্ষতা অর্জন করেছে। নগরকেন্দ্রিক এই সভ্যতাটির কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়।

 

বৈশিষ্ট্য :-

সিন্ধু সভ্যতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, এটি ছিল একটি পরিকল্পিত নগর সভ্যতা। সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ। থেকে বোঝা যায় যে, সিন্ধু সভ্যতার নগর পরিকল্পনা বেশ উন্নত স্তরে পৌছেছিল।

 

বাড়িঘর:- সিন্ধু সভ্যতায় রাস্তার দুইপাশে পরিকল্পিত -ভাবে একতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত বাড়িঘর তৈরি হত। তবে বড়ো রাস্তার দিকে বাড়িগুলির দরজা-জানালা থাকত না। প্রতি বাড়িতে একটি করে স্নানাগার থাকত।

পোড়া ইটের ব্যবহার :- সিন্ধু সভ্যতার মানুষেরা রোদে শুকোনো ও আগুনে পোড়ানো দুই ধরনের ইটই বাড়ি তৈরির কাজে ব্যবহার করত। এখানে আগুনে পোড়ানো ইটগুলি প্রথমদিকে পাতলা প্রকৃতির হলেও, এখানে কিছু ইটের মাপ ছিল ২০ ইঞ্চি, ১০২ ইঞ্চি, ৩২ ইঞ্চি।

পাতকুয়োর ব্যবহার :- সিন্ধু সভ্যতায় প্রতিটি বাড়িতে এবং রাস্তার ধারে পাতকুয়োর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। মনে করা হয় ওই পাতকুয়োগুলির জল পানীয় জল হিসেবে সিন্ধুবাসীরা ব্যবহার করত।

রাস্তাঘাট :- সিন্ধু সভ্যতার আর-একটি বৈশিষ্ট্য হল এর চওড়া, সোজা ও পাকা রাস্তাঘাট। মহেন-জোদারোর প্রধান রাস্তার মাপ ছিল ৩৪ ফুট। রাস্তাগুলি সোজা পূর্ব থেকে পশ্চিমে বা উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত ছিল। মূল রাস্তা থেকে গলিপথগুলি বের হত। পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা : সিন্ধু সভ্যতায় জলনিকাশির জন্য উন্নত পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছিল। নর্দমাগুলি নিয়মিত পরিষ্কার করা এবং ঢেকে রাখার (আধুনিক ম্যানহোল) ব্যবস্থা ছিল। রোমান ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো সভ্যতায় এত উন্নত ধরনের পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা ছিল না।

 

স্বাস্থ্য সচেতনতা:- নাগরিক স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ রেখে সিন্ধু সভ্যতার প্রত্যেক বাড়িতে শৌচাগার, উন্নত পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা, ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা, পরিকল্পিতভাবে বাড়ি তৈরি প্রভৃতির ব্যবস্থা করা হয়েছিল।

স্নানাগার:- মহেনজোদারোতে ১৮০x১০৮ ফুট এলাকার স্নানাগারের মাঝে ৩৯ ফুট লম্বা, ২৩ ফুট চওড়া ও ৯ ফুট গভীরতা বিশিষ্ট জলাশয় ছিল। এই স্নানাগারটির উপরিভাগে সিঁড়ির মতো ধাপ ছিল এবং পোশাক পরিবর্তনের জন্য পৃথক ঘর ছিল। এখানে নোংরা বের করার এবং পরিষ্কার জল প্রবেশ করানোর ব্যবস্থা ছিল।

শস্যাগার:- সিন্ধু সভ্যতার প্রত্যেক নগরেই বড়ো বড়ো শস্যাগার ছিল। হরপ্পাতে ইরাবতী নদীর তীরে একটি বিশাল শস্যাগারের (৫১.৫১x৪১.১৪ মিটার) সন্ধান পাওয়া গেছে। ঐতিহাসিক মার্টিমার হুইলারের মতে, কী পরিকল্পনার বৈশিষ্ট্যে, কী বিস্ময়কর উৎকর্যে সিন্ধু সভ্যতার শস্যাগারের মতো কোনো শস্যাগার খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীর পূর্বে কোথাও দেখা যায়নি।

