সপ্তম
শ্রেণী সপ্তম অধ্যায়
জীবনযাত্রা
সংস্কৃতি ও সুলতানি ও মুঘল যুগ
5 নম্বরের
প্রশ্ন উত্তর
সপ্তম শ্রেণী সপ্তম অধ্যায় জীবনযাত্রা সংস্কৃতি ও সুলতানি ও মুঘল যুগ 5 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর |
1. মাোগল যুগের স্থাপত্য শিল্পের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করাো।
উ:- মাোগল যুগের স্থাপত্য শিল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি হল—
i. সুলতানি যুগের মতাো মাোগল
যুগেও ইন্দোইসলামীয় স্থাপত্য রীতি অনুসৃত হয়।
ii. তবে সম্রাট আকবরের পর ভারতীয় স্থাপত্যশৈলীতে পারসিক প্রভাব ক্রমশ
বিলুপ্ত হয় এবং হিন্দু শিল্পের উপাদান ও প্রভাব বৃদ্ধি পায়।
iii. সম্রাট আকবরের সময় স্থাপত্যশিল্পে লাল পাথরের ব্যবহার বৃদ্ধি
পায়, কিন্তু শাহজাহানের আমলে শ্বেত পাথরের ব্যবহার বেশি হয়।
iv. আকবরের আমলে ধর্মনিরপেক্ষ বা কোনাো কোনাো ক্ষেত্রে হিন্দু ও বৌদ্ধ
স্থাপত্য রীতি অনুসৃত হয়।
2. মঙ্গলকাব্য বলতে কী বাোঝাো?
উ:- বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান ধারা হল মঙ্গলকাব্য।
মঙ্গল কাব্য: বাংলাদেশে চণ্ডী, মনসা, ধর্মঠাকুর প্রভৃতি নানা দেবদেবীর
পুজোর সময় তাঁদের মহিমা গান করে শাোনানাো হত। সেই গানগুলির মধ্যেও
3. ভক্তিবাদী আন্দোলন সম্পর্কে যা জাননা লেখাো।
উ:- সুলতানি যুগে ভারতের একদল মানবতাবাদী সাধকদের হাত ধরে হিন্দু সমাজের
কুসংস্কার ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে যে-ধর্মীয় আন্দোলন শুরু হয় তাকে বলা হয় ভক্তিবাদী
আন্দোলন। আর তাঁদের মতই হল ভক্তিবাদ। থাকত একটি কাহিনি। এই কাহিনি বা গল্পগুলিকে নিয়ে
সেকালে বেশ কিছু সাহিত্য রচিত হয়েছিল। যেগুলিকে বলা হয় মঙ্গলকাব্য। মঙ্গল’ কথার
অর্থ ভালাো। মঙ্গলকাব্যের মাধ্যমে দেবদেবীর পুজো করলে মঙ্গল হবে এ কথাই বলা হয়েছে।
বিভিন্ন মঙ্গল কাব্য: যেমন চণ্ডীদেবীকে নিয়ে লেখা হয়েছিল। চণ্ডীমঙ্গল। মনসাদেবীকে
নিয়ে লেখা হয়েছিল। মনসামঙ্গল। ধর্মঠাকুরকে নিয়ে লেখা হয়েছিল। ধর্মমঙ্গল ইত্যাদি।
অনেক কবিই এধরনের মঙ্গলকাব্য লিখেছিলেন। মনসামঙ্গল কাব্য বা (জেনে রাখাো। বর্তমান নেদারল্যান্ডের
অধিবাসীদের বলা হয় ডাচ। এদেরকেই বাংলায় বলা হত ওলন্দাজ। আবার এই ওলন্দাজ কথাটি এসেছে
পাোর্তুগিজ শব্দ ‘হলান্দেজ’ শব্দ থেকে। ডেনিস বা দিনেমার বলতে বাোঝায় ডেনমার্কের অধিবাসীদের।
i. ভক্তিবাদের মূল কথা : ভক্তি শব্দটি এসেছে ‘ভজ’ ধাতু
থেকে। আর ‘ভজ’ থেকে ভজন। ভজন মানে ঈশ্বরের ভজনা বা আরাধনা।
ii. ভক্তিবাদের মূল কথা হল আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলন। এখানে আত্মা
হল ভগবান, আর পরমাত্মা হলেন ঈশ্বর।
