The Expansion Of English Education in India Special reference to Wood's dispatch
Wood's dispatch
১৮৩৫ সালের শিক্ষানীতি ভারতে ইংরাজী শিক্ষা বিস্তারের ইতিহাসে একটি গুরত্বপূর্ণ
ঘটনা। এর ফলে প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদীদের মধ্যে বিতর্ক ও বিবাদের চূড়ান্ত
নিষ্পত্তি হয়। ভারতে ইংরাজী শিক্ষা বিস্তারের পথে আর কোন বাধা রইলো না। এই নীতির
প্রতিবাদস্বরুপ প্রখ্যাত প্রাচ্যবিদ প্রিন্সেপ ও ম্যাকটেন কমিটি থেকে পদত্যাগ
করেন। এদিকে এই নীতির ফলস্বরুপ বেসরকারী উদ্যোগে বিভিন্ন স্থানে ইংরেজী স্কুল
স্থাপিত হয়। এমন কি ফরাসী চন্দননগরেও ইংরাজী শিক্ষায় আগ্রহ দেখা যায়। ১৮৩৬ সালে
হগলী কলেজ স্থাপিত হয় । ১৮৩৫ সালে কলকাতায় মেডিক্যাল কলেজ স্থাপিত হয় । ১৮৩৫
সালে সরকারী উদ্যোগে ১৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলা হয়। মাত্র দু-বছরের
মধ্যে এই ধরণের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮ টি। বােম্বাই ও মাদ্রাজে
অবশ্য ইংরাজী শিক্ষা বিস্তারের গতি ছিল শ্লথ । অন্যদিকে প্রাচ্যবাদীরা ১৮৩৫ সালের
শিক্ষানীতি বাতিল করার জন্য তাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। শেষপর্যন্ত ১৮৩৯ সালে
লর্ড অকল্যাণ্ডের সময়ে প্রাচ্যপন্থী ও পাশ্চাত্যবাদীদের মধ্যে একটা বােঝাপড়ায়
আসা সম্ভব হয়। তাতে ঠিক হয় ইংরাজী শিক্ষা বিস্তারের প্রচেষ্টায় কোন রকম অবহেলা
না করেও প্রাচ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করা হবে।
এক কথায় ইংরাজী শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় শিক্ষার সংমিশ্রণ করার প্রবণতা দেখা
যায়। ১৮৩৮ সালে এ্যাডাম শিক্ষা সম্পর্কে যে রিপাের্ট পেশ করেন, তাতে দেশীয়
শিক্ষা সম্পর্কে কয়েকটি সুস্পস্ট প্রস্তাব দেয়া হয়। এই ধরণের বােঝাপড়া
সত্ত্বেও কিন্তু অকল্যাণ্ড ইংরাজী শিক্ষা বিস্তারের পক্ষেই ছিলেন দেশীয় ভাষার
জায়গায় তিনি ইংরাজী ভাষার ব্যবহারই বেশী পছন্দ করতেন।
ইংরাজী
শিক্ষা বিস্তারে পরবর্তী উল্লেখযােগ্য পদক্ষেপ হলো ১৮৪৪ সালে লড হার্ডিং-এর
এডুকেশন্যাল ডেসপ্যাচ। এই ডেসপ্যাচে বলা হয় সরকারী চাকরি করতে হলে ইংরাজী ভাষায়
যারা লিখতে পড়তে জানে, তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। কার্যতঃ সরকারী চাকরীর
ক্ষেত্রে ইংরাজী ভাষার জ্ঞান এক প্রকার বাধ্যতামূলক বলে ঘােষণা করা হয়। এই
সম্পর্কে পরীক্ষা গ্রহণের দায়িত্ব দেয়া হয় Council of Education এর হাতে। এর
ফলে ১৮৪২-৪৩ সালে Committee of Public Instruction এর বিলােপ ঘটে। হাডিং-এর এই
নীতি ঘোষিত হবার ফলে ইংরাজী স্কুলের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। ১৮৪৩ সালে ইংরেজী
স্কুলের সংখ্যা ছিল ২৮টি। ১৮৫৫ সালে এই ধরণের স্কুলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৫১
টি। ছাত্রসংখ্যাও স্বাভাবিকভাবে দিন দিন বাড়তে থাকে। ১৮৪৩ সালে ৪,৬৩২ জন ছাত্র
স্কুলে পড়াশোনা করতাে। ১৮৫৫ সালে ছাত্রসংখ্যা ছিল ১৩,১৬৩ জন। কিন্তু ইংরাজী
শিক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযােগ্য অগ্রগতি হলেও দেশীয় ভাষায় শিক্ষা যথেষ্ট অবহেলিত