নগর দুর্গ :- সিন্ধু সভ্যতায় উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা নগর দুর্গের বা সিটাডেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। অনুমান করা হয় এখানে শাসক গোষ্ঠীর বাসগৃহ ও কার্যালয় ছিল।

 

উপসংহার :-

সব শেষে বলা যায় যে, সিন্ধু সভ্যতার অধিবাসীরা সর্বপ্রথম প্রাচীন নগর ও পৌরসংস্কৃতি, নগর পরিকল্পনা করে। সিন্ধু সভ্যতাই প্রথম ইটের তৈরি সুবৃহৎ অট্টালিকা মানব সভ্যতাকে উপহার দিয়েছিল।

 

৪. সিন্ধু সভ্যতার পতনের বা ধ্বংসের কারণ আললাচনা করো।

উত্তর :- সিন্ধু সভ্যতা ভারতের একটি প্রাচীন ও উন্নত নগর-কেন্দ্রিক সভ্যতা। কিন্তু এত উন্নত ও সমৃদ্ধ সভ্যতার যে-ঠিক কী কারণে পতন হয়েছিল তা ঐতিহাসিকদের কাছে আজও রহস্যাবৃত। আনুমানিক ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিন্ধু সভ্যতার পতন হয়েছিল।


পতনের কারণ :-

সিন্ধু সভ্যতার পতনের কারণগুলিকে দু-ভাগে ভাগ করে আলােচনা করা যায়- 

(ক) অভ্যন্তরীণ কারণ, 

(খ) বাহ্যিক কারণ।

 

(ক) অভ্যন্তরীণ কারণ :-

(অ) জলবায়ুর পরিবর্তন :- সিন্ধু সভ্যতাকে তিলোত্তমার মতো রূপ দান করার জন্য ইট পোড়ানো হয়েছিল। আর ইট পোড়ানোর জন্য যথেচ্ছভাবে গাছ কাটায় জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছিল। এর ফলে সিন্ধু সভ্যতা একটি মরুপ্রায় অঞ্চলে পরিণত হয়েছিল।

(আ) বন্যা :- অনেক ঐতিহাসিকের মতে, শেষের দিকে সিন্ধুনদে পলি পড়ায় বন্যা হয়েছিল, যা সিন্ধু সভ্যতার পতনের আর-এক অন্যতম কারণ ছিল। সিন্ধু নদে বাধ দেওয়া সত্ত্বেও সিন্ধু সভ্যতা সাতবার ধ্বংস হয়েছিল এবং পুনরায় তা নির্মিত হয়েছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।

(ই) ভূমিকম্প :- জলবিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণায় জানা গেছে। যে, হরপ্পায় ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল। তা ছাড়া সিন্ধু সভ্যতায় আবিষ্কৃত মানুষের কঙ্কালগুলি রাস্তায়, স্নানাগারে পড়ে থাকতে দেখে ঐতিহাসিকেরা মনে করেন যে, এখানে মৃত্যু এসেছিল অতর্কিতে। এই আকস্মিক মৃত্যুর কারণ ভূমিকম্প ছিল বলে অনেক ঐতিহাসিক মন্তব্য করেছেন।

(ঈ) জনসংখ্যা বৃদ্ধি :- সিন্ধু সভ্যতার প্রথমদিকে বাড়িগুলি পরিকল্পনামাফিক তৈরি হলেও পরবর্তীকালে বাড়িগুলির ঘিঞ্জি অবস্থান প্রমাণ করে যে, জনসংখ্যার ব্যাপক হারে বৃদ্ধি ঘটেছিল। ফলে খাদ্যাভাব ও জনসংখ্যা বৃদ্ধিজনিত সমস্যা সিন্ধু সভ্যতার পতনকে ত্বরান্বিত করেছিল.