iii. তাঁরা প্রচার করেন ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়।
iv. তাঁরা। প্রচার করেন ভক্তিই মুক্তির আসল পথ।
v. তাঁরা হিন্দু সমাজের নানাবিধ কুসংস্কার ও জাতিভেদপ্রথা মানতেন না।
vi. হিন্দুধর্মের কঠোর আচরণ-বিধি, অর্থহীন উপাচার ও মূর্তিপুজোর ঘাোর
বিরাোধী ছিলেন
vii. তাঁদের লক্ষ্যই ছিল মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ দূর করে সাম্য প্রতিষ্ঠা
করা।
viii. ভক্তিবাদী সাধক: এই ভক্তিবাদী আন্দোলনের মহাপুরুষগণ ছিলেন—রামানন্দ,
কবীর, গুরু নানক, বল্লভাচার্য, নামদেব, মীরাবাঈ প্রমুখ। কবীর
ix. প্রভাব: এই ভক্তি আন্দোলনের হাত ধরে ভারতে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে ওঠে। হিন্দু সমাজ নানাবিধ কুসংস্কার ও সংকীর্ণতার হাত থেকে মুক্ত হয়। ভারতের আঞ্চলিক ভাষাগুলি সমৃদ্ধ হয়। রচিত হয়। দোহার মতাো হিন্দি সাহিত্য।
4. প্রানকেন্দ্র ছিল ?
উ:- মধ্যযুগীয় ভারতের একদল ভক্তিবাদী হিন্দু সাধকরা ভারতে ধর্মীয়
গোঁড়ামি, অস্পৃশ্যতা ও জাতিভেদপ্রথা দূর করার জন্য যে-আন্দোলন গড়ে তাোলেন তাকে বলা
হয় ভক্তি আন্দোলন। তাঁদের অনুসৃত মত ও পথকে বলা হয়। ভুক্তিবাদ।
i. ভক্তিবাদের উৎস: ভক্তিবাদের উৎস খুঁজতে গিয়ে ঐতিহাসিক মহলে মতপার্থক্যের
শেষ নেই। ঐতিহাসিক ইউসুফ হাসানের মতে, ইসলাম ধর্মই হল ভক্তিবাদের মূল উৎস। অনেকেরই
মত যে, ভারতের প্রাচীন বৈদিক যুগ থেকে ভক্তিবাদের ধারণা পরিস্ফুট হয়েছে। আবার গীতায়
শ্রীকৃয় ভক্তিবাদের কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, জ্ঞান, ভক্তি ও কর্ম এই তিনটি মার্গ
দ্বারাই মুক্তি লাভ করা যায়।
ii. ভক্তিবাদের সূচনা: এই ভক্তিবাদী আন্দোলন প্রথম দক্ষিণ ভারতে গড়ে
ওঠে সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতকে দুই সাধন মার্গের মনীষী নায়নার ও অলভারের হাত ধরে। তারা
এখানে সর্বশ্রেষ্ঠ দেবতা, অর্থাৎ শিব ও বিষ্ণুর পুজো দ্বারা ভক্তি আন্দোলনের সূচনা
করেন।
iii. ভক্তিবাদের বৈশিষ্ট্য: ভক্তিবাদের মূল কথা ছিল—
iv. আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলন, অর্থাৎ, ঈশ্বরের সঙ্গে তাঁর সৃষ্ট
জীবের মিলন। তাঁদের মতে, ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়।
v. ভক্তিবাদীরা বলতেন, ভক্তিই মুক্তির আসল পথ।
vi. তাঁরা হিন্দু ধর্মের কঠোর অনুশাসন, অর্থহীন উপাচার ও পৌত্তলিকতাবাদে
বিশ্বাসী ছিলেন না।
viii. তারা সমাজে প্রচলিত জাতিভেদপ্রথার ধার ধারতেন না; তাদের লক্ষ্যই
ছিল জাতিধর্ম ও বর্ণনির্বিশেষে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববাোধ গড়ে তাোলা।
ix.বিভিন্ন ভক্তিবাদী সাধক: মধ্যযুগে ভারতে একাধিক ভক্তিবাদী সাধকের
আবির্ভাব ঘটে। এঁদের মধ্যে উল্লেখযাোগ্য ছিল— রামানন্দ