হয়। Filtration নীতিতে জোর দেবার ফলে প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তার ব্যাহত হয়।
উইলিয়াম এ্যাডামস তাঁর রিপাের্টে প্রাথমিক শিক্ষার দুুর্দশার ছবিটি তুলে ধরেন। এক
কথায় জনগণের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের পরিবর্তে সরকার ইংরাজী শিক্ষার মাধ্যমে
সমাজের উপর তলার মানুষের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেবার নীতি গ্রহণ
করেন। বােম্বাই, মাদ্রাজ ও উত্তর ভারতে অবশ্য অবস্থা এত খারাপ ছিল না। এই সব
অঞ্চলেও মিশনারী ও সরকারী প্রচেষ্টায় ইংরাজী শিক্ষা প্রসার লাভ করেছিল। ১৮৪০ সালে
বােম্বাইয়েতে Board of Education গঠন করা হয়। ১৮৪৩ সালে ইরস্কীন পেরী (Erskine
Perry) এর সভাপতির দায়িত্ব গ্রহন করেন এবং ইংরাজী শিক্ষা বিস্তারে ব্রতী হন। ১৮৫০
সালে বোম্বাইতে ১০টি সরকারী অথবা সরকারী সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল ছিল। এই সব স্কুলে
প্রায় ২০০০ ছাত্র পড়াশোনা করতাে। এছাড়া বহু, বেসরকারী বিদ্যালয়ও ছিল। ১৮৪৫
সালে এখানে একটি মেডিক্যাল কলেজ খোলা হয় । পরের বছর উচ্চতর বিজ্ঞান চচার জন্য
Elphinstone Institute গঠিত হয়। মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে ১৮৩৭ সালে Church of
Scotland নামে একটি ইংরেজী বিদ্যালয় খােলা হয়। ১৮৪১ সালে মাদ্রাজে প্রথম একটি
কলেজ খোলা হয়। মাদ্রাজে ইংরাজী শিক্ষা বিস্তারে সরকার এক প্রকার নিষ্ক্রিয় ছিল।
কিন্তু মিশনারীরা বহু, স্কুল খোলে। ১৮৫৪ সালে এইসব স্কুলে ৩৩,০০০ জন ছাত্র
পড়াশোনা করতাে। উত্তর ভারতে দিল্লী, আগ্রা, বেনারস প্রভৃতি অঞ্চলে ইংরাজী স্কুল
খােলা হয়। কিন্তু বােম্বাই, মাদ্রাজ বা উত্তর ভারতে ইংরাজী শিক্ষার প্রসার হলেও,
বাংলার মানুষ যেমন ইংরাজী শিক্ষায় অত্যন্ত আগ্রহ ও উৎসাহ দেখিয়েছিল, এই সব
এলাকার মানুষ তা দেখায় নি। ফলে এই সব অঞ্চলে ভারতীয় ভাষা ও প্রাথমিক শিক্ষার
দিকে বেশ নজর দেয়া হয়েছিল
১৮৩৫
সালের পর থেকে ইংরাজী শিক্ষার ক্ষেত্রে যে জোয়ারের টান দেখা দিয়েছিল, তার ফলে
দেশের বিভিন্ন স্থানে স্কুল ,কলেজ স্থাপিত হলেও, শিক্ষা ব্যবস্থায় কোন শৃঙ্খলা
ছিল না। শিক্ষা ব্যবস্থায় কোন পূর্নাঙ্গ কাঠামো তখনও গড়ে ওঠে নি। চাকরির সঙ্গে
ইংরাজী শিক্ষার জ্ঞানকে গাঁটছড়ার বাঁধনে জড়িয়ে ফেলার ফলে একটি সুষ্ঠু পরীক্ষা
ব্যবস্থা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মত প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলার প্রয়ােজন অনুভূত হচ্ছিল।
বিভিন্ন ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরণের পাঠক্রম অনুসরণ করার ফলে কোন সমতা
ছিল না। মেডিক্যাল কলেজের সচিব (Secretary) ফ্রেডারিক জন মােয়াট (J. J. Mouat)
পরীক্ষা ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের
সুপারিশ করেন। তিনি চেয়েছিলেন প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়টি গড়ে উঠুক লণ্ডন
বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে। প্রথমে অবশ্য এ ব্যাপারে কেউই খুব একটা উৎসাহ দেখান নি।
এদিকে দেশীয় ভাষায় শিক্ষার অবহেলাও অনেকে পছন্দ করেন নি। উনবিংশ শতকের মধ্যভাগে