(উ) সিন্ধুনদের গতিপথ পরিবর্তন :- ঐতিহাসিকদের মতে, সিন্ধুনদ গতিপথ পরিবর্তন করার ফলে জনবসতির মূল কেন্দ্র থেকে সিন্ধুনদের প্রবাহ পথ অনেকদূরে সরে যায়। এর ফলে সিন্ধু সভ্যতার গ্রাম ও শহরাঞ্চলগুলি উয় মরুভূমিতে পরিণত হয়। এই কারণে সিন্ধু সভ্যতা ধ্বংস হয়।

(খ) বাহ্যিক কারণ :- সিন্ধু সভ্যতায় আবিষ্কৃত কঙ্কালগুলির অবস্থান, তাতে আঘাতের চিহ্ন, সিন্ধুবাসীদের আত্মরক্ষামূলক অস্ত্রের অনুপস্থিতি প্রভৃতি লক্ষ করে অনেক ঐতিহাসিক সিন্ধু সভ্যতার পতনের জন্য বহিঃশত্রুর আক্রমণকে দায়ী করেছেন।

 

উপসংহার :-

সিন্ধু সভ্যতার পতনের জন্য অনেকগুলি কারণ আলােচনা করা হল। কিন্তু কোনাে একটিমাত্র কারণে সিন্ধু সভ্যতার পতন হয়েছিল বলে মনে হয় না। বরং মনে হয় অভ্যন্তরীণ কারণে সিন্ধু সভ্যতা যখন পতনের সম্মুখে, তখন বহিরাক্রমণ সিন্ধু সভ্যতার কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতেছিল।

 

৫. সিন্ধু সভ্যতার সামাজিক জীবন সম্বন্ধে আলোচনা করো। অথবা, সিন্ধু সভ্যতার সংস্কৃতির ওপর একটি নিবন্ধ রচনা করো।

উত্তর :- ভারতের প্রাচীন সভ্যতাগুলির মধ্যে সিন্ধু সভ্যতা অন্যতম এবং অবশ্যই অনন্য। এর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় জীবন বেশ আগ্রহোদ্দীপক। নীচে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হল__

 

সামাজিক জীবন :-

(ক) শ্রেণিবৈষম্য :- সিন্ধু সভ্যতার সমাজে শ্রেণিবৈষম্য ছিল বলে ঐতিহাসিকেরা মত প্রকাশ করেছেন। অধ্যাপক এ ডি পুসলকর সিন্ধু সভ্যতার জনসমাজকে চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন। যথা- 

(অ) শিক্ষিত সম্প্রদায়, 

(আ) যোদ্ধা, 

(ই) বণিক এবং 

(ঈ) কর্মকার ও শ্রমিক শ্রেণি। সিন্ধু সভ্যতার দুর্গ ও নগরের পাকাবাড়ির পাশাপাশি ঝুপড়ি জাতীয় সারিবদ্ধ ঘরগুলি সমাজে শ্রেণিবৈষ্যম্যের অস্তিত্বকে চিহ্নিত করে। তবে সামাজিক শ্রেণিগুলির মধ্যে পুরোহিত সম্প্রদায়ের বেশি গুরুত্ব ছিল।

(খ) কৃষিকর্ম :- সিন্ধুবাসীদের সামাজিক জীবনের অনেকটাই আবর্তিত হত কৃষিকর্মের দ্বারা। কোনো সমাজে কৃষি অর্থনীতির বিকাশ না হলে নাগরিক সমাজের বিকাশ ঘটে না। সিন্ধু সভ্যতার জমি সিন্ধুনদের অববাহিকায় অবস্থিত হওয়ায় তা কৃষিবিকাশের অনুকূল ছিল। সিন্ধু সভ্যতার খননকার্যের ফলে পাওয়া নানা তথ্য এবং শস্য রাখার গোলার উপস্থিতি প্রমাণ করে সিন্ধু সভ্যতায় কৃষিকাজ বেশ উন্নত ছিল।

(গ) পোশাক-পরিচ্ছদ :- সিন্ধুবাসীদের পোশাক-পরিচ্ছদ, বিলাসদ্রব্য এবং গহনা বেশ উন্নতমানের ছিল। এরা সুতি ও পশম দু-ধরনের পোশাকই ব্যবহার করত। নারীরা সাধারণত দু-ধরনের পোশাক বস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করত। অলংকার হিসেবে নূপুর, আংটি, বাজু, হার, বালা, দামি পাথর ব্যবহার করত। সেই সময় সোনার ব্যবহার হত বলে জানা গেছে।

