ইতিহাস একাদশ শ্রেণী দ্বিতীয় অধ্যায় 4 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর নাম্বার 26

ইতিহাস একাদশ শ্রেণী দ্বিতীয় অধ্যায় 4 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর নাম্বার 26

ইতিহাস একাদশ শ্রেণী দ্বিতীয় অধ্যায় 4 নম্বরের প্রশ্ন উত্তর নাম্বার 26

ভূমিকা : প্রাচীনকালে মানব সভ্যতার ঊষালগ্নে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যে কটি সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল মিশরীয় সভ্যতা। আনুমানিক 4000 খ্রিস্টপূর্বাব্দে বা তার পূর্বে আফ্রিকা মহাদেশের নীলনদের অববাহিকাতে মিশরীয় সভ্যতার উন্মেষ হয়েছিল। নীলনদের জন্যই মিশরীয় সভ্যতার বিকাশ ঘটে। মিশরীয়দের জীবনে নীলনদের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তাই মিশরকে নীলনদের দান বলা হয়।


অবস্থান : আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পূর্ব অংশে মিশরীয় সভ্যতার উন্মেষ ঘটেছিল। এর সভ্যতার উত্তরে ভূমধ্যসাগর, দক্ষিণে নুবিয়ার মরুভূমি, পূর্বে লােহিতসাগর, পশ্চিমে লিবিয়ার মরুভূমি।


মিশরের উত্থান : নব্য প্রস্তর যুগে মিশরীয়গণ নীলনদের তীরে বসতি স্থাপন করে। লােম ছিল মিশরের নগর-রাষ্ট্র। পরবর্তীকালে যুদ্ধবিগ্রহের ফলে বিভিন্ন নােম ঐক্যবদ্ধ হয়ে উত্তর মিশর ও দক্ষিণ মিশর নামে দুটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। 3200 খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই দুটি রাষ্ট্র একত্রিত হয়ে ঐক্যবদ্ধ মিশরের জন্ম হয়।


শাসক শ্রেণি : ফ্যারাওরা ছিলেন মিশরের শাসক। তারা দৈবক্ষমতার বলে দেশ শাসন করতেন। তাদের আদেশই ছিল আইন। তারা ছিলেন একাধারে সর্বোচ্চ শাসক ও বিচারক। দেশরক্ষা ও দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বও ছিল তাঁদের হাতে। প্রথম ফ্যারাও ছিলেন মিনেস। এর পরবর্তীকালে খুফু, তুতেনখামেন, দ্বিতীয় রামেসিস প্রভৃতি ফ্যারাও ছিলেন উল্লেখযােগ্য।


সমাজ : মিশরীয় সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক। সমাজে নারীদের প্রাধান্য ছিল সর্বাধিক। শাসক ও শােষিত এই দুটি শ্রেণিতে মিশরীয় সমাজ ছিল বিভক্ত। রাজপরিবার, রাজকর্মচারী, আঞ্চলিক প্রশাসক, বিচারক, যােদ্ধা ও পুরােহিত শ্রেণি ছিল সুবিধাভােগী শাসকশ্রেণি। আর শােষিত শ্রেণিভুক্ত ছিল কৃষক, কারিগর, দাস, ক্রীতদাস শ্রেণি।


জীবিকা : প্রাচীন মিশরের অধিবাসীদের প্রধান প্রধান জীবিকা ছিল পশুপালন, কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্য। 


পশুপালন : মিশরীয়র জীবিকা ছিল পশুপালন। নীলনদের তৃণভূমিতে তারা পশুচারণ করত। গৃহপালিত পশুগুলির মধ্যে ছিল গােরু, ছাগল, ভেড়া, শূকর, গাধা প্রভৃতি। দুধ, চামড়া ও কৃষিকাজের প্রয়ােজনে তারা পশুপালন করত।


কৃষি : মিশরীয়দের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষি। কৃষিজাত ফসলগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল গম, যব, ভুট্টা, জোয়ার, তিসি, শন ও বিভিন্ন শাকসবজি। নীলনদ থেকে খাল কেটে কৃষিতে জলসেচের ব্যবস্থা করত। 


শিল্প : প্রাচীন মিশরে বস্ত্র শিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, ধাতু শিল্প ও অলংকার শিল্পের বিশেষ অগ্রগতি ঘটেছিল। প্রতিটি শিল্পের কারিগর শ্রেণি নিজ পেশাতে দক্ষ ছিল। 


