‘হরপ্পা সভ্যতা কবে আবিষ্কৃত হয়? কারা এই সভ্যতার আবিষ্কারের সঙ্গে যুক্ত?হরপ্পা সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে।

‘হরপ্পা সভ্যতা কবে আবিষ্কৃত হয়? কারা এই সভ্যতার আবিষ্কারের সঙ্গে যুক্ত?হরপ্পা সভ্যতার প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে।



আবিষ্কার:-হরপ্পা সভ্যতা বিশ্ব-ইতিহাসের এক বিস্ময়কর অধ্যায়। 1921 খ্রিস্টাব্দে দয়ারাম সাহানি পঞ্জাবের মন্টগােমারী জেলায় ইরাবতী নদীর তীরে এই সভ্যতার প্রথম নিদর্শন আবিষ্কার করেন। এর পরে 1922 খ্রিস্টাব্দে রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় সিন্ধুপ্রদেশের লারকানা জেলার মহেনজোদারােয় খননকার্য চালিয়ে এই উন্নত নগর সভ্যতাটি আবিষ্কার করেন।


আবিষ্কারক:- দয়ারাম সাহানি, রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া স্যার জন মার্শাল, মর্টিমার হুইলার, ম্যাকে, পিগট, ফ্রাঙ্ক ফোর্ট, ননীগোপাল মজুমদার প্রমুখ প্রত্নতত্ত্ববিদরা হরপ্পা সভ্যতার আবিষ্কারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।


বৈশিষ্ট্য:- হরপ্পা সভ্যতা কেবলমাত্র প্রাচীন সভ্যতা নয়। এই সভ্যতার বেশ কিছু উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য আছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলির অভিনবত্ব এর জন্যই। এই সভ্যতা বিশ্ববাসীর কাছে স্মরণীয় হয়ে আছে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি হল—


i.নদীমাতৃক সভ্যতা:- পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতাগুলির মতাে হরপ্পা সভ্যতাও নদীমাতৃক সভ্যতা। কারণ হরপ্পা সভ্যতার কেন্দ্রগুলি নদীর তীরে গড়ে উঠেছিল। যেমন হরপ্পা ইরাবতীর (রাভী) তীরে, মহেনজোদারাে সিন্ধু নদীর তীরে, কালিবঙ্গন ঘর্ঘরা নদীর তীরে, রূপার ঘর্ঘরা নদীর তীরে, লােথাল ভােগাবর নদীর তীরে গড়ে ওঠে।

ii.বিশালতা:- ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অণ্ডলে এক বিশাল এলাকা জুড়ে হরপ্পা সভ্যতার বিকাশ ঘটে। এ পর্যন্ত 1500টি কেন্দ্রের খোঁজ মিলেছে। মােট আয়তন 12 লক্ষ 50 হাজার বর্গ কিলােমিটার। প্রাচীন মেসােপটেমিয়া সভ্যতার থেকে 12 গুণ বড়াে। প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতা থেকে 20 গুণ বড়াে। তাই হরপ্পা সভ্যতা পৃথিবীর প্রাচীন সভ্যতাগুলির মধ্যে বৃহত্তম।

iii.প্রাক্-ঐতিহাসিক যুগের সভ্যতা:- হরপ্পা সভ্যতা প্রাক্-ঐতিহাসিক সভ্যতা। কারণ হরপ্পাবাসী লিপির ব্যবহার জানত কিন্তু সেই লিপি অর্থাৎ সিন্ধু লিপির পাঠোদ্ধার এখনাে করা যায়নি। কেবলমাত্র প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদানের ওপর নির্ভর করেই হরপ্পা সভ্যতার কথা আমরা জানতে পারি। হাতিয়ার, মূর্তি, বিভিন্ন পাত্র, ঘর-বাড়ির ওপর ভিত্তি করে হরপ্পার ইতিহাস রচিত হয়েছে।

iv.নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা:- হরপ্পা সভ্যতা ছিল একটি নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা, কারণ প্রতিটি কেন্দ্রেই নগরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। পােড়া ইটের তৈরি বহুতল বাড়ি, উন্নত পয়ঃপ্রণালী, স্নানাগার, শস্যাগার প্রভৃতি নিদর্শনগুলি নগর সভ্যতার সাক্ষ্য দেয়।

v.তাম্র-ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতা:- হরপ্পা সভ্যতার মানুষ লােহার ব্যবহার জানত না। তাদের হাতিয়ারগুলি ও অন্যান্য সরঞ্জামগুলি তামা, ব্রোঞ্জ ও পাথর দিয়ে তৈরি ছিল।

vi.মাতৃতান্ত্রিক সভ্যতা:- হরপ্পা সভ্যতা ছিল মাতৃতান্ত্রিক। সমাজে পুরুষদের তুলনায় নারীদের প্রভাব ও মর্যাদা ছিল বেশি। হরপ্পা সভ্যতায় প্রাপ্ত নারীমূর্তিগুলি থেকে প্রত্নতাত্ত্বিকরা অনুমান করেন যে নারীরা এই সভ্যতায় যথেষ্ট স্বাধীনতা ভােগ করত।

vii.প্রগতিশীল:- হরপ্পা সভ্যতার ঢাকা দেওয়া ম্যানহােলযুক্ত পয়ঃপ্রণালী, রাস্তায় গ্যাস লাইটের ব্যবহার, মেয়েদের লিপস্টিক, নেলপালিশ প্রভৃতি প্রসাধনীর ব্যবহার আধুনিকতার নিদর্শন।

মূল্যায়ন:- হরপ্পা সভ্যতার উপরােক্ত বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য অন্যান্য সভ্যতা অপেক্ষা হরপ্পা সভ্যতার গুরুত্ব বেশি। হরপ্পার মতাে উন্নত পয়ঃপ্রণালী রােমানদের আগে অন্য কোনাে জাতি বা সভ্যতার মানুষ তৈরি করতে পারেনি।




 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url