x. রামানন্দ: রামানন্দ উত্তর ভারতের ব্রাক্ষ্মণ হয়েও জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতার
ধার ধারতেন না। তিনি বৈষব’ সম্প্রদায়। প্রতিষ্ঠা। করেন। (আ) কবীর: তিনি ধর্মীয় ভেদাভেদ মানতেন
না। (ই) গুরুনানক: নানক জাতিভেদ প্রথা ও মূর্তিপূজার বিশ্বাস করতেন না। তিনি শিখধর্মের
প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। (ঈ) চৈতন্যদেব: জাতিভেদ প্রথার ঘাোর বিরাোধী ছিলেন শ্রীচৈতন্যদেব।
তিনি গৌড়ীয় বৈয়ব ধর্ম প্রবর্তন করেন। বল্লভাচার্য ও ভক্তদাদু ছিলেন একেশ্বরবাদী
ভক্তিবাদী সাধক। তাঁরা ধর্মীয় ভেদাভেদ অস্বীকার করেন।
5. বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতিতে শ্রীচৈতন্যদেবের প্রভাব আলাোচনা করাো।
উ:- আজ থেকে প্রায় পাঁচশাো
বছর আগে বাংলায় আবির্ভূত হয় শ্রীচৈতন্যদেব। কিন্তু এত বছর পরও তিনি ও তাঁর মতবাদ
বাঙালি জীবনে অমলিন।
i. ধর্মীয় প্রভাব: শ্রীচৈতন্যদেব প্রবর্তিত ধর্মীয় মতবাদকে বলা হয়
গৌড়ীয় বৈষবধর্ম। এই মতবাদের মূল ভিত্তি হল কৃষপ্রেম। তিনি ছিলেন ত্যাগ, প্রেম ও ভালাোবাসার
প্রতিমূর্তি। যা বৈষ্ণুবরা এখনও অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছেন।
ii. সামাজিক প্রভাব: তিনি ধর্মীয় ভেদাভেদ এবং কুসংস্কার ও জাতিভেদপ্রথার
মতাো সামাজিক ব্যাধিগুলির ধার ধারতেন না। বর্তমানেও বৈষব সমাজ সেই পথই অনুসরণ করে চলেছে।
iii. সংস্কৃতির প্রভাব: বাঙলার বহু মানুষ এখনও বৈষুব আচার-আচরণ মেনে
চলে। তাঁরা ধুতি পরেন, গলায় তুলসীর মালা পরিধান করেন। কপালে চন্দনের তিলক পরেন।
iv. খাদ্যাভ্যাসে প্রভাব: বৈষ্ণুবরা আমিষ খাবার খান না। তাঁরা নিরামিষভাোজী।
শুধু তাই নয়; তারা জীব হত্যা করেন না।
v. সাহিত্যে প্রভাব: শ্রীচৈতন্যদেবকে নিয়ে সেযুগে বহু গান ও বৈষব সাহিত্য
রচিত হয়েছে। এই গান ও সাহিত্যগুলি বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ।
vi. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি:
বহু অহিন্দুকে তিনি কাছে টেনে নিয়েছিলেন। ফলে সেসময় বাংলায় যে-ধর্মীয় সহনশীলতার
পরিবেশ গড়ে উঠেছিল তা আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
6. চৈতন্যের ভক্তি’ বলতে কী বাোঝায় ?
উ:- শ্রীচৈতন্য ও তাঁর অনুগামীরা একটি সামাজিক নীতি মেনে চলার ওপর জোর দিয়েছিলেন। এই নীতিকে বলা হয় ‘ভক্তি’। এই ভক্তি ছিল স্বতঃস্ফুর্ত। এই ভক্তিপালনের ক্ষেত্রে কোনাো উদ্যোগ, আয়াোজনের প্রয়াোজন ছিল না। তিনি সাধারণ জীবনযাপন এবং সহজ-সরল ও অনাড়ম্বর আচরণের ওপর জোর দিয়েছিলেন, তাঁর ভক্তি বৈয়বভক্তি নামেও পরিচিত। কৃয়ের প্রতি শ্রীচৈতন্যের প্রেমভক্তি
7. ভারতীয় সমাজে ভক্তি আন্দোলনের কী প্রভাব পড়েছিল ?