(ঘ) খাদ্য :- সিধুবাসীরা খাদ্য হিসেবে বিভিন্ন দ্রব্য গ্রহণ করত। দুধ, খেজুর, গম, যব তারা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত। এ ছাড়া মাছ মাংস, ডিম তাদের প্রিয় খাবার ছিল।

 

৬. সিন্ধু সভ্যতার অর্থনৈতিক জীবন সম্বন্ধে লেখো।

উত্তর :- সিন্ধু সভ্যতার অর্থনৈতিক জীবন সম্বন্ধে বলা যায়-

 

(ক) কৃষিকাজ ও পশুপালন :- সিন্ধুবাসীদের অর্থনৈতিক জীবন প্রধানত কৃষির ওপর নির্ভরশীল ছিল। প্রধান জীবিকা কৃষিকাজ হলেও তখন এর পাশাপাশি পশুপালনও গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিয়েছিল। গৃহপালিত পশুর মধ্যে গোরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগি অন্যতম ছিল।

(খ) শিল্প :- সিন্ধু উপত্যকায় নানা ধরনের শিল্প গড়ে উঠেছিল। এ সময় বস্ত্রশিল্পের যথেষ্ট উন্নতি হয়েছিল। সম্ভবত টাকু দিয়ে সুতো কাটা হত। এ ছাড়া ইট তৈরি, কাঠের জিনিস তৈরি, নৌকা তৈরি, শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছেছিল। হরপ্পার উজ্জ্বল মৃৎশিল্প উন্নতমানের পরিচয় বহন করে। কারুশিল্প এসময় বেশ উন্নতস্তরে

পৌঁছেছিল।

(গ) ব্যাবসাবাণিজ্য :- ব্যাবসাবাণিজ্য ছাড়া নগর সভ্যতার বিকাশ ঘটে না। সিন্ধু সভ্যতার নগর সংস্কৃতির পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তার ব্যাবসাবাণিজ্যের উন্নতি। সিন্ধু সভ্যতায় অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দুই ধরনের বাণিজ্যই চলত। মিশর, ব্যাবিলন, পারস্য প্রভৃতি দেশের সঙ্গে সিন্ধু সভ্যতার সমৃদ্ধ বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল। লোথাল বন্দরের মাধ্যমে এ সময় বহির্বিশ্বের সঙ্গে সমুদ্র বাণিজ্য চলত।

(ঘ) ওজন ও পরিমাপক :- সিন্ধু সভ্যতায় ওজন ও পরিমাপের বিশুদ্ধতার প্রতি নজর দেওয়া হত। মহেনজো-দারোর বিভিন্ন স্থানে পাথরের বাটখারা আবিষ্কৃত হয়েছে। ১৮০০ গ্রাম থেকে ১০৯৭০ গ্রাম ওজনের বাটখারার সন্ধান পাওয়া গেছে। অল্প ওজনের ক্ষেত্রে ‘দ্বপুক পদ্ধতির ব্যবহার ছিল। এখানে দাঁড়িপাল্লার ব্যবহার ছিল বলে জানা গেছে।

 

৭. সিন্ধু সভ্যতার ধর্মীয় জীবন সম্বন্ধে লেখো।

উত্তর :- সিন্ধু সভ্যতার ধর্মীয় জীবন সম্পর্কে বলা যায়__

(ক) মাতৃদেবীর আরাধনা :- সিন্ধু সভ্যতায় বহু মাতৃদেবীর মূর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে। এর থেকে বোঝ যায় যে, সিন্ধুবাসীদের ধর্মবিশ্বাসে মাতৃদেবীর প্রাধান্য ছিল। কিছু মাতৃদেবীর মূর্তি ব্রোঞ্জ বা তামার তৈরি হত ঠিকই তবে বেশিরভাগ ছিল পোড়ামাটির মূর্তিগুলির গায়ে ধোঁয়ার চিহ্ন দেখে মনে করা হয় যে মূর্তিগুলির সামনে প্রদীপ বা ধূপ জ্বালিয়ে দেবীকে সন্তুষ্ট করে বর প্রার্থনা করা হত।

