ইটালির ঐক্য আন্দোলনে জোসেফ ম্যাৎসিনির ভূমিকা আলোচনা করো।
ইটালির ঐক্য আন্দোলনে জোসেফ ম্যাৎসিনি |
ইটালির ঐক্য আন্দোলনে ম্যাৎসিনির ভূমিকাঃ ইটালির মুক্তি আন্দোলনের প্রাণপুরুষ, আত্মা
ও হৃৎস্পন্দন ছিলেন গিউসেপ (ইংরেজি উচ্চারণ জোসেফ) ম্যাৎসিনি (Giuseppe Mazzini)। বাল্যকাল
থেকেই জেনোয়ার অধিবাসী ম্যাৎসিনি ইটালির জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন।ম্যাসিনির
নিরলস চেষ্টায় ইটালিবাসীর মনে স্বাধীন ও ঐক্যবদ্ধ ইটালির আকাঙ্ক্ষা জেগে ওঠে।
ইয়ং ইটালি(Young Italy)আন্দোলনঃ প্রথম জীবনে ম্যাৎসিনি কার্বোনারি দলের
সদস্য ছিলেন। পরে এই দলের ধ্বংসাত্মক আদর্শে আস্থা হারিয়ে তিনি ‘ইয়ং ইটালি’ বা ‘নব্য ইটালি’ নামে এক নতুন দল গঠন করেন।এই দলের আদর্শ ছিল শিক্ষণ, চরিত্র-নিষ্ঠা
এবং আত্মত্যাগের দ্বারা ইটালিতে জাতীয়তাবাদ সারিত করা। তিনি ইটালির গৌরব ও মাহাত্ম
প্রচারের জন্য দেশের যুবকদের আহ্বান জানান। তিনি বিশ্বাস করতেন শহিদের রক্ত ঝরলে জাতীয়তাবাদী
ভাবধারা পুষ্টি লাভ করবে। তার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে হাজার হাজার ইতালীয় যুবক
মাতৃভূমির বন্ধনমোচনে এগিয়ে আসে।তিনি ঐক্যবদ্ধ ইটালির স্বপ্ন দেখতেন এবং ইতালির ঐক্যের
পথে প্রধান বাধাস্বরূপ অস্ট্রিয়াকে ইটালি থেকে উচ্ছেদ করা অপরিহার্য বলে মনে করতেন।
এই কাজে কোন বিদেশিশক্তির সাহায্যের পরিবর্তে তিনি ইটালির আত্মনির্ভরশীল যুবশক্তির
উপর অধিক আস্থা রেখেছিলেন।
প্রজাতন্ত্র স্থাপনঃ
ফেব্রুয়ারি বিপ্লব শুরু হলে সাময়িকভাবে কিছু সময়ের জন্য ম্যাসিনির নেতৃত্বে
রোম ও টাসকানিতে প্রজাতন্ত্র স্থাপিত হয়,
মূল্যায়নঃ- তবে ইয়ং ইটালি আন্দোলন অস্ট্রিয়া ও ফ্রান্সের
চাপে ব্যর্থ হয়। প্রজাতন্ত্র ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং ম্যাসিনি ইংল্যান্ডে পালিয়ে যান।
ব্যর্থতা সত্ত্বেও ইটালির ঐক্য আন্দোলনে ম্যাসিনির ভূমিকাকে গুরুত্বহীন বলা যাবে না।
তিনিই প্রথম স্বদেশবাসীর মধ্যে বিপ্লবের মানসিকতা জাগিয়ে তোলেন এবং জাতীয়তাবাদী চেতনার
সার ঘটান।
ইটালির ঐক্য আন্দোলনে কাউন্ট ক্যাভুরের ভূমিকা আলোচনা করো।
ইটালির ঐক্য আন্দোলনে কাউন্ট ক্যাভুৱেৱ
ভূমিকাঃ- 1848 খ্রিস্টাব্দের
ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের ব্যর্থতায় ইটালিবাসী যখন দিশেহারা তখন পিডমন্ট-সার্ডিনিয়ার
প্রধানমন্ত্রী ক্যাভুর ইটালিবাসীকে নতুন পথের সন্ধান দেন। কঠোর বাস্তববাদী ক্যাভুর
বুঝেছিলেন ইটালিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য অস্ট্রিয়াকে বিতাড়িত করতে হবে এবং এর জন্য
বিদেশি শক্তির সাহায্যের প্রয়োজন।
অভ্যন্তরীণ ও সামরিক সংস্কারঃ- ক্যাভুর ইটালিবাসীর মধ্যে স্যাভয় রাজবংশের