উ:- ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতিতে
ভক্তি আন্দোলনের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। ভক্তি আন্দোলনের প্রভাব
i. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি: ভক্তি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে হিন্দু ও মুসলমান
এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেকটাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ে ওঠে।
ii. জাতিভেদ বিরাোধিতা: ভক্তিবাদীরা সমাজে সাম্যের বাণী প্রচার করেন।
ফলে হিন্দু সমাজের মধ্যে জাতিভেদপ্রথা অনেকটা হ্রাস পায়। তারা -পুরুষ, উচ্চ-নীচ, ধর্ম-বর্ণের
ভেদাভেদ মানতেন না। ফলে সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষ আলাোর পথ দেখতে পায়।
iii. সাহিত্য সৃষ্টি: ভক্তি আন্দোলনের মধ্যদিয়ে ভারতে বিভিন্ন আঞ্চলিক
ভাষাগুলি নবজীবন লাভ করে। কবীরের ‘দোহা’গুলি
ছিল হিন্দিভাষার উৎকৃষ্ট সম্পদ। গুরু নানক পাঞ্জাবে ‘গুরমুখী’ ভাষার
বিশেষ উন্নতি সাধন করেন। এসময় বাংলা ভাষায় বহু অমূল্য বৈয়ব সাহিত্য সৃষ্টি হয়।
iv. নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি: ভক্তিবাদী সাধকগণ ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনে
নারী-পুরুষের ভেদাভেদ মানতেন । ফলে ভক্তি আন্দোলনের মধ্যদিয়ে সমাজে (হিন্দুধর্মে)
নারীদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
v. প্রগতিশীল সমাজ গঠন ভক্তিবাদী ধর্মাচার্যগণ হিন্দুধর্মের বাহ্যিক
আচার-আচরণ, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও সামাজিক কুসংস্কারগুলি অস্বীকার করতেন। ফলে হিন্দুধর্ম
হয়ে ওঠে প্রগতিশীল এবং সামাজিক জীবনে বৃদ্ধি পায় সচলতা।
8. মধ্যযুগীয় ভারতে সুফিবাদের প্রভাব উল্লেখ করাো।
উ:- ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতিতে সুফিবাদের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী।
সুফি আন্দোলনের প্রভাব
i. যৌথ দেবতা : মধ্যযুগীয় ভারতে হিন্দু ও মুসলমান উভয় ধর্মের যৌথ
দেবদেবীর উদ্ভব ঘটে, যথাবনবিবি, ওলাবিবি, সত্যপির, মানিকপির জয়পির প্রভৃতি।
ii. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি : এই সময় সুফি আন্দোলনের মধ্যদিয়ে হিন্দু
ও মুসলমানদের মধ্যে অনেকটাই সম্প্রীতির পরিবেশ গড়ে ওঠে। বহু হিন্দু সুফি ধর্মমত গ্রহণ
করেন।
iii. কাওয়ালি সংগীত : এসময়ে সুফি আন্দোলনের প্রভাবে হিন্দি ভাষার
উন্নতি ও কাওয়ালি সংগীতের উদ্ভব ঘটে। তাঁদের মতে, ঈশ্বর সাধনায় সংগীত হল। একটি অন্যতম
মার্গ।
iv. শিক্ষার পরিবেশ : সুফিদের খানকাগুলিতে ধর্মচর্চার পাশাপাশি বিদ্যাচর্চার
পরিবেশ গড়ে ওঠে। এসময় এগুলি নিয়মিত বিদ্যালয়ে পরিণত হয়।
v. ইসলামের ভারতীয়করণ : সুফি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভারতে ইসলামের ভারতীয়করণ
ঘটে। ফলে ভারতের অনেক মুসলমান শাসক এই ভাবধারায় প্রভাবিত হন।
9. মধ্যযুগীয় ভারতে ভক্তি ও সুফি আন্দোলনের কারণ কী ছিল ?