প্রায় সারা ভারত জুড়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য স্থাপিত হওয়ায় দেশীয় ভাষায় শিক্ষার
প্রসার যথেষ্ট গুরুত্ব লাভ করেছিল। সরকারী কর্মচারীরা যদি দেশীয় ভাষায় দক্ষতা
অর্জন করতে না পারে, তাহলে অগণিত সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রশাসনের কোন যােগসূত্র
থাকবে না বলে আশঙ্কা করা হয়। জাত সাম্রাজ্যবাদী শাসক লর্ড ডালহৌসীও এই বিপদ
সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। ১৮৫৩ সালের এক মিনিটে তিনি দেশীয় ভাষায় শিক্ষার গুরুত্ব
সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। জনগণের শিক্ষার উপর জোর দিয়ে ইংল্যান্ডের
কর্তৃপক্ষকে দেশীয় ভাষায় শিক্ষার সুপারিশ এই প্রথম জোরালাে ভাষায় করা হয়। ১৮৫৩
সালে যখন ইষ্ট-ইণ্ডিয়া কোম্পানীর চার্টারের নবীকরণের সময় হয়, তখন অনিবার্যভাবে
এই প্রশ্ন নিয়ে মাথা ঘামানাে হয়। সমস্ত বিষয়টি খটিয়ে দেখার জন্য একটি
পার্লামেন্টারী কমিটি নিযুক্ত করা হয়। অবশেষে বাের্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি চালস
উড ১৮৫৪ সালে তাঁর শিক্ষা সংস্কার নীতি, যা Wood's despatch নামে খ্যাত, প্রকাশ
করেন। ভারতে ইংরাজী শিক্ষা বিস্তারের ইতিহাসে উডের ডেসপ্যাচকে মাগনা কার্টা (Magna
Carta) সঙ্গে তুলনা করা হয়। এই ডেসপ্যাচে শিক্ষাকে সরকারের অন্যতম পবিত্র
দায়িত্ব হিসাবে স্বীকার করা হয়। সেই সঙ্গে দেশীয় ভাষায় শিক্ষার অবহেলার নিন্দা
করা হয়। Filtration Theory ও পরিত্যক্ত হয়। উডের ডেসপ্যাচে যে সমস্ত সংস্কার
সুপারিশ করা হয়েছিল, সেগুলি হলো -(১) একটি স্বতন্ত্র শিক্ষা বিভাগ বা দপ্তর গঠন;
(২) কলকাতা, বােম্বাই ও মাদ্রাজে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ; (৩) শিক্ষক
শিক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ ; দেশীয় স্কুল সরকারী অনুদান লাভ করে (৪)
বর্তমান সরকারী স্কুল ও কলেজগুলির রক্ষণাবেক্ষণ ; (৫) নতুন নতুন মডেল স্কুল
প্রতিষ্ঠা ; (৬) প্রাথমিক শিক্ষাবিস্তারের উদ্দেশ্যে দেশীয় স্কুলগুলির উন্নতি
সাধন ও (৭) গ্রান্টস ইন প্রথা চালু করা, অর্থাৎ বেসরকারী স্কুলগুলিকে সরকারী
অনুদান দেওয়া।
উচ্চতর
শিক্ষার ক্ষেত্রে ইংরাজী ভাষা ও প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে দেশীয় ভাষা শিক্ষার
মাধ্যম হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করে। ভারতীয় দণ্টিতে লর্ড ডালহৌসী গোঁড়া
সাম্রাজ্যবাদী হিসাবে অশ্রদ্ধার পাত্র হলেও, তিনিই কিন্তু জনগণের মধ্যে শিক্ষার
আলো ছড়িয়ে দেবার জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছিলেন। প্রাথমিক শিক্ষা ও উচ্চতর
শিক্ষা উভয়ের উপরই যথােপযুক্ত গুরত্ব আরােপ করা হয়। ১৮৫৭ সালে কলকাতা, বােম্বাই
ও মাদ্রাজে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। দেশের নানা স্থানে মাধ্যমিক
বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। কাউন্সিল অব এডুকেশন ৭টি সরকারী কলেজ ও ১৬টি সরকারী স্কুলে
নিয়ে কাজ শু্রু করেছিল। ১৮৫৫ সালে যখন Director of Public Instruction স্থাপিত
হয়, তখন স্কুলের সংখ্যা ছিল ৪৭টি। কিন্তু মাত্র ১ বছর ৬ মাসের মধ্যে ৭৯টি ইংরাজী
বিদ্যালয় ও ১৪০টি দেশীয় স্কুল অনুদান লাভ করে।