ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা কর ।
ফরাসি বিপ্লবের প্রভাব |
ভুমিকাঃ ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ফরাসি
বিপ্লব ফ্রান্স তথা সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
রুশ
বিপ্লব ছাড়া,
সমগ্র মানব জাতির ইতিহাসে ফরাসি বিপ্লবের মতো এত ব্যাপক, গভীর ও সুদূরপ্রসারী বিপ্লব আর ঘটেনি।
ঐতিহাসিক
ডেভিড টমসন বলেন “প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ফরাসি বিপ্লবকেই আধুনিক ইউরোপের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ
ঘটনা বলে অভিহিত করা যায়।
স্বাধীনতা,সাম্য মৈত্রীর আদর্শঃ ফরাসি বিপ্লবের মূল আদর্শ ছিল স্বাধীনতা, সাম্য ও মৈত্রী (Liberty, Equality and Fraternity)ফরাসি জনগণের মনে এই আদর্শ এমনই বদ্ধমূল হয়ে ছিল যে, তারা পরবর্তী সকল কর্মে এই আদর্শকেই অনুসরণ করার চেষ্টা করে ইউরোপের দেশে দেশে জাতীয়তাবাদী ভাবধারা ও আন্দোলনের বিস্তার হতে থাকে। ইংল্যান্ড, জার্মানি, প্রাশিয়া, সাইলেসিয়া, সুইজারল্যান্ড প্রভৃতি দেশে ফরাসি বিপ্লবের আদর্শে সভা-সমিতি প্রতিষ্ঠিত হয় । ইতালি, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, বেলজিয়াম, গ্রিস, বলকান প্রভৃতি অঞলে শুরু হয় জাতীয়তাবাদী মুক্তি সংগ্রাম।
ফরাসি বিপ্লব বৈষম্যমূলক সমাজ ব্যবস্থায় আঘাত হানে। যোগ্যতার ভিত্তিতে সকলের জন্য সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই ছিল বিপ্লবের অন্যতম লক্ষ।জন্মগত কৌলিন্য বাদ দিয়ে যোগ্যতা ও দক্ষতা মানুষের সামাজিক মর্যাদার মাপকাঠি হয়ে দাঁড়ায়। দেশে দেশে এই ভাবধারা প্রচারিত হয়। ফরাসি বিপ্লব ভ্রাতৃত্ববোধের আদর্শ প্রচার করেছিল। কেবলমাত্র নিজ দেশবাসীকে নয় বিশ্ববাসীর সঙ্গে ভ্রাতৃত্ববোধ ও সৌহার্দের বার্তা প্রচার করা হয়। তাই ফ্রান্স ইউরোপের অন্যান্য সহযোগী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছিল।
নতুন ফরাসি সংবিধানঃ ফরাসি বিপ্লব স্বৈরাচারী
রাজতন্ত্রের ওপর কুঠারাঘাত হানে। বংশানুক্রমিক ও স্বৈরতন্ত্রে বিশ্বাসি
রাজতন্ত্রের পরিবর্তে ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র
প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সর্বস্তরে নির্বাচনের ব্যবস্থা করে নাগরিকদের হাতে প্রশাসনিক
দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এর দ্বারা প্রমাণিত হয়ে যে, জনগণই
ক্ষমতার উৎস। এছাড়া, এই সংবিধান-বলে ক্ষমতা বিভাজন তত্ত্ব’-ও গুরুত্ব পায় এবং গণতন্ত্রের ভিত্তি
হিসেবে আইনসভা সার্বভৌম ক্ষমতার আধার বলে গণ্য হয়।
সামন্ততন্ত্রের বিলোপ: ফরাসি সমাজ
ছিল ত্রিস্তর বিশিষ্ট। শ্রেণিবিভক্ত এই সমাজ ‘বিশেষ অধিকারভোগী’ ও ‘অধিকারহীন'— এই দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত ছিল। অভিজাতরা নানা প্রকার সামাজিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশেষ অধিকার ভোগ করত;অথচ এদের কোন কর দিতে হতে হত না।অপরদিকে সবরকম সুবিধা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ছিল অন্যায়,অত্যাচার ও শোষণের শিকার। তাদের নানা ধরনের করভার বহন করতে হত ।১৭৯১-এর সংবিধান সভা সবরকম সামন্ত্ৰতান্ত্রিক অধিকারের বিলুপ্তি ঘটায়।ফ্রান্সের মাটিতেই সর্বপ্রথম সামন্তপ্রথার সমাধি রচিত হয় এবং কালক্রমে এই ভাবধারা ইউরোপের অন্যান্য দেশে সম্প্রসারিত হয়।
নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার ঘোষণা: ফরাসি
বিপ্লব কেন্দ্রীভূত স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে ফ্রান্সে জনগণের শাসনের সূচনা করে। এই বিপ্লব ঘোষণা করে যে, জনগণই
হল সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস। জনগণের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের ইচ্ছাই আইন— এই দুটি আদর্শের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপিত হয় এবং নাগরিকদের এই সব অধিকারের প্রতি স্বীকৃতি জানায়।এককথায়, ফরাসি বিপ্লবের ফলে ফ্রান্স মধ্যযুগ থেকে আধুনিকতা অভিমুখে যাত্রা শুরু করে।
****যদি আপনাদের পোস্টটি ভালো
লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করে অন্যদের পড়ার সু্যোগ করেদিন।****ধন্যবাদ*****
Thanks sir
উত্তরমুছুনVery good
I like it ☺️☺️☺️☺️