উ:- সুলতানি যুগে ভারতবর্ষে ধর্মীয় জগতে দেখা দেয় এক নবজোয়ার। এই
জোয়ারের বাহক ছিল ভক্তি ও সুফি আন্দোলনকারীরা। ভক্তি ও সুফি আন্দোলনের কারণ
i. সামাজিক বঞ্চনা : উভয় ধর্মের (হিন্দু ও মুসলমান) পিছিয়ে পড়া মানুষরা
নানা সময় উচ্চবর্ণের মানুষদের কাছে শাোষিত হত। তাদের সামাজিক মর্যাদাও ছিল। কম। সম্পদ
বণ্টনের ক্ষেত্রে সমাজ ছিল অসাম্যে ভরা। তাই তারা সামাজিক মুক্তির আশায় ভক্তি ও সুফিবাদের
প্রতি আকৃষ্ট হয়।
ii. শাসকদের উদারতা : বলা বাহুল্য যে, এদেশের বহু শাসক ভক্তি ও সুফিবাদ
দ্বারা আকৃষ্ট হন। তাই তাঁদের ধর্মীয় সহনশীলতা ও উদারতায় ভারতে ভক্তি ও সুফি আন্দোলনে
জোয়ার আসে। এ ব্যাপারে স্মরণযাোগ্য কিছু নাম, যেমন—কাশ্মীরের
সুলতান আদিল শাহ প্রমুখ। ভক্তি এবং সুফি আন্দোলন
iii. সমন্বয়বাদের কারণ : ভক্তি ও সুফিবাদী সাধকগণ ছিলেন উদার। ধর্ম
সম্পর্কে তাঁদের সহজ ব্যাখ্যা সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে। উভয় ধর্মের সাধকরা একেশ্বরবাদ
প্রচার করেন। তাঁরা জাতিভেদ ও কঠোর ধর্মীয় অনুশাসন মানতেন না। তাঁদের প্রচেষ্টাতেই
এদেশে গড়ে ওঠে এক সমন্বয়বাদী সংস্কৃতি।
iv. উপসংহার : এইভাবে ভারতবর্ষের অগণিত অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষ ভক্তি
ও সুফি আন্দোলনের স্রোতে গা ভাসিয়ে দেন। ফলে এদেশে ভক্তি ও সুফি মতবাদ প্রসারের পথ
সহজ হয়।
10. ইন্দো-ইসলামীয় স্থাপত্যরীতি বলতে কী বাোঝাো ? এর বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ
করাো।
উ:- সুলতানি যুগে হিন্দু ও মুসলমান স্থাপত্যরীতির সংমিশ্রণে যে-নতুন
স্থাপত্যরীতি গড়ে ওঠে তাকে বলা হয় ইন্দো-ইসলামীয় স্থাপত্যরীতি। ইন্দো-ইসলামীয় স্থাপত্যের
বৈশিষ্ট্য
i. স্থাপত্যরীতি : ইন্দো-মুসলিম
অনুসৃত এযুগেই সর্বপ্রথম ইন্দো-মুসলিম বা স্থাপত্যরীতি অনুসৃত হয়।
ii. স্থাপত্য শিল্পের ধারা: সুলতানি আমলে স্থাপত্য শিল্প প্রধান তিনটি
ধারায় বা ঘরানায় বিভক্ত ছিল, যথা—দিল্লিকেন্দ্রিক
শিল্প, প্রাদেশিক শিল্প এবং পৃথক হিন্দু শিল্পরীতি।
iii. মন্দিরের স্থাপত্য: পূর্ব অনুসৃত হিন্দু স্থাপত্যের মন্দিরগাত্রের
নকশা ও থামযুক্ত সমতল ছাদের ব্যবহার বাতিল হয়। তার পরিবর্তে গম্বুজ, স্তম্ভ ও খিলানের
ব্যবহার শুরু হয়।
iv. মন্দির ভেঙে মসজিদ: এযুগে মন্দির ভেঙে তা মসজিদে রূপান্তর করার
প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
