একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় অধ্যায় 4 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর

0

একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় অধ্যায় 4 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় অধ্যায় 4 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর

 আদিম 15 মানুষের ‘পশুপালন’ ও ‘কৃষিকাজের’ সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

ভূমিকা : আদিম মানব ছিল খাদ্য সংগ্রহকারী। খাদ্য উৎপাদন করতে জানত না। শিকার ছিল তাদের প্রধান জীবিকা। কিন্তু খাদ্যের নিশ্চয়তা ছিল না বলে তারা নব্য প্রস্তর যুগে পশুপালন ও কৃষিকাজ শেখে। এর ফলে তাদের খাদ্যের অনিশ্চয়তা দূর হয়। তারা খাদ্য সংগ্রহকারী’ থেকে ‘খাদ্য উৎপাদনকারী’-তে পরিণত হয়।


পশুপালন : আদিম মানুষের প্রথম পেশা ছিল শিকার। পরবর্তীকালে তারা বনের পশুকে পােষ মানায় এবং পশুপালন করতে শেখে। আদিম মানুষ শিকার করার সময় জীবন্ত পশু পেলে ধরে নিয়ে আসত এবং বাসস্থানে দু-চারদিন রাখার পর খাদ্য হিসেবে মাংসের প্রয়ােজন মেটাত। আবার হিংস্র নয় এমন নিরীহ প্রাণীকে কিছুদিন রাখলে দুধ ও মাংস পাওয়া যায়। এই পশুগুলি বংশবিস্তার করলে মাংস ও দুধের জোগান বৃদ্ধি পায়। এইভাবে মানুষ পশুপালন করতে শেখে।


 প্রথম পালিত পশু : আদিম মানুষের প্রথম পালিত শু হল কুকুর। তবে মানুষ কুকুরকে পােষ মানায় না কুকুর ২২য় মানুষের পােষ মানে তা নিয়ে বিতর্ক আছে। Q অন্যান্য লালিত পশু : কুকুরের গর আদিম মানুষ পােষ মানায়' ছাগল, ভেড়া, গােরু, মহিষ, শুকর, উট, হরিণ, হাতি ও সর্বশেষে তাকে।


অ্যান্যন পশুপালনের কারণ : বিভিন্ন কারণে আদিম মানব পশু পালন করতে শেখে।


i, খাদ্যের সংস্থান : প্রধানত খাদ্যের প্রয়ােজনে আদিম মানুষ পশুপালন করতে শেখে। পশুপালন করলে পশুগুলির বংশবৃদ্ধি ঘটে। এর ফলে মাংস ও দুধের জোগান নিশ্চিত হয়।


ii. পােশাক তৈরি : আদিম মানুষের পােশাক ছিল পশুর চামড়া ও লােম দিয়ে তৈরি। তাই পশুপালন করলে খাদ্যের সঙ্গে সঙ্গে চামড়া ও লােম দিয়ে পােশাকের চাহিদা মেটায়। এইজন্য তারা ভেড়া ও অন্যান্য লােমশ প্রাণী পালন করে।


iii. হাতিয়ার তৈরি : পশুর হাড়, শিং ও দাঁত দিয়ে আদিম মানুষ শিকারের জন্য প্রয়ােজনীয় হাতিয়ার তৈরি করত।


iv. পরিবহণ : গােরু, গাধা, হাতি, উট, ঘােড়া প্রভৃতি প্রাণীকে পােষ মানিয়ে মালপত্র বহন ও যাতায়াতের কাজে ব্যবহার করে।


v. কৃষিকাজ : পরবর্তীকালে মানুষ কৃষিক্ষেত্রে গােরু, গাধা, ঘােড়া প্রভৃতি পশুকে লাঙল টানার কাজে ব্যবহার করে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি করে। এইভাবে কৃষির প্রয়ােজনে পশুপালন শুরু হয়।উপরােক্ত কারণগুলির জন্য মেসােপটেমিয়া, মিশর ও ভারতে

পশুপালনের প্রসার বৃদ্ধি পায়।


 কৃষিকাজ : নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ কৃষিকাজ প্রথম শুরু করে। আদিম মানুষ বিশেষত মহিলারা লক্ষ করেন যে যব, গম, বার্লি প্রভৃতির বীজ থেকে একই রকম চারাগাছ জন্মায় এবং তাতে শস্য উৎপাদন হয়। এই বিষয়টি লক্ষ করে মহিলারা বাসস্থানের পাশাপাশি স্থানে বীজ মাটিতে বপন করেন। এইভাবে কৃষিকাজের সূচনা হয়।


সময়কাল : নব্য প্রস্তর যুগে প্রথম কৃষিকাজের সূচনা হয় আনুমানিক 8000 খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে 6000 খ্রিস্ট পূর্বাব্দে। ইরাকের জারামাে অঞলে প্রথম কৃষিকার্যের নিদর্শন পাওয়া যায়।


নারীর ভূমিকা : নারীরাই প্রথম কৃষিকাজের সূচনা করে। পরবর্তীকালে কৃষিকাজের প্রসার ঘটলে পুরুষরা কৃষিকাজে অংশগ্রহণ করে। কঠিন পরিশ্রমের কাজগুলি পুরুষরা করত অনিশ্চয়তা দূর হয়। এবং মহিলারা অপেক্ষাকৃত কম পরিশ্রমের কাজ করত।


 কৃষিজাত ফসল  :এই সময় মানুষের উৎপাদিত ফসলগুলি হল যব, গম, ধান, জোয়ার প্রভৃতি। আদিম মানুষের প্রথম কৃষিজাত ফসল হল যব। আবেসিনা ও সিন্ধু অববাহিকাতে যবের উৎপাদন হত বলে জানা যায়। গম উৎপাদনের প্রধান কেন্দ্র ছিল মেসােপটেমিয়া ও উত্তর আফ্রিকা। ধান উৎপাদন হত ভারতে। রাশিয়া ও ইংল্যান্ডে জোয়ার উৎপাদিত হত। এই সকল ফসল উৎপাদিত হওয়ার ফলে মানুষের খাদ্যের ।


কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার : প্রথম দিকে কৃষির যন্ত্রপাতিগুলি ছিল পাথরের তৈরি। পরবর্তীকালে পশুর শিং ও হাড় দিয়ে কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি করে। কাস্তে, নিড়ানি, লাঙল, জোয়াল প্রভৃতি যন্ত্রপাতি তারা কৃষিকাজে ব্যবহার করত। কৃষিতে জলসেচ ও সার প্রয়ােগের পদ্ধতি তারা জানত। | কৃষি আবিষ্কারের গুরুত্ব:নব্য প্রস্তরযুগে কৃষির আবিষ্কারের ফলে মানব সমাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে—


i. কৃষি পদ্ধতির আবিষ্কারের ফলে আদিম মানুষের খাদ্যের অনিশ্চয়তা দূর হয়।


ii. শিকার করতে গিয়ে অনেক সময় মানুষ হিংস্র প্রাণীর আক্রমণে প্রাণ হারাত। আবার অনেক সময় পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে অনাহারে মারা যেত। কৃষির আবিষ্কারের ফলে মানুষ বন্যপশুর আক্রমণ ও অনাহার থেকে রক্ষা পায়। মানুষের মৃত্যু হার কমে যায় এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।


iii. কৃষির আবিষ্কারের ফলে মানুষ যাযাবর জীবন ত্যাগ করে স্থায়ী বসতি গড়ে তােলে। বাসস্থান তৈরি করতে শেখে।


iv. কৃষির আবিষ্কারের ফলে বিভিন্ন কুটির শিল্পের বিকাশ হয়।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
To Top