শাসনের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য অভ্যন্তরীণ ও সামরিক সংস্কার করে পিডমন্ট-সার্ডিনিয়াকে
শক্তিশালী করে তোলেন। তিনি ইটালির সমস্যাকে আন্তর্জাতিক সমস্যায় পরিণত করার জন্য ক্রিমিয়ার
যুদ্ধে (Crimean War) ইঙ্গ-ফরাসি পক্ষে যােগদান করেন। 1856 খ্রিস্টাব্দে প্যারিসেরশান্তি
সম্মেলনে ইটালিতে অস্ট্রিয়ার স্বৈরাচারী শাসনের স্বরূপ তুলে ধরে ইটালির সমস্যাকে আন্তর্জাতিক
সমস্যায় রূপান্তরিত করেন।
প্লোমবিয়ার্সের সন্ধি: ক্যাভুর ফরাসি সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়নের
সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পান অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে। উভয়ের মধ্যে প্লোমবিয়ার
নামক স্থানে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ক্যাভুরের প্ররোচনায় অস্ট্রিয়া 1859 খ্রিস্টাব্দে
পিডমন্ট-সার্ডিনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে তৃতীয় নেপোলিয়নের সাহায্যে ক্যাভুর
ম্যাজেন্টা ও সলফেরিনোর যুদ্ধে অস্ট্রিয়াকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করেন। অস্ট্রিয়ার
ইটালি থেকে বিদায় যখন আসন্ন, সেই সময় তৃতীয় নেপোলিয়ন।অস্ট্রিয়ার সঙ্গে 1859 খ্রিস্টাব্দে
ভিল্লাফ্রাঙ্কার চুক্তি স্বাক্ষর করেন। সেই সন্ধির দ্বারা ক্যাভুর পিডমন্ট-সার্ডিনিয়ার
সঙ্গে লম্বার্ডি ও মিলান যুক্ত হলেও ভেনিসিয়া অস্ট্রিয়ার অধীনে থেকে যায়।
উত্তর ইটালির ঐক্যসাধন: ইতিমধ্যে অস্ট্রিয়ার পরাজয় ইটালিবাসীর
মধ্যে বিপুল উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। পার্মা, মোডেনা, টাসকানি, রোমানা প্রভৃতি রাজ্যগুলি
পিডমন্ট-সার্ডিনিয়ার সঙ্গে সংযুক্তির ইচ্ছা প্রকাশ করে। অবশেষে মধ্য ইটালির রাজ্যগুলি
পিডমন্ট-সার্ডিনিয়ার সঙ্গে যুক্ত হলে উত্তর ইটালি ঐক্যবদ্ধ হয়।
দক্ষিণ ইটালির ঐক্যসাধনঃ উত্তর ইটালির ঐক্যের পর দক্ষিণ ইটালির
সিসিলি ও নেপলস-এ বুরবো শাসকদের বিরুদ্ধে ইটালির ঐক্য আন্দোলন শুরু হয়। গ্যারিবল্ডি
তার লালকোর্তা’ বাহিনী নিয়ে সিসিলি ও নৈপলস দখল করে নেন। এই অবস্থায় তিনি রোম আক্রমণের
উদ্যোগ নিলে ফ্রান্সের সঙ্গে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। এমন অবস্থায় ক্যাভুর গ্যারিবল্ডিকে
ওই স্থান প্রত্যর্পণের অনুরোধ জানালে গৃহযুদ্ধ এড়ানোর জন্য গ্যারিবল্ডি ওই স্থান দুটি
পিডমন্টকে ছেড়ে দেয়। এইভাবে ভেনেসিয়া ও রোম ব্যতীত ইটালি ঐক্যবদ্ধ হয়।।
পোস্ট টি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাল লেগে থাকলে অবশ্যই অন্যদের শেয়ার কর
Khub ভালো
উত্তরমুছুনValo kore bugiye den
উত্তরমুছুনOppp lake
উত্তরমুছুন