v. মূর্তি তৈরি বন্ধ : ভাস্কর্য ইসলামধর্মসম্মত নয়। তাই মূর্তি তৈরি
একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।
vi. চুন ও সুরকির ব্যবহার: তুর্কিরীতি অর্থাৎ, গাঁথনির উপকরণ হিসেবে
চুন ও সুরকির ব্যবহার শুরু হয়। খলজি আমলে লাল বেলে পাথরের ব্যবহার এবং
vii. পলেস্তারার প্রচলন: তুঘলক আমলে দেয়ালে। পলেস্তারার প্রচলন বৃদ্ধি
পায়।
11. মাোগল যুগের চিত্রকলার ওপর টীকা লেখাো।
উ:- সুলতানি যুগে ভারতে চিত্রশিল্পের বিশেষ বিকাশ হয়নি। কারণ ইসলাম
ধর্মের বিধানে চিত্রের কোনাো স্থান ছিল না। তবে মাোগল যুগে চিত্রশিল্পের বিশেষ বিকাশলাভ
ঘটে। মাোগল আমলের চিত্রশিল্প
i. হুমায়ুন ও আকবরের সময়: পারস্যে বসবাসকালে বাদশাহ হুমায়ুন চিত্রশিল্পের
প্রতি আকৃষ্ট হন এবং তিনি দুজন বিশিষ্ট চিত্রশিল্পীকে (মির সৈঈদ আলি ও আবদুস সামাদ)
সঙ্গে করে ভারতে নিয়ে আসেন। সম্রাট আকবরের রাজত্বকালের বহু চিত্রকর খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।
এঁদের মধ্যে ছিলেন—যশাোবন্ত, আবদুস সামাদ, সৈঈদ আলি, তারাচঁাদ, জগন্নাথ প্রমুখ শিল্পী।
সম্রাট আকবরের নির্দেশে চেঙ্গিসনামা, জাফরনামা, রামায়ণ, নলদময়ন্তী প্রভৃতি গ্রন্থের
বহু উপাখ্যান অবলম্বন করে বহুচিত্র অঙ্কন করা হয়েছিল।
ii. জাহাঙ্গিরের সময়: জাহাঙ্গিরের আমলে ভারতে চিত্রশিল্প স্বনির্ভর
হয়ে ওঠে। তাঁর আমলে মাোগল চিত্রকলার প্রকৃত ‘মাোগল-ঘরানা তৈরি হয়। জাহাঙ্গিরের আমলে
মাোগল চিত্রাঙ্কণ রীতির একটি অভিনবত্ব হল পাড়-চিত্রন। দেওয়ান-ই-হাফিজ, বাবরনামা প্রভৃতি
পাণ্ডুলিপিতে পাড়-চিত্রনের ক্রমবিকাশ ঘটে। ফুল-লতাপাতা-পশুপাখি প্রভৃতি চিত্র এবং
শিকার, যুদ্ধ ও মেলার দৃশ্য, রামায়ণ, ‘মহাভারতের গল্প অবলম্বনে বহু চিত্র অঙ্কিত হয়।
তার আমলে বিখ্যাত চিত্রশিল্পীরা ছিলেন—ফারুখ
বেগ, বিষেণ দাস, গাোবর্ধন, মাোহম্মদ পাসির প্রমুখ। হর হন।
iii. উপসংহার: শাহজাহান চিত্রশিল্পের অনুরাগী হলেও, তিনি তাঁর স্থাপত্যশিল্পের
জন্য বেশি স্মরণীয়। গোড়া ইসলাম ধর্মাবলম্বী ঔরঙ্গজেব সবরকম শিল্পের বিরাোধী ছিলেন।
12. মাোগল স্থাপত্যশিল্পের বৈশিষ্ট্য কী? উদাহরণসহ আলাোচনা করাো।
উ:- মাোগল সম্রাটগণ ছিলেন স্থাপত্যশিল্পের
গভীর অনুরাগী। তাই এযুগে ভারতে অসংখ্য প্রাসাদ, মসজিদ, স্মৃতিসৌধ, দরওয়াজা ইত্যাদি
নির্মিত হয়। মাোগল যুগের স্থাপত্যশিল্পের বৈশিষ্ট্য
i. মুসলিম স্থাপত্য রীতি অনুসূত:
এযুগে মুসলিম স্থাপত্য রীতি অনুসৃত হয়।