(খ) পশুপতি শিব:- সিন্ধু সভ্যতায় আবিষ্কৃত একটি সিলমোহরে হাতি, গন্ডার, মোষ, বাঘ ও হরিণএই পাঁচটি পশু পরিবেষ্টিত একটি যোগী পুরুষের অবয়ব লক্ষ করা গেছে। মূর্তিটির তিনটি মুখ ও মাথায় ত্রিশূলের মতো শিং দেখে পণ্ডিতরা মনে করেন, এটি পশুপতি শিব বা আদি শিবের মূর্তি।

(গ) প্রাকৃতিক শক্তি :- সিন্ধু সভ্যতায় বৃক্ষ, অগ্নি প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তিকে দেবতারূপে উপাসনা করা হত। এর পাশাপাশি এখানে লিঙ্গ ও যোনি পুজোরও প্রচলন ছিল। কালিবঙ্গান ও লোথালে কয়েকটি ‘অগ্নিশালা পাওয়া গেছে। এ-থেকে এখানে অগ্নিপুজো হত বলে মনে করা হয়। সূর্যের প্রতীকরূপে এখানে স্বস্তিক চিহ্ন ব্যবহার করা হত।

(ঘ) মৃতদেহ সৎকার :- সিন্ধু সভ্যতার পারলৌকিক ক্রিয়া দেখে মনে করা হয় সিন্ধুবাসীরা পরলোকে বিশ্বাস করতেন। এখানে মৃতদেহের অংশবিশেষের সমাধি, পূর্ণসমাধি, দহনকার্যের শেষে অংশবিশেষের সমাধি এবং শবদাহ প্রথা চালু ছিল। মৃতদেহের সৎকার পদ্ধতি তাদের ধর্মীয় জীবনের অঙ্গ বলে মনে করা হয়।

 

উপসংহার:-

সিন্ধুবাসীদের জীবনের বিভিন্ন দিকের আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, এখানে কোনো একটি শাসকগোষ্ঠীর অস্তিত্ব নিশ্চয় ছিল, যারা গোটা ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করত। ঐতিহাসিক ব্যাসাম মনে করেন যে, সিন্ধু সভ্যতা ধর্মকে কেন্দ্র করেই বিকশিত হয়েছিল। আবার হুইলার ধর্মনিরপেক্ষ শাসনব্যবস্থার কথা উল্লেখ করেছেন।

 

৮. বিশ্বের সমকালীন সভ্যতার সঙ্গে সিন্ধু সভ্যতার সম্পর্ক আলোচনা করো।

উত্তর :- সিন্ধু সভ্যতা ভারতের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা। সিন্ধুনদের অববাহিকায় গড়ে ওঠা নদীমাতৃক ও নগরকেন্দ্রিক এই সভ্যতার সঙ্গে বিশ্বের সমকালীন অন্যান্য সভ্যতার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। বিশেষ করে মেসোপটেমীয় ও মিশরীয় সভ্যতার সঙ্গে সিন্ধু সভ্যতার নিবিড় যোগাযোগ ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।

 

(ক) সিন্ধু সভ্যতা ও সুমের সভ্যতা :- সিন্ধু সভ্যতার সঙ্গে সুমের সভ্যতার, বিশেষত পরবর্তীকালের মেসসাপটেমিয়া সভ্যতার যোগাযোগ গড়ে উঠেছিল। প্রমাণস্বরূপ বলা যায়__

 

(অ) মহেনজোদারোর সিলমোহরগুলির সঙ্গে মেসোপটেমিয়া সভ্যতার সিলমোহরগুলির সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।

(আ) সিন্ধু সভ্যতার সিলমোহর, খোদাই করা পাত্র, দীপাধার প্রভৃতি সিন্ধু সভ্যতায় আবিষ্কৃত হয়েছে।