বাণিজ্য : স্থলপথে ও জলপথে মিশরীয়গণ বিনিময় প্রথার মাধ্যমে বাণিজ্য করত। ফ্যারাও রাজপরিবারের অন্যান্য সদস্যরা বৈদেশিক বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সিরিয়া, আরব, ক্রিট, সিন্ধু, মেসােপটেমিয়া, প্যালেস্টাইন প্রভৃতি অঞলের সঙ্গে বাণিজ্য চলত। বস্ত্র, মৃৎ শিল্প, কাচের ও চামড়ার দ্রব্য ও খাদ্যশস্য ছিল প্রধান রপ্তানিকারক দ্রব্য। আর আমদানি করত সােনা, তামা, কাঠ, হাতির দাঁত, মশলা, সুগন্ধি তেল, বিভিন্ন বিলাস দ্রব্য প্রভৃতি।


খাদ্য : মিশরীয়দের প্রধান খাদ্য ছিল গম, যব, মাছ, মাংস, দুধ, শাকসবজি প্রভৃতি।


পােশাক-পরিচ্ছদ : মিশরীয়রা সুতিবস্ত্র, পশম বস্ত্র ও চামড়ার তৈরি পােশাক ব্যবহার করত। নারীপুরুষ নির্বিশেষে সােনার অলংকার পরত।




শিক্ষা-সংস্কৃতি : মিশরে বিদ্যাচর্চার প্রচলন ছিল। পুরােহিত শ্রেণি মন্দির প্রাঙ্গণে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করত। মিশরীয়রা প্যাপিরাস গাছের পাতায় নলখাগড়ার কলম দিয়ে লিখতে পারত। প্রথমে এই লিপি ছিল চিত্রলিপি, পরে প্রাচীন মিশরীয় লিপির নাম হয় হায়ারােগ্লিফিক। 1920 খ্রিস্টাব্দে অধ্যাপক শাঁ পােলিয়ে এই লিপির পাঠোদ্ধার করেন। এই লিপি দিয়ে তারা রাজস্বের হিসাব, চিঠিপত্র, বই, বাণিজ্যের হিসাব ও বর্ষপঞ্জি তৈরি করত। চিকিৎসাবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, অট্টালিকা ও পিরামিড নির্মাণে মিশরীয়রা দক্ষতা অর্জন করে। Q 


পিরামিড : মিশরের স্থাপত্য ভাস্কর্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হল পিরামিড। ফ্যারাও ও অভিজাত ব্যক্তিদের সমাধি মন্দির হল পিরামিড] 


ধর্মীয় জীবন : মিশরীয়রা বহু দেবদেবী ও প্রাকৃতিক সামগ্রী রেখে পিরামিডের ভিতরে সমাধিস্থ করা হত।শক্তি, বৃক্ষ ও জীবজন্তুর পূজা করত। মিশরীয়দের প্রধান প্রধান দেবদেবীগুলি হল সূর্য দেবতা ‘রা’, বাস্তু দেবতা ‘আমন’, উর্বরতার দেবী ‘আসিরিস’, পাপপুণ্য বিচারের দেবী । ‘আইসিস’, আকাশের দেবতা ‘হােরাস’ প্রভৃতি। মিশরীয়রা পরলােকে বিশ্বাস করত। তাই মৃত্যুর পর মৃতদেহকে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ও সুগন্ধি দ্রব্য মাখিয়ে কাপড়ে জড়িয়ে সংরক্ষণ করা হত। এই সংরক্ষিত মৃতদেহ মমি’ নামে পরিচিত। এই সংরক্ষিত মৃতদেহের পাশে তার ব্যবহার্য


মিশরীয় সভ্যতার পতন : সুদীর্ঘকাল গৌরবময় অস্তিত্বের পর প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার পতন হয়। বিভিন্ন কুসংস্কার, ফ্যারাও ও পুরােহিতদের অত্যাচার ও শােষণের ফলে মিশরের অবক্ষয় শুরু হয়। মিশরের গৌরব ম্লান হয়ে পড়ে। 950 খ্রিস্টপূর্বাব্দে লিবিয়ার বর্বর জাতির আক্রমণে মিশরীয় সভ্যতার পতন হয়। মিশরের প্রাচীন সভ্যতার পতন হলেও তার গৌরব গাথা ও পিরামিড চিরভাস্বর হয়ে আছে।



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url