ii. পারসিক রীতির প্রভাব: তবে সম্রাট আকবরের সময় থেকে এদেশে পারসিক
রীতির প্রভাব কমতে থাকে।
iii. তার বদলে হিন্দু শিল্পের উপাদান ব্যবহৃত হয়।
iv. লাল পাথরের ব্যবহার : সম্রাট আকবরের আমলে স্থাপত্য শিল্পে লাল পাথরের
ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। কিন্তু শাহজাহানের আমলে শ্বেত পাথরের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়।
v. আকবরের স্থাপত্য শিল্পের বৈশিষ্ট্য সম্রাট আকবরের স্থাপত্যশিল্পের
একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। তাঁর সময় কোনাো কোনাো ক্ষেত্রে হিন্দু
ও বৌদ্ধ স্থাপত্যরীতি অনুসৃত হয়। মাোগল স্থাপত্যশিল্পের উদাহরণ
vi. বাবরের সময়: বাবর প্রথম এদেশে ইন্দো-মুসলিম স্থাপত্যরীতি মেনে
স্থাপত্যকর্ম শুরু করেন। তিনি ভারতীয় শিল্পীদের সাহায্য নিয়ে আগ্রায় লৌহদুর্গ, পানিপতে
কাবুলিবাগ ছাড়াও বহু মিনার, অট্টালিকা প্রভৃতি এবং সম্বলে জাম-ই-মসজিদ তৈরি করেন।
vii শেরশাহের সময়: শেরশাহের আমলে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, মুসলিম ও পারসিক
শিল্পরীতির সংমিশ্রণ ঘটে। তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি হল ‘পুরাণ কিল্লা।
viii. আকবরের সময়: আকবরের আমলেই যথার্থ মাোগল ঘরানার স্থাপত্যরীতি
শুরু হয়। ফতেহপুর সিকরির যাোধাবাঈ মঞ্জিল, বুলন্দ দরওয়াজা, পাঁচমহল ছিল। আকবরের অনবদ্য
সৃষ্টি। দক্ষিণ ভারত জয়ের স্মারক হিসেবে আকবর বুলন্দ দরওয়াজা তৈরি করেন। ড. স্মিথ
ফতেহপুর সিকরি নিয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘পাথরের গড়া কল্পনা ও স্বপ্ন। আকবরের জীবদ্দশায়
সেকেন্দ্রায় নিজের সমাধিসৌধটি বৌদ্ধবিহারের অনুকরণে তৈরি হয়। কবলিবাগ মসজি
ix. জাহাঙ্গিরের সময়: জাহাঙ্গিরের আমলে তাঁর পত্নী নূরজাহানের পিতা
ইতিমাদ-উদ-দৌলার সমাধি নির্মিত হয় এবং তিনি সেকেন্দ্রায় আকবরের সমাধিটির কাজ সম্পূর্ণ
করেন।
x. শাহজাহানের সময় : শাহজাহানের রাজত্বকাল ছিল মাোগল স্থাপত্যের স্বর্ণযুগ।
দিল্লি ও আগ্রায় তিনি বহু কেল্লা, সৌধ ও মসজিদ নির্মাণ করেন। এগুলির মধ্যে ছিল—লালকেল্লা,
জামা মসজিদ, খাসমহল, শিশমহল, মাোতি মসজিদ, দেওয়ানি-ই-আম, দেওয়ান-ই-খাস প্রভৃতি। শাহজাহানের
স্থাপত্যকীর্তির শ্রেষ্ঠ নমুনা হল তাজমহল ও ময়ূর সিংহাসন। তাজমহলের প্রধান স্থপতি
ছিলেন পারসিক শিল্পী ইশা খাঁ ও বাঙালি স্থপতি বলদেও দাস এবং ময়ূর সিংহাসন তৈরি করেন
বেবাদল খাঁ।