(ই) সুমেরের সিলমোহর, খোদাই করা পাত্র, দীপাধার প্রভৃতি সিন্ধু সভ্যতায় আবিষ্কৃত হয়েছে।

(ঈ) ঐতিহাসিক গর্ডন চাইল্ড দেখিয়েছেন যে, উভয় সভ্যতার মধ্যে জলপথে ব্যাবসায়িক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। সিন্ধু সভ্যতার বিভিন্ন জিনিস যেমন মেসোপটেমিয়ায় রপ্তানি হত, তেমনি মেসোপটেমিয়া থেকে নীলকান্তমণি, মূল্যবান ধাতু সিন্ধু সভ্যতায় আমদানি করা হত। সিন্ধু সভ্যতার লোথাল বন্দর এবং ‘আক্কাদ অঞ্চলে ভারতীয়দের উপনিবেশের অস্তিত্ব উভয় সভ্যতার মধ্যে যোগাযোগের অস্তিত্বকে প্রমাণ করে।

(উ) সুমেরের বেশ কিছু দলিলে ‘মেলুকা (Melukka) নামক একটি জায়গার নাম উল্লেখ আছে। ঐতিহাসিকদের মতে, ওই জায়গাটি সিন্ধু উপত্যকা অঞ্চল।

 

(খ) সিন্ধু সভ্যতা ও মিশরীয় সভ্যতা :- সিন্ধু সভ্যতার সঙ্গে মিশরীয় সভ্যতার সম্পর্ক ছিল বলে, ঐতিহাসিকেরা মনে করেন। প্রধানত জলপথে ব্যাবসার সূত্র ধরে উভয় সভ্যতার মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছিল। উভয় সভ্যতার মধ্যে যোগাযোগের প্রমাণস্বরূপ বলা যায়__

 

(অ) সিন্ধু সভ্যতায় ষাঁড়ের পায়ের আদলে তৈরি পায়া যুক্ত টুল আবিষ্কৃত হয়েছে।

(আ) উভয় সভ্যতার দীপধার বা মোমবাতিদানের (Candle stand) মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে।

(ই) সিন্ধু সভ্যতায় প্রাপ্ত মাতৃকামূর্তি প্রমাণ করে উভয় সভ্যতার মধ্যে যোগাযোগ ছিল।

 

(গ) অন্যান্য সভ্যতার সঙ্গে সম্পর্ক :- অনেক ঐতিহাসিকের মতে, আমরি ও কুল্লি সভ্যতার সঙ্গেও সিন্ধু সভ্যতার কিছু কিছু বিষয়ে সাদৃশ্য রয়েছে। আমরি সভ্যতায় মৃৎপাত্রগুলির সঙ্গে সিন্ধুর মৃৎপাত্রগুলির সাদৃশ্য রয়েছে। সব মিলিয়ে তৎকালীন নদীমাতৃক সভ্যতাগুলির সঙ্গে সিন্ধু সভ্যতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে অনুমান করা যায়।

 

উপসংহার :-

সিন্ধু সভ্যতায় আবিষ্কৃত উপঙ্কা নারীমূর্তি এবং লিঙ্গ পুজোর চল দেখে অনেকে বলেছেন সিন্ধু সংস্কৃতি বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। কারও কারও মতে, সিন্ধু সভ্যতা মেসোপ -টেমিয়ার দূরবর্তী উপনিবেশ ছিল। তবে এসব নিয়ে বিতর্কও কম নেই। তবুও বলা যায় সিন্ধু সভ্যতার সঙ্গে তৎকালীন নদীমাতৃক সভ্যতাগুলির যোগাযোগ ছিল। নব্যপ্রস্তর যুগের এই সমস্ত সভ্যতাগুলির মধ্যেকার সাদৃশ্য মানব সভ্যতার উষালগ্নকে স্মরণ করিয়ে দেয়।


File Details

 

File Name/Book Name

ষষ্ঠ শ্রেণী ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় ৫ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর

File Format

PDF

File Language

Bengali

File Size

121.5 KB

File Location

GOOGLE DRIVE

Download Link

Click Here to Download PDF File


Join Telegram... Members




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top