ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা কর।
1. ভারতীয় সংবিধান হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম লিখিত সংবিধান। সংবিধানে মোট 448 টি ধারা রয়েছে 22 টি অধ্যায়ে, 12 টি তফসিল এবং 100 টি সংশোধনী রয়েছে। যদিও ভারতীয় সংবিধানের শেষ ধারার সংখ্যা 395, কিন্তু প্রকৃত পক্ষে মার্চ 2012 পর্যন্ত ধারার সংখ্যা ছিল 448। এমনটা হবার কারণ হল নতুন ধারাগুলি এমনভাবে সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যাতে মূল ধারাগুলির ক্রমবিন্যাস ব্যহাত না হয়। সেই কারণে সংখ্যার পাশে ইংরাজি বর্ণ মালার অক্ষর যোগ করা হয়েছে। যেমন শিক্ষার অধিকার রয়েছে সংবিধানের ধারা 21A তে।
2. ভারতীয় সংবিধানে ভারতকে ইউনিয়ন অফ স্টেটস বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে সংবিধানে ভারতকে সার্বভৌম, সমাজবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রীক, প্রজাতন্ত্র হিসেবেও ঘোষণা করা হয়েছে। কানাডার সংবিধান অনুসারে ভারতেও সাংবিধানিকভাবে এক শক্তিশালী কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে।
3. সংবিধান রচয়িতাদের মনন এবং আদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে সংবিধানের প্রস্তাবনায়। ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় শুরুতেই বলা হয়েছে আমরা ভারতের নাগরিকেরা এবং শেষ ভাগে আমরা আমাদের এই সংবিধান দিচ্ছি শব্দগুলির মধ্যে গণতান্ত্রীক ভাবনা সুস্পষ্ট।
4. ভারতীয় সংবিধানে যৌথ তালিকার প্রণয়ন করা হয়েছে অস্ট্রেলিযার সংবিধানের অনুকরণে।
5.এস আর বোম্মাই এবং ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া মামলায় (1994), বিচারপতি সায়ন্ত এবং কুলদীপ সিং মত প্রকাশ করেছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্রীয় এবং ধর্মনিরপেক্ষতা ভারতীয় সংবিধানের প্রযোজনীয় বৈশিষ্ট্য এবং সংবিধানের মূল গঠনের অংশ। এই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বিশদভাবে সংবিধানের ধারা 356 খতিয়ে দেখেছিল।
6.সংসদীয় গণতন্ত্র, আইনের শাসন, একক নাগরিকত্ব প্রভৃতি বিষয়গুলি ভারতীয় সংবিধানে নেওয়া হয়েছে ইংল্যান্ডের সংবিধানের অনুসরণে। ভারতীয় সংবিধানের ধারা অনুযায়ী যদি ভারতের কোন নাগরিক স্বেচ্ছায় অন্য কোন দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন, তবে তার ভারতীয় নাগরিকত্ব বাতিল হয়ে যাবে।
7. জনস্বার্থ মামলার প্রথম প্রচলন হয়েছিল আমেরিকায়। ভারতে জনস্বার্থ মামলার প্রচলন করেছিলেন বিচারপতি পি এন ভগবতী।
৪. অম্বুল্সম্যান শব্দটি সুইডিশ। আক্ষরিক অর্থে এই শব্দটিকে অনুবাদ করলে হয় গ্রিভান্স পার্সন। আধুনিক যুগে এটির প্রথম ব্যবহার হয় 1809 সালে যখন সুইডেনের সংসদ জাস্টিয়েন ওষুডসম্যানের পদ তৈরী করে নাগরিকদের বিভিন্ন অভিযোগ খাতিয়ে দেখার জন্য।
9. ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট হল সংবিধানের অভিভাবক এবং রক্ষাকর্তা। দেশের কোন আইন সংবিধান মেনে প্রবর্তন করা হয়েছে কি না তা খাতিয়ে দেখে সংবিধান। মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে কি না সেই বিষয়ও খাতিয়ে দেখে সুপ্রিম কোর্ট।
10. ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনাতেই বলা হয়েছে জনগণই হল সংবিধানের অধিকারের উৎস। প্রস্তাবনার শুরুতেই লেখা রয়েছে। 'উই দ্য পিপল অফ ইন্ডিয়া, অ্যাডপ্ট, এন্যাক্ট এ্যান্ড গিভ টু আওয়ারসেলভস দিস কনস্টিটিউশন"। এর অর্থ হল ভারতের জনতাই হল সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী।
11.ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটি যুক্ত করা হয়েছিল বেয়াল্লিশতম সংবিধান সংশোধনীর দ্বারা। সেই সঙ্গে সমাজবাদী শব্দটিও যুক্ত করা হয়েছিল। সেই অনুযায়ী বর্তমানে ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় লেখা রয়েছে ভারত হচ্ছে সার্বভৌম, ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজবাদী, গণতান্ত্রীক প্রজাতন্ত্র। যদিও ভারত প্রথম থেকেই এক ধর্মনিরপেক্ষ দেশ ছিল, তবে সংবিধানের কোথাও ধর্মনিরপেক্ষতা শব্দটির উল্লেখ ছিল না। কিন্তু সংবিধান সংশোধনী দ্বারা তা প্রস্তাবনায় যুক্ত করে এই বার্তাই দেওয়া হয়েছে যে ধর্মনিরপক্ষতা বজায় রাখতে ভারত বদ্ধপরিকর।
Thank You