পৌরাণিক কাহিনি
কী এবং এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ। ইতিহাসের সঙ্গে পৌরাণিক কাহিনির পার্থক্য কি?
পৌরাণিক
কাহিনিঃ- যে জনশ্রুতিগুলিতে
প্রাগৈতিহাসিক যুগের বিভিন্ন ঐশ্বরিক ঘটনার বিবরণ তুলে ধরা হয় তাকে ‘পৌরাণিক কাহিনি’
বা ‘মিথস’ বলে। জে এফ বিয়ারলেইনের মতে—“পৌরাণিক কাহিনি হল আমাদের অবচেতন মনের কাহিনিবিশেষ
যা সম্ভবত আমাদের জিনে লিপিবদ্ধ আছে।
উদাহরণঃ- হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী ভগবান ব্ৰত্মা অসুরদের
অত্যাচার ও নিপীড়নের হাত থেকে বিশ্বসংসারকে রক্ষা করার জন্য তিনি তার মানসকন্যা দেবী
দুর্গাকে সৃষ্টি করেন। দেবী দুগা তাঁর দিব্যশক্তির সাহায্যে অসুরদের নিধন করে মর্তে
শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন।
পৌরাণিক
কাহিনির বৈশিষ্ট্যঃ- পৃথিবীর
বিভিন্ন দেশে প্রচলিত পৌরাণিক কাহিনিগুলির কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়।
এই বৈশিষ্ট্যগুলি হল—
i. প্রাগৈতিহাসিক
যুগের বিবরণঃ- প্রাগৈতিহাসিক
যুগের বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ তুলে ধরা হয়। জনপ্রিয় পৌরাণিক কাহিনিগুলি ওই যুগের সামাজিক
ধর্মীয় অবস্থার চিত্র তুলে ধরে।
ii. ঈশ্বরের
মাহাত্ম প্রচারঃ- পৌরাণিক
কাহিনিগুলিতে উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস সুফল ঈশ্বরের কর্মকাণ্ড ও তার শক্তির ওপরই সর্বাধিক
গুরুত্ব আরোপ করে। এই কাহিনিগুলির প্রধান নায়ক-নায়িকা ঈশ্বর। ঈশ্বরের মাহাত্ম্য এই
কাহিনিগুলির মাধ্যমে প্রচারিত হয়।
iii. ধর্মীয়
ভিত্তিঃ- পৌরাণিক কাহিনিগুলি
ধর্মভিত্তিক হয়। পৃথিবী ও মানুষের সৃষ্টি কীভাবে ঘটেছিল তার ধর্মভিত্তিক ব্যাখ্যা
থাকে। তাই পৌরাণিক কাহিনিগুলির ঐতিহাসিক ভিত্তি দুর্বল।
iv. উত্তরাধিকার
সূত্রে প্রাপ্তঃ- পৌরাণিক
কাহিনিগুলি সুদূর অতীতকাল থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে বর্তমানকালের মানবসমাজে প্রচলিত
আছে।
v. অলৌকিক
জগতের সঙ্গে পরিচয়ঃ-
অলৌকিক বা অতীন্দ্রিয় জগতের বিষয়গুলি আমাদের উপলব্বির বাইরে। কিন্তু পৌরাণিক কাহিনিগুলির
ভাষার মাধ্যমে আমরা অলৌকিক জগতের সঙ্গে পরিচিত হতে পারি।
vi. সমাজের
অতীত পরিচয়ঃ- পৌরাণিক
কাহিনিগুলি যে কোনো সমাজের পরিচয়ের প্রধান ভিত্তি। কারণ কোনো সমাজের অতীত পরিচয়ের
বেশিরভাগই পৌরাণিক কাহিনি থেকে জানা যায়।
vii. বিধি
ও নিয়মের স্বীকৃতিঃ-
পৌরাণিক কাহিনিগুলি সমাজের প্রচলিত ধর্ম ও বিধিনিয়মগুলিকে স্বীকৃতি দেওয়ার ফলে সামাজিক
বিধিনিয়মগুলির সুদৃঢ় হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়।
viii. জীবনের
অর্থবহতাঃ- পৌরাণিক কাহিনিগুলির
ধর্মীয় বিশ্বাস মানুষের জীবনকে অর্থবহ করে তোলে।
ইতিহাস
ও পৌরাণিক কাহিনির পার্থক্যঃ-
ইতিহাসের সঙ্গে পৌরাণিক কাহিনির বেশ কিছু পার্থক্য লক্ষ করা যায়। এই পার্থক্যগুলি
হল—
i. চরিত্রগত
পার্থক্যঃ- পৌরাণিক কাহিনিতে
ঐশ্বরিক কর্মকাণ্ড ও শক্তির ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। পৌরাণিক কাহিনিগুলির নায়ক-নায়িকা
হল দেবদেবীগণ। অন্যদিকে পৌরাণিক ইতিহাসে গুরুত্ব আরোপ করা হয় মানুষের কর্মকাণ্ড -
ও শক্তির ওপর এবং ইতিহাসের নায়ক-নায়িকা হল মানবমানবী, কারণ ইতিহাস হল মানুষের কাহিনি।
ii. ভিত্তিগত
পার্থক্যঃ- পৌরাণিক কাহিনিগুলি
ধর্মভিত্তিক হয়।পৃথিবীর সৃষ্টি, মানুষের সৃষ্টির পৌরাণিক ব্যাখ্যা দেয়। কিন্তু ইতিহাসের
কর্মকাণ্ড পৃথিবী ও মানুষের সৃষ্টির যুক্তিসম্মত ব্যাখ্যা তুলে ধরে।
iii. লক্ষণগত
পার্থক্যঃ- পৌরাণিক কাহিনির
প্রধান লক্ষ্য ঈশ্বরের মাহাত্ম প্রচার।কিন্তু ইতিহাসের প্রধান লক্ষ্য সত্যকে প্রতিষ্ঠা
করা।
iv. বাস্তবতার
পার্থক্যঃ- পৌরাণিক কাহিনির
কল্পনার আধিক্য বেশি, কোনো বাস্তবতা নেই। নেই কোনো তথ্য বা প্রমাণ। কিন্তু ইতিহাসের
বাস্তবতা আছে। প্রতিটি ঘটনার তথ্য বা প্রমাণ থাকে। তথ্য বা প্রমাণ ছাড়া ইতিহাস হতে
পারে না।
v. সময়গতঃ- পৌরাণিক কাহিনিগুলির সময়ের ভিত্তিতে কোনো
ধারাবাহিকতা বা কালপঞ্জি থাকে না। কিন্তু ইতিহাসের সময়ের ভিত্তিতে ধারাবাহিকতা ও সঠিক
কালপঞ্জি থাকে।
পোস্ট টি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাল লেগে থাকলে অবশ্যই অন্যদের শেয়ার কর
সহজ ভাবে আরেকটু দিলে ভালো হতো। ভালো হয়েছে কিন্তু আর একটু সহজ ভাবে দেয়া হলে বেশি সাহায্য পেতাম।
উত্তরমুছুন